বাড়ি প্রাথমিক শিক্ষা

প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি: আপনার সন্তান কতটা ভাগ্যবান

প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য লটারি পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে; ছবিসূত্র: প্রথম আলো
প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য লটারি পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে; ছবিসূত্র: প্রথম আলো

মাহফুজুর রহমান মানিক লিখেছেন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি প্রসঙ্গে

প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির ঘোষণা দিলে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। অভিভাবকদের ব্যানারে অনেকে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। অধিকাংশই একে সাধুবাদ জানান। সমকাল ২৭ অক্টোবর এ পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েই প্রধান সম্পাদকীয় করে। চলমান ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিকে সমকাল বলেছে ‘অমানবিক’। যার মাধ্যমে নির্যাতিত হচ্ছে শিশুরা। এ নির্যাতন লাঘবের জন্য হলেও লটারি পদ্ধতি একটি কার্যকর উদ্যোগ। প্রকৃতপক্ষে এ পদ্ধতি কতটা শিশু নির্যাতন লাঘব করবে, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যে অভিভাবকরা তাদের অন্য স্কুলে পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণীর সন্তানদের নামিদামি স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করাতে পারেন, কিংবা কোচিং সেন্টারগুলোতে বছরের পর বছর পড়িয়ে ভর্তি করাতে মরিয়া হন, সে অভিভাবকরা সন্তানদের লটারিতে না টিকলে কীভাবে মেনে নেবেন। অপয়া-অভাগা ভর্ৎসনা থেকে শিশুরা কি আদৌ মুক্তি পাবে?

লটারি পদ্ধতিটি মন্দের ভালো। পক্ষে যুক্তি হিসেবে কোচিং পদ্ধতি বন্ধকরণ কিংবা বয়সের সমতা আনয়ন আসবে। শিশু নির্যাতন বন্ধের কথা আগেই এসেছে। এর বাইরে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দাপট কতটা কমবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। চার লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ভিকারুননিসায় ভর্তির খবর গণমাধ্যমে এসেছে। বলা যায়, লটারি পদ্ধতিতে ভর্তির বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। আর সব স্কুল একসঙ্গে এ পদ্ধতি চালু না করলে কোচিং পদ্ধতি বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোতে চালু হচ্ছে বলে সংবাদপত্রগুলো খবর দিচ্ছে।

বলার বিষয় হচ্ছে, লটারি পদ্ধতিটি ভারত এবং ইংল্যান্ডের কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে চালু আছে। বাংলাদেশে রাজধানীর হলিক্রস, এসওএস হারমেন মেইনার এবং ওয়াইডব্লিউসিসহ কয়েকটি স্কুলে চালু আছে। এটা ঠিক লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টই যার প্রমাণ। শিশুর মেধা নির্ণয় তার শিক্ষাজীবন শুরুর আগে করার কোনো প্রয়োজন নেই। বিষয়টা সমকাল ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের সূত্র ধরে বলেছে, ‘শিক্ষাজীবন শুরুর আগে মেধা যাচাইয়ের প্রশ্ন আসতে পারে না। ভর্তির পর লেখাপড়ার মধ্য দিয়েই একজন ছাত্র বা ছাত্রী মেধাবী হয়ে ওঠে।’ আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষানীতি (৩ অক্টোবর প্রকাশিত) ও প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে।

শিক্ষানীতি অবশ্য শর্ত হিসেবে বেশি প্রতিযোগীর কথা বলেছে। যেখানে শিক্ষানীতি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি সেখানে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিতে পরীক্ষার অনুমতি কোনো শর্ত সাপেক্ষেই মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্বের কোথাও এ পদ্ধতি চালু নেই।

উন্নত বিশ্বে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল জোনিং পদ্ধতি চালু আছে। স্কুল জোনিং হলো এলাকাভিত্তিক স্কুল। নির্দিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থীরা কেবল নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে। অন্য কোনো এলাকার শিক্ষার্থীর ভর্তিরও সুযোগ নেই। সেখানে দরকারও হয় না। কারণ এতে সব প্রতিষ্ঠানের মান সমান থাকে। বাংলাদেশে যে ব্যবস্থাটা আবশ্যক বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে ব্যবস্থা এখনি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তার প্রাথমিক রূপ হতে পারে এ লটারি পদ্ধতি। সব নামিদামি বিদ্যালয় লটারি পদ্ধতি চালু করলে অন্যান্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে মানোন্নয়নের সমতা চলে আসবে। এতে মানসম্মত বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়বে। অভিভাবকরা শুধু নামিদামি কিছু প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কলেজের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যায়। সংখ্যাটা দু-একশ’র বেশি হবে না। এর বাইরে সারাদেশের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের দিকে কারও নজর নেই। প্রশাসনের তরফ থেকেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি নামে অনেক প্রতিষ্ঠান উঠে গেলেও পড়াশোনার মানের তেমন কোনো উন্নতি নেই। লটারি পদ্ধতিতে ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মানের সমতা আনয়ন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বয়সটা যেন সমান হয়। আর সবার সামনে দুর্নীতিমুক্ত লটারি অনুষ্ঠিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ। ইমেইল: mahfuz.du@yahoo.com

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version