বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সাধারণভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অত্যাবশ্যক। শিক্ষার্থীর সামাজিক এবং আবেগীয় উন্নয়নের জন্য পড়ার ভূমিকা অনেক। শিক্ষার্থীরা যদি বিভিন্ন ধরনের পড়ার বিষয় বা ম্যাটেরিয়ালস না পড়ে তাহলে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক স্কিল হারাবে। পড়ার মাধ্যমে তারা তাদের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে পারে। পড়ার দক্ষতা বাড়ানো সেজন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। পড়া বিভিন্ন বিষয় যেমন গণিত, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং ভুগোল সম্পর্কে জানার দ্বার উন্মোচন করে। এভাবে পড়ুয়ারা এসব বিষয়ে সহজেই সাফল্য অর্জন করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট সময় থেকেই পড়ার অভ্যাস মানুষকে অনেক বেশি পজিটিভ বিষয় দান করে, তাই ছোট সময় থেকেই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আর এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন অভিভাবক ও শিক্ষকগণ।

বইয়ের পাতায় ডুবে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অথচ সহজতম আনন্দের উপায়। বই আপনার কল্পনাকে এমনভাবে ব্যস্ত ও নিয়োজিত রাখে যা কোনো সিনেমা কিংবা মুভিও পারে না। গল্পের বই হলে লেখকের কথার সাথে আপনার নিজের ইমেজকে মেলানোর চেষ্টা করেন। বিশেষ এক ধরনের অনুভূতির জন্ম হয় আপনার মধ্যে। আপনি নতুন পৃষ্ঠায় যাবেন। নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন অর্থাৎ বই পড়া মানে অনেক নতুন নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হওয়া। আপনি যদি ভালো এবং মনোযোগী পড়ুয়া না হন, তাহলে আপনি লেখার মধ্যে লেখার গাঁথুনি আবিষ্কার করবেন এবং আপনার নিজের লেখায় তা ব্যবহার করতে পারবেন। সেখান থেকে আপনি নতুন নতুন ধারণা খুঁজে পাবেন। সেগুলোর ব্যবহারও খুঁজে পাবেন। উপসংহারে বলা যায়, একজন ভালো পাঠক কোনো লেখার ও লেখকের উদ্দেশ্যে আাবিষ্কার করতে পারেন এবং নিজের লেখায় তা ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ একজন ভালো পাঠক একজন ভালো লেখক হতে পারেন। শিক্ষা গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন যে, পড়া এবং শব্দভাণ্ডার বাড়ানোর মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যাদের শব্দভান্ডার বেশি, বুঝতে হবে তারা ভালো পাঠক। আপনি যদি আপনার শব্দভাণ্ডার বাড়াতে চান, আপনাকে ব্যাপকভাবে পড়তে হবে।

শ্রেণীকক্ষে একজন শিক্ষক জ্ঞানের উৎস, তার সাথে শিক্ষার্থীর বই পড়া এবং সেখানে থেকে আহরিত বিষয় যদি সমন্বয় করা হয় শ্রেণীকক্ষে, তাহলে জ্ঞান বিনিময়ের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। শুধু পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকলে চলবে না কারণ তা শিক্ষার্থীদের সব সময় আনন্দ দিতে পারে না আর পরিপূর্ণ জ্ঞানও দান করতে পারে না।

কিভাবে বাড়াবেন আপনার রিডিং স্কিল

রিডিং স্কিল বাড়ানোর জন্য পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কী পড়বেন? আপনি যদি শিক্ষক হন তাহলে নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক অনেক বই আপনাকে পড়তে হবে। অনেক অজানা শব্দ হয়ত পাবেন, বারবার পড়ুন, প্রসঙ্গ থেকে অর্থ অনেকটাই বুঝা যাবে। যেগুলো একেবারেই বুঝা যাবে না, সেগুলো অক্সফোর্ড বা চেম্বারস ডিকশনারি থেকে শব্দগুলোর ব্যবহার দেখুন। এসব ডিকশনারিতে সুন্দর করে শব্দের প্রয়োগ ও ব্যবহার দেখানো হয়েছে। আপনার এটিই দরকার। অনেকে বাংলা ডিকশনারি থেকে শুধু শব্দ মুখস্থ করে, এই শব্দ মুখস্থ আপনার খুব একটা কাজে লাগে না যদি আপনি শব্দের প্রয়োগ না জানেন।

ক্লাসে পাঠদান করার সময় শিক্ষার্থীদের বার বার পড়তে দিন, তারা চাইবে আপনি তাড়াতাড়ি বাংলা বলে দিন, তাহলে তারা সহজে বুঝবে। যে সব শিক্ষক সরাসরি বাংলা বলে দিচ্ছেন, স্বভাবতই তারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে বেশি প্রিয়। প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকসহ সবাই ঐসব শিক্ষকদের বাহ্বা দিয়ে থাকেন বলে থাকেন যে- ’অমুক স্যার’ সুন্দর করে ইংরেজি বুঝিয়ে দেন। মনে রাখেতে হবে, ভাষা বুঝানোর চেয়ে বুঝতে পারাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী। তারা সবার কাছে প্রিয় কারণ সবাই মনে করে ঐ শিক্ষক তাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সাবইকে বুঝতে হবে যে, ভাষা শিক্ষার ক্লাস আলাদা। ভাষা শিখানোর ধরন অন্যান্য ক্লাসের চেয়ে আলাদা। এই বিষয়গুলো আমাদের সমাজে প্রচলিত নেই বিধায় সবাই মনে করে যেসব শিক্ষক ক্লাসে তাড়াতাড়ি বাংলা বলে দেন তারাই আসল শিক্ষক। ব্যাপারটি আসলে তা নয়।

ইংরেজির কোনো বিষয় শিক্ষার্থীকে বারবার পড়তে হবে, ভিতরে ঢুকতে হবে, কনটেকস্ট থেকে শব্দের অর্থ বুঝার চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষক যদি তাড়তাড়ি বাংলা বলে দেন, তাহলে শিক্ষার্থীর রিজনিং ক্যাপাসিটি হ্রাস পায়, বিশ্লেষণমূলক ক্ষমতাও হ্রাস পায় বা সহজে বাড়তে পারে না। ইংরেজি শেখানোর সময় বাংলা বলে দেওয়াটা যদিও খুব সুখকর মনে হয়, এর মাধ্যমে আসলে শিক্ষার্থীদের স্লোপয়জনিং করা হয় কারণ শিক্ষার্থীদের আন্ডারস্ট্যন্ডিং ও কমপ্রিহেনসিভ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। অথচ শিক্ষার কিংবা ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীর ঐ ভাষা ব্যবহার করা যোগ্যতা অর্জন করানো।

ইংরেজি পড়ে পড়ে ধীরে ধীরে বুঝতে পারাই হচেছ সঠিক ধরনের রিডিং। একটি সময় আসবে যখন তাড়াতাড়ি আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার রিজনিং ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং পাওয়ার তখন বেড়ে যাবে। আর বাংলা দিয়ে তাড়াতাড়ি শিখতে চাইলে সেই ব্যাপারটি ঘটবে না। আপনি শব্দের প্রয়োগ জানবেন এভাবে পড়লে, আর এভাবে জানলে তা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারবেন এবং নিজে শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোকে কি আমরা সব সময়ই ধরে রাখবো? বরং সবাইকে বুঝাতে হবে যে, ভাষা শিক্ষার ক্লাস আলাদা, ভাষা শেখানেরা ধরন আলাদা।

বাংলাদেশের প্রথমদিকে কিংবা পাকিস্তান আমলে বাজারে নোট বই খুব একটা পাওয়া যেতো না, এগুলোর ব্যাপক প্রচলন তখন ছিল না। ফলে ছাত্রছাত্রীদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্যাপাসিটি ছিল প্রখর,তাদের লার্নিং ছিল সলিড। তারা তৃতীয় শ্রেণী পেলেও অনেক ভালো ইংরেজি লিখতেন, বলতে পারতেন। তাদের বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা ছিল প্রশংনীয়, বর্তমানে ইংরেজিতে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা রামজি লাল তিলকের নোট পড়ে সহজেই দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে যান কিন্তু তাদের বিশ্লেষণধর্মী ক্ষমতা বা ইংরেজি ভাষায় খুব একটা দখল অনেকেরই নেই। আপনার রিডিং স্কিল বাড়াতে হলে অরজিন্যাল ইংরেজি বই বারবার পড়তে হবে। রামজি লাল তিলক পড়বেন তবে তা ব্যবহার করতে হবে শুধু সহায়ক বই হিসেবে। আসুন আমরা আমাদের রিডিং স্কিল বাড়াই এবং শিক্ষার্থীদেরকেও উৎসাহিত করি এবং প্রাকটিস করাই কিভাবে বাড়বে তাদের রিডিং স্কিল কারণ এটি ভাষার চারটি স্কিলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কীল।

Sending
User Review
4 (3 votes)

লেখক সম্পর্কে

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি সাবেক ক্যাডেট কলেজ, রাজউক কলেজ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তিনি ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্তব্য লিখুন

5 মন্তব্য