২৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ ঘোষণা করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি বুঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হতে পারে। তিনি বলেন, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে, যদি করোনাভাইরাস তখনো অব্যাহত থাকে। করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিটি পরীক্ষা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলপ্রকাশের কাজ আরও পেছাতে হবে, তার সাথে পেছাতে হবে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম।

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি, প্রাথমিক সমাপনী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি ও আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার কী হবে? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডগুলো এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। পারার কথাও নয়। পাঠদান ও অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নই যদি বন্ধ থাকে, তাহলে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা কি সম্ভব?

একাদশের বার্ষিক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে যাবে, সেটিও পিছিয়ে যাবে। যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পরীক্ষাও নেওয়া যাবেনা। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন পড়ালেখা বন্ধ রাখলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া ভিন্ন পথ খোলা থাকবে না। খোলার পর পাঠদান বাড়ানোর জন্য ঐচ্ছিক ছুটি কমানো এবং সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হতে পারে।


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন পড়ালেখা বন্ধ রাখলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া ভিন্ন পথ খোলা থাকবে না। খোলার পর পাঠদান বাড়ানোর জন্য ঐচ্ছিক ছুটি কমানো এবং সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হতে পারে।


করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে আক্রান্ত, তাতে সবই তো অনিশ্চিত দেখা যাচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে আছে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত হয় ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের পড়ালেখা। সারা বিশ্বে একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক পরীক্ষাদুটো। করোনা প্রাদুর্ভাবের বর্তমান পরিস্থিতিতে অ্যাডেক্সেল ও ক্যামব্রিজের অধীনে চলতি বছরের মে-জুনের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে। আগামী জুনে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও প্রয়োজনে অনলাইনেই গ্রহণ করা হতে পারে বলে জানা যায়। কিন্তু সবগুলোতে কি তা সম্ভব হবে?

পরিচিতি পাওয়া কিছু ইংরেজি মিডিয়াম বিদ্যালয়ে অনলাইনে পড়ালেখা চলছে। তবে সবগুলোতে তা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলস অ্যসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও গ্রিন জেমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ ড. জি এম নিজাম উদ্দিন বলেন, “আগামী মে-জুনের ‘ও’ এবং ‘এ ’ লেভেল পরীক্ষা এবার হবে না। এর পরিবর্তে স্কুল-বেসড অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। শিক্ষার্থীরা সারাবছর যে পড়ালেখা করছে, তার ওপর নিজ নিজ বিদ্যালয় তাদের মূল্যায়ন করে গ্রেড দেবে। এরপর সেটি পাঠানো হবে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা বোর্ডে। সেখানে প্রত্যক শিক্ষার্থীর ডাটা রয়েছে। স্কুলের আগের বছরগুলোর ফল রয়েছে। সব কিছু অ্যানালাইসিস করে ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড প্রত্যেক শিক্ষার্থীর গ্রেড ঠিক করবে”।

তিনি আরো বলেন, “ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর প্রত্যেক শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও আগামী জুনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্ত করোনার প্রাদুর্ভাবে সেটিও এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তবে বেশিরভাগ স্কুল অনলাইনে গুগলের মাধ্যমে লাইভ ক্লাস নিচ্ছে, হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছে। সেটির একটি মুল্যায়ন হতে পারে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনে অনেক স্কুলই অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণেরও প্রস্তুতি নিয়েছে।”

বাংলা মাধ্যমে করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাসাধিকালের বেশি সময় ধরে সংসদ টিভিতে সীমিত আকারে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠদান চলছে। ধীরে ধীরে মাদরাসা ও কারিগরিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনেকেই একে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, যাদের টিভি নেই বা টিভি থাকলেও ডিশলাইন নেই, ডিশলাইন থাকলেও তাদের এলাকায় সংসদ টিভি দেখা যায় না।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ব্র্যাক শিক্ষাকর্মীদের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ করি। তাতে দেখা যায়, সংসদ টিভির ক্লাস গড়ে চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ শতাংশ শিক্ষার্থী দেখছে। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই দেখা যায় না। তাদের ভাষ্যমতে, এই ক্লাসগুলো যদি বিটিভির মাধ্যমে দেখানো যেতো, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারত। তবে বিটিভি এতো দীর্ঘসময় শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে পারবে কিনা সেটি ভিন্ন প্রশ্ন।

আবার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ থাকে না। ফেসবুক ও ইউিটিউবে এই পাঠগুলো পাওয়া গেলেও প্রত্যন্ত এলাকায় নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনেকে তা চাইলেও দেখতে পারে না। কোটি কোটি শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ টিভি/ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে পাঠদানের সুবিধা পাচ্ছে না। শুধু টেলিভিশন নয়, কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে একইসাথে এই পাঠদান করা হলে হয়তো আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারতো।

এমতাবস্থায়, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য করণীয় ঠিক করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবকে চেয়ারম্যান এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশনকে কো-চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণশিক্ষা সচিব বলেছেন, “টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করা হচেছ। কিন্তু শতভাগ শিক্ষার্থীর পক্ষে এই ক্লাস দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আমরা অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পড়ালেখার আদান-প্রদান শুরু করতে যাচ্ছি। এতে অন্তত কী পড়তে হবে তা জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নিজ নিজ শিক্ষকদেরও আমরা খোঁজখবর রাখতে বলেছি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ক্ষতি নিরূপণ ও রিকভারি তৈরি করতে বলা হয়েছে। ঈদের পর স্কুল খুললে অতিরিক্ত ক্লাসেরও ব্যবস্থা করা হবে।“

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, “আমরা আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই। এরপর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে যা যা দরকার তার সবই মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে।“

তবে, এই কঠিন সময়ে করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। উন্নত বিশ্বে দূরশিক্ষণ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ইরানেও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে প্রধানত জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘শাদ’ নামে একটি লার্নিং অ্যাপ চালু করেছে। এ অ্যাপে সব শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে তারা অনলাইনে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

এছাড়া গুগল ক্লাসরুম, গুগল হ্যাংসআউট, স্কাইপ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে সহজেই শ্রেণিকার্যক্রম চালানো যায়। দূরশিক্ষণের আওতায় অসংখ্য শিক্ষাবিষয়ক অ্যাপস আবিস্কৃত হয়েছে, যা দিয়ে অতিসহজে লকডাউনে থেকেও বাড়িতে বসে শিক্ষাপ্রদান ও গ্রহণ করা যায়। অন্তত শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা এ সুবিধার আওতায় আসতে পারে সহজেই।

দরিদ্র, হতদরিদ্রদের কথা সরকার নিজে ভাবতে পারে। পুরো প্রক্রিয়ায় সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম এজেন্সি, সুশীল সমাজ এবং এনজিওগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এখন যেটি হয়েছে, তেল মাথায় তেল দেয়ার মতো অবস্থা। মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, শহুরে শিক্ষার্থীদের জন্য আগেও যেমন প্রাইভেট ছিলো, কোচিং ছিলো, বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার চাপ ছিলো, এখনও তাদের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে। শিক্ষকদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় এবং তারা নিজেরাও বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে শিক্ষাকার্যক্রম কিছুটা হলেও চালিয়ে নিচ্ছে।

যারা পিছিয়ে ছিলো, যারা অবহেলিত তাদের জন্য কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা আরও দুই ধাপ পিছিয়ে গেলো। টেলিভিশনের ক্লাস তো তারা পাচ্ছে না। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু সম্ভবও নয়। তাই প্রয়োজন ছিলো, দুর্দিন আসার প্রাক্কালেই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসা এবং সেক্টর ভাগ করে দেয়া। যাদের যে দক্ষতা আছে, এই সময়ে সেগুলো দেশের কাজে লাগানো। যেমন, দেশের এনজিওগুলোর রয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচরণ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালযের রয়েছে দুরশিক্ষণের প্রযুক্তি। এগুলো এই সময়েই যদি আমরা কাজে না লাগাতে পারি তাহলে আর কবে?

ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাকার্যক্রম। সামগ্রিক স্কুলিং তথা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এই অনিশ্চিত বন্ধের কারণে। পড়ালেখার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা, দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী রুটিনমাফিক ক্লাসে অংশগ্রহণ করা, প্রশ্ন করা, উত্তর দেওয়া ও পাওয়া ইত্যাদি। লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ববিধি মানার ফলে এ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। আমাদের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অবহেলা আমাদের নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। পরিকল্পনা হচ্ছে চিকিৎসাক্ষেত্রে পরিবর্তনের। এগুলো প্রয়োজনও। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রশংসনীয় পরিকল্পনার কথা আমরা শুনছি না।


যারা পিছিয়ে ছিলো, যারা অবহেলিত তাদের জন্য কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা আরও দুই ধাপ পিছিয়ে গেলো। টেলিভিশনের ক্লাস তো তারা পাচ্ছে না। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু সম্ভবও নয়। তাই প্রয়োজন ছিলো, দুর্দিন আসার প্রাক্কালেই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসা এবং সেক্টর ভাগ করে দেয়া। যাদের যে দক্ষতা আছে, এই সময়ে সেগুলো দেশের কাজে লাগানো।


আমরা জানি, বেসরকারি ননএমপিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যারা মূলধারার শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র কিছু বেতন পেয়ে থাকেন। কোথাও কোথাও তাও পান না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেয়া যাচ্ছে না, আর তারা দিবেই বা কীভাবে?

বেসরকারি উদ্যোগে ৫৫৩টি বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান শুধু শিক্ষার্থীর বেতনের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কিছু বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা পুরোপুরি শিক্ষার্থীর বেতনের ওপর নির্ভরশীল। এগুলোর অবস্থা এখন চরম সংকটের মধ্যে।

প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার জন্য পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রায় চল্লিশ হাজার কিন্ডারগার্টেন রয়েছে যেখানে কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এসব কিন্ডারগার্টেনে প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারি রয়েছেন, যারা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা সাহায্য নেয়ার জন্য কোথাও হাতও প্রসারিত করতে পারছেন না, আবার ক্ষুধার জ্বালাও সহ্য করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে তাদের পাশে কে দাঁড়াবে?

করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা ও এই পরিস্থিতির জন্য তো কেউ প্রস্তুত ছিলো না। সবই ঘটে চলেছে আমার চিন্তার বাইরে। কিন্তু অবস্থা তো এই দাঁড়িয়েছে, এখন কী করা? সরকারের একার পক্ষে এতো বিশাল চাপ সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আবার সরকার পুরো দায় এড়িয়েও যেতে পারবে না। কারণ, বহু অনুৎপাদনশীল খাতে, অযথা অনেক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয় করা হয়ে থাকে যেগুলোর কোনো প্রয়োজনই নেই। তাছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

এই রমজান মাসে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার পার্টির নামে কতো টাকা অপচয় করতো, এখন সেটি করতে পারছে না। সেই টাকা দিয়ে অসহায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানো তাদের দায়িত্ব। এই দুর্দিনে সেসব অর্থ দিয়ে সরকারকেই এসব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর কারা দাঁড়াবেন সেটিও সরকারকে নির্দিষ্ট করতে হবে সৎভাবে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নয়।

বিশ্বেরর বিভিন্ন দেশের জরুরি অবস্থার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যতো বেশি সময় শিশুরা বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকে, তাদের বিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা ততোটাই কমে যায়। করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এ অবস্থা তো আমরা কোনোভাবেই চাই না। তাই করোনাকালেও শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, সমাজের বিত্তবানদের এবং বড় বড় সংস্থা যারা এতোদিন শুধু ব্যবসা করতো তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

Sending
User Review
0 (0 votes)

লেখক সম্পর্কে

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি সাবেক ক্যাডেট কলেজ, রাজউক কলেজ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তিনি ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্তব্য লিখুন