উন্নত বিশ্বের উন্নত জীবন, পরিপাটি রাস্তাঘাট, নিরাপদ ও নিশ্চিত সামাজিক অবস্থা বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আর তাই অজানার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ওপারে পাড়ি জমাচ্ছে। গ্রেট ব্রিটেন, সাইপ্রাস, ইটালি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, অস্ট্রিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা যাচ্ছে। আসল উদ্দেশ্য যে শুধু পড়াশুনা তা নয়; জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, দেশের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে তারা ঐসব দেশে পাড়ি জমায়। আর ঐসব ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে পাঠানোর নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে দেশে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বিদেশে কেমন আছে?
দেশের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় (বেসরকারি) শিক্ষার্থীদের এক ধরনের টোপ দিয়েই ভর্তি করান যে, ক্রেডিট ট্রান্সফার করে শিক্ষার্থীরা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। তারা ছাত্রছাত্রীর পালস বুঝে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। ইন্টারনেটের যখন খুব একটা প্রচলন আমাদের দেশে শুরু হয়নি, তখন বিদেশে ছাত্রছাত্রী পাঠানোর এজেন্সিগুলোর দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ছাত্রছাত্রীর বিদেশে চলে যেত। এখন ইন্টারনেটের সুবিধা থাকায় তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির খোঁজখবর নিয়ে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে ভর্তি হচ্ছে আর বিদেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেটে সব সময়ই খুব ভালো চিত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলা হয়। বিদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ধরনের সমস্যা আছে যেগুলো তারা ইন্টারনেটে দেয় না, আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা ঐসব বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ ভর্তি হয়ে প্রচুর সমস্যায় পড়ে। গ্রেট ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশের উপার্জনের একটি পথ হচ্ছে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে দেওয়া। কোন প্রতিষ্ঠানের খারাপ বা দুর্বল দিকগুলো কখনও ইন্টারনেটে দেওয়া হয় না বিধায় বিদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রকৃত অবস্থা তারা বুঝতে পারে না। অনেকে গিয়ে তাই হাজার সমস্যার মুখোমুখি হয় ।
ব্রিটেনে টিআইইআর-৪ ভিসা পদ্ধতির অপব্যবহার করে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ব্রিটেনে চলে যায়। ২০০৯ সালে এটি চালু হয়। এসব ছাত্রছাত্রীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পাওয়ার কথা, আসলে তা পায় না। হালে যারা স্টুডেন্ট ভিসা পাচ্ছে, বিশেষত ডিগ্রি লেভেলের নিচে, তারা মাত্র ১০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পায়। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই ডিগ্রি লেভেলে নিচের ভিসায় ব্রিটেনে যাচ্ছে, কাজ পাচ্ছে না। নতুন সেমিস্টারে ভর্তি হতে দুই হাজার পাঁচশত পাউন্ড জমা দিতে হয়। একটু ভালো কলেজ হলে তিন বা চার বা তারও বেশি ফি জমা দিতে হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীই এত টাকা জমা করতে পারে না বিধায় কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওখানে কাজ পেতে হলে যে ভাষাগত দক্ষতা থাকা দরকার, তা নেই অনেকেরই। ফলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা অন্যত্র কাজ পায় না সহজে। সেসব স্টুডেন্ট ব্রিটেনে গিয়েছে, তাদের মধ্যে দশ শতাংশ ওখানকার পড়াশোনার উপযুক্ত। তারপরেও তারা যাচ্ছে। কোর্সের সাথে সামলাতে পারছে না। কোন প্রতিষ্ঠানে অবৈধ শ্রমিক খুঁজে পেলে সর্বোচ্চ দশ হাজার পাউন্ড জরিমানা দিতে হয় ঐ প্রতিষ্ঠানকে। অতএব জেনেশুনে কোন প্রতিষ্ঠান এই রিস্ক নিতে রাজি হয় না, ফলে ভুয়া ছাত্ররা কিংবা ইংরেজিতে যারা কমিউনিকেট করতে পারে না, তারা কাজ পায় না ।
২০০৯ সালে ইউকে পয়েন্ট বেইজড সিস্টেমের (টিয়ার-৪) আওতায় মোট এক হাজার ৯৮৭টি কলেজের লাইসেন্স বাতিল করেছে ব্রিটেন সরকার। এর মধ্যে ২০০ কলেজের মালিক বাংলাদেশী বংশদ্ভোত এবং পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে ছিল। ইউকে বোর্ডার ফোর্স গত বছরের মধ্যে জানুয়ারিতে বাংলাদেশি মালিকানায় ৬৮টি কলেজের স্পন্সর লাইসেন্স বাতিল করেছে। মালিকরা এ নিয়ে শঙ্কিত (১৫ মার্চ, কালের কন্ঠ, ফারুক যোশী)। অনেক ছাত্রছাত্রী অবৈধ পথে ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানিতে পাড়ি জমাচ্ছে। অবৈধ পথে উন্নত বিশ্বে ঢুকতে গিয়ে অনেকের সলিল সমাধি ঘটেছে। তারপরেও থেমে নেই বিদেশে শিক্ষার্থীর যাওয়ার স্রোত।
জাপানে ভুয়া ছাত্রদের বলা হয ”উছো গাখছাই’। উছো গাখছাইদের খোঁজে জাপানি গোয়েন্দা পুলিশেরা বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে তল্লাশি চালায়। সনাক্ত করে এদের পরে দেশে পাঠিয়ে দেয়। জাপানি পুলিশ যেহেতু একটু ভদ্র, তাই তারা ভুয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রথমে দেশে চলে যেতে অনুরোধ করে, না গেলে অ্যারেস্ট করে।
আমাদের দেশ থেকে যেসব ছাত্র বিভিন্ন দেশে যায় তারা স্বভাবতই দেশের স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়ে। অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ে অনেক আদরে মানুষ হয়েছে, গোসল করার পরে কাপড়টিও নিজে ধোয় নি। এসব ছেলে-মেয়েরা বিদেশে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করে, গভীররাতে বাসায় ফিরে আবার রান্না করে। দেশে থেকে যদি এরা এর অর্ধেক পরিশ্রমও করত তা হলে দেশের চেহেরা অনেকটাই পাল্টে যেত। আমার জানামতে অনেক ছাত্র আছে যাদের ইতোমধ্যে ঢাকায় বাড়িঘর আছে, ব্যবসা আছে, তারা লন্ডনে গিয়েছে পড়তে। মাঝে মাঝে ফোন করে বলে, স্যার ফলের দোকানে কাজ করছি। অথচ এরা ঢাকায় থাকতে নিজে ফল কখনও কিনেও খায় নি, বাসার লোকজন যা কিনত, তাই খেত। লন্ডন নামের জায়গটি তাদের আকর্ষণ করে বলে সেখানে যায়। আমার এক সহকর্মীর একমাত্র ছেলে সাইপ্রাসে গিয়েছিল পড়তে, বছরখানেক পড়ে অজানা এক কারণে লাশ হয়ে দেশে ফিরছে। আজও কেউ জানতে পারে নি আসলে তার কী হয়েছিল।
আমাদের ছোট এই দেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভার যেন আর সইতে পারছে না। দেশও আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না উঠতি বয়সের বিদেশগামী এইসব যুবকদের দেশে রাখতে। একদিকে অবশ্য দেশের জন্য ভালো কারণ চাকুরির বাজারের ওপর চাপ কমছে। দ্বিতীয়ত, তারা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্র পাঠাচ্ছে, কমবেশি যাই হোক। অতএব এসব ছাত্রছাত্রীর ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও সঠিক কিছু পদক্ষেপ এবং নীতিমালা তৈরি করা দরকার। শুধু এজেন্সিগুলোর ওপর নির্ভরশীল না হওয়া উচিত। তবে রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা করতে গেলেই সেখানে দুর্নীতি আর অপদস্থতা এসে হাজির হয়, এ ব্যাপারটি গভীরভাবে দেখতে হবে সরকারকে। সর্বোপরি, আমাদের দেশের মিশনগুলোর উচিত দেশের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া। কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ছে তার খোঁজখবর নেওয়া, ঐসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলা এবং দেশকে সময় সময় আপটেড রাখা যাতে পরবর্তী সময়ে যারা যাচ্ছে তারা যাতে অন্ধকারে ঝাঁপ না দেয়। পার্টটাইম কাজের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সরকারগুলোর সাথেও কথা বলা উচিত। আমাদের বিদেশি মিশনগুলোর মনে রাখা উচিত, তারা দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বিদেশে মিশনে চাকরি করছেন, আর বিদেশে যারা কাজ করছেন বা পড়াশুনা করছেন তারা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখছে। বিদেশে শিক্ষা এবং কাজের বাজার আমাদের বাড়াতেই হবে, দেশের স্বার্থে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক পরিচিতি
মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।
Mr. Masum, just read your post. its really good to know that you r thinking about the Bangladeshi students who are studying abroad. but your comments are some what partial. as you have only focused the students who are studying in so-called business colleges and/or staying illegally. it should be mentioned here that a significant number of Bangladeshi students are studying in reputed universities in many developed countries including UK, Australia and US. most of them are studying by either Govt. scholarship or private (uni provided scholarship). And their performances are remarkably good. I am commenting according to personal experience. therefore i would like to request you not to comment anything generally and basing upon partial truth.
thanking you
regards
Fharia Tilat Loba
Well, I like your article but it can be more focused about the awareness of the students and how can they escape from so-called universities, because besides these illegal students we have many legal students around the world and they are doing excellent over there and for the country as well.