দেখতে দেখতে আমরা পা দিয়েছি স্বাধীনতার ৫০ বছরে। সময়ের হিসাবে ৫০ বছর অনেক কম নাকি বেশি সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে, একটি দেশকে সার্বিক দিক থেকে পুনর্গঠিত করতে ৫০ বছরকে মোটেও কম সময় বলা যাবে না। সেদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও এর কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর মতো যথেষ্ট সময় পেয়েছি এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এই লম্বা সময়ে আমরা কি আদৌ পেরেছি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও এর প্রতিটি দিক ঢেলে সাজাতে? যদি না পারি তাহলে কী ছিলো আমাদের ব্যর্থতা? বা এই লম্বা সময়ে আমাদের শিক্ষাখাতের বড় সাফল্য কী?
আলোচ্য বিষয়সমূহ
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দান করতে প্রয়োজন ছিলো সুশিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি; যাতে ছোট্ট আয়তনের দেশটি অধিক জনসংখ্যার চাপ কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারে। তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া খাতগুলোর একটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাখাতটি গুরুত্ব পেয়েছিলো বলেই স্বাধীনতা অর্জনের ছয় মাসের মধ্যেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রেখে যাওয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে গঠন করা হয় একটি কমিশনের।
১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে গঠিত কমিশনটি ১৯৭৪ সালের ৩০ মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে শিক্ষাব্যবস্থার অভাব, ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে সুচিন্তিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। বলা চলে, এই কমিশনই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত গড়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে প্রণীত পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতিতেও এই কমিশনের প্রভাব স্পষ্ট।
আমাদের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে রাষ্ট্রীয় অন্যতম নীতি হিসেবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা স্থান পেয়েছে। সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্র: (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যমূলক শিক্ষাদানের জন্য জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সাংবিধানিক এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত এ নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েন সম্মেলনে সবার জন্য শিক্ষা বিশ্ব ঘোষণা আসার পরপরই বাংলাদেশে পাশ হয় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইনের। ১৯৯২ সালে ৬৮টি থানাকে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে দেশের সকল থানাকে এই আইনের আওতাধীন আনা হয়।
ন্যূনতম শিক্ষার চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে সরকার ২ জুন, ২০০৩ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রূপান্তরিত করে। এই আইন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মূলত এই আইনের ফলেই প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে; যা বর্তমানে প্রায় শতভাগে পৌছেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন।
আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আরেকটি বড় অর্জন হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো। অতীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেতো, কোনো নির্দিষ্ট স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর ওই স্তর শেষ করার আগেই ঝরে পড়তো বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। এক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। সিআরআই-এর ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ঝড়ে পড়ার হার ২০১৫ সালে যেখানে ছিলো ১৮ শতাংশ, তা ঠিক তিন বছর পর নেমে আসে ৫ শতাংশে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ২০০৮ সালে ছিলো ৬১.৩৮ শতাংশ। ঠিক তার দশ বছর পর ২০১৮ সালে এই হার নেমে আসে ৩৮.৩০ শতাংশে।
বলা যেতে পারে, শিক্ষাখাত নতুন দিগন্তে প্রবেশ করে ২০১০ সালে। এই সাল থেকেই শুরু হয় মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। ২০১০ থেকে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে সর্বমোট ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২ কপি পাঠ্যপুস্তক বই শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণ করা হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের (কারিগরি ও ব্রেইল বইসহ) শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ-ঘোষিত এসডিজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতি কতটুকু পূরণ হবে তা সময়ই কথা বলবে। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সাক্ষরতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের লোকসংখ্যার সাক্ষরতা হার ১৯৭৪ সালের ২৬.৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
শিক্ষার মূল ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। আমাদের দেশে রয়েছে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য রয়েছে আইন। তাই প্রাথমিক শিক্ষা সকলের কাছে আরো সহজলভ্য করতে ও সকলের জন্য মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৭৫-এর জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৩ বছরে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে জাতীয়করণ করা হয় আরো ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়।
একসময় শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিলো ছেলেদের তুলনায় নগণ্য। নানামুখী পদক্ষেপের ফলে সেই চিত্র এখন পাল্টেছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে নারীশিক্ষার হার ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর এই বয়সীদের মধ্যে পুরুষের শিক্ষার হার ৭৪ শতাংশ। এ হিসাবে নারীশিক্ষার হার পুরুষের চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। নারীশিক্ষার উন্নয়নে যে ভারত বা প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো করছে, সে-কথা স্বীকার করেছেন নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও।
শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শিক্ষাখাতের অন্যতম একটি সাফল্য। শিক্ষাখাতের প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এ্যাকাডেমিক খাতেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার বেড়েছে। বিগত কয়েক বছরে সারাদেশে প্রায় ৩৫ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, তিন হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন, ১২৫টি উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর এডুকেশন স্থাপন করা হয়েছে।
ম্যাকিয়াভেলি বলেছিলেন, মানুষ জন্মগতভাবেই খারাপ, আইনের দ্বারা বাধ্য নাহলে সে কোনকিছুই মানতে চায় না। তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু সবকিছু সঠিক পথে রাখতে যে আইন আবশ্যক, তা আমরা সকলেই জানি। বাংলাদেশের শিক্ষাকে সঠিক পথে রাখতে আইন দরকার ছিলো। দরকার ছিলো সেই আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হতে চললো, কিন্তু শিক্ষার কোনো সুগঠিত আইনিকাঠামো তৈরি হয়নি।
২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর ২০১১ সালে শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা আইনের প্রথম খসড়া তৈরি করা হয়েছিল ২০১২ সালে। পরে নানা সংযোজন-বিয়োজন করে জনমত যাচাইয়ের জন্য ২০১৩ সালে খসড়া প্রকাশ করা হয় মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনবার মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করা হলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ফেরত পাঠানো হয়। আইনটি নোট, গাইড ও কোচিং ব্যবসার প্রতি বেশি খড়গহস্ত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুরু হয় নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের হাঁটাচলা, দেয়া হয় আন্দোলনের হুমকি। কোচিং ব্যবসায়ীরাও সক্রিয় হয়। শিক্ষা আইনকে দুর্বল করে অবাধ বাণিজ্য করার আশায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে আইনটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
আইনটি নোট, গাইড ও কোচিং ব্যবসার প্রতি বেশি খড়গহস্ত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুরু হয় নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের হাঁটাচলা, দেয়া হয় আন্দোলনের হুমকি। কোচিং ব্যবসায়ীরাও সক্রিয় হয়। শিক্ষা আইনকে দুর্বল করে অবাধ বাণিজ্য করার আশায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে আইনটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তৈরির একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি এখন গণসুযোগে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। দেড়শতাধিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাতে মোট উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে চল্লিশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। দিনদিন এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সাথে বাড়ছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা।
এতে কি কোনো লাভ হচ্ছে? মোটেই না, বরং বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত বেকার। উচ্চশিক্ষিত এতো বড় জনশক্তি ব্যবহার করার মতো সুদৃঢ় পরিকল্পনাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তার মূল লক্ষ্য গবেষণা ও উদ্ভাবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হয়ে গেছে রাজনীতির আখড়া।
উচ্চশিক্ষার সাম্প্রতিক অতীত ও বর্তমান মোটেই সুখকর নয়। এখন দরকার উচ্চশিক্ষার জন্য সঠিক রূপরেখা প্রণয়ন করে লক্ষ্য অর্জন করা। কিন্তু, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা একে একে বাড়িয়ে চলেছেন গুণমানহীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
প্রচলিত একটি কথা হলো, শিক্ষাখাতে দেশের মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মসৃণভাবে চলতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত এই বরাদ্দ ১০-১২ শতাংশেই আটকে আছে। শিক্ষাবিদরা তো বটেই, বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও শিক্ষায় বিনিয়োগের কার্যকারিতা তুলে ধরেছেন বারবার। অথচ নীতিনির্ধারকরা সে বিষয়ে উদাসীন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে শিক্ষায় বরাদ্দ ১১.৬৮ শতাংশ। এই বরাদ্দের হার তৃতীয় বিশ্বের অনেক অনুন্নত দেশের তুলনায়ও কম। শিক্ষায় বরাদ্দ যে জাতির উন্নতির স্থায়ী ভিত গড়তে সহায়তা করে, তা বোধহয় আমাদের উপর-মহলের কর্তাব্যক্তিরা এখনো অনুধাবন করতে পারেননি।
আমাদের দেশের জনসংখ্যা আয়তনের তুলনায় অত্যাধিক বেশি, সম্পদ খুব সীমিত, সুযোগ-সুবিধাও কম। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তার জন্য প্রয়োজন বাস্তবমুখী গবেষণা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য কী প্রয়োজন, কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, কী কারণে শিক্ষা প্রদান করতে হবে— এগুলো গবেষণার মাধ্যমে বের করে সে-অনুসারে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দরকার ছিলো।
কিন্তু আমরা তাতে অনেকাংশেই ব্যর্থ। উচ্চশিক্ষা মূলত গবেষণাধর্মী শিক্ষা। কিন্তু উচ্চশিক্ষাতে গবেষণা নেই বললেই চলে। গবেষণার জায়গায় স্থান পেয়েছে সরকারি চাকরিপ্রাপ্তির লক্ষ্যে পড়াশোনা। শিক্ষকরা ব্যস্ত রাজনীতি ও বিভিন্ন লবিংয়ে। বিষয়জ্ঞান অর্জন থেকে শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছে বহুদূরে। ফলে সরকার শিক্ষার্থীদের পেছনে যে ব্যয় করছে, তা শিক্ষার অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
উচ্চশিক্ষা মূলত গবেষণাধর্মী শিক্ষা। কিন্তু উচ্চশিক্ষাতে গবেষণা নেই বললেই চলে। গবেষণার জায়গায় স্থান পেয়েছে সরকারি চাকরিপ্রাপ্তির লক্ষ্যে পড়াশোনা। শিক্ষকরা ব্যস্ত রাজনীতি ও বিভিন্ন লবিংয়ে। বিষয়জ্ঞান অর্জন থেকে শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছে বহুদূরে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত একটি প্রত্যয় হলো গুণগত শিক্ষা। গুণগত শিক্ষাকে প্রধানত দুটি অংশ দেখতে পাই: প্রথমত, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ও দ্বিতীয়ত, আর্থিক নিশ্চয়তা।
গুণগত শিক্ষার প্রথম অংশ হলো নৈতিকতা ও মূল্যবোধ যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, নীতিনির্ধারকরা দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। সেই শিক্ষকরা টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করছেন। অভিভাবকরা সেই প্রশ্ন টাকার বিনিময়ে কিনে শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থী ছাত্রজীবনেই দুর্নীতি করা শিখছে। এটি একটিমাত্র উদাহরণ। এমন হাজারো চক্করে পড়ে শিক্ষার্থীরা হয়ে যাচ্ছে নৈতিকতাহীন ও মূল্যবোধহীন।
অপর দিকটি হলো, আর্থিক নিশ্চয়তা। বাংলাদেশে যে কর্মের নিশ্চয়তা নেই তা লাখ লাখ বেকার যুবক দেখলেই বোঝা যায়। সুতরাং, আমরা এখানেও ব্যর্থ।
ব্রিটিশ আমলে ‘মেকলের চুইয়ে পড়া নীতি’, পাকিস্তান আমলে ‘শরীফ কমিশন’ অপরিকল্পিত শিক্ষা উদ্যোগের উদাহরণ। বাংলাদেশ আমলেও এমন উদ্যোগ কম নেয়া হয়নি। প্রতিটি নতুন সরকারই গঠন করেছে নতুন নতুন শিক্ষা কমিশন। কমিশনগুলো তার পূর্বের কমিশনের প্রতিবেদনগুলোকে গুরুত্ব দেয়নি। দেশের বাস্তব অবস্থা এবং শিক্ষার চাহিদাগুলোকে তেমন আমলে না নিয়ে নিজেদের মতো করে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ প্রদান করেছেন তারা। ছোট উদ্যোগগুলোও হয়েছে অপরিকল্পিত। সাম্প্রতিক সময়ের সৃজনশীল পদ্ধতি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ইত্যাদি উদ্যোগ বর্তমানে যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বুমেরাং হয়েছে, তা সচেতন ব্যক্তিমাত্রই অনুধাবন করতে পারেন।
আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে শিক্ষক হলেন সবচেয়ে বড় শিক্ষণ-উপকরণ। অর্থাৎ, শিক্ষকের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি শিখে থাকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা কি আদৌ শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেকে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন? বা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি শিক্ষকদেরকে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট আগ্রহী?
কিছুকাল আগেও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে একজন নারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারতেন। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে সাড়ে চার লক্ষাধিক শিক্ষক রয়েছেন, তার উল্লেখযোগ্য অংশ উচ্চমাধ্যমিক পাস। শিক্ষক হিসেবে একজন উচ্চমাধ্যমিক পাস ব্যক্তি কতোটা উপযুক্ত? অপরদিকে, যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেছেন, উভয়ই শিক্ষক হিসেবে নিজেকে কতোটা প্রস্তুত করতে পেরেছেন, তা দেখার বিষয়। প্রাথমিকের এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে প্রশিক্ষিত করার জন্য দেশে সরকারি পিটিআই আছে ৬৭টি এবং বেসরকারি ২টি। সেখানকার আবাসন ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা মোট শিক্ষকের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে শিক্ষকরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পান না। যার প্রভাব পড়ে শ্রেণি পাঠদানে।
দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার পুরো বিশ্বে দখল করেছে শীর্ষস্থান! বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পে বড় ধরনের…
নতুন শিক্ষাক্রমের প্রবর্তকেরা এবং তার সমর্থকরা এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে সবার আগে মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল…
বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার নতুন শিক্ষাক্রমের আবশ্যিক বিষয় জীবন ও জীবিকার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির…
শিক্ষার্থীরা কেন ক্লাস করতে চায় না এই প্রশ্নটি নতুন নয়। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের…
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, "কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ বৈশ্বিক…
মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব তাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যেটি বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে দশ বছর থেকে…