কাজী ইমদাদুল হকের ‘আব্দুল্লাহ’ উপন্যাসটি হয়তো পাঠ্য হবার সুবাদে অনেকেরই পড়ার সুযোগ হয়েছে। কালের সময়ে একটি মুসলমান পরিবারের ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের অনুধাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বহীনতা জীবিকার ক্ষেত্রে তাদের চাকুরির বাজারকে অসহায় করে তুলেছিল। বইটি কেবল ইংরেজি শিক্ষা নয়, একই সাথে টেকসই উন্নয়ন ও ‘শিক্ষার’ গুরুত্ব উপলব্ধিকরণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে।
বইটি আমাদের কাছে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলে যে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। উন্নয়ন শব্দটির সমার্থক শব্দ উন্নতি, অগ্রগতি তথা পরিবর্তন। কোনো কোনো দেশের মতে- উন্নয়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়ন, কারো কাছে স্বাধীনতা অর্জন, কারো কাছে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাধীনতা অর্জন। কেউ চাচ্ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা, গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর। কেউ বা চাচ্ছে তাৎক্ষণিক বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জেট প্লেনে যাতায়াত। এক-একটি জাতি তাঁর বিদ্যমান অবস্থার আলোকে বেছে নিবে তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। তবে লক্ষ্যে ভিন্নতা থাকলেও সকল জাতিই উন্নয়নের পক্ষে একমত হবে নিশ্চিত। এক্ষেত্রে অন্যান্যের সাথে শিক্ষাও কার্যকর অবদান রাখতে পারে। প্রশ্ন হল, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষা একই অবদান রাখতে পারে কি? একই সাথে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলিত ধারা কি টেকসই উন্নয়নের পক্ষে কথা বলে?
শিক্ষা মানুষের মধ্যে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ তৈরি করে, যা ভবিষ্যতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। তবে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ভবিষ্যতের রূপরেখা অনুধাবন, সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং ক্রিটিক্যাল থিংকিং-এর দিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন যা কিনা ভবিষ্যতে এই উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বলতে বোঝায় শিখন এবং শিক্ষণের ক্ষেত্রে উন্নয়নের ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্তকরণ যেমন- আবহাওয়ার পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা, দারিদ্র্য নিরসন, সাস্টেইনেবল কনজাম্পশন, বায়োডাইভারসিটি, ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যকার ফারাক, মানবাধিকার, বিশ্বায়ন, উন্নত জীবন সম্পর্কে সচেতনতা ইত্যাদি। WWF’s living planet-এর একটি রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, মানবজাতির ecological footprint (পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের ওপর মানুষের চাহিদার পরিমাপ) ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উন্নত দেশে বেশি। এই বৃদ্ধির বোধ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের থাকতে হয়, থাকা উচিত।
কারণ আমরা কোথায় আছি, আমাদের অবস্থান নিয়ে ভাবতে শুরু না করলে এগিয়ে যাবার রাস্তায় পথ হারাতে হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে বিশেষত পরিবেশ-বিজ্ঞানে এ-জাতীয় ধারণার অন্তর্ভুক্তকরণ করা হলে নিঃসন্দেহে তারা পৃথিবীর বায়োক্যাপাসিটি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করবে। তবে কেবল কারিকুলামে বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্তকরণ নয়, একই সঙ্গে শ্রে-ণিকক্ষে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ ও শিখন পদ্ধতির অনুসরণ করা দরকার যা কিনা শিক্ষার্থীদের আচরণগত পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রেষণা যোগায়। একটা মানসম্মত ও যুগোপযুগী কারিকুলাম প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আধুনিক ধারণার অনুশীলন লক্ষ্য অর্জনকে নিশ্চিত করে। UN Decade of Education for Sustainable Development (DESD) এর শুরু ২০০৫ সাল থেকে।
The aim of the UN decade is to ensure that education for sustainable development is practiced In schools and other educational establishments in order to highlight the central role that education and learning play in the common pursuit of sustainable development and that quality education is a prerequisite for education for sustainable development at all levels and in all aspects off education.
UNESCO এই ক্যাম্পেইনটি চালিয়েছে যাতে বিশ্বজুড়ে শিক্ষা এবং শিখনের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের ধারণা জন্মায়। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিখনকে দুটো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়। একটি হল- আমরা কী শিখব এবং সেটা কিভাবে? যদি আমরা পরিবেশগত সমস্যার কথা বলি, তাহলে এ সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান একটা ভূমিকা রাখতে পারে। আর এই ধরনের শিখন শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের মাধ্যমে রপ্ত করতে পারে। কাজেই আমাদের আশপাশের সমস্যা অনুধাবন এবং তার সমাধান সম্পর্কিত জ্ঞানলাভের অন্যতম উপায় হলো শিক্ষা। যে শিক্ষা অর্জনে বিদ্যালয় এবং তার শিক্ষকদের ভূমিকা অনন্য। আবারও বলছি, এই উন্নয়নের জন্য অংশগ্রহণমূলক শিক্ষন-শিখন পদ্ধতি অবলম্বন করা চাই যা কিনা শিক্ষার্থীদের আচরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রেষণা প্রদান ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এর ফলে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উচ্চতর চিন্তন দক্ষতা, ভবিষ্যতের জন্য সার্থক নীলনকশা অঙ্কন, সিদ্ধান্তগ্রহণ ইত্যাদি সহজতর হয়ে ওঠে। তাহলে টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারেন কী করে? এর একটা প্রধান উপায় হল, গ্রুপে আলোচনার ঝড় তোলা। যখন একজন শিক্ষার্থী একজন শিক্ষকের সহযোগিতায় একটি নির্ধারিত বিষয়বস্তুর উপরে নিজস্ব মতামতগুলোকে উপস্থাপন করে তখন উক্ত বিষয় সম্পর্কে তাদের ধারণা শাণিত হয়। এক্ষেত্রে সমস্যাভিত্তিক শিখন একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তব ভূমিকা রাখতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেবার ক্ষমতা তৈরিই হতে হবে মূল লক্ষ্য। তাই শিখনের বিষয় এবং পদ্ধতি দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। বাল্টিক সাগর অঞ্চলে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে Education for change (EduC) নামক একটি প্রজেক্ট ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের ধারণা সংযোজনের ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন হবে সমন্বয়ী; এর মধ্যে সবাই এবং সব আসবে। গবেষকরা সুবিধার জন্য ‘সাস্টেইনেবিলিটির চেয়ার’ বলে একটা ধারণার প্রচলন করেছেন। এই ‘চেয়ারে’র চারটি পায়া আছে এবং নীতি-নির্ধারণ এবং ব্যবস্থাপনায় এই চারটি পায়াকেই সমানভাবে সমন্বয় করতে হবে। কোনো একটি পায়াকে বেশি গুরুত্ব দিলে, ‘চেয়ার’টা ভারসাম্য হারাবে।
টেকসই উন্নয়ন অনেকখানিই সুরক্ষিত ও সুষম ইকোসিস্টেমের ওপরে নির্ভর করে গড়ে ওঠে এবং মানুষের মানসম্মত জীবনধারন ও নিরাপত্তার কথা বলে, যার ফলে একটা সাউন্ড ইকোনমিক্যাল অবস্থা অর্জন সম্ভব হয়। তবে টেকসই উন্নয়নকে এভাবে গুটিকতক উন্নয়নমূলক উপাদানের ওপরে নির্ভর করে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। একথা গ্যারান্টি দিয়ে হয়ত বলা সম্ভব যে, উন্নয়নকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার বড় রকমের অবদান সত্যি অনস্বীকার্য। শিক্ষা মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যকে নিশ্চিত করে মানুষকে সমাজের একজন দায়িত্ববান ও উৎপাদনশীল নাগরিক হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে মূল উপাদানটি হলো মানসম্মত ও সৃজনীমূলক শিক্ষা। কাজেই শিক্ষার ধারায় পরিবর্তন আনয়ন, শিক্ষকদের ট্রেনিং প্রদান, কারিকুলাম তৈরিতে দক্ষতা আনয়নসহ অন্যন্য সব দিকে পরিকল্পনার আওতায় আনার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে একটা বিপ্লব আনা যায় যা নিশ্চিত করবে একুশ শতকের শিক্ষার চাহিদা। একই ধারায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কন্সট্যান্ট শিখনকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- তারা কি চলমান উন্নয়নের ধারাকেই অনুসরণ করবে নাকি উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন ধারা উন্মোচিত করবে, ভাববে নতুন কিছু? কারণ একটি বিষয় কিন্তু স্পষ্ট, উন্নয়নের ধারা পরিবর্তনশীল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তাই উন্নয়নের নতুন নতুন ধারাকে রপ্ত করতে হয় আর তাই সৃজনশীলতা শেখানে একটা মস্ত বড় ভূমিকা রাখে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাই সৃজনশীলতাকে অগ্রাধিকার দিতে হয় সর্বাগ্রে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাঁচতে শেখা তাই টেকসই উন্নয়নের ভিত মজবুত করে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা তাই অপরিহার্য। শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে তাই নিম্নলিখিত পয়েন্টগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
[box] – কারিকুলাম প্রণয়নের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর স্ট্রাটেজিকে বিবেচনায় রেখে নিজস্ব সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষাদর্শন, শিক্ষার্থীদের মনোবৈজ্ঞানিক অবস্থাকে বিবেচনায় আনা; -শিক্ষণ-শিখনের ক্ষেত্রে একুশ শতকের চাহিদাকে গুরুত্ব প্রদান; -বিষয়বস্তু নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বয়স ও মেধা যাচাই করা; -উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া; -পাঠ উপস্থাপন পদ্ধতিতে ভিন্নতা আনার মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; -আদর্শ শিক্ষণ পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকসহ স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান; -একুশ শতকের শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা রাখা; -শিক্ষকদের ডিজিটাল ক্লাসরুম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়া; -বাস্তব প্রয়োগভিত্তিক জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠের বিষয়বস্তুর সাথে বাস্তবের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো; -হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে পাঠের সাথে শিক্ষার্থীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা বাড়ানো; -মূলধারার শিখনের সাথে অন্য ধারার শিক্ষাকেও গুরুত্ব প্রদান; -নারী শিক্ষাকে গুরুত্ব প্রদান; -বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়াসহ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ।[/box]
দার্শনিক প্লেটো বিশ্বাস করতেন, একটি সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষা অপরিহার্য। তাঁর মতে “education is indispensible for the economic health of a good society”। অ্যাডাম স্মিথ শিক্ষাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে শিক্ষাকে মূলধন হিসাবে গণ্য করেছেন। আবার অনেকে মনে করেন, শিক্ষা হচ্ছে সু-অভ্যাস গঠন, আত্মোন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, নৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ জাগরণের উপায়। এঁদের কথা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার বিকল্প নেই। সেটি আমাদের মতন উন্নয়নশীল দেশের জন্যেও সত্য। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বর্তমানের সময়ে আলোচনার একটি ইস্যু। সব মানুষকে তাদের বোধগম্যতার স্তর বাড়িয়ে দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ তথ্য কেবল জানা বা শোনার নয়, বোঝারও। তথ্যকে বিশ্লেষণ করে একটি কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে শিক্ষা। শিক্ষা কেবল পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সেই জ্ঞানকে বাস্তব জগতের সঙ্গে সংযোগ করাও একটি বড় উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীরা তথ্য জানবে এবং দায়িত্বশীলতার সাথে সিদ্ধান্তগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে দেশের একজন আস্থাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবার মাধ্যমে সমাজে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে, কাঙ্ক্ষিত গুণগত জীবন অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। নিঃসন্দেহে শিক্ষা টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার।
“Education for Sustainable Development (ESD)” is a concept that goes far beyond environmental education. ESD is the educational process of achieving human development (“the three pillars of human development” proposed by UNDP: economic growth, social development, and environmental protection) in an inclusive, equitable and secure manner. – UNU network
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সম্পদের বণ্টন সামঞ্জস্যহীন। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটা বড় রকমের বাঁধা। এই বাঁধা অতিক্রমের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষা বড় অবদান রাখতে পারে। নারী শিক্ষার ফলে ফারটিলিটি রেটকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও বণ্টন সম্ভব। নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষা গ্রহণের হারের মধ্যে সমতা না আনতে পারলে উন্নয়নকে টেকসই করা সম্ভব নয়। সাধারণত দেখা যায় যে, উচ্চশিক্ষিত মানুষ অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ আহরণ করে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় রকমের সমস্যা। এই দুই গ্রুপের মানুষদের মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনাটাও একটা বড় রকমের কাজ। আসলে চিন্তা করলে যা স্পষ্ট হয় তা হলো, উন্নয়ন চাই- তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষা এই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও টেকসই করতে পারে তখনি যখন শিক্ষা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য নিশ্চিত করা হবে, একই সাথে উচ্চশিক্ষিত ও নিম্নশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনা হবে। তবে শিক্ষা অর্জনের ধরন আর প্রদানের ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। শিক্ষাকে সমাজের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে এ শতকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা মাথায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একটা কথা মাথায় রাখা জরুরি যে, গ্লোবালাইজেশন কেবল অর্থনীতির ক্ষেত্রে নয়; অন্যান্য ব্যাপারগুলোর সঙ্গেও জড়িত। এক দেশের মানুষ আরেক দেশে যাচ্ছে। সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটছে। তথ্যের আদান প্রদান ঘটছে। বদলাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। পুরো বিশ্ব আজ মিলেমিশে একাকার। এমতাবস্থায় গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য। একটি দেশকে তাই সমৃদ্ধ করে তুলবার ক্ষেত্রে শিক্ষার অবদান হবে অনস্বীকার্য। তাই সঠিকভাবে, প্রয়োগমুখী ও জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক পরিচিতি
ফারহানা মান্নান লেখক, শিল্পী, শিক্ষা-গবেষক। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগবেষণায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।
Visitor Rating: 5 Stars
Visitor Rating: 1 Stars
Visitor Rating: 4 Stars