আলোচ্য বিষয়সমূহ
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে যারা পড়তে যেতে চান, তাদের অনেকেই কীভাবে স্কলারশিপ খুঁজতে হয় সেই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। এই লেখায় আমরা বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। তবে লেখাটি মূলত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের আওতায় যেসব বিষয় রয়েছে, তাদের জন্যই প্রযোজ্য। তাছাড়া লেখাটিতে মূলত মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডিতে স্কলারশিপের প্রসঙ্গই আলোচনা করা হবে। তবে এই প্রক্রিয়া ছাড়াও ভিন্নভাবে চেষ্টা করেও স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করেছি। প্রতিটি পয়েন্টকে যদি আপনি চেকলিস্ট হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে আপনার প্রস্তুতি নিতে সহজ হবে বলে আমরা মনে করি।
বিদেশে স্কলারশিপ: সিদ্ধান্তগ্রহণ
১. প্রথমেই ঠিক করতে হবে আপনি কোন পর্যায়ে পড়তে চান? মাস্টার্স নাকি এমফিল নাকি পিএইচডি? পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যে এক থেকে দু’বছরের মতো সময় লাগবে, সেই ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্তও নিতে হবে আপনাকে।
২. সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আপনার অনার্স ও মাস্টার্সের (যদি থাকে) ফল অনুসারে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান, তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে ফেলুন। এক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিবো, তিন থেকে চারটি দেশ নির্ধারণ করুন। প্রতিটি দেশ থেকে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় (ও ফ্যাকাল্টি) বাছুন।
৩. এভাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাছার পর আপনি যে পর্যায়ে পড়তে যেতে চান, তার সঙ্গে আপনার যোগ্যতা মিলে কিনা দেখে নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটগুলোতেই এ-সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া থাকে। যদি কোথাও ঘাটতি থাকে, তাহলে সে অনুসারে প্রস্তুতি নিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, এই লিংকে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির ওয়েব সাইটে তাদের চাহিদা ও ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পর্কে বলা আছে। সাধারণত দু’ধরনের যোগ্যতা দেখা হয়: এ্যাকাডেমিক ও ইংরেজি। আপনি দেখুন, আপনার যোগ্যতা ঠিক আছে কিনা।
বিদেশে স্কলারশিপ: পূর্বপ্রস্তুতি
১. এখন আপনার পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার পালা। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই আইইএলটিএস দিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যূনতম আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর চায় ৭.০ এবং প্রতিটি সেকশনে ৬.৫। আপনি যে বিষয়ে পড়তে চান, সেই বিষয়ের চাহিদা দেখে সে অনুযায়ী আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নিয়ে টেস্টটি দিয়ে দিন।
অনেকে মনে করেন, আইইএলটিএস পরে দিলেও হয়। কথাটি সত্য। কিন্তু আপনাকে যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে, তাই তৈরি হয়ে কাজে নামাই শ্রেয়।
২. মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য খুব ভালো হয় আপনার যদি ভালো মানের জার্নালে অন্তত একটি জার্নাল আর্টিক্যাল থাকে। এটি আপনাকে স্কলারশিপ পেতে সহায়তা করবে। যদি না থাকে, তাহলে চেষ্টা করুন, এক বছরের মধ্যে কোনো একটি গবেষণার কাজ করে কিংবা আপনার শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী হয়ে কো-অথর হয়েও একটি ভালো জার্নাল প্রবন্ধ প্রকাশ করা যায় কিনা। মনে রাখতে হবে, জার্নাল আর্টিক্যাল প্রকাশ করতে গিয়ে যেন কোনো বাজে, ভূয়া বা প্রিডেটরি জার্নালে আর্টিক্যাল প্রকাশ করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে।
৩. আবেদন করার জন্য আপনার সমস্ত সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ট্রান্সস্ক্রিপ্ট, পাসপোর্ট, আইডি কার্ডসহ যাবর্তীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে একটি ফোল্ডারে রেখে দিন।
৪. সময় নিয়ে একটি সিভি বানান। এ-ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রে কীভাবে সিভি বানাতে হয়, তার অসংখ্য নমুনা কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ দিলেই পাবেন।
৫. আবেদনের সময় তিনজনের রেকমেন্ডেশন লেটার লাগবে। এক্ষেত্রে চেষ্টা করুন, আপনি যার অধীনে থিসিস করেছেন, তাঁদের অনুমতি নিয়ে জানিয়ে রাখুন যে, আপনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদন করছেন। আবেদনের এক পর্যায়ে তাঁদেরকে আপনার সম্পর্কে লিখতে হবে।
৬. আপনাকে একটি স্টেইটমেন্ট অব পারপাস বা এসওপি লিখতে হবে। কেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান, সেটিই মূলত ওখানে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। সার্চ করলে প্রচুর এসওপি পাবেন নেটে, কিন্তু সাবধান! কখনওই এগুলো কপি করবেন না, এসওপি সময় নিয়ে নিজের মতো করে লিখুন। ইংরেজি ভালো জানেন, এমন কাউকে দেখিয়ে নিন।
৭. এসব তৈরি করার পাশাপাশি আপনি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান ও স্কলারশিপ পেতে চান, সেখানকার প্রফেসরদের প্রোফাইল দেখুন। আপনার আগ্রহের সঙ্গে যাদের কাজের মিল আছে, তাদের জার্নাল আর্টিক্যালগুলো পড়ুন।
প্রস্তুতি
১. এ-পর্যায়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কী নিয়ে গবেষণা করবেন? এটি কি আপনার নিজস্ব আইডিয়া? নাকি কোনো প্রফেসরের চলমান প্রজেক্ট থেকে নেয়া? যেটিই হোক না কেন, আপনাকে খুব সুন্দর করে একটি গবেষণা প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। গবেষণা প্রস্তাব তৈরির অনেক নমুনা নেটে পাবেন, পাশাপাশি কীভাবে গবেষণা প্রস্তাব তৈরি করতে হয়, তার টেমপ্লেট থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েব সাইটে। খুব ভালো হয়, একটি ড্রাফট গবেষণা প্রস্তাব তৈরি করে যে যে প্রফেসরের কাজের সঙ্গে মিল আছে, তাদের সঙ্গে শেয়ার করা।
২. প্রফেসরদের সঙ্গে ইমেইল করার কিছু আদবকেতা আছে। সেগুলো নেটে সার্চ করলে পাবেন। বিদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে একাধিক প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না। একজন প্রফেসর কোনো কারণে প্রত্যাখ্যান করলে তারপরই ওই বিভাগের অন্য প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৩. প্রফেসর আপনার ড্রাফট গবেষণা প্রস্তাব দেখে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। সেগুলো ঠিকমতো সংশোধন করুন। প্রফেসর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েব সাইটে আবেদন করা শুরু করুন। আবেদনের নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হয় কিন্তু তেমন কঠিন কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে আবেদন করুন।
৪. আবেদনের সময়ই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ সম্পর্কে জানতে চায়। সেখানে আপনি যে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আগ্রহী, সে বিষয়ে তথ্য দেওয়ার সুযোগ আছে। আবেদনের প্রতিটি পর্যায়ে সতর্কভাবে সবগুলো ধাপ পূরণ করুন।
৫. এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এসব কাজ করতে করতে আপনি সেগুলোর হদিশ জেনে যাবেন। ফেইসবুকে বিদেশে স্কলারশিপ-সংক্রান্ত অনেক গ্রুপ রয়েছে। সেগুলোতে যোগ দিন এবং নিয়মিত বিভিন্নজনের পরামর্শ পড়তে থাকুন। এগুলো কাজে লাগবে। আপনার কোনো পরামর্শ থাকলেও সেখান থেকে পেতে পারেন।
৬. আবেদন করা শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত ইমেইল আসবে। কখনও বাড়তি তথ্য চেয়ে, কখনও বা বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে। সেগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করুন।
৭. মনে রাখবেন, বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়া সহজ নয়। আপনাকে সারাবিশ্বের অনেকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তবেই স্কলারশিপ পেতে হবে। আপনার সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আশা করা যায়, আপনি স্কলারশিপ পাচ্ছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, সমস্ত ধাপ অনুসরণ করে কেউ কেউ সহজে স্কলারশিপ পাচ্ছেন, কেউ দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও পান না। এক্ষেত্রে দমে যাওয়ার কিছু নেই। আপনি প্রতিটি ধাপ ঠিকঠাকমতো করে করতে থাকুন, লেগে থাকুন। একদিন না একদিন স্কলারশিপ আপনি পাবেনই।
বি.দ্র. লেখাটি নিয়মিত আপডেট করা হবে। লেখার কোনো অংশ যদি বিস্তারিত ব্যাখ্যা বা আলোচনা করতে হয়, মন্তব্যে জানান। আমরা চেষ্টা করবো, আরও বিস্তারিতভাবে লিখতে। এমনকি কোনো কিছু বাদ পড়লেও জানান। বিদেশে স্কলারশিপ যারা পেতে চান, তাদের জন্য আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা তৈরি রাখতে চাই।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।