প্রকাশিত হলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। এই পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীদের বলে দেয় তারা ভবিষ্যতে কোন দিকে কোন পেশায় প্রবেশ করবে। সমাজে প্রচলিত কিছু পেশা যেমন ডাক্তার হবে না ইঞ্জিনিয়ার হবে ইত্যাদি। তবে বিগত কয়েক বছরে ব্যবসায় শিক্ষায়ও প্রচুর শিক্ষার্থী আসছে ব্যবসায় প্রশাসন পড়ার জন্য। কারণ এই যুগ যেমন বিজ্ঞানের, তেমন ব্যবসা-বাণিজ্যেরও।
এবার ১০টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩০। গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। গতবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৭। শুধু পাসের হার নয়, জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাও কমেছে। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬১ হাজার ১৬২ জন আর এবার পেয়েছে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। এবার মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক শূন্য ২৩ শতাংশ। এবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০তম দিবসে ফলাফল প্রকাশ করা হলো। গতবারের চেয়ে পাসের হার কমলেও এবার এগিয়ে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। সেখানে পাশের হার ৭৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। সাফল্যের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ০৪, চট্টগ্রামে ৬১ দশমিক ২২, যশোরে ৬৭ দশমিক ৪৯, দিনাজপুরে ৭১ দশমিক ৯৪, কুমিল্লায় ৬১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে আসছিল এইচএসসির ফলাফল। কিন্তু এ বছর সাধারণ ৮টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার গতবারের চেয়ে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল এর কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ায় শিক্ষাথীরা বিপাকে পড়েছে। ভালোভাবে না বুঝেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতাও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ কথা অস্বীকার করার কারো জো নেই যে, রাজনৈতিক অস্থিরতা শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ৩২টি পরীক্ষা পেছাতে হয়েছিল। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি কাউকেই রেহাই দেয় না। লক্ষণীয় যে, আমাদের রাজনীতিবিদদের রাজনীতি থেমে নেই এই এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও। তারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য। তবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় যে বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই এবং এজন্য যে শুধু বিরোধীদল দায়ী তাও নয়। আবার সরকারি দল যখন বিরোধীদলে ছিল তখন যদি তারা এমন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারত যে, তারা কোনো হরতাল করে জনগনকে হয়রানি করেনি, তাহলে সরকারি দল আজ বিরোধী দলকে এভাবে কথা বলতে পারত। আবার বিরোধীদল যে ভুমিকা রেখেছে তাও সমালোচনার বাইরে নয়। আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে, কোনো দলই ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য খুব একটা চিন্তা করেন না। তারা চিন্তা করেন কিভাবে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা যায়। দেশের জন্য রাজনীতি করলে বিরোধী দল আর সরকারে দল যেখানেই থাকুক, জাতির জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে ভুমিকা একই হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের কি তা হচ্ছে? সরকারে থাকাকালীন জনগনের জন্য চিৎকার করব আর বিরোধীদলে গেলে জনগণ ভোট দেয়নি- এজন্য তাদের ওপর প্রতিশোধ নেব, এ ব্যাপার তো সবার কাছেই স্পষ্ট। জনগণ তো বলির পাঠা, শিক্ষার্থীরা তা থেকে বাদ যাবে কেন?
এবার পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১ এপ্রিল, শেষ হয়েছে ২৩ জুন। হরতালের কারণে ৯ দিন নতুন করে পরীক্ষা নিতে হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অংশে আংশিক হরতালের কারণে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা ঝুঁকির মধ্যে নিতে হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হরতালের কারণে চারবার পেছাতে হয়েছে। বিরোধীদলের জন্য নয়, সরকারের ব্যর্থতার কারণে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সমালোচনা করে বিশ্লেষক এবং বিরোধী রাজনীতিবিদরা বলছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পরীক্ষা পদ্ধতি অপরিচিত ছিল। তাই ফলাফল ভাল হয়নি। সরকারের ভুল শিক্ষানীতির কারণে ফল বিপর্যয় হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন বিরোধী দল কি এই দায় এড়াতে পারে?
প্রায় প্রতি বছরের মতো এবারো সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে নটরডেম কলেজ- ১ হাজার ৭৬৬ জন। তবে সেরা কলেজ নির্ধারণে ৫টি মানদণ্ড থাকায় সেরাদের তালিকায় গতবারের মতো প্রথম হয়েছে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। নটরডেম হয়েছে ৬ষ্ঠ, গতবার ছিল ৫ম। দ্বিতীয়বারের মতো সেরাদের তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছে নরসিংদির আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। তৃতীয় রয়েছে ভিকারুন নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তার পর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, নটরডেম কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, হলিক্রস কলেজ ও দশম অবস্থানে ঢাকা কলেজ। অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর এটি আরেকটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ যে, সেরা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানদণ্ড নির্ধারণে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বা জিপিএ-৫ পাওয়াই সেরা প্রতিষ্ঠান হওয়ার শর্ত হতে পারে না। কতোজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে ভর্তি হলো এবং কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলো ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এবার পাসের হার এবং জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমার পাশাপাশি শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। গতবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৬টি। এবার এ সংখ্যা ৮৪৯। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবার ছিল ২৪টি, এবার এ সংখ্যা ২৫টি।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা একধরনের যুদ্ধ। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া আরেক ধরনের যুদ্ধ। তবে এবার উচ্চ-শিক্ষাঙ্গনে ভর্তিতে আসন সঙ্কট হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ প্রায় তিন হাজার কম হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দশ বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মোট ৬১ হাজার ১৬২ জন, এবার পেয়েছে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। আর এবার এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সাত লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন এবং গত বছর পাস করেছিল ৭ লাখ ২১ হাজার ৯৭৯ জন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে মেধাবীরা এবার বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। গতবারের চেয়ে ২৩ হাজার শিক্ষার্থী বেশী উত্তীর্ণ হলেও এ বছর উচ্চ-শিক্ষাঙ্গণে আসন সংখ্যাও বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ইউজিসি ও ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার ভর্তিযোগ্য আসন হচ্ছে ৫০ হাজার। এর মধ্যে এক হাজারের ওপর আসন আছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার, বুয়েটের এক হাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রায় তিন হাজার, জাহাঙ্গীরনগরে প্রায় তিন হাজার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন হাজার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চার হাজার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই হাজার আসন আছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা বাড়ানো সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৫শ। যেখানে দুই লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও আসন খালি থাকবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, এবার ডিগ্রি পাস কোর্সেও ভর্তি হয়েছে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী। আগামী বছরও এ সুযোগ থাকছে। এছাড়া লেদার টেকনোলজিতে আসন আছে প্রায় ৪শ। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেড়ে যাওয়ায় ভর্তির সুযোগ এখানেও বেড়েছে। সরকার অনুমোদিত ৭১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার এক লাখের বেশি আসন আছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনের কোনো সীমানা নেই। যতো শিক্ষার্থী ততো আসন সংকুলান করা সম্ভব। এছাড়া ২২টি সরকারি মেডিকেল, ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেল ও ৯টি ডেন্টাল কলেজে এবার আসন আছে সাড়ে আট হাজার। ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজিতে আছে আরও বেশ কিছু সিট। অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা নিয়ে এবার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের খুব একটা চিন্তিত হতে হবে না বা দেশের বাইরে ভর্তি হওয়ার চিন্তা করতে হবে না। এটি একটি ভালো দিক।
এদিকে একই ধরনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের মতো ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এবার হচ্ছে না। তবে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়টি গভীর গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে কারণ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের বিড়ম্বনা, অর্থ ও সময়ের অপচয়। এটি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা উচিত।
এই রেজাল্টই কি আসল রেজাল্ট? প্রতিটি কলেজেই যতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, সবাই কিন্তু এই পাবলিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় না। কলেজেই টেস্ট পরীক্ষার মাধ্যমে অনেককে ছাটাই করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। তারপরেও পাশের এই হার। যেসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না, টেস্ট পরীক্ষায় ছাটাই করা হয়, তাদের দায়দায়িত্ব কে নেবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? অভিভাবক? শিক্ষার্থী? না দেশ? আমরা কেউ কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না, চিন্তাও করছি না। এটি নিয়ে ভেবে দেখার উপযুক্ত সময় এখনই।
সবশেষে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। অনেক প্রতিকুলতার মাঝে তারা পরীক্ষা দিয়েছে। দেশের বিরাজমান রাজনীতি থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা কি দুষ্ট রাজনীতির শিকার হবে, নাকি যে রাজনীতি দেশের মঙ্গল আনবে সেদিকে পা বাড়াবে?
লেখক পরিচিতি
মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।
sir আমি জলঢাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান. শিক্ষক
প্রিয় শিক্ষার্থী
আমার শুভেচ্ছা নিও। প্রায় এক
বছরব্যাপী পড়াশোনার মাধ্যমে তোমরা আজ
সম্পূর্ণরূপে নিজেদের প্রস্তুত করেছ পরীক্ষায়
অংশগ্রহণের জন্য। আমি অভিনন্দন
জানাচ্ছি তোমাদের অধ্যবসায় ও একাগ্রতার
জন্য। তোমাদের জন্য বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়
পত্রের প্রশ্নের ধরন ও উত্তর কৌশল
সংক্রান্ত পরামর্শবিষয়ক আলোচনা করব।
আশা করি নিম্নবর্ণিত প্রশ্নোত্তর সংক্রান্ত
কৌশল ও পরামর্শ অবলম্বন তোমাদের
কাক্সিক্ষত সাফল্যকে সুনিশ্চিত করবে।
সৃজনশীল অংশ : প্রশ্ন থাকবে ৯টি, উত্তর
করতে হবে ৬টি, প্রতিটিতে
(ক-১, খ-২, গ-৩, ঘ-৪) = ১০ নম্বর করে মোট
নম্বর ৬০।
সময় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট
ক. জ্ঞানমূলক অংশ : প্রদত্ত নম্বর-১
[পাঠ্যবই থেকে একবাক্যে সঠিক উত্তর দেবে;
এখানে কোনো বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণের
দরকার নেই]
খ. অনুধাবনমূলক : প্রদত্ত নম্বর-২,
এখানে ২টি প্যারা করা যেতে পারে। [প্রথম
প্যারাটি হবে একবাক্যের। প্রশ্নে যা চাইবে এক
কথায় উত্তরের আসল বস্তু জ্ঞান
আকারে লিখবে একবাক্যে আর দ্বিতীয় প্যারায়/
অংশে থাকবে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ, যা সর্বোচ্চ
৩-৪ বাক্য হবে] । মনে রাখা প্রয়োজন
অনুধাবনমূলক প্রশ্নে উত্তরের ক্ষেত্রে সব
মিলে সর্বোচ্চ ৫ বাক্যে শেষ করতে হবে।]
গ. প্রয়োগমূলক অংশ : প্রদত্ত নম্বর-৩ ।
এখানে উত্তরের তিনটি প্যারা বা অংশ
করা যেতে পারে। [এখানে তোমাকে তিনটি অংশ
বা প্যারা করে লিখতে পার। অংশগুলো হলো :
উত্তরের শুরুতেই মূল উত্তরটুকু অর্থাৎ
জ্ঞানমূলক আকারে এক বাক্যে উত্তর লেখার
চেষ্টা করবে। এরপর প্রশ্নে চাওয়া বিষয়ের
সঙ্গে মূল পাঠ্যের সম্পর্ক নিরূপণ থাকবে,
যাকে ব্যাখ্যেয় অংশ বলা যেতে পারে। প্রয়োগের
তৃতীয় অংশ অবশ্যই সম্পর্ক নিরূপণের
ক্ষেত্রে প্রকৃত সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রথম প্যারা এক বাক্য; দ্বিতীয় প্যারা ৩/৪
বাক্য আর তৃতীয় প্যারা ৭/৮ বাক্য হতে পারে।
এখানে সর্বোচ্চ ১১ বাক্য লিখতে পারবে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক : প্রদত্ত নম্বর-৪
[এখানে তোমাকে তিন থেকে চারটি অংশ
বা প্যারা করে লিখতে হবে। অংশগুলো হলো :
উত্তরের শুরুতেই প্রশ্ন অনুযায়ী জ্ঞানমূলক
অংশে এক বাক্যে উত্তর লেখার চেষ্টা করবে।
দ্বিতীয় প্যারায় প্রশ্ন অনুযায়ী উদ্দীপক
ধরে চিন্তন শক্তি ব্যাখ্যা করবে। তৃতীয় প্যারায়
উদ্দীপক ও মূল পাঠ্যের সম্পর্কগত
আলোচনা করবে, সার্বিক বিশ্লেষণ করবে,
সে ক্ষেত্রে উদ্দীপক, মূল পাঠ্য বিষয় ও
পারিপার্শ্বিক জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে মিল
রেখে তোমার অনুভূতি/মতামত প্রকাশ
করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। এখানে সর্বোচ্চ
১৫ বাক্য লিখতে পারবে।
সৃজনশীলের
ক্ষেত্রে প্যারা আকারে লেখা বাধ্যতামূলক নয়;
তবে উত্তরের প্রাসঙ্গিকতা ঠিক রাখার জন্য
প্যারা করা দোষের হবে না।
পড়া শুনার জন্য ও বিকল্প ভাবতে হবে না হলে শিক্ষা ব্যাবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।