আমার সচরাচর খুব একটা অসুখ হয় না। এদিক দিয়ে আমি বড়ই ভাগ্যবান বলা চলে। তবে ঠাণ্ডাকাশি আমার নিয়মিত ব্যাপার। এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। তাই এটাকে অসুখের পর্যায়ে আমি ফেলি না। সেই আমার কী যেন হয়ে গেল। বেশ কয়েকদিন ধরে পিঠে ব্যাথা। বৃহস্পতিবার অফিস ছুটি হলেই আমি বাড়ির দিকে দৌড় দেই। কাঁধে থাকে ব্যাগ। বেশি বড় না। স্কুল ব্যাগ কাঁধেই ঝোলানো যায়। কিন্তু বাড়ি পৌঁছেই শুরু হয় এর যন্ত্রণা, শুরু হয় কাঁধে ব্যাথা। প্রথম প্রথম ভাবতাম ব্যাগ কাঁধে নেওয়ার জন্যেই এমন হচ্ছে। তাই কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো বাধ দিলাম। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। ব্যাথা আর কমে না। কী করা যায়। বাবা একজন ডাক্তার তাই তার পরামর্শ নিলাম। তিনি কিছু ঔষুধ দিলেন। খেলাম কিন্তু ব্যাথা আর কমে না।
জানেন তো বাঙ্গালির অসুখ হওয়া মানে ফ্রি ডাক্তারের খোঁজ পাওয়া। আমার আশেপাশে জমায়েত হতে শুরু করলো নানান ধরনের ডাক্তার। কেউ বলে সাঁতার কাটো, তো কেউ বলে বালিশ রোদে দাও। আবার কেউ বলে গরম তেল মালিশ কর। আহা কত জনের কত পরামর্শ! ভাবতে ভালোই লাগে আমাদের দেশে কত সংখ্যক ডাক্তার। আমরা কত এগিয়ে। কিন্তু কেউ বলছে না ডাক্তার দেখাও, পরীক্ষা কর। আমার নানা (চাচাত) একজন নাম করা হাড় ভাঙ্গা ও জোড়া এবং স্পাইন বিশেষজ্ঞ। তাঁর কাছে গেলাম দেখাতে। তিনি কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করলেন। এখানে ওখানে নেড়ে-চেড়ে দেখলেন। যেহেতু নানা সম্পর্কীয় তাই নানান ধরণের হাসির কথাও শোনালেন। তারপর এক গাদা ঔষুধের নাম লিখে দিলেন। বললেন দুই সপ্তাহ খেয়ে দেখতে। কিছু না হলে এক্সরে করে দেখবেন।
আমি মহা আনন্দে ঔষুধ খাওয়া শুরু করলাম। এবার অসুখ যাবে কই!! কিন্তু না, কিছুই হলো না অসুখ আর সারে না। এর মাঝে আমার অফিসে শুরু হলো আইসিটি বিষয়ক বই লেখা। এই বইয়ের একটি অংশ কিভাবে নিরাপদ ভাবে আইসিটির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। অংশটি পড়ে মনে হলো আমার অসুখের কথা। মিলিয়ে দেখলাম, আমার অসুখের কারণও খুঁজে পেলাম।
দেখা হলো আমার ডাক্তার নানার সাথে। তাকে জানালাম আমার অসুখ কমেনি। সাথে তাকে এটাও জানালাম আমাকে সারাদিন কী কাজ করতে হয়। এর আগে নানা জানতো আমি একটি চাকুরি করি কিন্তু কি কাজ করতে হয় তা জানতো না। আমার কাজের ধরন শুনে তিনি বুঝলেন, কেন এই ব্যাথা। তারপর তিনি কিছু ব্যায়াম ও কিভাবে কাজ করতে হবে তা শিখিয়ে দিলেন। কি আশ্চর্য! দুইদিনেই আমার ব্যাথা কমে গেল। আমি মুক্তি পেলাম ব্যাথার হাত থেকে।
ইশ ডাক্তার নানাকে যদি আগেই বলতাম, আমি কী কাজ করি তবে এতোদিন অসুখে ভুগতে হতো না। কিন্তু তিনিও তো জিজ্ঞেস করেন নি, আমাকে কী কাজ করতে হয়? এটা কি তারই উচিত ছিল না আমার বা রোগীর সম্পর্কে তথ্য অর্থাৎ রোগীর সামাজিক পরিবেশ কী তা জানা? একজন রোগী কেন রোগী বা রোগে ভুগে তার অর্ধেক কারণই জানা যাবে রোগীর কাজের ধরন দেখে। একজন ডাক্তার যদি না জানেন তার রোগীকে কী কাজ করতে হয় তবে তার অসুখ সম্পর্কে কিভাবে জানবেন?
আমাদের দেশে এই রীতি এখনো হয়নি যে ডাক্তার এতো সময় নিয়ে কথা বলবেন। ডাক্তার শুধু শুনে যান কী অসুখ হয়েছে, কত দিন থেকে ভুগছে, আগে কী চিকিৎসা করিয়েছেন? এছাড়া আর কিছু জানার প্রয়োজন তার পরে না। তাই আমাদের অসুখও সারে না। ডাক্তাররা কি এই বিষয়ে একটু মনোযোগ দিবেন?
লেখক পরিচিতি
মুশফিকুর রহমান
মুশফিকুর রহমান বাংলাদেশের শিক্ষা ওয়েবসাইটের একজন সহ-সম্পাদক।