বাড়ি শিক্ষাক্রম ও পুস্তক টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সৃজনশীল গাইড বই : দেখার কি কেউ নেই?

টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সৃজনশীল গাইড বই : দেখার কি কেউ নেই?

টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সৃজনশীল গাইড বই; ছবিসূত্র: অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স
টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সৃজনশীল গাইড বই; ছবিসূত্র: অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স

মো. আশরাফুজ্জামান নিয়ে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সৃজনশীল গাইড বই নিয়ে

বিতর্কের সূচনা এখান থেকেই। সরকার গাইড বই তৈরি ও বিক্রি নিষেধ করেছে কিন্তু টিভি খুললেই টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সৃজনশীল গাইড বই নিয়ে বিজ্ঞাপনের হিড়িক। প্রথমেই জানতে চাই, টেলিভিশনের কি এরকম কোনো নীতিমালা নেই যে, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন টিভিতে দেয়া যাবে না? বা এরকম বিজ্ঞাপন প্রচার হলে তাদের জন্য কি কোনো শাস্তির বিধান নেই? আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলো কি সরকারি কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে না? নাকি দেখেও না দেখার ভান করেন তারা? তবে ভালো লাগে যখন দেখি সংবাদিক ভাই ও বোনেরা টিভিতে রিপোর্ট করেন এর বিপক্ষে। আবার অবাক লাগে এই ভেবে, একই টিভিতে গাইড বইয়ের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, আবার বছরের কোনো একসময় তারাই এর বিপক্ষে রিপোর্ট করছেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন চালু হয়েছে তিন বছর ধরে, শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তির বিকাশের জন্য। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী হিসেবে অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম, কিন্তু কী হচ্ছে সেখানে? আসলেই কি শিক্ষার্থীরা চিন্তাশক্তি বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে বাজারে প্রচলিত গাইড বইগুলোর কারণে? পত্রিকার কল্যাণে এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম- অনেক স্কুলে তাদের পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু ছাপিয়ে দেয় সেই সব বাজারে প্রচলিত গাইড বই থেকে এবং শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই সেই সব গাইড বই কিনে পড়তে বলেন। তাহলে শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তির বিকাশ কীভাবে ঘটবে?

আজ সন্ধায় খালা (বাসায় রান্নার কাজ করে দেন) আমাকে বললেন, আমার নাতনি সপ্তম শ্রেণীতে উঠেছে। আপনারা যে যা পারেন আমাকে দিয়ে সাহায্য করবেন, ওর বই কেনা লাগবে। আমি তাকে বললাম, বইতো সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। তিনি আমাকে তখন বললেন, স্কুল থেকে এগারশ টাকার গাইড বই কেনার জন্য লিষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে কিছু বলার ভাষা খুজে পেলাম না।

এসবিএ’র (স্কুল বেইসড অ্যাসেসমেন্ট) মানে যেমন ‘স্যারের বাসায় এসো’ হয়ে গিয়েছিল, তেমনি যেন সৃজনশীল প্রশ্ন ‘গাইড-বই-নির্ভরশীল’ না হয়ে পড়ে। নতুন নতুন পদ্ধতি চালুর সাথে তার বাস্তবায়ন যাতে সঠিকভাবে হয় তাও খেয়াল রাখা উচিত অর্থাৎ নিয়মিত সুপারভিশন ও মনিটরিং করা উচিত। সেই সাথে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর যারা প্রশিক্ষণ দিবেন তাদের যেন শিক্ষা বিষয়ে চার বছরের ডিগ্রি থাকে অথবা প্রশিক্ষকদের যেন ঢাকা বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখনি প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

মো. আশরাফুজ্জামান: এমফিল গবেষক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা

এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version