উচ্চশিক্ষা

পিএইচডি ডিগ্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা

পিএইচডি ডিগ্রি ইদানিং বেশ আলোচিত। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। পিএইচডি ডিগ্রি বেশ মজার! এটি অনেক অর্থ ধারণ করতে পারে, আবার কোনোকিছু নাও বোঝাতে পারে।

এটি হতে পারে জীবনের অন্যতম তাৎপর্যময় সময়। এটি হতে পারে সময় অপচয়ের নামান্তর! আসলে পিএইচডি যতো না গবেষণা করার সময়, তার থেকে বেশি গবেষণা কী করে করতে হয় তা শেখার সময়।

পিএইচডির প্রকৃত মূল্যায়ন কেবল পিএইচডি শেষ করার পরই শুরু হয়। এটি গবেষণার গভীরে প্রবেশের জন্য একটি স্টেপিং স্টোন ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে, তবে এটি কোনো দিক থেকেই শেষ কথা নয়।

খুব ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিখ্যাত তত্ত্বাবধায়কের অধীনে পিএইচডি করার পর বলার মতো আর কিছুই করা হয়ে ওঠেনি এমন বহু পিএইচডিধারি দেখেছি। এই ডিগ্রি এসব ক্ষেত্রে সময়ের অপচয়ের ক্যাটাগরিতে পরে।

ভালো পিএইচডি কাকে বলে? ভালো পিএইচডি হচ্ছে সেই পিএইচডি যা একজন মানুষকে সারাজীবনের জন্য গবেষকে পরিণত করতে পারে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কার তত্ত্বাবধানে পিএইচডি করা হলো, তা কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। পিএইচডি শেষ করার পর শুরু হয় আসল পরীক্ষা।

খুব ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিখ্যাত তত্ত্বাবধায়কের অধীনে পিএইচডি করার পর বলার মতো আর কিছুই করা হয়ে ওঠেনি এমন বহু পিএইচডিধারি দেখেছি। এই ডিগ্রি এসব ক্ষেত্রে সময়ের অপচয়ের ক্যাটাগরিতে পরে।

আবার আমাদের দেশে পদার্থবিজ্ঞানে কিছু পিএইচডির কথা জানি, যা এককথায় ওয়ার্ল্ড ক্লাস। যদিও খুব ব্যতিক্রম, কিন্তু দেশেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত উঁচুমানের পিএইচডি সম্ভব হয়েছে, হচ্ছে। যদিও তার থেকে বেশি হচ্ছে সস্তা ও অর্থহীন পিএইচডির চর্চা। কাজেই দেশ দেখে পিএইচডির মান নির্ধারণের যে একটি রীতি দাঁড় করানো হয়েছে, তা ভালো কথা নয়। আমাদের আরও গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে।

ইদানিং পিএইচডি ডিগ্রি থাকা না থাকা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে গেলে এটি থাকার প্রয়োজন। তবে একটি ডিগ্রিকে বিষয়জ্ঞানের প্রধান নিয়ামক ভেবে বসাটা ঠিক নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে।

নিজ অভিজ্ঞতায় এমন পিএইচডিধারি দেখেছি, যাদের বিষয়জ্ঞান মাস্টার্স ক্লাসের একজন মাঝারি মানের শিক্ষার্থীর চেয়ে খুব বেশি নয়। এমন পিএইচডিধারির সংখ্যা খুব কম নয়। যা হওয়া উচিৎ ছিলো অর্থবহ, তার অনেক কিছুই এখানে অর্থহীন।

আগে যা হয়েছে, তা হয়েছে। এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, তাদের এই ডিগ্রিটি থাকা প্রয়োজন। তবে এই ডিগ্রি থাকা না থাকা নিয়ে একধরনের আত্মম্ভরিতার চর্চা দেখতে পাচ্ছি, যা আশঙ্কাজনক।

পিএইচডি ডিগ্রি থাকা নয়, বরং ডিগ্রিটি নিয়ে কে কী করে তা গুরুত্বপূর্ণ। নামের আগে ডক্টর লাগানো যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে তা হচ্ছে এই ডিগ্রির সবচেয়ে বড় অপব্যবহার।

পিএইচডি ডিগ্রি থাকা নয়, বরং ডিগ্রিটি নিয়ে কে কী করে তা গুরুত্বপূর্ণ। নামের আগে ডক্টর লাগানো যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে তা হচ্ছে এই ডিগ্রির সবচেয়ে বড় অপব্যবহার।

আরেকটি কথা, কারো কারো কথায় মনে হচ্ছে একটি পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে সাত-খুন মাফ। অবশ্যই তা নয়! বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে হলে অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যায়ে অত্যন্ত ভালো ফলাফল থাকতে হবে।

পিএইচডি ছোট একটি পরিসরে গভীর জ্ঞানের পরিচয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এই গভীরতার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায় না। অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ভালো ফলাফল, বিষয় সম্পর্কে মোটাদাগে কনসেপ্টের পরিচয়। অন্তত তাই হওয়া উচিৎ।

পিএইচডির গুরুত্ব বুঝতে গিয়ে যেন আমরা অনার্স এবং মাস্টার্সের ফলাফলকে ছোট না করে দেখি। অত্যন্ত ভালোমানের পিএইচডি হলে অন্য কথা। অনন্যসাধারণ গবেষণার পুরস্কার অনন্যসাধারণ হওয়া উচিত।

তবে বাংলাদেশের সংবাদপত্র দেখে যেন আমরা বিভ্রান্ত না হই। এই দেশে সাংবাদিকতার মান, শিক্ষকতার মানের তুলনায় খুব একটা আলাদা কিছু নয়।

একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। বর্তমানে ফেইসবুকে একজন—সংবাদপত্রের ভাষায়—‘বিশ্ব কাঁপানো’ বিজ্ঞানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনুপযুক্ততা নিয়ে বেশ ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই তরুণ গবেষকের গবেষণার রেকর্ড বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডে যথেষ্ট ভালো। কিন্তু একেবারেই ‘বিশ্ব কাঁপানো’ কিছু নয়।

একই মানের অথবা অপেক্ষাকৃত ভালো, বহু তরুণের অনার্স এবং মাস্টার্সে অনেক ভালো ফলাফল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি হচ্ছে না, হয় নি। এখানে পিএইচডি থাকা, না থাকা কোনো কারণই নয়।

প্রকৃত কারণ হচ্ছে, যারা নিয়োগ দিচ্ছেন তারা কী জানেন, কতটুকু জানেন, কার ইশারায় চলেন এবং কেমন ধরণের মানুষ—এ-সমস্ত প্রশ্নের ফয়সালা হওয়া প্রয়োজন। এই ফয়সালার আগে পিএইচডি ডিগ্রি থাকা না থাকা, থাকলে সাত-খুন মাফ কিনা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠাটা হচ্ছে scratching the surface।

সমস্যার মূল অন্য জায়গায়। নিয়ম পাল্টে খুব বেশিদূর যাওয়া যাবে না। দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। নিয়ম এবং মানুষ দুটোই পাল্টাতে হবে।

User Review
0 (0 votes)
সালেহ হাসান নকিব

গৌতম রায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

Recent Posts

মানুষের দুর্নীতিবাজ হওয়ার পেছনে শিক্ষকের দায় কতটা?

দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার পুরো বিশ্বে দখল করেছে শীর্ষস্থান! বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পে বড় ধরনের…

4 মাস ago

মুখস্থবিদ্যা কতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

নতুন শিক্ষাক্রমের প্রবর্তকেরা এবং তার সমর্থকরা এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে সবার আগে মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল…

4 মাস ago

নতুন শিক্ষাক্রম : জাপানের সাথে তুলনা কতোটুকু প্রাসঙ্গিক?

বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার নতুন শিক্ষাক্রমের আবশ্যিক বিষয় জীবন ও জীবিকার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির…

5 মাস ago

কেন ক্লাস করতে চায় না শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা কেন ক্লাস করতে চায় না এই প্রশ্নটি নতুন নয়। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের…

6 মাস ago

শিক্ষকের মান ও গুণগত শিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, "কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ বৈশ্বিক…

7 মাস ago

বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক ব্যবস্থাপনা : প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ

মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব তাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যেটি বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে দশ বছর থেকে…

8 মাস ago