মোরশেদ হাসান লিখেছেন বিশেষ দিবস ও তারিখবাচক সংখ্যা নিয়ে
– লিমন ভাই, ‘একুশ ফেব্রুয়ারি’ লিখলে কি তা ঠিক আছে?
: কোথায় পেয়েছিস, নীলা ?
– এমন লেখা ফেসবুকে দেখতে পাচ্ছি।
: না, ঠিক নেই।
– আমার কাছে কেমন কেমন যেন লাগছিল। কিন্তু ভুল কোথায়, বা ঠিক কী হবে বুঝতে পারছিলাম না। ভুলটা ঠিক কোথায়, লিমন ভাই?
: নীলা, প্রথমে তোকে আমি জিজ্ঞেস করি। জিজ্ঞেস করারও কিছু নিয়ম আছে। প্রশ্ন করতে হয় একেবারে মূল পয়েন্টে। তোকে আমি প্রশ্ন করি, তুই যে একটি সংখ্যা বললি এটা কী একুশ কেজি আটা, না ঢাকা মেডিকেল কলেজের একবিংশ ব্যাচ, অথবা এটি একটি তারিখ?
– এটি একটি তারিখ।
: এই তো লাইনে চলে এসেছিস। আর আমরাও সঠিক প্রশ্নের মাধ্যমে সঠিক উত্তরে চলে এলাম। অর্থাৎ এটি একটি তারিখবাচক সংখ্যা। আচ্ছা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনকে তুই কী বলিস?
– ১লা ফেব্রুয়ারি।
: সবার সামনে উচ্চারণ করে বললে কী বলবি?
– পহেলা ফেব্রুয়ারি।
: নিশ্চয়ই ‘এক ফেব্রুয়ারি’ কেউ বলে না?
– ওমা! এক ফেব্রুয়ারি কেন বলবে?
: খুব সুন্দর। এক ফেব্রুয়ারি যদি না বলা যায়, তবে ‘একুশ ফেব্রুয়ারি’ কী করে বলা যায়?
– ঠিক বলেছ তো। লিমন ভাই, তুমি না একেবারে মূল পয়েন্টে ধরে ফেলো।
: জি। তারিখবাচক সংখ্যা বলার নিয়ম আছে। সের, কেজি, কিলোমিটারের হিসাবে বললে হবে না। তারিখবাচক শব্দগুলো আমরা সবাই জানি। জানার পরও ঠিক জায়গায় ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি না। তুই বলত তারিখবাচক সংখ্যাগুলো।
– এ তো সহজ। পহেলা, দোসরা, তেসরা, চৌঠা…।
: আচ্ছা থাম। এ চারটি সংখ্যা অন্যরকম না? এমন কেন? কোথা থেকে এসেছে এরূপ?
– মানে, লিমন ভাই! বাংলা না?
: অবশ্যই। এখন তো বাংলা শব্দ। তবে এসেছে হিন্দি থেকে। হিন্দি নিয়মে এ শব্দগুলো গঠিত হয়েছে। বাকি সব তারিখবাচক শব্দ বাংলার নিজস্ব ভঙিতে গঠিত হয়েছে।
– লিমন ভাই, অনেকে তো ‘পয়লা’ বলেন?
: প্রমিত হচ্ছে পহেলা। ‘পয়লা’ শব্দটিকে অপ্রমিত এবং দেশি উচ্চারণ বলতে পারি। বাকিগুলো বলে যা তো। পারবি?
– পারব। পাঁচই, ছয়ই, সাতই, আটই, নয়ই…।
: থাম, নীলা। হল না তো।
– অ্যাঁ, ভুল কোথায়?
: ছয়ই, নয়ই নয়। হবে ছউই, নউই। বাকিগুলো ঠিক আছে। এবার বলে যা।
– এগারোই, বারোই, তেরোই, চৌদ্দই, পনেরোই…।
: ঠিক আছে। এভাবে উনিশে, বিশে, একুশে। এবার বুঝতে পেরেছিস তো ঠিকভাবে বললে আমাদের বলতে হবে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ বা বিশেষ দিবস হিসেবে ‘একুশে’।
– ‘একুশে’ না বললেই ভুল হবে এই তো।
: হ্যাঁ। বিশেষ দিবসগুলো আমাদের তারিখবাচক সংখ্যায় বলতে হবে। যেমন— ২৫শে বৈশাখ বা পঁচিশে বৈশাখ, ২২শে শ্রাবণ বা বাইশে শ্রাবণ, ১১ই জ্যৈষ্ঠ বা এগারোই জ্যৈষ্ঠ, ৭ই মার্চ বা সাতই মার্চ, ২১শে ফেব্রুয়ারি বা একুশে ফেব্রুয়ারি।
– খুব ভালোভাবে বুঝলাম, লিমন ভাই। কিন্তু তারিখ লেখার নিয়ম আসলে কী?
: গদ্যরচনায় লেখার সময় অঙ্কে ১লা, ২রা, ৩রা, ৪ঠা লেখা যাবে না।
– তবে কীভাবে লিখব?
: লিখতে হবে পহেলা, দোসরা, তেসরা, চৌঠা।
– আচ্ছা আমি দিন-মাস-সালসহ একটি তারিখ লিখব। তখন?
: লিখবি ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০। কিন্তু পড়বি বিশে ফেব্রুয়ারি উনিশশো নব্বই। লিখবি ৭ মার্চ ১৯৭১; পড়বি ৭ই মার্চ উনিশোশো একাত্তর।
– মাঝখানে কি কমাচিহ্ন দেব? মানে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯।
: না, এসব ক্ষেত্রে কমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
– আগে যদি ফেব্রুয়ারি লিখি আর পরে অঙ্কে দিন ও সাল লিখি তখন?
: এক্ষেত্রে দিন ও সাল অঙ্কবাচক শব্দ পাশাপাশি চলে এসেছে। সুতরাং, কমা দিয়ে পৃথক করতে হবে। লিখতে হবে, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯; মার্চ ৭, ১৯৭১। আর যদি শতাব্দকে সংক্ষেপে লিখতে চাস, তবে শেষ দুটি সংখ্যা লিখতে হয় এবং তার আগে অনুক্ত বা ঊহ্য দুটি সংখ্যার জন্য একটি ঊর্ধ্বকমা দিতে হবে, তবে সেটি উলটো হবে না। যেমন: ’১৮, ’১৯, ‘২০।
– আচ্ছা।
: এই যে, নীলা উঠছেন কোথায়, বসেন।
– পড়া শেষ হল না?
: কোথায় শেষ হল? সংখ্যা মানে কী, আর সংখ্যাবাচক শব্দ কয় প্রকার, বল?
– তুমি বলো?
: সংখ্যা মানে গণনা, বা গণনা দ্বারা লব্ধ ধারণা। সংখ্যাবাচক শব্দ চার প্রকার—অঙ্কবাচক, পরিমাণ বা গণনাবাচক, ক্রম বা পূরণবাচক এবং তারিখবাচক । বুঝেছিস?
– জি। অঙ্কবাচক শব্দ হল— ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ , ৭, ৮, ৯, ১০। ঠিক আছে, লিমন ভাই?
: ঠিক।
– পরিমাণ বা গণনাবাচক হল— এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো, বারো…।
: থাম, নীলা। তুই খুব ভালোভাবে বলেছিস। অনেকে লেখেন বার, তের— এটি ভুল। লিখতে হবে ও-কার যোগে বারো, তেরো।
– চৌদ্দ কি ও-কার দিয়ে লিখব?
: না, চৌদ্দতে ও-কার নেই। এভাবে পনেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো, উনিশ, বিশ।
– আরেকটি বাকি মনে হয়।
: হ্যাঁ, আরেকটি হল ক্রমবাচক বা পূরণবাচক সংখ্যা। একই সারি, দল বা শ্রেণিতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যার ক্রম বা পর্যায় বোঝাতে ক্রম বা পূরণবাচক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। যেমন, ক্রম অনুযায়ী একজন মা বলেন, এটি আমার দ্বিতীয় সন্তান।
– চমৎকার, লিমন ভাই। এটিই তা হলে ক্রম বা ইংরেজিতে বলে অর্ডার।
: ঠিক বলেছিস। এভাবে উনি বলতে পারেন, এ আমার ষষ্ঠ সন্তান।
– এখন এত সন্তান কেউ নেয় না, লিমন ভাই।
: ঠিক আছে। কিন্তু কোনো ছাত্র তো বলতে পারে সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, আবার কেউ চতুর্থ বা দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে।
– এবার তো শেষ?
: না।
– না মানে?
: এতক্ষণ কথা বলার পর মুখ ফুটে চায়ের কথা বলছিস না? এ কী ধরনের ভদ্রতা, নীলা।
– এটা মহা ভদ্রতা। আচ্ছা, একটু রোসো। আসছি।
: ও বাবা, তুই রোসো বলিস, নীলা!
– কফি খাবে, লিমন ভাই?
: না, চা খাব।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।