বাড়ি গৃহশিক্ষকতা

প্রাইভেট কোচিং সঠিক জ্ঞানার্জনের পথে অন্তরায়

বাংলাদেশের শিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষা

গত ২১ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকার ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে তার অফিসে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। উপস্থিত প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সকলেই শিক্ষকদের কর্তৃক পরিচালিত প্রাইভেট কোচিং ব্যবসা করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। মন্ত্রী বাস্তব একটি উত্তর দিয়েছেন যে, হুট করে এই মূহুর্তে কোচিং বন্ধ করা যাবে না কারণ এটি অনেক গভীরে ঢুকে গেছে। তাছাড়া শিক্ষকগণ ক্লাসে পুরো পাঠ শেষ করেন না। অতএব এই মুহুর্তে প্রাইভেট কোচিং করে দিলে ছাত্রছাত্রী বা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

দেশের আনাচেকানাচে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের কোচিং সেন্টারগুলো আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে ধবংস করতে বসেছে। শুধু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিকল্প নয় বরং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতিদ্বন্দ্বিরূপে আবির্ভূত হয়েছে এই শিক্ষাদানরূপী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন প্রশ্ন হচেছ কেন এইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে? নিশ্চয়ই সময়ের দাবীতে এবং সময়ের প্রয়োজনে। আমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে পারেনি এবং তাদরকে স্কুল ও কলেজের প্রতি আগ্রহী করতে পারেনি। তাই ছাত্রছাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলোতে। স্কুল-কলেজের ক্লাসরুম ফাঁকা অথচ ভিড় সব কোচিং সেন্টারগুলোতে কিংবা শিক্ষকদের বাসায়। স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রী রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে — শারীরিক ও অর্থনৈতিক শাস্তি; তারপরেও সন্তোষজনক উপস্থিতি নেই ক্লাসে। দিন দিন প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে এবং এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মত যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ভুমিকা পালন করতে পারেনি বিধায় অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হয়েছে। ব্যতিক্রম ছাড়া কোচিংগুলো তাদের সে প্রত্যাশা পুরণে সফলও হয়েছে আর তাই এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। দিনে দিনে এর ভিত হয়েছে মজবুত এবং শক্ত। কারণ ছাড়া কোন কিছুই হয় না। সময় এবং প্রয়োজন জন্ম দিয়েছে এইসব কোচিং সেন্টারের কাজেই বৃহৎ কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া হুট করে এই সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া যাবে না।

কোচিং সেন্টারগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে অনেক বেকার তরুণ, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা। অনেকের রুটিরোজগারের ব্যবস্থা হয় এখান থেকে, তবে রুটিরোজগার যেন অবৈধ পন্থায় না হয় সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। কোচিং সেন্টারগুলো যদি স্কুল ও কলেজের বিকল্প হয় তাহলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কী ভুমিকা আছে? শুধু কি সার্টিফিকেট অর্জন করার মাধ্যম? আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, সেটি হচ্ছে ছেলেমেয়েরা দিবসের বড় অংশ কাটায় স্কুল ও কলেজে তারপর যদি আবারও কোচিং সেন্টারে গিয়ে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতে হয় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে- এত সময় তাদের কোথায়?

প্রাইভেটের প্রতি নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য আমরা বাস্তবমুখী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনটি টার্ম পরীক্ষা হবে। প্রতিটি টার্ম পরীক্ষার খাতা ইন্টার-স্কুল এবং ইন্টার-কলেজ শিক্ষকগণ পরীক্ষণ করবেন না। নিজস্ব স্কুল কিংবা কলেজের টিচার কোন খাতা মূল্যায়ন করবেন না। খাতা মূল্যায়ন করার জন্য শিক্ষকদের সম্মানী থাকবে। তাহলে তারা খাতাও ভালভাবে দেখবেন এবং শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে; কারণ খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের দেখানো উচিত যাতে তারা তাদের ভুলটি ধরতে পারে এবং শোধরাতে পারে যে কাজটি এখন অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই হয় না। আর খাতা মূল্যায়নও প্রাইভেট প্রাকটিসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যে শিক্ষকগণ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন স্কুল ও কলেজের উক্ত শিক্ষকদের পেছনে পেছনে ছাত্রছাত্রীরা ভীড় জমায়। আর যারা ভীড় জমায় তারাই ঐ শিক্ষকের কাছে বেশি নম্বর পায়, অতএব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই ঐসব শিক্ষকদের পিছনে দৌড়ান। একই স্কুলের কিংবা কলেজের শিক্ষক প্রশ্নপত্রও প্রণয়ন করবেন না। অন্য স্কুল কিংবা কলেজের শিক্ষক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করবেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা এক ধরনের দক্ষতা, এই দক্ষতা সবার থাকে না। প্রশ্ন করে করে শিক্ষকদের এই দক্ষতা অর্জন করতে হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার জন্য শিক্ষকদের যথাযথ সম্মানী থাকবে। শিক্ষকগন প্রাইভেট পড়াতে পড়াতে তাদের ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট করে ফেলেছেন। এখন তারা প্রশ্নও তৈরি করতে পারেন না, প্রশ্ন হুবহু গাইড বই কিংবা টেস্ট পেপারস থেকে তুলে দেন।

ইন্টারনাল পরীক্ষাগুলোতে এক স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা অন্য স্কুল ও কলেজে পরীক্ষা নিতে যাবেন। তা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের কর্মপরিধিও বৃদ্ধি পাবে। এতে শিক্ষকদের মন উদার হবে এবং প্রাইভেট পড়ার প্রবণতাও কমে যাবে।

নিজের স্কুল কিংবা কলেজের প্রশ্ন করলে কয়েক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যে শিক্ষক প্রশ্নপত্র তৈরি করেন দেখা যায় ছাত্রছাত্রীরা তার পেছনে ঘুর ঘুর করতে থাকে, তার বাসায় দেখা যায় আর একটি স্কুল কিংবা কলেজ। অনেক শিক্ষক আছেন তারা নীতি-নৈতিকতার মাথা খেয়ে ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেন। পরবর্তী পরীক্ষার পূর্বে দেখা যায় উক্ত টিচারের বাসায় আরও ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। এই দৃশ্য এবং ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট। অথচ এর কোন সুরাহা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেউই কোন কথা বলছেন না এই সেনসেটিভ বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু এটি ঘটছে।

শিক্ষকদেরও অর্থের প্রয়োজন আছে। যুগ পাল্টেছে, এখন আর সেই সময় নেই যে শিক্ষকগণ বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান করবেন। আবার এটিও ঠিক শিক্ষকগণ আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হবেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে জ্ঞানের চর্চা হচ্ছে তার সাথে পরিচিত হবেন। কিন্তু শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোটাকে এমনভাবে আকড়ে ধরেছেন যে কোনভাবেই তাদের আর তা করা হচ্ছে না। আর এই প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে কোনো কোনো শিক্ষক কিছুটা অসততার আশ্রয় নিচ্ছেন। যারা নিচ্ছেন তাদের সংখ্যা খুব কম কিন্তু দোষটা পড়ছে পুরো শিক্ষক সমাজের ওপর। তার চেয়েও বড় কথা হলো- যে উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেয়া হয় পরীক্ষার সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। এই অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। এক স্কুল কিংবা কলেজের প্রশ্নপত্র অন্য স্কুল কিংবা কলেজের শিক্ষকগণ করলে ছাত্রছাত্রীদের অরিজিনালিটি যাচাই করা যায় এবং ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হয়। যে কারণে সেটি তখন আর তেমন গুরুত্ব পাবে না। কোন স্কুলের এবং কলেজের প্রশ্নপত্র কোন স্কুল কিংবা কলেজ করবেন তা উক্ত স্কুল ও কলেজের প্রধানগণ সিদ্ধান্ত নিবেন। ব্যাপারটি সমন্বয় করবেন শিক্ষা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ কিংবা স্কুল ও কলেজ প্রধানগণ নিজেরাই। উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা গুণগত পরিবর্তন আনতে পারি, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের কোচিং-এর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারি।

কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীরা কঠিন বিষয়গুলো শিখতে একটি নিদিষ্ট সময় যেমন দু বা তিন মাস যেতে পারে। কিন্তু দেখা যায় সব বিষয়ই শিক্ষার্থীরা কোচিং-এ কিংবা টিচারদের বাসয় পড়তে যাচ্ছে বারো মাসই। তাদের মনে রাখতে হবে যে, হাতুড়ে ডাক্তার দ্বারা যেমন কোন চিকিৎসা হয় না বরং রোগ বেড়ে যাওয়া বা বিপদজনক দিকে টার্ন করানোর সম্ভাবনা থাকে বেশি; ঠিক একইভাবে তথাকথিত কোচিং সেন্টারগুলোতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কোনো শিক্ষক নেই। বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড টানিয়ে এবং পত্রিকার পাতা ভর্তি করে বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছে এদের রমরমা ব্যবসা। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কারণ এসব জায়গায় অন্তত কিছু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

স্কুলে যখন পড়তাম তখন ভাবতাম যে যতো বেশি কঠিন ভয়েস চেইঞ্জ করতে এবং উক্তি পরিবর্তন করতে পারে সে ততো ভালো ইংরেজি জানে বা ভালো ইংরেজির শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হলাম দেখলাম ব্যাপার পুরো আলাদা। ক্যাডেট কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে ইংরেজি পড়াতে গিয়ে অনেক কিছু টের পেলাম। আবার যখন ইএলটির ওপর প্রশিক্ষণ নিলাম তখন দেখলাম ভাষা সম্পর্কে সেটি আবার আরেক জগত। কোচিং সেন্টারগুলোতে কারা পড়াচ্ছেন ইংরেজি? কলেজ পর্যায়েই নেই ভাষা পড়ানোর মত শিক্ষক। বেকার কিছু ছাত্র-ছাত্র কিংবা স্কুলের পুরনো ধ্যানধারণার কিছু শিক্ষক ইংরেজি পড়াচেছন কোচিং সেন্টারগুলোতে। আর স্কুল পর্যায়ের কিছু তথাকথিত নামকরা শিক্ষক যাদের ভাষা শেখানো সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই তারা পড়াচ্ছেন ইংরেজি। এসব শিক্ষকগণের মধ্যে অনেকেই জানেন না শিক্ষার্থী কিংবা বয়স্ক শিক্ষার্থীদের আধুনিক পদ্ধতিতে কীভাবে ইংরেজি পড়াতে হয়। তারা শুধু জানেন কীভাবে কঠিন কঠিন গ্রামারের নিয়ম পড়ানো যায়। কীভাবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করা যায়, কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিজেদের ইংরেজি লেখার ও বলার অভ্যাস করাতে হবে তা তারা জানেন না বা প্রাকটিসও করান না।

কোচিং সেন্টারে যারা ইংরেজি পড়ান আমি তাদের কয়েকজনকে প্রশ্ন করেছি তারা কোনো ইংরেজি পত্রিকা পড়েন কিনা। অবাক কাণ্ড তাদের অনেকেই ইংরেজি পত্রিকা পড়েন না। অথচ ইংরেজি শেখার জন্য বা শেখানোর জন্য ইংরেজি পত্রিকা পড়া খুবই দরকার এবং এটি একটি সঠিক লার্নিং ম্যাটেরিয়াল। ইংরেজি ভাষার চারটি দক্ষতার মধ্যে মাত্র দুটো দক্ষতার পরীক্ষা হয় আমাদের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে এবং তার উপরই আমরা ছাত্রছাত্রীদের গ্রেডিং করে থাকি এবং সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকি যে সে, ইংরেজিতে খুবই ভালো। ইংরেজিতে এ+ পাওয়া মানে ৮০% কিংবা তার বেশি মার্কস পাওয়া অর্থাৎ এ ধরনের একজন ছাত্র বা ছাত্রী ইংরেজিতে খুবই ভালো। সে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে, তার জানা যে কোন বিষয়ে লিখতে পারবে, ইংরেজি শুনে বুঝতে পারবে এবং ইংরেজিতে লেখা যে কোন বিষয় বুঝতে পারবে। কিন্তু আমাদের এ+ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান কোথায় তা পাঠকই বিবেচনা করবেন। কোচিং সেন্টারগুলোতে যদি বাকি দুটো দক্ষতার ওপর কোনো ধরনের গুরুত্বারোপ করতো কিংবা সঠিক কোনো ব্যবস্থা নিতো তাহলে বুঝতাম যে, তারা কিছু একটা করছে। তা তো না, তারা সিলেবাস অনুযায়ী একই ধারায় এগুচ্ছে। ইংরেজির আন্তর্জাতিক টেস্টিং সিস্টেম ও সার্ভিসগুলো (IELTS, TOEFL) চারটি দক্ষতার উপরই পরীক্ষা নেয় এবং সে অনুযায়ী গ্রেডিং করে থাকে।

ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা কোচিং-এর শরণাপন্ন হন কারণ স্কুল কিংবা কলেজে একই ক্লাসে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকে বলে দুর্বল এবং অধিক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্ব পায় না। তারা মনে করে বিশেষ কোনো কোচিং-এ গেলে তারা উপযুক্ত গুরুত্ব পাবে। কিন্তু এখানে অবস্থা তো আরও খারাপ। স্কুলে শিক্ষকগণ অন্তত সিলেবাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের- যদিও আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন একটা নেই। কোচিং-এ যা হয় তা হলো- একই বিষয় চেপে ধরে বারবার মুখস্থ করানো হয় আর বারবার পরীক্ষা নেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিষয়টি মোটেই আকর্ষণীয় নয় এবং এই বিষয়টি একেবারেই সৃজনশীল নয়। সৃজনশীল না হলে এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে স্থান করে নেয়া খুবই কঠিন। দেখা যায় অনেক ছাত্রছাত্রী অনেক ভালো ফলাফল করেও ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না কিংবা ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পায় না, কয়েকটি কারণের মধ্যে সৃজনশীলতার অভাব একটি। তাই ছাত্রছাত্রীদের কোচিংমুখী না করে বাসায় পড়ানো, নিজেরা একটু সময় দেয়া, ইংরেজি ও বাংলা পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলানো উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আশরাফুল ইসলাম কোচিং সেন্টার সম্পর্কে বলেন, “কোচিং সেন্টারগুলো ইংরেজি ভাষার দৈন্যদশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেন্টারগুলো পরীক্ষা পাশের জন্য কিংবা বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত পথ দেখিয়ে দেয় যা ছাত্রছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরেজি বিভাগের প্রফেসর মনজুরুল ইসলাম বলেন, “আমি একদিন কোনো এক কোচিং সেন্টারের পরিচালককে ইংরেজি ক্লাস নিতে দেখলাম। ঐ একটি ক্লাসের মধ্যে সে সাতটি ভুল ইংরেজি শিখিয়েছে।” মীরপুর বাংলা হাইস্কুলের একজন শিক্ষার্থী বলছে, “ ইংরেজি ক্লাস আদৌ আকর্ষণীয় নয়, ভীষন বোরিং।” আসলেই তাই, শুধু ধরাবাধা কিছু গ্রামারের নিয়ম শিক্ষকগণ দিনের পর দিন পড়ান যা শিক্ষার্র্থীদের একেবারেই আকর্ষণ করে না। ফলে ছাত্রছাত্রীরা কোচিং-এ ভর্তি হয়, কিন্তু এখানকার অবস্থাও একই। কোথায় যাব আমরা?

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version