বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যে কী সীমাহীন দুর্ভোগ ও উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছেন, তা আমরা সবাই জানি। আমি পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি যাতে কেন, কীভাবে, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কী কী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তা স্পষ্ট জানা যায়।। প্রথমেই আসি ভর্তি প্রক্রিয়ার পার্থক্য বিষয়ে।

ভর্তি ও কোচিং

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তি নেয় কোনো ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া। তিন/সাড়ে তিন বছর বয়সে বাড়ির কাছের কোনো কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ে শিশুকে ভর্তি করালেই বাবা-মার দায়িত্ব শেষ। শিশুরা ওদের মেধা অনুযায়ী উপরের ক্লাসে উঠতে থাকবে। ছয় বছরে ওরা যাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মেধা অনুযায়ী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। মেধা অনুযায়ী বৃত্তি ও পাঠ্যবিষয় পাবে। অর্থাৎ শিশু যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী বা সবার চেয়ে ভালো করে, তাকে সেই বিষয়েই পড়তে দেয়া হয়। তার বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত ধারাবাহিক স্কোর দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে দেয় শিশু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্টিস্ট, ব্যাংকার নাকি গায়ক হতে পারবে।

বাবা-মা শিক্ষকদের পরামর্শের ভিত্তিতে ঠিক করেন, শিশু কী পড়বে। অর্থাৎ ওসব দেশে ছেলেমেয়েরা যোগ্যতা থাকলে নিজের ইচ্ছামত যা খুশি পড়তে পারে, যা খুশি হতে পারে। তার ফলাফল দেখে বিদ্যালয় তার মেধার জন্য সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় জানিয়ে দেয়। আমাদের মতো বাবা-মার ইচ্ছা বা চাপে কিংবা পছন্দের বিষয়ে সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে কেউ অপছন্দের বিষয় পড়ে না। বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়–কোথাও ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে কোচিং সেন্টারে বা বাসায় প্রাইভেট পড়তে বা ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না।


বর্তমানে বাংলাদেশে পিএসসি-জেএসসি পরীক্ষা, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু এবং বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা—এ তিনটি কারণে মূলত কোচিং ব্যবসার লাগামহীন প্রসার ঘটেছে গোটা বাংলাদেশে। শহর তো বটেই, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতেও প্রাইভেট ব্যবসা জমজমাট। শিক্ষকরূপী এসব কোচিং ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি সব শ্রেণি-পেশার অভিভাবক।


বর্তমানে বাংলাদেশে পিএসসি-জেএসসি পরীক্ষা, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু এবং বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা—এ তিনটি কারণে মূলত কোচিং ব্যবসার লাগামহীন প্রসার ঘটেছে গোটা বাংলাদেশে। শহর তো বটেই, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতেও প্রাইভেট ব্যবসা জমজমাট। শিক্ষকরূপী এসব কোচিং ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি সব শ্রেণি-পেশার অভিভাবক।

একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখলাম, বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেটে পড়ার কারণে তৃতীয় শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে রোজ গড়ে ১২/১৩ ঘণ্টা, এবং এসএসসি-এইচএসসির শিক্ষার্থীকে গড়ে ১৫/১৬ ঘণ্টা পড়তে হয় বিদ্যালয়-কোচিং-বাসা—সব মিলিয়ে। এবার ভাবুন, এত বেশি পড়ার চাপ সহ্য করতে হলে ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা কেমন হওয়ার কথা।

বাংলাদেশের সব ভালো বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়ে কোনো শিশু ভর্তি হতে পারে না। অর্থাৎ বিদ্যালয়ে আসার আগেই শিশুকে অনেক কিছু শিখে আসতে হয় যা তার বিদ্যালয়ে আসার পরে শেখার কথা।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রাইভেট পড়ানো শুরু হয় মূলত ভালো বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর তাগিদ থেকে। কারণ ওসব বিদ্যালয়েএর রেজাল্ট ভালো। তাই ধরেই নেয়া যায়, একবার ওসব বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারলে ভালো ফল সুনিশ্চিত। ঢাকার ভালো বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য একবারে চান্স না পেলে দুই/তিন বার করে শিশুকে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ানো হয়।

মোটা অংকের ডোনেশন দিয়েও ভর্তি করানো যায় না। এসব বিদ্যালয়ে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভর্তি ফরম জোগাড় করতে হয়, বিভিন্ন কোচিং করিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়াতে হয়। রীতিমত ভর্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের সব ভালো বিদ্যালয়ের অবস্থা একই। এসব বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকরা দিনের পর দিন এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসায়, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে শিশুকে পড়ানোর কারণে তাঁদের টাকা, সময়, শ্রম খরচ তো হয়ই, তারপরেও চান্স পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে।

অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে সীমিত আসনের জন্য অল্প শিক্ষার্থী বাছাই করার জন্য কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন এতটাই কঠিন করা হয় যে, তা ক্লাস থ্রি-ফোরের উপযুক্ত। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক, উভয়কে সীমাহীন পরিশ্রম করে পড়া শিখতে ও শেখাতে হয়। এতে শিশুদের মেধার ওপর চাপ পড়ে, পড়ার প্রতি বিরক্তি আসে, শিশুরা খেলাধুলা বা বিনোদনের সময় পায় না।

অভিভাবকরা প্রাইভেট পড়ান বাধ্য হয়ে। কারণ যেভাবেই হোক, শেখার চেয়ে ভালো নম্বর পাওয়াটা বেশি জরুরি। কেননা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর না পেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগই দেয়া হয় না। এখন তো আবার ভালো নম্বর পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একবারের বেশি ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না। আগে দ্বিতীয় বিভাগ পাওয়া ছাত্রও বুয়েটে চান্স পেয়েছে যেটি এখন অসম্ভব।


অভিভাবকরা প্রাইভেট পড়ান বাধ্য হয়ে। কারণ যেভাবেই হোক, শেখার চেয়ে ভালো নম্বর পাওয়াটা বেশি জরুরি। কেননা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর না পেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগই দেয়া হয় না। এখন তো আবার ভালো নম্বর পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একবারের বেশি ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না।


এখন ভালো ফলাফল নির্ধারণ করে টাকা। অর্থাৎ টাকা খরচ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ালে শিক্ষকরা ভালো শেখান, পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন বলে দেন। ফলে ফলাফল ভালো হয়। শিক্ষকরা ইচ্ছে করে ক্লাসে ঠিকমত পড়ান না। কারণ পড়ালে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়বে না। প্রাইভেটে ছাত্র-ছাত্রী বাড়ানোর জন্য শিক্ষকরা ইচ্ছে করে পরীক্ষায় কঠিন প্রশ্ন করেন, মারেন, নম্বর কম দেন; যাতে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদেরকে তাদের কাছে পড়তে পাঠান।

সৃজনশীল পদ্ধতি না বোঝার কারণে এখনকার শিশুরা সব বিষয়ে প্রাইভেট পড়ে। ধর্ম, সমাজ, এমনকি মাতৃভাষা বাংলাও। ক্লাসের প্রথম যে শিক্ষার্থী, সে সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট পড়ে। অর্থাৎ রেজাল্টের কৃতিত্ব শিক্ষার্থীর নয়, প্রাইভেটের।

এখন শিক্ষার্থীদের মূল বইয়ের বাইরেও মোটা মোটা গাদা গাদা গাইড বই পড়তে হয়। এত বই শুধু রিডিং পড়তে হলেও কী পরিমাণ সময় দরকার তা অনুমান করা যায়। এত পড়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এই তথাকথিত ভালো ছাত্ররা অনেকেই পাস নম্বর পায় না। এসব শিক্ষার্থী প্রচুর পড়ছে কিন্তু কিছু শিখছে না। কারণ তারা জানে, উত্তর সঠিক না লিখলেও ভালো নম্বর পাওয়া যায়। শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়, নম্বর বেশি দেওয়ার জন্য। এ এক অদ্ভুত সিস্টেম!

পড়ানোর ধরন

পশ্চিমা দেশগুলোতে আধুনিক শিক্ষাউপকরণ সমৃদ্ধ সুসজ্জিত বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই করানো হয়। বাড়ির কাজ দেয়া হয়; তবে অভিভাবকদের কঠোরভাবে নিষেধ করা থাকে, যেন কোনো অভিভাবক শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ করে না দেন। শিশু নিজে নিজে চেষ্টা করে শিখুক। তাতে ওরা স্বাবলম্বী হবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে, লেখাপড়ায় তথা নিজের কৃতিত্ব বা সাফল্যের আনন্দ পাবে। শিশু পড়া করতে না পারলে শিক্ষক করাবেন।

তবে হ্যাঁ, যে সমস্যার সমাধান শিশু পারছে না, তার কাছাকাছি কোনো সমস্যা তৈরি করে সেটার সমাধান করে দেয়া যেতে পারে। শিক্ষার্থী কোনো বিষয় না বুঝলে শিক্ষক সেটি বুঝিয়ে দিতে বাধ্য। দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষককে অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। প্রয়োজনে ক্লাসের বাইরে অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় পড়াতে হয়। কারণ কোনো শিক্ষকের ক্লাসে ছেলেমেয়ে ফেল করলে পরের বছর তাঁকে ক্লাস দেয়া হয় না। এসব দেশের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষার কোনো স্তরেই প্রাইভেট পড়তে হয় না, বাবা-মাকে বাসায় বা কোচিং সেন্টারে বাচ্চাকে পড়তে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও হয় না।

আমাদের দেশে ছাত্র-ছাত্রী ফেল করলে শিক্ষকের কোনো জবাবদিহিতা নেই বা শাস্তি হয় না। ফলে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে কম, কোচিং বা প্রাইভেটে বেশি পড়ান।

উন্নত দেশগুলোতে শিশুরা শেখে হাতে-কলমে দেখে, পড়ে বা নিজে করে। ওদের স্টাডি ট্যুর বা আউটিং-এ যাওয়া বাধ্যতামূলক। ওরা নানা দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখবে, সেগুলো সম্পর্কে জানবে। শুধু মুখস্থ করবে না। বিদ্যালয় থেকে শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয় পাঠ্যবিষয় স্বচক্ষে দেখে শেখানোর জন্য।

যেমন, গ্রামে খামারবাড়িতে কৃষকরা কীভাবে ফসল ফলায়, ফসল মাড়াই করে, বাজারজাত করে, সংরক্ষণ করে, গবাদি পশু-পাখি লালন-পালন করে, এসব নিজে চোখে দেখে অনুভব করবে তাদের কাজটা কত কঠিন। তারা কষ্ট করে ফসল ফলায় বলেই আমরা খেতে পাই। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধাবোধও তৈরি হবে শেখার পাশাপাশি। এতে শেখার আনন্দ পাবে, শেখা সহজ হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা শেখার বা আনন্দের জন্য পড়ে না। পড়ে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য।

মূল্যায়ন পদ্ধতি

উন্নত দেশে শিক্ষকরা যেমন শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা মূল্যায়ন করেন, তেমনি শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করে কোন শিক্ষক কতটা ভালো বা মন্দ। এ মূল্যায়নের ওপর শিক্ষকের পদোন্নতি, পাঠদানের অনুমতি দেয়া বা না দেয়া নির্ভর করে। তাই শিক্ষকরা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। আর আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পাঠদান দক্ষতা বা আচরণ মূল্যায়ন করতে পারেনা। ফলে শিক্ষকরা ক্লাসে না পড়িয়েও থেকে যান বহাল তবিয়তে।

আমাদের দেশে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেন শুধু এটুকু বলার জন্য যে একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে। আর ওসব দেশে পরীক্ষা নেয়া হয় একজন শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করার জন্য যাতে শিক্ষক দুর্বলতাগুলো দূর করতে পারেন এবং শিক্ষার্থীর সবল দিকগুলো জানিয়ে দিতে পারেন তার ভবিষ্যত পাঠ্যবিষয় নির্ধারণ করার জন্য।

চাকরি

উন্নত দেশে শিক্ষার্থীরা পাস করে পছন্দমতো চাকরিও পাবে। কোথাও ধরাধরি নাই। ঘুষ, মামার জোর, রাজনৈতিক পরিচয়, কোটা… কিছুই লাগে না। চাকরি না পেলেও বেকার ভাতা দেয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীরা হতাশায় না ভোগে, হতাশার কারণে কোনো অপরাধে না জড়ায় সেজন্য। আমাদের দেশের অবস্থা আপনারা জানেন।

কেন শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ান

বলা হয়, শিক্ষকদের বেতন কম। তাই তাঁরা প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য হন। ক্যান্টনমেন্ট স্কুলগুলোর শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতে পারেন না। পড়ালেও নিজের স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারেন না। পড়ালে চাকরি চলে যায়। তাঁদের চলে কীভাবে? শিক্ষকরা চাকরিতে ঢোকার সময় বেতন কত হবে, সেটা জেনেই তাঁরা এ পেশায় আসেন। যদি মনে করেন, এ বেতনে চলবে না, তাহলে আসেন কেন?

কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান না। যখন বেতন অনেক কম ছিল, তখনো কেউ পড়াননি। তাহলে তাঁদের চলত কীভাবে? নিশ্চয় কষ্ট করেই চলতেন। তবু কোনোদিন তাঁরা নিজের পেশাকে কলুষিত করেননি।


আমাদের দেশে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেন শুধু এটুকু বলার জন্য যে একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে। আর ওসব দেশে পরীক্ষা নেয়া হয় একজন শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করার জন্য যাতে শিক্ষক দুর্বলতাগুলো দূর করতে পারেন এবং শিক্ষার্থীর সবল দিকগুলো জানিয়ে দিতে পারেন তার ভবিষ্যত পাঠ্যবিষয় নির্ধারণ করার জন্য।


এ নৈরাজ্য থেকে মুক্তি ও শিক্ষার মান বাড়ানোর উপায়

  • ১। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা তুলে দিতে হবে। লটারির মাধ্যমে আসনসংখ্যা অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে হবে।
  • ২। শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
  • ৩। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ক্লাসে শিশুদের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে উপরের ক্লাসে, এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তি করতে হবে।
  • ৪। কোচিং, প্রাইভেট, গাইড বই এসব তুলে দিতে হবে।
  • ৫। শিক্ষকদের জবাবদিহিতা ও শাস্তি বাড়াতে হবে।

শুনছি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে। খুব খুশি হয়েছিলাম। যখনই শুনি কোচিং, প্রাইভেট, গাইড বই এসবও তুলে দেয়া হবে, ভীষণ আশাবাদী হই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব তোলা অত সহজ নয়। এর পেছনে শিক্ষকদের টাকার লোভ আছে, আছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। তারা এটা ছাড়বে কেন?

Sending
User Review
0 (0 votes)

লেখক সম্পর্কে

আকতার বানু

আকতার বানু

ড. আকতার বানু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মনোবিজ্ঞান ও বিশেষ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক।

মন্তব্য লিখুন