বাড়ি শিক্ষাক্রম ও পুস্তক

বিজ্ঞান চেতনা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন বিজ্ঞান শিখছে শিশুরা?

বাংলাদেশের শিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষা

নাহিদ নলেজ বিজ্ঞান চেতনা নিয়ে

প্রাথমিক শিক্ষা কী- এ সম্পর্কে বিস্তর কথাবার্তা আমাদের সবার জানা। সেই প্রাথমিক শিক্ষাটুকুই যদি গলদপূর্ণ হয়, তাহলে আর কী কথা থাকে! যে দেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর, যে দেশের অধিকাংশ শিশুই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে, সে দেশের পুরো চিন্তার জগৎ, জনগণের বৌদ্ধিক স্তর, তার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির হালহকিকত কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, সেই ভবিষ্যৎই বা কেমন হবে? বিজ্ঞানচেতনা, নবমবর্ষ, প্রথম-দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়রি-জুন ২০০৪-এ প্রকাশিত ‘বিজ্ঞানের প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকগুলো কি বিজ্ঞানমস্কতা সৃষ্টিতে সহায়ক’ শিরোনামে মাহবুবুর রহমানের লেখা প্রবন্ধটিই খুব সম্ভব একমাত্র প্রবন্ধ যেটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে লেখা। হয়তো আরো লেখা থাকতে পারে, যা আমার পড়া হয়ে উঠে নি ।

বিজ্ঞান কী? ‘বিজ্ঞান হচ্ছে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে যুক্তিসমৃদ্ধ,পরীক্ষণ সম্ভব, ব্যক্তি- নিরপেক্ষ জ্ঞান।’ যুক্তিসমৃদ্ধ অর্থ হলো বিজ্ঞানের যুক্তি প্রয়োগের চারটি পদ্ধতির কোনো একটি ব্যবহার করা হয়েছে। পরীক্ষণ-সম্ভব অর্থ হলো বিজ্ঞানী নিজে যে পরীক্ষণ করেছেন অন্যরা তা যাচাই করতে পারবেন। পৃথিবীর যে কোনো গবেষণাগারে সে পরীক্ষণের ফল একই হবে। ব্যক্তি-নিরপেক্ষ অর্থ হলো গবেষকের ধর্ম বা দার্শনিক মতের সাথে বৈজ্ঞানিক সূত্র বা বর্ণনা সম্পর্কহীন হবে।

কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পিছনে থাকে তিনটি বিষয়: (১)সামাজিক শর্ত বা চাহিদা (২) আইডিওলজি ও (৩) প্রতিভা। এ সম্পর্কে মাহবুবুর রহমান বলেছেন,‘বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে সামাজিক চাহিদা। কৃষি জমি ভাগ বাটোয়ারার প্রয়োজন থেকেই মিশরে জ্যামিতির উদ্ভব ঘটে। মিশরে আবাদ যোগ্য জমির তীব্র চাহিদা থেকেই এ অঞ্চলে জ্যামিতির উদ্ভব ঘটেছে। আধুনিক মিশরের ১০ শতাংশেরও কম ভূমি আবাদ যোগ্য এবং প্রাচীন মিশরে শুধু নীল নদে বন্যার পর জমিতে আবাদ করা যেতো, অন্য সময়ে নয়। যে বছর নদীতে বন্যা হত না, সে বছর নিষ্ফলা যেত।’

জ্যামিতি শব্দের অর্থ জমি পরিমাপ (গ্রিক গেওমিয়েত্রিয়া) যা এ মতকেই সমর্থন করছে। ইউক্লিড ছিলেন বর্তমান মিশরের আলেজান্দ্রিয়ার অধিবাসী। ভূমি পরিমাপের প্রয়োজন থেকেই মিশরে ইউক্লিডের মতো জ্যামিতি বিশারদের আর্বির্ভাব ঘটেছে।

সাম্প্রতিক একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ওয়াহিদউজ্জামান এবং তাঁর সহকারীরা আবিস্কার করেছেন- হেলেঞ্চা, দুর্বাঘাস, মালঞ্চ, ফার্ন প্রভৃতি উদ্ভিদ মাটি থেকে আর্সেনিক শুষে নেয়। আর্সেনিকদূষিত এলাকায় এরকম ঘটে। বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত এবং প্রতিকারের উপায় খুঁজছে সেসব দেশেই এ আবিষ্কার ঘটা সম্ভব। অর্থাৎ সামাজিক শর্ত নির্ধারণ করে আবিস্কারের প্রকৃতি। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একই সামাজিক শর্ত বিদ্যমান থাকতে পারে। সেজন্য বিজ্ঞানের ইতিহাসে দেখা যায়, একই আবিষ্কার নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন একাধিক বিজ্ঞানী। চার্লস ডারউইন এবং রাসেল ওয়ালেস স্বতন্ত্রভাবে জৈব বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বে উপনীত হয়েছেন। লাইবনিৎস ও নিউটন স্বতন্ত্রভাবে ক্যালকুলাস আবিস্কার করেছেন। সামাজিক শর্ত অনুপস্থিত থাকার কারণেই আর্কিমিডিস ক্যালকুলাসের জনক হতে পারেন নি। ক্যাথোড রশ্মির ধর্ম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে রান্টজেনের মতো অন্য বিজ্ঞানীও এক্স-রে আবিস্কার করে বসেছেন। অনেক সময় তাঁরা বুঝতে পারেন নি কেনো ফটোগ্রাফিক প্লেট নিজে নিজে এক্সপোজড হয়ে গেল (যেমন স্যার উইলিয়াম ক্রক্স)। জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী ফিলিপ লেনার্ড স্বতন্ত্রভাবে এক্স-রে আবিস্কার করেন এবং রান্টজেনের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ নিয়ে আসেন। হিটলারের সময় পদার্থ বিজ্ঞানের বইয়ে এক্স-র-এর পরিবর্তে লেনার্ড-রে লেখা হতো। ইউক্রেনের পদার্থ বিজ্ঞানী আইভান পাওলোভিচ পুলুজ রান্টজেনের ৬ বছর আগে ১৮৮৯ সালে লক্ষ্য করেন ক্যাথোড রে-এর পাশে ফটোগ্রাফিক প্লেট রাখা হলে তা নিজে নিজে এক্সপোজড হয়ে যায়। কিন্তু এ পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করে এক্স-রে বা নতুন কোনো রশ্মি আবিষ্কার তিনি করতে পারেন নি। আসলে সঠিক আইডিওলজির অভাবে পুলুজ নুতন এ রশ্মি আবিষ্কার তিনি করতে পারলেন না। একই কথা বলা যায় স্যার ইউলিয়াম ক্রুক্স-এর ক্ষেত্রে । ক্যাথোড রশ্মি বাতাসের মধ্যে চলতে পারে। কোনো রশ্মি ফটোগ্রাফিক প্লেটকে এক্সপোজড করতে পারে, তারা সে চিন্তা করতে পারেন নি। কিন্তু রান্টজেন চিন্তা করেছিলেন নতুন কোন রশ্মি এ ঘটনা ঘটাচ্ছে যা বাতাসের মধ্য দিয়ে চলতে পারে।

ক্রুক্স, পুলুজ এবং রান্টজেনের সামাজিক শর্ত এক হলেও আইডিওলজির ক্ষেত্রে পার্থক্য ছিল। আইওলজি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক মতবাদ বা ধারণা যার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী কাজ করেন। যখন কোনো মতবাদ সমগ্র বৈজ্ঞানিক সমাজের কাজের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাকে বলে প্যারাডাইম। টলেমির পৃথিবীকেন্দ্রিক সৌরজগতের মডেল একটি মতবাদ। বিজ্ঞানের প্রাচীন এবং মধ্যযুগের বেশিরভাগ সময় জুড়ে তা ছিল প্যারাডাইম। সঠিক আইডিওলজি ছাড়া কোনো বৈজ্ঞানিক আবিস্কার সম্ভব নয়। ক্যাথোড রশ্মির ধর্ম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জে.জে. টমসন ইলেক্ট্রন আবিস্কার করেন। কিন্তু রান্টজেনের পক্ষে কোনোদিন ইলেকট্রন বা প্রোটন আবিস্কার করা সম্ভব ছিল না। কারণ রান্টজেনের প্যারাডাইম ছিল ডালটনের পরমাণুবাদ। ডালটনের পরমাণুবাদ অনুসারে পরমাণু অবিভাজ্য । রান্টজেনের পক্ষে পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণিকা কল্পনা করা সম্ভব ছিল না। ১৮৯৭ সালের ইংরেজ বিজ্ঞানী জে.জে. টমসন যখন ইলেকট্রন আবিষ্কার করলেন, রান্টজেন ইলেকট্রনকে অস্বীকার করলেন। উর্জবুগ-এ তাঁর গবেষণাগারে ইলেকট্রন শব্দটি নিষিদ্ধ ছিল। রান্টজেনের সামনে তাঁর সহকারীরা ইলেকট্রন নিয়ে আলোচনা করতেন না। পরে রান্টজেন যখন মিউনিখে বদলি হলেন এ নিষেধাজ্ঞা সেখানে বলবৎ হলো।

বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের জন্য তৃতীয় পর্যায়ে মেধার প্রয়োজন। প্রথম দুটো শর্ত অনুপস্থিত থাকলে শত প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর পক্ষেও আবিস্কার করা সম্ভব নয়। আসলে বিজ্ঞানের ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা গৌণ। কিন্তু জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বইতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয় প্রতিভার উপর। বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে মহামানব বা নায়কের জন্ম দেয়া হয়। এ দৃষ্টিভঙ্গিটি পুরোপুরি মধ্যযুগীয় বা সামন্ততান্ত্রিক। ব্যক্তিকে বেশি কৃতিত্ব দিতে গিয়ে অনেক সময় ইতিহাসবিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। এ কথা ভুলে যাওয়া হয়, বিজ্ঞানের কোনো আবিস্কার ইতিহাসবিচ্ছিন্ন নয়।’ বিজ্ঞান চেতনা পৃষ্ঠা ১৭-১৮, নবম বর্ষ ,প্রথম-দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি-জুন ২০০৪।

এ দেশের যাঁরা পণ্ডিত মানুষ, তাঁদের কর্তব্য আমাদের মতো যাঁরা সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাঁদের জানাবোঝাকে বিকশিত করা, সর্বোপরি রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের বিজ্ঞানকে সঠিকভাবে হাজির করার ব্যাপারে নীতি প্রণয়নে রাজি করানো। আমাদের রাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক চাকরিবিধি অনুযায়ী নিচু কর্মচারীদের হাত-পা বাঁধা। অনেকে জানলেও সঠিক কথাটি বলার-লেখার সুযোগ নেই। ফলে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমার সামান্য জানাবোঝা থেকে বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে শুধু পঞ্চম শ্রেণীর বিজ্ঞানের বইয়ের যেসব ত্রুটি আমার চোখে পড়েছে, তার কয়েকটি মাত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যাঁরা ভালোভাবে কাজটা পারতেন তাঁরা করেন নি বলে স্বল্পজ্ঞান নিয়ে কাজটি করতে হচ্ছে।

আলোচনার জন্য শুধু পঞ্চম শ্রেণীর ‘পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান’ বই থেকে এ রকম অজস্র উদাহরণ তুলে দিয়ে দেখানো সম্ভব কীভাবে সামাজিক শর্ত ও আইডিওলজির জায়গা বাদ দিয়ে বিজ্ঞানকে বিশ্বাস হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০০৬ শিক্ষা বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত ‘পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান’ বইয়ে প্রথম অধ্যায়ে তৃতীয় পৃষ্ঠা থেকে পঞ্চম পৃষ্ঠায় ছক ২: উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস: অপুষ্পক ও সপুষ্পক এবং ছক ৩: অপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস: শৈবাল, ছত্রাক, মশ ও ফার্ন-এ বলা হয়েছে, ‘এরা খাদ্য তৈরি করে কি? আলো পছন্দ করে কি?’ এই বাক্যটি পড়লে যে কারও মনে হতে পারে এসব উদ্ভিদের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতার ব্যাপার আছে। যেমন বলা হয়, রহিম ভাত খায় কি, আলো পছন্দ করে কি ইত্যাদি।

তৃতীয় অধ্যায় ‘প্রাণীজগৎ’ পৃষ্ঠা-২১-এ বলা হয়েছে, ‘পামরী পোকা, লেদাপোকা, বিছা পোকা, খুদে মাকড় ইত্যাদি ফসলের ক্ষতি করে। এরা ক্ষতিকর পতঙ্গ।’ এখানেও এই আগের সমস্যা। এসব পতঙ্গ যেন মানুষের পূর্বজন্মের শত্রু“। তাছাড়া ক্ষতিকর পতঙ্গ উপকারী পতঙ্গ, এসব শব্দবিজ্ঞানের বইয়ের সঙ্গে যায় না। একই অধ্যায়ে ২৫ পৃষ্ঠায় বলা আছে, ‘স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানুষ সর্বাপেক্ষা উন্নত। মানুষ কথা বলতে পারে। মানুষের মস্তিষ্ক বা মগজ অন্যসব প্রাণীর চেয়ে বড় ও উন্নত। হাত মুঠো করে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। দুই পায়ে ভর করে দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারে। মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। এ কারণে মানুষকে প্রাণিজগতের শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলা হয়।’ এই বাক্য কয়টি পড়ার পর মনেই হবে না, এগুলো বিজ্ঞানের বইয়ের ভাষা। মানুষ কেন কথা বলতে পারে, কেন মানুষের মস্তিষ্ক অন্য প্রাণীর চেয়ে বড় ও উন্নত হলো, তা বলা নেই। উপরন্তু হাত মুঠো করা ও দুই পায়ে দাঁড়িয়ে হাঁটতে পারা পড়ে মনে হয় বোধহয় মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা ওই কাজগুলো পারে। আবার একই অধ্যায়ের ২৬ পৃষ্ঠায় প্রাণীর অভিযোজন অংশে বলা হয়েছে, ‘এ প্রাণীগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এরূপ পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে।’ এ লাইনটি পড়ে কি মনে হয় না প্রাণীগুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কারও নির্দেশে তাদের পরিবেশ অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হয়েছে?

পঞ্চম অধ্যায় ‘স্বাস্থ্যবিধি’ পৃষ্ঠা ৫৪ তে আছে, ‘এইচআইভি (HIV) ভাইরাস মানুষের দেহের রক্তে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়।’ এই রকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যাবে, যার মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে কী রকম উদ্দেশ্যবাদী বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদের শিশুরা পাচ্ছে। এই উদ্দেশ্যবাদী বর্ণনা আমাদের শেখায় প্রাণিজগৎ অবচেতনভাবে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করে। যে সমাজে, রাষ্ট্রে এ রকম উদ্দেশ্যবাদী বিজ্ঞানচর্চা থাকে অর্থাৎ আইডিওলজিক্যাল সংকট থাকে, সেখানে বিজ্ঞানের বিকাশ কতটুকু সম্ভব?

বিবর্তনের মতবাদের ইতিহাসে ডারউইন-পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের মধ্যে সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস (১৭০৭-১৭৭৮) সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। বিবর্তনের কোনো মতবাদ আবিষ্কৃত হওয়ার সামাজিক শর্ত সে সময় উপস্থিত ছিল। লিনিয়াস ছিলেন অসামান্য প্রতিভাবান। শুধু সঠিক আইডিওলজির অভাবে তিনি কোনো মতবাদ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন নি। বাইবেলে ছিল তাঁর প্রচণ্ড আস্থা। তিনি কাজ করেছেন এমন এক ধর্মবিদের সঙ্গে, যিনি বাইবেলে উল্লিখিত ভেষজ ও উদ্ভিদ নিয়ে একটি বই লিখেছেন।

ডারউইনের মতো তিনিও জীববৈজ্ঞানিক অভিযানে গিয়েছিলেন ল্যাপল্যান্ডে। সেখানে জোগাড় করেছেন বহু নমুনা, এঁকেছেন একরাশ ছবি ও সংগ্রহ করেছেন বহু তথ্য। তবুও তিনি পারেন নি। কারণ আইডিওলজিক্যাল ঘাটতি। আমরাও কি আমাদের সন্তানদের এই ঘাটতির মধ্যে রেখে দিতে চাই? এ ঘাটতির কারণেই আমাদের বিজ্ঞানের ছাত্ররাই মৌলবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয় বেশি। বিজ্ঞানী বের না হয়ে কেরানি হয়। এ বছর সারা দুনিয়ায় চার্লস ডারউইনের দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে উৎসবের সঙ্গে অথচ আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলে কোনো অনুষ্ঠান হলো না। আজ নারী নীতি নিয়ে যে এত কথাবার্তা, নারী-পুরুষের সম্পর্কে যে ঘাটতি, তার মূলেও ওই আইডিওলজিক্যাল ঘাটতি, সমাজ ও উৎপাদন সম্পর্কের ক্রমবিকাশকে না বোঝা। তাই আসুন শুধু অসংগতি ধরিয়ে দেওয়াই নয়, আদর্শ বিজ্ঞানের পাঠ্যবই কেমন হবে, তার রূপরেখাও দাঁড় করাই। তাতে বাংলাদেশও অনেকখানি দাঁড়িয়ে যাবে।

লেখক: শিক্ষক, খুদে পণ্ডিতের পাঠশালা, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version