প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘কোভিড-১৯ সংকট: সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা’। সাক্ষরতা, শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ এখন শুধু খাতা, কলম, বোর্ড, পড়তে পারা, লিখতে পারার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; কভিড-১৯ এক নতুন বিশ্বের চ্যলেঞ্জ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নিভৃত পল্লীর শিক্ষক থেকে শুরু করে ব্যস্ততম ঢাকার শিক্ষকগণও বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে মিটিং করছেন, ক্লাস পরিচালনা করছেন , কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জীবনে এই প্রথমবার গুগলমিট, হ্যাংআউট, জুম ইত্যাদির ব্যবহার শিখেছেন। এটি নতুন ধরনের সাক্ষরতা, নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাক্ষরতার ভূমিকা ব্যাপক। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবীয় অধিকার। ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ও মানবীয় উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এমনকি শিক্ষার সুযোগের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর। সাক্ষরতা হচেছ মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি। ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা দিলেও প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞা পাল্টাতে হয়েছে। এটিই স্বাভাবিক।

১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো এই সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে যে, ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে। কিন্তু এই সংজ্ঞাটিও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তার প্রমাণ আমরা কোভিড পরিস্থিতিতে  পেয়ে গেছি। একজন ব্যক্তি ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারলেন, সাধারণ যোগ-বিয়োগ পারলেন, কিন্তু এই কোভিডকালীন উপরিল্লোখিত ডিভাইসগুলোর সাথে পরিচিত নন, ব্যবহার করতে জানেন না, তাকে আমরা এই পরিস্থিতিতে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন  বলব কিনা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

একজন মানুষকে সাক্ষর বলা মানে তাকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা যে, বর্তমান যুগের সাথে তিনি তাল মেলাতে পারছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তিনি পারছেন না, কাজেই সাক্ষরতার সংজ্ঞা পাল্টে যাবে। আমাদের জীবন পাল্টে গেছে, শিক্ষাদানের বা শিক্ষাগ্রহণের পদ্ধতিও অনেকটাই পাল্টে গেছে। আরও একটি বিষয় এখানে চলে আসে, সেটি হচ্ছে বৈশ্বিক এই প্রেক্ষাপটে শুধু নিজের দেশের ভাষায় যদি একজন লোক সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হন, তাতে কিন্তু গ্লোবাল ভিলেজের নাগরিক হিসেবে প্রকৃতঅর্থে তিনি সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নন। কারণ যেসব প্রয়োজনীয় তথ্য একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক, সেটি স্বাস্থ্যসম্পর্কিতই হোক আর  নিরাপত্তা সম্পর্কিতই হোক, তাকে কিন্তু জানতে হচ্ছে। আর সেটি জানার জন্য একটি বৈশ্বিক ভাষার সাথে পরিচিত তাকে হতে হচ্ছে। যেমন, এখন ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে যা কিছু শেয়ার করা হয়, সেই সাক্ষরতা কিন্তু ইংরেজিতেই করতে হয়। শুধু বাংলায় করলে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কিংবা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কাজেই সাক্ষরতার সংজ্ঞা এখন ব্যাপক ও বিস্তৃত হতে বাধ্য।

সাক্ষরতা সমাজে শান্তি স্থাপনে অবদান রাখে, মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে। এর সাথে এখন যুক্ত হচ্ছে সাক্ষরতার মাধ্যমে গোট পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করার দক্ষতাটিও। কোথায় কোভিডের উৎপত্তি হলো, কীভাবে তা দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়ালো, কীভাবে মানুষ আক্রান্ত হয়, কীভাবে এ থেকে নিজেকে, পরিবারকে রক্ষা করা যায়, এ সবই আমরা জানতে পারছি অনলাইনে। যেসব ডিভাইস আমাদের অনলাইনে যুক্ত করছে সেগুলোর সাথে পরিচয়, সেগুলোর ব্যবহার এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। গোটা পৃথিবীতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত । তরুণদের মধ্যে এ হার আরও বেশি, প্রায় ৯০ শতাংশ।

বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। ১৩ থেকে ১৭ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি অন্তত একটি সামাজিক যোগাযোগ প্রোফাইল রয়েছে। তারা দিনে দুই ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিশু-কিশোর, গৃহিনী, পেশাজীবী এদের বেশিরভাগেরই এখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

২০১৭সালের এপ্রিল মাসের জরিপ অনুযায়ী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছে (বণিক বার্তা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। বিশ্বব্যাপী ইউটিউব ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ১৫০ কোটি, হোয়াটসঅ্যাপ ১২০ কোটি, ফেসবুক মেসেঞ্জার ১২০ কোটি ও উইচ্যাট ব্যবহারকারী ৯৩ কোটি ৮০ লাখ। আমরা ফেসবুক ব্যবহার করছি কেন? এর উত্তর খুব সহজ। অলস দেহে সোফায় বসে কিংবা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শীতের রাতে কাঁথাকম্বলের মধ্যে লুকিয়ে ফেসবুকে চাপ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার কোন বন্ধু কী করছেন, সেখানকার আবহাওয়া, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আমেরিকায় রাস্তায় কী হচ্ছে ইত্যাদি থেকে শুরু করে দেশের কোন জেলায় কী হচ্ছে, রাজধানীর কোন এলাকায় কী হচ্ছে, কোন সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে কেন পড়েছে, কীভাবে ধরা পড়েছে, কোন আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবের কী কী সুসংবাদ এসেছে, কী কী দুঃসংবাদ হলো সবই এখন হাতের মুঠোয় দেখতে ফেসবুকের কল্যাণে।

এ বিষয়গুলোকে সাক্ষরতার অবিচ্ছেদ্য অংশ ধরে নিলে সাক্ষরতার হার কত হবে, সে হিসেব নিশ্চয়ই আমাদের  কোথাও সেভাবে নেই। প্রচলিত অর্থে দেশে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ২৫ লাখ। তার অর্থ দাঁড়ায়, শতভাগ সাক্ষরতা থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে অবস্থান করছি। প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী বৈশ্বিক হিসেবে এখনও ২৬ কোটির বেশি শিশু-কিশোর স্কুলে যায় না এবং প্রায় ৬২ কোটি মানুষ সাক্ষরতা ও হিসাব-নিকাশে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। অথচ বিশ্বে প্রতিবছর কত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয় মারণাস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আর দুবাইয়ের বাসিন্দা যাদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন কোটিপতি। তারা বিলাসী জীবনের পাশাপাশি বন্য হিংস্র জন্ত-জানোয়ার নিজেদের দশ কোটি থেকে একশত কোটি টাকা দামের গাড়িতে নিয়ে বেড়ায়, নিজেদের ড্রইংরুমে বাঘ, ভল্লূক আর শিম্পাজী পুষে। অথচ কোটি কোটি শিশু শুধু দারিদ্রের কারণে এখনও নিজ নিজ দেশের বর্ণমালার সাথেই পরিচিত নয়।

এই বৈপরীত্য মোকাবিলা করার মতো নেতৃত্ব বিশ্বে প্রয়োজন। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা রয়েছে চার নম্বরে। এখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা এবং সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষ ও মানস্মত শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কাজটি সহজে হয়ে যেতে পারে। 

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত মানুষদের সাক্ষরতা দানের উদ্দেশ্যেই ৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এর সূত্রপাত হয়েছিল সেই ১৯৬৫ সালের ৮-১৯ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে  বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলনে। ১৯৬৬ সালে দিবসটি ইউনেস্কো প্রথম উদযাপন করে এবং আমাদের দেশে সেটি ১৯৭২ সালে পালিত হওয়া শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাক্ষরতার হার ছিলো ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময় দেশব্যাপী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে সমন্বিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তার কার্যক্রম বা ইনফেপ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

তারপর ২০০১ সালে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পটি  ২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের অনুমোদন পেয়েছে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সাক্ষরতা লাভ করানো এর উদ্দেশ্য। তবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সেকেন্ড চান্স হিসেবে দশ লাখ শিশুকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেখানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে পাইলটিং হিসেবে ছয় উপজেলার এক লাখ শিশুকে এর আওতায় আনা হয়েছে। পরবর্তীতে ২৫০ উপজেলা ও ১৫টি শহরে পর্যায়ক্রমে আরও ৯ লাখ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। এগুলো সবই শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের প্রচেষ্টারই অংশ।

করোনাকালে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের ১৫৪ কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালযে যেতে পারছে না। তাদের জীবনে এর প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি। এর মধ্যে চীনে সবচেয়ে বেশি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওই তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চীনে ২৩ কোটি ৩০ লাখ এবং বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে সেই ১৭ মার্চ থেকে সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল ক্লাস অর্থাৎ বিকল্প উপায়ে পাঠদান; যদিও এটি কোনোভাবেই সরাসারি পাঠদানের বিকল্প নয়।

ব্র্যাক তার নিজস্ব উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের বইয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে। এভাবে কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা পুনঃনির্মাণ করছে।  জেনেভাভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, চীনের প্রায় বারো কোটি শিক্ষার্থী সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে বাড়িতে বসেই তাদের শেখার উপাদানগুলো পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষামুলক উদ্ভাবক মিনার্ভা প্রজেক্টের কর্মকর্তা গেরিয়া ট্যাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তগুলো লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে অস্থায়ী হোম স্কুলিংয়ের পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানের মতো প্রবল আকারে ভাইরাস প্রভাবিত দেশগুলোকে। এ পরিবর্তন অবশ্যই কিছুটা অসুবিধার কারণ হয়েছে তবে, শিক্ষার নতুন এ উদ্ভাবনকে আমরা উৎসাহিত করছি।’

লকডাউন অঞ্চলের বেশিরভাগ বিদ্যালয় শিক্ষা প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওযার পথ খুঁজছে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো এবং বলা যায় একমাত্র সমাধান ডিজিটাল শিখন প্রক্রিয়া। তবে এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার গুণগত মান ও ডিজিটাল অ্যাকসেস-এর বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের ডিজিটাল অ্যকসেস রয়েছে। এটিই হচ্ছে ডিজিটাল শিখন প্রক্রিয়ার বড় বাধা কারণ চল্লিশ শতাংশকে আমরা ছুঁতে পারছি না, ডিজিটাল শিখনের আওতায় আনতে পারছি না। স্বল্পোন্নত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা লাইভ ক্লাস করতে না পারলেও সেগুলো হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেইলের মাধ্যমে চালাচালি করে শিখন প্রক্রিয়াটা এগিয়ে নিচ্ছে। তারপরও ডিজিটাল অ্যাকেসেসে এগিয়ে থাকা পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায় ডিজিটালি পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। 

ডিজিটাল ডিভাইস ও ডাটা প্ল্যানের ব্যয় মেটাতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর ঝরে পড়া মানে সাক্ষরতা থেকে দূরে চলে যাওয়া। তাই পুরো বিশ্বের ডিজিটাল অ্যাকসেস ব্যয় হ্রাস ও ডিজিটাল সেবার গুণমান বৃদ্ধি করা না হলে শিক্ষার মানের ব্যবধান এবং একইভাবে আর্থসামাজিক সমতার ব্যবধান আরো বেড়ে যাবে। আর এতে ডিজিটাল বিভাজন চরম আকার ধারণ করতে পারে। হংকংয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রকাশক, মিডিয়া, বিনোদন শিল্পের পেশাদার ভিডিও, বই মূল্যায়নের সরঞ্জাম ও ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ৯০০টি প্রতিষ্ঠান শিক্ষাগত উপকরণ সরবরাহ করতে একত্র  হয়েছেন। এটি সাক্ষরতা ধরে রাখা থেকে শুরু করে শিক্ষার মানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের উদ্যোগ দেশে দেশেই হওয়া প্রয়োজন যা নতুন বিশ্বব্যবস্থায় সাক্ষরতা বৃদ্ধিকে তরান্বিত করবে।

Sending
User Review
0 (0 votes)

লেখক সম্পর্কে

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি সাবেক ক্যাডেট কলেজ, রাজউক কলেজ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তিনি ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্তব্য লিখুন