বাড়ি সাক্ষরতা অশিক্ষিত, শিক্ষিত, নিরক্ষর

অশিক্ষিত, শিক্ষিত, নিরক্ষর

শিক্ষা, শিক্ষিত, অশিক্ষিত ইত্যাদি ধারণাগুলো আলাদা আলাদা
শিক্ষা, শিক্ষিত, অশিক্ষিত ইত্যাদি ধারণাগুলো আলাদা আলাদা

লোকটা কী অশিক্ষিত—কথাটি বলে আমরা কাউকে গালি দিয়ে থাকি। কিন্তু ভাবি না কথাটির মানে কী? বাংলা একাডেমি অভিধান অনুসারে ‘অশিক্ষিত’ শব্দটি বিশেষণ রূপে ব্যবহার করা হয়; যার অর্থ শিক্ষা পায়নি এমন, মূর্খ বা বিদ্যাহীন, অসভ্য। বিপরীতভাবে শিক্ষিত শব্দটির অর্থ শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছে এমন বা বিদ্বান।

শিক্ষা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বলা যেতে পারে, কোনো জ্ঞান বা কৌশল আয়ত্ত করাই শিক্ষা। যেমন, আদিম কালের সন্তানরা তাদের বাবা মা কিংবা বয়োঃপ্রাপ্ত কারও কাছে শিখত কী করে শিকার করতে হয়, ফলমূল আহরণ করতে হয়। বর্তমানকালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে লোকজন জ্ঞানার্জন করে। সেই জ্ঞান প্রয়োগ করে রোগের চিকিৎসা করে কিংবা মহাকাশ যাত্রায় ভ্রমণের কৌশল শিখে মহাকাশে ভ্রমণ করে এর সবই শিক্ষা হিসেবে পরিগণিত।

আবার অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেয়েও দৈনন্দিন হিসাবের কাজ, বিভিন্ন পেশার লোক তাদের পেশাভিত্তিক কাজ যেখানে গণিত বিশেষ করে জ্যামিতির অনেক বিষয় জড়িত থাকে তাও সহজে করতে পারে। যেমন, অনেক রাজমিস্ত্রি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জ্যামিতি না শিখেই দালান গড়তে নিজের মতো করে সমকোণী চতুর্ভুজ বানাতে পারে। অনেক দর্জি বিদ্যালয়ে না গিয়েও বলতে পারে একটি শার্ট বানাতে কয় গজ কাপড় লাগবে। সেই দিক দিয়ে ধরতে গেলে ওই বিষয়ে তারা শিক্ষিত। তাই বলা যেতে পারে—প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই শুধু শিক্ষা নয়, চলতে ফিরতে নানান অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি জন্মের পর থেকেই শিক্ষালাভ করতে থাকে। আর সেই শিক্ষা চলতে থাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

সে কারণে শিক্ষালাভের উপায়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে—আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা স্কুল-কলেজে পেয়ে থাকি। আর শিক্ষা বলতে আমরা সাধারণত এ শিক্ষাকেই বুঝে থাকি। এখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাক্রমের আলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা যেকোনো বয়সে যেকোনো স্থানে দেওয়া যেতে পারে। এটি একটি নমনীয় শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশে এনজিওগুলো এ ধরনের শিক্ষা বেশি দিয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণকেও আমরা এর আওতায় ফেলতে পারি।

অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় জন্ম থেকে আর তা শেষ হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। নানা কাজের মাধ্যমে, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা এ শিক্ষা পেয়ে থাকি। এছাড়াও আমরা চলতে ফিরতে নানা কাজের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নানান কিছু শিখছি। এ শিক্ষা হচ্ছে কখনও ঠেকে আবার কখনও জিতে। গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে এ বিষয়ে আর তা হলো—শিখছ কোথায়, ঠেকছি যেথায়। এ শিক্ষাটা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা। তাই বলা যায় পৃথিবীর সবাই কোনো না কোনো বিষয়ে শিক্ষিত। কেউ আর অশিক্ষিত নয়। তাই এ শব্দটি ব্যবহার করা আমাদের জন্য ঠিক হবে না।

সবাইকে শিক্ষিত বললে একটি সমস্যা অবশ্য থেকে যায়। তা হলো, যারা বিদ্যালয়ের শিক্ষা পায়নি তাদের কী বলা হবে? এর উত্তরও সহজ, তা হল নিরক্ষর। মানে যাদের অক্ষরজ্ঞান নেই। অনেকে তাদের বলে থাকেন চোখ থাকতেও অন্ধ। কিন্তু তা একটি অভিশাপের মতো, যা একটি দেশকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। আর এ জন্য আমাদের উচিত হবে অন্তত একজনকে হলেও শিক্ষার আলো দান করে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করে তোলা। আর এতে কাউকে ভুল করে বলতে হবেনা, “ও তো একটি অশিক্ষিত”। আশা করি সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের বংশধররা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে রূপকথার গল্প শোনাবে এই বলে যে, “এই দেশে এক নিরক্ষর চাষী বাস করত। যার একখণ্ড নিজস্ব জমিও ছিল না। সারা বছর অন্যের জমি চাষ করত…”। আর ছেলেমেয়েরাও বলে উঠবে—“মা. নিরক্ষর কী?”

4 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version