জেলা পরীক্ষাকেন্দ্র : হতে পারে পরীক্ষাজটের সমাধান

আমার ছোট বোনকে ফোনে যখনই জিজ্ঞাসা করি কলেজে গিয়েছিল কিনা, তখন বেশির ভাগই উত্তর আসে যায় নি। কেন যায় নি জিজ্ঞাসা করলে প্রায় সময়ই একই কারণ শুনতে হয়- কলেজ বন্ধ। বন্ধের কারণ জানতে চাইলে শোনা যায় পরীক্ষা চলছে। আমার ছোট বোন জেলা শহরের নামকরা একটি কলেজে পড়ে। এই কলেজ বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

এখন চলছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, আর তার কেন্দ্র হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ওদের কলেজ। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কলেজ বন্ধ থাকবে। এরপর এক সপ্তাহ ক্লাশ; তারপরই আবার অনার্স পরীক্ষা। তখন আবার কলেজ বন্ধ থাকবে। অনার্স পরীক্ষা শেষ হলে ডিগ্রি পরীক্ষা। এসব শেষ করতে করতে আবার এসএসসি পরীক্ষা।

এ সমস্যা শুধু যে আমার বোনের কলেজে হয় তা না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সারা বছর ধরে চলতে থাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, আর তার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। এই সমস্যা যে শুধু থানা-জেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোর জন্য তা নয়, দেশের অন্যান্য সকল বিদ্যালয়গুলোতেও এর প্রভাব দেখা যায়। পরীক্ষা শুরু হলেই শিক্ষকদের ডিউটি দিতে যেতে হয়। এর ফলে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের জন্য ক্লাশ বন্ধ থাকে।

শিক্ষাস্তরে পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ কারণে পরীক্ষা বাতিল করে পরীক্ষাজটের সমাধান আপাতত সম্ভব নয় (ভবিষ্যতে হয়তো পরীক্ষা বাদ দিয়ে তার বিকল্প কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে)। এর জন্য অন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করতে হবে যাতে পরীক্ষাও চলে আবার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ক্লাশ বন্ধও না থাকে। এমন কোন উপায় সত্যিই কি আছে?

আমরা এর সমাধানের জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারি। ধরা যাক, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হলো। এই পরীক্ষাকেন্দ্রে এক সাথে কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী যেন পরীক্ষা দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে হিসেব করতে হবে একটি উপজেলায় গড়ে কতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এই কাজ করার জন্য আমরা গত কয়েক বছরের পরীক্ষার্থীর হিসেবকে বিবেচনায় নিতে পারি। এই অনুপাত ধরে উপজেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কমবেশি হলে পার্শ্ববর্তী থানার সাথে সমন্বয় করা যাবে। সারা বছরে যত ধরনের পরীক্ষা হয় তার সব কয়টি এই কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য একটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করতে হবে। যারা এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। এতে করে কোন স্কুলের শিক্ষককে ক্লাশ বাদ দিয়ে পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে হবে না।

আমাদের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পরীক্ষা দিতে উপজেলায় যায়। তাই তাদের জন্য বিষয়টি সমস্যা মনে হবে না বিশেষ করে থাকার সমস্যায় পড়তে হবে না। এছাড়া এই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো যদি লোকালয় ছেড়ে একটু কোলাহলমুক্ত স্থানে করা যায়, তবে পরীক্ষার্থীরা সহজেই মনোযোগ দিতে পারবে।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সারা বছরই নানান ধরনের পরীক্ষা থাকে। এই পরীক্ষাগুলো যদি পরীক্ষা কেন্দ্রতে হয় এবং এর জন্য যদি আলাদা একটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর থাকে তবে বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এর খরচ বহন করবে কে?

আমরা জানি শিক্ষাক্ষেত্রে যে খরচ হয় তাকে ব্যয় না বলে বিনিয়োগ বলা হয়। আর এই বিনিয়োগ একটা সময় পর কয়েকগুণ বর্ধিত হয়ে ফেরত আসে। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান লোক আছেন যাদের জন্য এই টাকা দেওয়া কোনো ব্যাপার না, এছাড়া বাইরে থেকে আমরা এর জন্য ঋণ নিতে পারি। মোট কথা আমরা যদি প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করতে পারি, তবে শিক্ষাক্ষেত্রে পরীক্ষা সংক্রান্ত যে সমস্ত জটিলতা সৃষ্টি হয় তা দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।

মাঝে মাঝে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে পরীক্ষা শুরুর ঠিক আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা যাবে। এই ডিজিটাল যুগে যা অসম্ভব না। ডিজিটাল বোর্ড, কম্পিউটার, প্রিন্টার ইত্যাদির সমন্বয়ে এই কাজটি যথাযথ ভাবেই করা যাবে। এসব দিক বিবেচনা করে বলা যেতে পারে, পরীক্ষাকেন্দ্র হতে পারে পরীক্ষা জটের একটি সমাধান।

জনপ্রিয় নিবন্ধ

প্রাথমিক স্তরে ভাষা শেখা : বিষয় – বাংলা

ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা...

আগে ইংরেজি গ্রামার শিখবো, নাকি ভাষা শিখবো?

কোন ভাষার গ্রামার হলো ঐ ভাষার গঠন প্রকৃতি যার...

শিক্ষাব্যবস্থার হালচাল

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা : পিএইচডির পর কী?

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে...

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা

ক্যাডেটসমূহ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।...

আরও কিছু লেখা

অধিক

    উচ্চ শিক্ষা, জ্ঞান সৃষ্টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ

    বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই বিদ্যাপীঠ যেখানে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা...

    যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা – পিএইচডি নাকি মাস্টার্স

    মার্কিন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইরেক্ট পিএইচডি করার সুযোগ আছে। অর্থাৎ,...

    জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং আমাদের নতুন বই

    আগামী বছরের প্রাথমিকের বই থেকে কমানো হয়েছে ৫৮০ পৃষ্ঠা। তবে দুই স্তরে কতো পৃষ্ঠা কমানো হয়েছে তার পরিসংখ্যান এখনও বোর্ড বের করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বইয়ের অপ্রয়োজনীয় অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অপ্রয়োজনীয় অধ্যায় পূর্বে কীভাবে সংযোজিত হয়েছিলো আর এখন বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে কিনা তা বোর্ড এখনও সেভাবে প্রকাশ করেনি।

    মহান শিক্ষা দিবস: কতোটা গুরুত্ব পাচ্ছে দেশে?

    মহান শিক্ষা দিবস পালিত হয় ১৭ সেপ্টেম্বরে। শরীফ কমিশন...

    পাবলিক পরীক্ষার ফল : শিক্ষাব্যবস্থার আতঙ্ক?

    ‌আল্পনা শিরিন লিখেছেন পাবলিক পরীক্ষার ফল নিয়ে এবছর আমার ছোট...

    নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ভিত্তি, শিখন ক্ষেত্র এবং কিছু প্রসঙ্গ

    আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর সব কিছুই পূর্ব-পরিকল্পিত...

    মাদার বখশ: রাজশাহীর শিক্ষায় এক অগ্রপথিক

    শিক্ষানগরী হিসেবে সারা দেশে সুপরিচিত রাজশাহীর শিক্ষাখাতের সবচেয়ে বড়...

    চাকরির জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি

    আলেয়া পারভীন লীনা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন দেশে বাড়ছে পাশের...

    প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

    নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
    বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।