বাড়ি উদ্যোগ শিক্ষা উদ্যান: অনন্য এক বিদ্যালয় মডেল

শিক্ষা উদ্যান: অনন্য এক বিদ্যালয় মডেল

শিক্ষা উদ্যান

কেমন হয় যদি বিদ্যালয় হয় একটি উদ্যান? যেখানে থাকবে না কোনো নিয়মের বাঁধা! চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সারাদিন ইচ্ছেমতো উদ্যানের বিভিন্ন জায়গাতে খেলা যাবে, সাঁতারানো যাবে, পাহাড়ে চড়া যাবে? থাকবে খেলার সকল উপকরণ, বিদ্যালয়ের পড়া বিদ্যালয়েই হয়ে যাবে, থাকবে না কোনো বাড়ির কাজ, কিংবা থাকবে না পরীক্ষার চাপ? আর সেসব মিলেই এমন বিদ্যালয়! আর তেমন একটি বিদ্যালয় মডেল বর্ণনা করছি আমরা: শিক্ষা উদ্যান, আনন্দময়ী শিখনের উদ্যান।

বর্তমান বিশ্বের দ্রুত নগরায়নের ফলে কমে এসেছে খেলার মাঠ। শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণের ফলে আজ বিদ্যালয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ এমন এক জায়গা। সেখানে যান্ত্রিক মানুষের মতো নির্ধারিত সময়ে আসতে হয়, একগাদা বই টানতে হয়, বাসায় গিয়ে আবার গৃহশিক্ষক, বাড়ির কাজ এসব করতে করতেই দু-দণ্ড প্রকৃতির দিকে তাকানোরও সময় থাকে না।

শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়: একজন মানুষের আনন্দ উপভোগের ক্ষমতা তৈরি করে দেবে শিক্ষা। অথচ বর্তমান শিক্ষার অবস্থা সেই তোতাপাখি কাহিনীর মতো। একগাদা তথ্য তোতাপাখির মতো করে বলতে পারাটাই যেন শিক্ষা। আর শিক্ষার লক্ষ্যও যেন সেই তোতাপাখি তৈরি করা।


কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বিদ্যালয়-পড়ুয়া শিশুদের কৃষির সাথে পরিচিত করে তোলার জন্য উদ্যানটিতে বিশাল একটি অংশজুড়ে কৃষিকর্ম অঞ্চল থাকবে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের বিদ্যালয়-পড়ুয়া শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে পড়া কৃষিবিষয়ক অংশের সাথে পরিচিত করে তুলতে এবং কৃষিবিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের সুযোগ প্রদানের জন্য থাকছে এ অঞ্চল।


শিক্ষা উদ্যান: আনন্দময়ী শিখনের উদ্যান

আমাদের বিদ্যালয় মডেলটিতে বিদ্যালয় হবে চার দেয়ালের মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র নয়, পুরো বিদ্যালয়টিই হবে একটি উদ্যান। বিশাল বড় একটি উদ্যানের মধ্যেই গড়ে উঠবে পুরো বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয় শব্দটি যেন অনেক শিশুর কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে একটি উদ্যান, শিক্ষা উদ্যান।

শিক্ষা উদ্যানের কাঠামো

শিক্ষা উদ্যানের প্রবেশদ্বারেই থাকছে চমক! বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকটি হবে বিশাল মিকি মাউসের আকৃতির। শিক্ষা উদ্যানের সবকিছুই হবে শিক্ষার্থীবান্ধব ও আকর্ষণীয়। শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ শিশুর জন্য প্রেষণা সৃষ্টি করে। সেজন্য প্রচলিত বিদ্যালয় ভবনের বাইরে গিয়ে বিদ্যালয় ভবনের মডেলও হবে বিদ্যালয়ের বাসের মতো। আমরা সেটির নাম দিয়েছি শিক্ষাবাস। সুবিশাল উদ্যানটির বিভিন্ন অংশ থাকবে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় জায়গা।

শিক্ষা উদ্যান

ফিরে চল মাটির টানে!

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বিদ্যালয়-পড়ুয়া শিশুদের কৃষির সাথে পরিচিত করে তোলার জন্য উদ্যানটিতে বিশাল একটি অংশজুড়ে কৃষিকর্ম অঞ্চল থাকবে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের বিদ্যালয়-পড়ুয়া শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে পড়া কৃষিবিষয়ক অংশের সাথে পরিচিত করে তুলতে এবং কৃষিবিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের সুযোগ প্রদানের জন্য থাকছে এ অঞ্চল। কৃষিকাজের পাশাপাশি এ অঞ্চলের একটি অংশজুড়ে থাকবে বনভূমি। বৃক্ষরোপণের সাথে পরিচিত করে তোলার জন্য শিক্ষা উদ্যানের শিশুদের সাথে বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালিত হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষিকাজে অংশগ্রহণ শিশুদের মনে কৃষক, কৃষিকাজ সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে। পাশাপাশি কোনো পেশা বা কোনো কর্মই ছোট নয়— এ সম্পর্কে উপলব্ধিও হবে শিশুদের মনে।

স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র

চার দেয়ালে আবদ্ধ হতে গিয়ে বিদ্যালয় অনেক অপরিহার্য ও আবশ্যক উপাদান বিলুপ্ত বা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সেরকম বিদ্যালয়ের জন্য অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে চিকিৎসাকেন্দ্র। বিদ্যালয়-পড়ুয়া শিশুদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের দায়িত্ব বিদ্যালয়েকেই নেয়া উচিত।

বিদ্যালয় মানে কেবল শ্রেণিকক্ষে রাশভারি একজন শিক্ষক পাঠদান করবেন, বিষয়টি এমন নয়। একটি শিশুর সবধরনের বিকাশের পরিপূর্ণতা ঘটানোর দায়িত্বও শিক্ষার। বিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা, ভিটামিন খাওয়ানোর মতো কর্মসূচি চিকিৎসাকেন্দ্রের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য শিশুমনোবিজ্ঞানী অথবা মনোরোগ বিশেষেজ্ঞ থাকবেন।

বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন

শিশুদের বিকাশের জন্য সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ে অবস্থানকালীন শিশুদের সুষম খাদ্য সরবারহের জন্য থাকবে স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন। স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাদ্য শিশুদের জন্য প্রস্তুত করবে ক্যান্টিন। বিদ্যালয়ে দিন ভাগ করে করে মাছ, মাংস, শাকসবজি সবকিছু শিশুদের খাওয়ানো হবে। সেখানে তোত্তোচানের তোমোয়ে বিদ্যালয়ের পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। ক্যান্টিনে একটি বড় ডাইনিং থাকবে। প্রতিদিন খাবার আগে একজন করে সামনে এসে গল্প বলবেন। এতে করে গল্প বলার ছলে শিশুদের মধ্যে কথাবলার জড়তা, লজ্জা এগুলো কেটে যাবে। শিক্ষা উদ্যানের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করবে।

শিক্ষা উদ্যানের খেলার মাঠ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো খেলার মাঠ। মাঠে খেলার মাধ্যমে শিশুর শারীরিক বিকাশ ঘটে, পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকে। খেলার মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জিত হয়, জয়-পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নেবার সক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেজন্য শিক্ষা উদ্যানে থাকবে দুটো বড় খেলার মাঠ। একটি অভ্যন্তরীণ খেলার মাঠ এবং অপরটি বহিস্থ অর্থাৎ খোলা খেলার মাঠ। শিক্ষা উদ্যানে খেলার মাঠের পাশাপাশি থাকছে বিভিন্ন ধরনের রাইড যেমন, স্লিপার, দোলনা, খেলনা ট্রেন, খেলনা গাড়িসহ আরো অনেক কিছু। শিক্ষা উদ্যানের সকল শিশুদের সবধরনের বিকাশ নিশ্চিতের জন্য কাজ করবে শিক্ষা উদ্যান।


জীবনদক্ষতা বলতে সহজ অর্থে বোঝায় সেসব দক্ষতাকে যা জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। যেমন, সাঁতার কাটা, ট্রাফিক সিস্টেমে অভ্যস্থ হওয়া, পাহাড়ে চড়তে পারা, আত্মরক্ষা— এই চারটি জীবন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকছে শিক্ষা উদ্যানে


জীবনদক্ষতার অনুশীলন

সাক্ষরতা বলতে একসময় শুধু পড়তে বা লিখতে পারা বলা হলেও সময়ের বিবর্তনে সাক্ষরতার সংজ্ঞায়নে পরিবর্তন এসেছে। জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনও এখন সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্ত। তাই কিছু জীবনদক্ষতা অর্জনের জন্যও সুযোগ থাকছে শিক্ষা উদ্যানে। জীবনদক্ষতা বলতে সহজ অর্থে বোঝায় সেসব দক্ষতাকে যা জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। যেমন, সাঁতার কাটা, ট্রাফিক সিস্টেমে অভ্যস্থ হওয়া, পাহাড়ে চড়তে পারা, আত্মরক্ষা— এই চারটি জীবন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকছে শিক্ষা উদ্যানে। শিক্ষা উদ্যানে সাঁতার শেখার জন্য রয়েছে সুইমিংপুল। বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সাঁতার শেখা শিক্ষা উদ্যানের প্রতিটি শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশে অতিরিক্ত সংখ্যক সড়ক দুর্ঘটনা, যানজটের পেছনে ট্রাফিক সিস্টেম অমান্য করা দায়ী। শিশুকে যদি ছোট বয়স থেকেই রাস্তা চলাচলের সাথে অভ্যস্থ করিয়ে নেয়া যায় তবে সড়কের দুর্ঘটনা, যানজট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। শিক্ষা উদ্যানটি আয়তনে বড় হওয়ার জন্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচলের জন্য রয়েছে ছোট ছোট কিছু বাস।

উদ্যানের ভেতরে পুরো জায়গা জুড়ে থাকা রাস্তায় রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ট্রাফিক সিস্টেম, যা একজন শিশুকে রাস্তা চলাচলের সাথে অভ্যস্থ করে তুলবে। তত্ত্বাবধায়কের সহায়তায় উদ্যানে থাকা ছোট পাহাড়গুলোতে শিশুরা পাহাড়ে চড়া শিখতে পারবে। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে শিশুদের কারাতে শেখানোর ব্যবস্থা থাকছে। জীবন ধারণের জন্য চারটি জীবনদক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকছে শিক্ষা উদ্যানে।

শিক্ষা উদ্যান

শিক্ষা উদ্যানের এ্যাকাডেমিক কাঠামো

শিক্ষা উদ্যানটি মূলত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় মডেল যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বা প্রচলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো। প্রাক-প্রাথমিক স্তরটি হবে দুই বছর মেয়াদী। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা মূলত শিশুদের অর্ন্তনিহিত অপার বিস্ময়বোধ, অসীম কৌতুহল, আনন্দবোধ ও অফুরন্ত উদ্যমের মতো সার্বজনীন মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজন।

শিশুকে বিদ্যালয়ের সাথে পরিচিত করে তোলা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তবে শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ করে শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পণ্য বানিয়ে ফেলার জন্য প্রাক-প্রাথমিক অর্থাৎ প্লে-নার্সারি পড়ুয়া শিশুকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ১০/১২টি বই। তবে শিক্ষা উদ্যানে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য পদ্ধতিগত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থাকছে না। শিশুরা বিদ্যালয়ে আসবে, ছবির মাধ্যমে গল্পের বই পড়বে খেলবে, সরাসরি হাতে-কলমে শেখা্র জন্য উদ্যানের মধ্যে রয়েছে লেটার ট্রিসহ বহুধরনের শিক্ষা উপকরণ।


আমাদের এই শিক্ষা উদ্যানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না কোনো পরীক্ষা। হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। শ্রেণিশিক্ষক প্রতিনিয়ত পাঠদানের সময়, শ্রেণিকক্ষে গল্প বলার সময়, সহশিক্ষাক্রমিক কিংবা বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে কাজ করার সময় নিয়মিতভাবে গোপনভাবে মূল্যায়ন করবেন।


শিক্ষা উদ্যান: কীভাবে হবে মূল্যায়ন?

আমাদের এই শিক্ষা উদ্যানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না কোনো পরীক্ষা। হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। শ্রেণিশিক্ষক প্রতিনিয়ত পাঠদানের সময়, শ্রেণিকক্ষে গল্প বলার সময়, সহশিক্ষাক্রমিক কিংবা বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে কাজ করার সময় নিয়মিতভাবে গোপনভাবে মূল্যায়ন করবেন। এর মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়ন করা হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণির পর থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে রীতিবদ্ধ পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষার মাধ্যমে মূ্ল্যায়ন করা হবে। তবে কোনো শ্রেণিতেই ফলের ক্রম অনুসারে অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয় এভাবে মূল্যায়ন করা হবে না। ফলের ক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে।

কেন গড়ে তোলা প্রয়োজন শিক্ষা উদ্যান?

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনোরূপ অক্ষমতা বা ভিন্ন কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণের হওয়ার জন্য কাউকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আর মানুষ হিসেবে প্রতিটি শিশুর আছে শিক্ষাগ্রহণের অধিকার। আমাদের শিক্ষা উদ্যান হবে অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থাৎ বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণের শিশুদের পড়ার সুযোগ থাকবে। এভাবে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণের প্রতি শিশুদের সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে, যা অহিংস পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখবে।

দেশের অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোতে যখন বাড়ির কাজ, বইয়ের ভারে নুইয়ে পড়ার মতো অবস্থা, তখন আমাদের শিক্ষা উদ্যানের সকল এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অর্থাৎ ক্লাসের পড়া উদ্যানের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। থাকবে না কোনো বাড়ির কাজ। সেজন্য নিজগৃহে অবস্থানকালীন সময়টুকু নির্বিঘ্নে কাটাতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তাদের কাঁধে কোনো বইয়ের বোঝাও থাকবে না।

একজন শিশু দিনের সর্বোচ্চ সময় পার করে তার নিজগৃহে অভিভাবকের সঙ্গে। সেজন্য একজন শিশুর কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা অস্বাভাবিকতা আছে কি না (যেমন, অস্বাভাবিক আচরণ, শারীরিক কোনো অসুবিধা) সেগুলো যাতে সনাক্তকরণ সহজ হয়, এজন্য শিক্ষা উদ্যান শিশুদের অভিভাবকের কাছ থেকে নিয়মিত মূ্ল্যায়ন কার্ড শিক্ষা উদ্যান সংগ্রহ করবে।

এতে করে প্রতিটি শিশুর বিকাশগত অস্বা্ভাবিকতা বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে উক্ত সমস্যার অতিদ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। শিক্ষা উদ্যানে শুধু শিক্ষকরাই থাকবেন এমন নয়; বরং বিশেষ শিক্ষার শিক্ষক, মনোবিজ্ঞানী, শিশুবিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিন থেকে বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে মাল্টিডিসিপ্লিনারী টিম গঠন করতে হবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা সম্ভব।


জনপ্রিয় শিক্ষা কমিশন জ্যাক দেলর কমিশনে শিক্ষার চারটি লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘একসাথে মিলেমিশে বসবাস করার জন্য শেখা’। বিদ্যালয় আমাদের শেখায় সমাজে কীভাবে মিলেমিশে একসাথে বাস করতে হবে। শিক্ষা কেবল বিদ্যালয়ে অর্জিত হয় তা নয়, বরং অনানুষ্ঠানিকভাবে সমাজ থেকে আরো অনেক বেশি শিক্ষা অর্জিত হয়।


শিক্ষা উদ্যান: বিদ্যালয় ও সমাজ সম্পৃক্ততা

বিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আর বিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সমাজের প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের সৃষ্টি এবং বিদ্যালয় ছাড়া সমাজের টিকে থাকাও অসম্ভব। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয়ের সাথে ওই সমাজের সম্পৃক্ততা যতোটা দৃঢ় হবে, শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়ন হওয়া ততোটাই সহজ।

জনপ্রিয় শিক্ষা কমিশন জ্যাক দেলর কমিশনে শিক্ষার চারটি লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘একসাথে মিলেমিশে বসবাস করার জন্য শেখা’। বিদ্যালয় আমাদের শেখায় সমাজে কীভাবে মিলেমিশে একসাথে বাস করতে হবে। শিক্ষা কেবল বিদ্যালয়ে অর্জিত হয় তা নয়, বরং অনানুষ্ঠানিকভাবে সমাজ থেকে আরো অনেক বেশি শিক্ষা অর্জিত হয়। আর সেজন্য বিদ্যালয়কে স্থানীয় সমাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের শিক্ষা উদ্যান তার আশপাশের সমাজের সাথে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

শিক্ষা উদ্যান: আনন্দময় শিখন

দ্রুত জনসংখ্যাবৃদ্ধি ও শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করার ফলে শিক্ষা আজ তার প্রকৃত লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত। চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ বিদ্যালয়, বইয়ের ভারে নুইয়ে পড়া বিদ্যালয় পড়ুয়াকে দেখলে বোঝা যায় শিক্ষা তার জন্য উপভোগ্য কিছু নয়; বরং একটি বোঝা। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সেরা অনুশীলনগুলোকে একজায়গায় আনা এবং শিখনকে আরো বেশি আনন্দময় করার প্রয়াসেই এই শিক্ষা উদ্যান।

লেখক পরিচিতি

জুলিয়া আক্তার মিশু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

সিরাজুম মনিরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version