বাড়ি অর্থায়ন

২০১৪-১৫ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেট

২০১৪-১৫ অর্থবছরে শিক্ষাবাজেট; ছবিসূত্র: প্রথম আলো
২০১৪-১৫ অর্থবছরে শিক্ষাবাজেট; ছবিসূত্র: প্রথম আলো

গত ৫ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বভুক্ত একটি দেশের বাজেট তৈরি করা নিঃসন্দেহে একটি দুরূহ কাজ। আমরা আমাদের পারিবারিক বাজেটই ঠিকমতো তৈরি করতে পারি না। এতো সমস্যা-সংকুল ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের দেশে একটি বাজেট তৈরি করা যে কতটা কঠিন, তা আমরা চেষ্টা করলেই অনুভব করতে পারবো। তারপরেও ফিডব্যাক তো থাকতেই হবে যে কোনো কাজে। ফিডব্যাকের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শোধরানোর এবং উন্নয়নের সুযোগ থাকে। আমি যেহেতু শিক্ষাবিভাগের লোক, তাই আমারপর্যবেক্ষণ ও ফিডব্যাক শিক্ষাবাজেট নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে।

শিক্ষাখাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরে দুই হাজার ৮৮ কোটি টাকা বেড়েছে। আসন্ন অর্থবছরের শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ২১ কোটি টাকা। আর শেষ হতে চলা অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা হয়েছে ১১ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলে বরাদ্দ ১৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, চলতি অর্থ বছরে তা ১৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। শিক্ষাখাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটে বরাদ্দ কমেছে। সংশোধিত বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের হার ছিল ১২.১৭ শতাংশ। এবারের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১১.৬৬ শতাংশ। বাজেটে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তকরনের কথা বলা হলেও এ খাতে বরাদ্দের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ৪.৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণায় উৎসাহ প্রদান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরগুলোতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেছেন, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মার্ধমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষাকে জোরদার করা। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ বিজ্ঞান শিক্ষা পরিচ্ছদের ১৬ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘বিজ্ঞানের ব্যবহারিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি থানা/উপজেলায় সরকারী অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করে পালাক্রমে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আবশ্যিক ব্যবহারিক পাঠদানের ব্যবস্থা নেয়া হবে’। কিন্তু এবারকার অর্থবছরে বাজেটে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

শিক্ষা যে কোনো জাতির উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি ও চালিকাশক্তি। শিক্ষার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি উন্নয়ন, জনগনের সচেতনতা ইত্যাদি। সরকারও বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। সরকার কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নএবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও রাজনৈতিকপ্রভাবমুক্ত রাখার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন বলে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, “সকল সরকারী, বেসরকারী, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধনের উদ্যোগ এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় চলমান টেকনিক্যাল বিদ্যালয়গুলোর নির্মাণকাজ শীঘ্রই সম্পন্ন হবে।তাছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হবে”। মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সরকারের গুরুত্বপ্রদান প্রশংসার দাবিদার। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার গত টার্মে শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো এই টার্মে বাস্তবায়ন করবেন এবং যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড শিক্ষাক্ষেত্রে সংগঠিত হয়েছে, সেগুলো ধরে রাখার জন্য তার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি আশা করেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর অধিকাংশ পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার গুণগত মান এবং টেকনোলজিনির্ভর শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করার কথা তিনি বলেছেন।

তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সেটি হচ্ছে, এই অর্থবছরে বাজেটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অুনপাত সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কথাও তিনি বলেছেন। সৃজনশীল মেধার অন্বেষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে বের করে তাদের পুরস্কৃত করার কথা তিনি বলেছেন। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে গৎবাঁধা শিক্ষা আর সনদ প্রদানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম সেই অর্থে নেই। গবেষণা কার্যক্রমের জন্য যেমন পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনীয় বাজেট নেই; তেমনি শিক্ষকদেরও নেই কোনো উদ্যোগ বা আগ্রহ। তাঁরা রাজনীতি করতে আর ছাত্রলীগ সামাল দিতেই ব্যস্ত। মন্ত্রী দাবি করেন বর্তমানে প্রায় শতভাগ শিশুই স্কুলগামী। অবশ্য বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়, এ চিত্র অনেকটাই হতাশাব্যঞ্জক। এখানে সরকার রাজনৈতিক কথাবার্তা বলার চেয়ে বাস্তব চিত্রটাই উল্লেখ করলে ভালো হতো। তবে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার উদ্দেশ্যে ৪৫ লাখ বয়স্ক লোককে (যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫-এর মধ্যে) সাক্ষর করা হবে ও জীবনমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষাকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং দেশের ৭৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এ উদ্দেশ্যে কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে এবং বইও ছাপানো হয়েছে। পাশাপাশি সরকার ‘ইনক্লুসিভ শিক্ষা ম্যানুয়াল’ তৈরি করেছে শারীরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে। এগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

সরকার এই অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়িয়েছে বা শিক্ষাখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে ঠিকই, কিন্তু আমরা সত্যিকার বাজেটের দিকে তাকালে কী দেখতে পাই? ইউনেস্কোর ঘোষণা অনুযায়ী একটি দেশের জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা উচিত। কিন্তু আমরা করছি কত? জিডিপির ২.২ শতাংশ যা বহু বছর ধরেই একই রয়ে গেছে। সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপ তাদের জিডিপির ৮.৫ শতাংশ ব্যয় করে শিক্ষার পেছনে। নেপাল ৪.৭ শতাংশ, পাকিস্তানও প্রায় ৫ শতাংশ, ভারত ৩ শতাংশ। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থী বেড়েছে, শিক্ষক বেড়েছে, ব্যয় বেড়েছে; কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেটে বরাদ্দ বাড়েনি। যদিও মোটের ওপর অনেক মনে হচ্ছে কিন্তু শতকরা হিসেবে তা নিতান্তই অপ্রতুল। শিক্ষাখাত এবার পেয়েছে ২৯,২১৩ কোটি টাকা যা জাতীয় বাজেটের ১১.৬৬ শতাংশ। শিক্ষাবিদ রাশেদা কে.চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, “এই বাজেট দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পলিসির মৌলিক প্রতিশ্রুতিগুলোও বাস্তবায়ন করা যাবে না”।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গরীব শিক্ষার্থীদের এই অর্থবছরে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা হবে এবং এই সহায়তা ডিগ্রি লেভেল পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। আমি এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখাতে চাই না; কারণ এমনিতেই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক। তার ওপর স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান করা মানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ানো। তার চেয়ে এ অর্থ বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার পেছনে ব্যয় করাটাই যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমরা মনে করি। এ ছাড়া সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণের বিষয়টি আরেকটু ভিন্নভাবে দেখা যায় কিনা তা দেখার অনুরোধ করছি। বিনামূল্যে বই বিতরণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এটি করতে গিয়ে শিক্ষাবিভাগের বিশেষ করে জাতীয় কারিকুলাম ও শিক্ষাক্রম বোর্ড, মাঠ পর্যায়ের শিক্ষাকর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ বছরের বিশাল একটি সময় এত ব্যস্ত থাকেন যে, তারা শিক্ষার মান উন্নয়ন কিংবা প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হওয়ার মতো জঘন্য অপরাধমূলক কাজটির দিকেও খেয়াল রাখতে পারছেননা। ফলে শিক্ষার মান কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি, গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়াই তারা জানি এবং আফসোস করি।

আমার বাস্তবে দেখা শিক্ষার্থীরা বাংলা কিংবা ইংরেজি বই দেখে পড়তে পারছে না, অথচ ফলাফলের বেলায় বিশাল কৃতিত্ব- এ আমরা কী করছি? বিনামূল্যে বই একমাত্র দরিদ্র এবং দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করলেই বোধহয় ভালো হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, বই বাজারে না থাকায় শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করছে তারা বই পাচ্ছে না। শিক্ষক যদি বই হারিয়ে ফেলেন বা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন, তা হলে তিনি আর নতুন বই পাচ্ছেন না। অনেক শিক্ষকই বলেছেন, তাদেরকে বহুদূর থেকে বই অনুরোধ করে আনতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বছর শেষ হলেও বই হাতে পায় না। সব শিক্ষার্থীর নিকট সব বিষয়ের বই নেই- এটিই বর্তমানের বাস্তবতা। আর বই বিতরণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোথাও কোথাও যে রাজনীতিও চলে তা বোধ করি শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী জেনে থাকবেন। কাজেই বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। শিক্ষা উপকরণ থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। এখন কি আমরা সেভাবে পাচ্ছি? ইন্টারনেট থেকে বই ডাউনলোড করে তা ব্যবহার করা বাস্তবে শতকরা কতজন শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব?

তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুণগত মানের কথা বলেছেন। আমরা প্রতিবছর হাজার হাজার মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি কিন্তু দেশে প্রকৃতমানে ডাক্তার নেই। এই বৈপরীত্য কী দিয়ে এবং কীভাবে দূর হবে তার সঠিক গাইডেন্স থাকা দরকার। চিকিৎসার জন্য মানুষ ধাবিত হচ্ছে ভারত, থাইল্যান্ড আর সিংগাপুরে। খরচ করছে প্রচুর দেশি মুদ্রা। তাহলে আমরা মেডিকেল সায়েন্সের পিছনে এত টাকা কেন খরচ করছি? কেন প্রতিবছর এত এমবিবিএস তৈরি করছি?

প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নের জন্য ৩৭,৬৭২ জন শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটিকে আমরা স্বাগত জানাই, তবে শিক্ষক নিয়োগ হতে হবে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিমুক্ত। অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপশি বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষাবৃত্তি এবং বিদ্যালয়গৃহ নির্মাণের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাবা সংস্থা এগিয়ে আসতে পারে। এটি ভালো পদক্ষেপ। তিনি তাঁর এই অর্থবছরে বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তিনি বলেছেন এভাবে, “স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার জন্য আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি হবে আরও গণতান্ত্রিক, আরও অংশগ্রহণমূলক, দায়বদ্ধ, স্বচ্ছ এবং দলগত স্বার্থের উর্ধ্বে। বিদ্যালয় কমিটিগুলো হবে পুরোপুরি রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত”। আমরা জানি অর্থমন্ত্রীর উদ্ধৃতির এ অংশটুকু বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাবলীর সিংহভাগেরই সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু কীভাবে তা করা হবে এবং আদৌ তা করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। তবে এতটুকুই আমাদের আশা জাগায় যে, রাজনৈতিকভাবে স্কুল কমিটি গঠনের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে যে চরম অনিয়ম ও ধ্বস নেমেছে তা সরকার উপলব্ধি করতে পারছে।

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version