বাড়ি সেরা লেখা পুরস্কার ‘শুদ্ধস্বর-বাংলাদেশের শিক্ষা’ ত্রৈমাসিক সেরা লেখা পুরস্কার: জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকের সেরা লেখা- ‘লেখাপড়া...

‘শুদ্ধস্বর-বাংলাদেশের শিক্ষা’ ত্রৈমাসিক সেরা লেখা পুরস্কার: জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকের সেরা লেখা- ‘লেখাপড়া সমাচার: ব্যবহারিক রঙ্গ’

বাংলাদেশের শিক্ষা - ছোট

প্রিয় পাঠক, আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ২০১৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব লেখা ‘বাংলাদেশের শিক্ষা’ ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ‘লেখাপড়া সমাচার: ব্যবহারিক রঙ্গ’ লেখাটি বিচারকের কাছে ত্রৈমাসিক সেরা লেখা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। লেখাটি তৈরি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ইয়ামিন রহমান ইস্ক্রা। আর জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন রিচিং আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর মুশফিকুর রহমান। লেখাটি মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন:

চালকের পেছনে বসলে গাড়ি চালানোর বিষয়ে কতো কথাই না বলা যায়- গাড়ি এত আস্তে চলছে কেন, সামনের গাড়িকে ওভারটেক করা যাচ্ছে না কেন, পেছনের গাড়ি কেন সামনে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যখনই চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়, তখন দেখা যায় গাড়ি চালনা কতো কষ্টের কাজ; কতো হিসেব-নিকেশ করতে হয়। ঠিক এ রকমই আমার মনে হয়েছিল যখন আমাকে বিচারকের দায়িত্ব দেওয়া হলো।

জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকে বেশ কিছু লেখা আমরা পেয়েছি, যার প্রায় সবগুলোই শিক্ষার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা এবং যে লেখাগুলো আমাদের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়াস যোগায়। এর মাঝে যেমন আছে প্রাথমিক স্তরের বইয়ের ভাষা নিয়ে লেখা, তেমনই আছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিদ্যমান সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে লেখা। আবার আছে শিক্ষা আইন, প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রাট, টেকসই উন্নয়ন ও শিক্ষার সম্পর্ক, জেএসসি পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা ও রাজনীতি, বিজ্ঞান শিক্ষার কলাকৌশল ইত্যাদি নিয়ে কথা। তবে সবগুলো লেখা পড়ার পর আমার কাছে যে লেখাটি ত্রৈমাসিক সেরা লেখা মনে হয়েছে তা হলো- লেখাপড়া সমাচার: ব্যবহারিক রঙ্গ। লেখাটির লেখক ইয়ামিন রহমান ইস্ক্রাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

লেখক তাঁর লেখার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘প্র্যাকটিক্যাল অংশ’ নিয়ে তার সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন। মূলত নবম-দশম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীরা এই প্র্যাকটিক্যালের সাথে পরিচিত হয়। যেটা প্রথম দিকে উৎসাহ জাগালেও কিছু প্রক্রিয়ার কারণে পরবর্তীতে তা শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের শিক্ষানীতিতে ব্যবহারিক ক্লাশ ও মূল্যায়নের কৌশল হিসেবে যা বলা হয়েছে তা হলো- ”ব্যবহারিক ক্লাশ ছাড়া বিজ্ঞান শিক্ষা অর্থহীন বলে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতিটি শাখায় নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাশের ব্যবস্থা করা হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার মূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, যেন শিক্ষার্থীদর ঢালাওভাবে নম্বর দেওয়ার সুযোগ না থাকে।” তবে এটা শুধু শিক্ষানীতিতেই আছে, যেমনটা কাজির গরু খাতায় থাকে গোয়াল ঘরে না। কোথাও এই নীতির প্রয়োগ হয় কিনা তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। গবেষকরা গুরুত্বসহকারে এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।

বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্র্যাকটিক্যাল অংশটি বেশ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে যে শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার পরবর্তী ধাপ কী হবে তা নির্ধারণ করা হয়, সেই শিক্ষাব্যবস্থায় প্র্যাকটিক্যাল অংশে থাকা প্রতিটি বিষয়ে ২৫টি নম্বর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষকের গাফিলতির কারণে কিংবা টাকার কারণে অনেকেই এই ২৫-এর মাঝে খুব কম নম্বর পেয়ে থাকে যা তার পরবর্তী শিক্ষা জীবনে প্রভাব ফেলে। যা মোটেই কাম্য নয়।

আমরা অনেকেই শিক্ষাব্যবস্থার অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা করি, কিন্তু আমি এই প্র্যাকটিক্যাল অংশ নিয়ে খুব কম আলোচনাই দেখেছি। যতদিন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নম্বর কম-বেশি পাওয়া পরবর্তীতে কোথায়ও ভর্তি হওয়াতে ভুমিকা রাখবে, ততদিন এই প্র্যাকটিক্যাল অংশটি দারুণভাবে প্রভাব ফেলবে। আর তাই কর্তৃপক্ষকে নতুন করে প্র্যাকটিক্যাল অংশটি নিয়ে ভাবতে হবে। কী করে এর সমাধান করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

লেখক তাঁর লেখাতে এ বিষয়গুলোই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। একজন শিক্ষার্থীর প্র্যাকটিক্যাল নিয়ে আগ্রহ পরবর্তীতে শিক্ষকদের কথা শুনে সেই আগ্রহের মৃত্যু, প্র্যাকটিক্যাল নিয়ে শিক্ষকদের দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের নানাজনের কাছে প্রাইভেট পড়ার হয়রানি, নম্বরপ্রাপ্তিতে বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়গুলো তাঁর লেখায় আমরা খুঁজে পাই।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্র্যাকটিক্যাল অংশ নিয়ে লেখকের মতামতের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমার মনে হয়, এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আরো একবার ভাবা উচিত। বিশেষ করে শিক্ষার নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিশেষজ্ঞ, শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন এমন যে কেউ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সবারই এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা উচিত। সবাই মিলে এমন একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরাও হাতেকলমে বিজ্ঞান শিক্ষার বিষয়গুলো অনুশীলনী করতে পারে আবার পরীক্ষায় কিছু নম্বরের ব্যবস্থা করা দরকার যাতে শিক্ষার্থীরা ফাঁকিও দিতে না পারে। আর এর জন্য দরকার সংশ্লিষ্ট সকলের একটু নজরদারি ও মানসিকতার পরিবর্তন।

বিচারক মুশফিকুর রহমানের নির্বাচন অনুসারে জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকে ত্রৈমাসিক সেরা লেখা জন্য পুরস্কারের দাবিদার হলেন ইয়ামিন রহমান ইস্ক্রা। লেখককে অভিনন্দন! আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে তাঁর শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের নীতিগত ও প্রায়োগিক বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। শিগগিরই লেখকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত ও আমাদের নির্বাচিত ৫০০ টাকা সমমানের অমূল্য উপহার- বই।

আমরা একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাতে চাই বিচারক মুশফিকুর রহমানকেও যিনি তাঁর মূল্যবান সময় বের করে প্রতিটি লেখা পড়েছেন এবং ত্রৈমাসিক সেরা লেখা নির্বাচন করেছেন। পাশাপাশি তিনি সেরা লেখা নির্বাচনের যে চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি থেকেও আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যবহারিক দিকটির সঙ্গে লেখক যে ভাবনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের পাঠকদের, বিচারক সেটিকে তাঁর নিজ উপলব্ধি থেকে মিলিয়ে পুরো বক্তব্যটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন। বিচারকের প্রতি রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতা।

নিচে পাঠকদের সুবিধার জন্য লেখকের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

ইয়ামিন রহমান ইস্ক্রা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে সম্মান প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের সাইট, ব্লগ ও বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন।

ঘোষণা

চলতি প্রান্তিক অর্থাৎ ২০১৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকের জন্যও ত্রৈমাসিক সেরা লেখা নির্ধারণে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন মুশফিকুর রহমান। এই দায়িত্বটি পালন করতে সম্মত হওয়ায় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমাদের এই উদ্যোগ বা পুরস্কার সম্পর্কে আপনাদের কোনো প্রশ্ন, মতামত বা পরামর্শ থাকলে এখানে জানাতে পারেন। আশা করছি, এই উদ্যোগের প্রতিটি পর্যায়ে আপনাদেরকে আমরা সাথে পাবো। ধন্যবাদ।

1 মন্তব্য

  1. পুরষ্কারপ্রাপ্তি অবশ্যই আনন্দের বিষয়, বিশেষ করে পুরষ্কারটা বই হওয়ায় আরও আনন্দের বিষয় হয়েছে। ব্যবহারিক রঙ্গ- লেখাটা আমি ইলেভেনে পড়ার সময় লিখেছিলাম; আমি নিজে যে অভিজ্ঞতা পেয়েছি তা নিয়ে লেখা। লেখাটা বিচারকের দৃষ্টিতে সেরা হয়েছে ভেবে অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছি।

    এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version