বাড়ি শিক্ষাক্রম ও পুস্তক বিদ্যালয় হোক আনন্দের এক রঙিন ফুল

বিদ্যালয় হোক আনন্দের এক রঙিন ফুল

গাইড বই

হাবীব ইমন লিখেছেন বিদ্যালয় ও আনন্দময় শিক্ষা নিয়ে

শিক্ষা-সংশ্লিষ্টতায় অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না। যখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম, তখন এক-আধটু আগ্রহ ছিল। সম্প্রতি একটু সংযোগ রাখলাম, তাতে বেশ হতাশই হচ্ছি। বছরের শুরুতে উদ্বিগ্ন হয়েছি—যখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ অনেকের লেখা হেফাজত ইসলামের কথায় পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়েছে। এ নিয়ে প্রগতিশীলদের ভেতর থেকে জোরালো প্রতিবাদ চলছে। তাছাড়া অনেকদিন থেকে সৃজনশীল পড়ালেখা নামে কী পড়ানো হচ্ছে—এ প্রশ্নটি নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক স্তরে নানা প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিদ্যালয় যে শিক্ষা আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর না করে পিছিয়ে দিচ্ছে, তা ‘প্রতারক কাচ’ ছাড়া আর কী! এই শিক্ষার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা এখন ঢের উপস্থিত। একদিকে আগ্রাসী নিওলিবারেল বিচ্ছিন্নতার দর্শন ও রক্ষণশীল পশ্চাদপদ দর্শন সৃষ্টি করছে কর্পোরেট পুঁজির অনুগত ভোগবাদী মানুষ, অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে এটিই প্রমাণিত হচ্ছে তা মৌলবাদী চিন্তা ও দর্শনের বিপরীতে মুক্তচিন্তা-মুক্তবিকাশে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কয়েক-বছর ধরে নিরাপরাধ-কোমলমতি শিশুগুলোর ওপর গবেষণার গিনিপিগ বানানোর চেষ্টা চলছে। এতো পরিবর্তন-পরীক্ষা গ্রহণের জন্য শিশুরা মানসিকভাবে সমর্থ থাকে না।

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি বিষয়ে সরকার আগামী নির্বাচনী কৌশলে তার অবস্থান শক্ত করেছে। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে স্বীকৃতি দিতে আমাদের আপত্তি নেই। প্রায় দুইশত বছরের পুরানো সিলেবাসে সেখানে চলে পাঠদান। দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা পদ্ধতি ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলাম নামে দুটি শিক্ষাব্যবস্থা এখানকার মাদ্রাসাগুলোতে অনুসরণ করা হয়। কিন্তু দুই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থার মাদ্রাসাগুলোতে সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ভূগোল ইত্যাদি মৌলিক বিষয় পড়ানো হয় না। তাই দেশের মূল শিক্ষাকার্যক্রম সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো জ্ঞান ছাড়াই মাদ্রাসা পড়ুয়াদের ১৬ বছরের দীর্ঘ শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে হয়। অর্থাৎ সমাজের বেশিরভাগ মানুষ যে কারিকুলামে পড়াশোনা করে, তারা সেটা পড়ে না। কোনো একটি টকশোতে হেফাজতের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘তারা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চান না। ইসলামী মূল্যবোধের সনদ দরকার।’ তাছাড়া বিপুল সংখ্যক কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, তারা হেফাজত ইসলামীর কণ্ঠে মিলিয়ে বলছে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। এরা ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্ঠানগুলোর ওপর আক্রমণ করছে। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতকে প্রতিনিয়ত তারা অস্বীকার করে চলছে। তারা মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না। পাকিস্তানি ভাবধারাকে গ্রহণ করে। তাহলে এরা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে উঠবে কোন পৃষ্টদেশে!

বিশ্বের সেরা শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত ফিনল্যান্ডের বিদ্যালয়ে যখন প্রথম ছয় বছর কোনো পরীক্ষা হয় না এবং দশ বছরের বিদ্যালয়-জীবন শেষে প্রথম বড় ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তখন বাংলাদেশে ফার্স্ট টার্ম, মিড টার্ম, বার্ষিক, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসির মতো কতো পরীক্ষার মুখে শিশুদের মুখোমুখি করে দেয়া হয় যা তাদেরকে কিছু শেখার আগেই প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়। জাপান এবং কোরিয়ায় যখন ম্যাথ এবং প্রোভলেম সলভিংয়ের ওপর ফোকাস করে ধীরে ধীরে শিশুদের বড় করা হয়, তখন আমাদের শিশুদের মুখস্থ করার যুদ্ধে নামতে হয়। জামার্নিতে শিশুদের বিদ্যালয়ে প্রথম দিন যখন শিক্ষাসামগ্রীর সাথে খেলনা, ফুল ও মিস্টান্ন সম্বলিত ‘বিদ্যালয় কোণ’ নামক বিশেষ উপহার দেয়া হয়, তখন আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে লম্বা বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দেয়া হয় এবং অন্য একজনকে এই ভারি বইয়ের ব্যাগ বহন করে বিদ্যালয়ে দিয়ে আসতে হয়।

সৃজনশীল পদ্ধতির অভিমুখিনতায় যে পরিমাণ দক্ষতা প্রয়োজন, তা দিতে রাষ্ট্রযন্ত্র অনেকটাই অকার্যকর। অনেক জায়গায় দেখেছি, সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক শিক্ষকেরই ধারণা কম। তাঁরা নিজেরাও স্পষ্ট নয় এ পদ্ধতি সম্পর্কে। সেখানে তাঁরা শিক্ষার্থীদের কী পাঠদান করবেন! বছরে তিন-চার বার পরীক্ষা পদ্ধতি, সৃজনশীলের সংখ্যা, পরীক্ষার সময় কিংবা সিলেবাস বদল করে বারবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিপদে রাখা হয়েছে। সারাবছরেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। তাতে ভালো কিছু হচ্ছে, তারও উদাহরণ নেই। শিক্ষকরাও অনেকটা দায়সারাভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এরকম অভিযোগ আশ-পাশ থেকে এলেও এটাই বাস্তবতা, তাঁদের করণীয় সীমিত। একজন শিক্ষকের মতে, ‘প্রতিবছরই বইয়ের বিভিন্ন পরিবর্তন শুধু শিশুদের নয়, তাদের জন্যও বিরক্তিকর।’ শুধু পাবলিক পরীক্ষায় উদারীকরণ নম্বর দিয়ে পাসের হার বাড়িয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখে অন্তত এটা পরিস্কার হওয়া যায়। বিদ্যমান শাসন-শোষণ কাঠামো বজায় রাখতে মানুষের মনকেও একধরনের নজরদারি উপযোগী করে গড়ে তোলা জন্য ‘কমল হীরের বিদ্যে’র বদলে ‘চকচক করা প্রতারক কাচ’কে শিক্ষা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। জিপিএ ফাইভ-নির্ভর এ শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে শিখছে না। সুতরাং জিপিএ ফাইভে সংখ্যাধিক্য চমক বাড়লেও এ পদ্ধতি মেধা-গড়ন ও মননে সৃজনশীল করতে পারেনি। কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ পদ্ধতিটি। কয়েক বছর ধরে নিরাপরাধ-কোমলমতি শিশুগুলোর ওপর গবেষণার গিনিপিগ বানানোর চেষ্টা চলছে।

আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রয়েছে। সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে বই ছাপাচ্ছে। বিনামূল্যে সেগুলো বিতরণ করছে। কাগজের মান নিম্ন হলেও আপাতদৃষ্টিতে এটি সরকারের প্রশংসাযোগ্য কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি তাঁর দলীয় সংসদ সদস্যদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, সরকার কতগুলো বই ছাপিয়েছে, এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি কোনো সংসদ সদস্য। উন্নয়নের মহাসড়ক সম্পর্কে আমাদের মতো জনগণের কাছে প্রচার করতে সংসদ সদস্যদের এসব পরিসংখ্যান জানতে প্রধানমন্ত্রী আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এ গলদটুকু জানেন না, বছরের তিন/চার মাস পেরিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বই পায়নি—এমন খবরও প্রকাশিত হতে দেখেছি। পাঠ্যপুস্তকে কী করা হলো! পুরোনো সিলেবাস ঝেঁটিয়ে বিদায় করে তাতে সমূল পরিবর্তন এনেছে, বই সহজ করার চাইতে কঠিন করে ফেলা হলো। পুরানো কারিকুলামই সংস্কারমুক্ত প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সৃষ্টি করেছে। ‘ও’-তে ওল শিখতে গিয়ে ধর্ম হারায়নি। ওইসব বর্ণপরিচয় শিখে তৈরি হয়েছে বিশ্বে গর্ব করার মতো অনেক ব্যক্তি।

আমরা অনেকদিন ধরে বলছি বইয়ের বোঝা কমানোর কথা। সেখানে পাঠ্যপুস্তকে বইয়ের মধ্যে অসরলীকরণ করা হয়েছে বেশি। পড়ার চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। পড়ার অধিক চাপ হতে মুক্তি দিতে চাইনিজ স্কুলে বাধ্যতামূলক এক ঘণ্টা বিরতি এবং কিছু বিদ্যালয়ে নাতিদীর্ঘ ঘুমানোর সুযোগ আছে। এদেশে চাপমুক্ত নয় বরং আরও চাপ যুক্ত হয়, যখন বিদ্যালয়ের পরপর কোচিং, প্রাইভেট, স্যারের বাসায় দৌড়াতে হয়! এদেশে অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের দুপুরের খাবার যখন রিকশা, সিএনজি বা গাড়িতে সারতে হয় তখন ইতালি, ফ্রান্স ও মেক্সিকোতে বিদ্যালয়ের সময় নির্ধারণ করা হয় পরিবারের সাথে লাঞ্চ করার সুযোগ দিয়ে।

অ্যাকাডেমিক শিক্ষার চাপ লাঘবে সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়েও সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাব্যবস্থার অধিকারী। যেখানে আমাদের দেশে খেলার মাঠবিহীন, ছোট ছোট আবদ্ধ ফ্ল্যাটে অনেক শিক্ষার্থী প্রাণহীন শিক্ষা গলাধঃকরণ করছে। পড়ার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। কোনো মজা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। বাংলা বই হয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানের মতো। সেখানে সাহিত্যের ছোঁয়া অনুপস্থিত। আমাদের শিক্ষায় মানবিকতা, সহনশীলতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, নান্দনিকতা ও আনন্দযোগের অভাব রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন— ‘আমরা যতই বি. এ, এম. এ পাস করিতেছি, রাশি রাশি বই গিলিতেছি, বুদ্ধিবৃত্তিটা তেমন বেশ বলিষ্ঠ এবং পরিপক্ক হইতেছে না। …সেইজন্য আমরা অত্যুক্তি আড়ম্বর এবং আস্ফালনের দ্বারা আমাদের মানসিক দৈন্য ঢাকিবার চেষ্টা করি।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘বাল্যকাল হইতে আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। …হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে, আহারটি রীতিমত হজম করিবার জন্য হাওয়া খাওয়ার দরকার।’

আচ্ছা, মেনে নিলাম, একটা পাঠ্যপুস্তক তো আছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সেখান থেকে অনুসরণ করার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তা না করে পরীক্ষার্থীদের কাছে বানান ভুলসহ গাইড বই অনুসরণ করা প্রশ্নপত্র দেয়া হচ্ছে। যেখানে শিক্ষা হওয়া উচিত আনন্দময়, সেখানে পরীক্ষার্থীদের কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষা হল থেকে বের হতে হচ্ছে। অনেক অভিভাবকদের ধারণা, সৃজনশীল মানে গাইড বই। পাঠ্যবই হতে ৩০% আর গাইড হতে ৭০% প্রশ্ন। একজন অভিভাবক বলেছেন, ‘আমি আমার মেয়েকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত গাইড বই ছাড়া পড়াইছি। স্কুল থেকে সব প্রশ্নের উত্তর নোট করে দিয়েছে মেইন বই থেকেই। এখন পঞ্চম শ্রেণিতে এ স্কুলই বলছে গাইড বই কিনে পড়তে! কারণ মেইন বইতে কিছুই নেই!’ শিক্ষার্থীদের সবসময় গোলকধাঁধায় রাখা হচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পড়াশুনা নিয়ে দৌড়ঝাপ আর দুশ্চিন্তায় থাকেন। বইগুলো খুললেই অভিভাবকরা মাথায় হাত রাখেন, কী পড়াবেন, কীভাবে পড়াবেন! ক্লাস ওয়ান-টু-তে এমন কিছু উচ্চারণ আছে যা ওই ক্লাসের একটি শিশুর উচ্চারণ উপযোগী নয়। এছাড়া বাক্যক্রমিক পদ্ধতিতে বাচ্চাদের শিখনের যে প্রক্রিয়া তাও অনেকটাই কষ্টসাধ্য ও দুর্বোধ্যও বটে।

আমাদের দেশে শিক্ষাটা আসলে কী! গাইড বই প্রকাশকদের ধনিক শ্রেণিতে রূপান্তর করার জন্য এ ব্যবস্থা? মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থক ধনিক শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত নীতি ও দর্শনই প্রতিফলিত হচ্ছে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে। সৃজনশীল চালু করে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি নোট বই আর কোচিংনির্ভর করা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে শুনে আসছি কোচিং সেন্টার বন্ধ করার ব্যাপারে সরকার বেশ কঠোর। কয়েকদিন শিক্ষামন্ত্রী বেশ উচ্চবাচ্চ্য করেছেন। কিন্তু একটিও কোচিং সেন্টার বন্ধ হতে শোনা যায়নি। বরং এর সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে। গ্রাম কী শহর কী, সব জায়গায় এখন কোচিং সেন্টার বাণিজ্য। ওখানে এদের উপস্থিতি দেখলে মনে হয় অনেকটা অনিচ্ছায় শিশুরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ওদের পড়ালেখা তো কোচিং সেন্টার ও গাইড বই-নির্ভর হয়ে উঠছে। প্রাথমিক শিক্ষার শুরু থেকে অসংখ্য গাইড বইয়ে সয়লাব। কোচিং মানেও গাইড বই। একেকটি কোচিং সেন্টার গাইড বই ফ্রি দিচ্ছে। এই গাইড বই পড়ে মুখস্থ কর আর সাপ্তাহিক পরীক্ষা দাও। প্রথম শ্রেণির শিশুর হাতে এখন গাইড বই! আমরা উচ্চ-মাধ্যমিক পড়ার সময়ও গাইড বইয়ের ওপর খুব একটি নির্ভর ছিলাম না। কী হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায়? শিক্ষার মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি নিয়ে এ শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা কী শিখবে? এ শিক্ষাব্যবস্থা তাদের স্বপ্ন দেখায় না, তাদের সৃষ্টিশীল করছে না। এ ব্যবস্থা তাদেরকে যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলছে না, এ ব্যবস্থা তাদের আইস্টাইন, নিউটন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল অথবা বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করছে না। তৈরি করছে একটি হতাশ ও ক্লান্ত প্রজন্ম, যে প্রজন্ম প্রকৃত শিক্ষা থেকে বাধ্য হয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। গবেষণা করতে হয় অবসরের পর করুন, নিজের বাসায় করুন; কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর নয়। ওদের বিদ্যালয় হোক আনন্দের এক রঙিন ফুল। কবি সুনির্মল বসু বলেছেন : ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র / নতুন ভাবের নানান জিনিস শিখছি দিবারাত্র।’ ঠিক এ-বিষয়টিকেই কবিগুরু তাঁর মতো করে বলেছেন। পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা জ্ঞানার্জনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

হাবীব ইমন: মুক্ত সাংবাদিকতার সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের প্রকাশনা ও গবেষণা সম্পাদক।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version