বাড়িশিক্ষাব্যবস্থাশিক্ষা ব্যবস্থা বনাম নিয়োগ ব্যবস্থা

শিক্ষা ব্যবস্থা বনাম নিয়োগ ব্যবস্থা

শাহরিয়ার শফিক লিখেছেন নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়ে

কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের অদক্ষতা ও শিক্ষার নিম্নমানের পিছনে একটিমাত্র অনুঘটক থাকলে সেটি কী? জবাবে অনেকে অনেক ধরনের উত্তর দিবেন। আমাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে নির্দ্বিধায় যে উত্তরটি দিব তা হল- শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থার মধ্যে অসঙ্গতি। চলুন মূল বক্তব্যের আগে বাংলাদেশের নিয়োগ ব্যবস্থার সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্কের স্বরূপটি দেখে নিই।

সংক্ষেপে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের নিয়োগ ব্যবস্থায় দেখা যায় কয়েকটি পেশাগত বিষয় (যেমন- চিকিৎসা, কৃষি, প্রকৌশল) বাদে অন্য সবক্ষেত্রে কোন বিশেষায়িত যোগ্যতার দরকার নেই। এখানে স্নাতক পাশ করলেই আবেদনের যোগ্যতা অর্জিত হয়ে যায়। অর্থাৎ আপনি আরবিতে পড়েও শিক্ষা কর্মকর্তা পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন, আবার শিক্ষায় স্নাতক হয়ে আবেদন করতে পারছেন কর কর্মকর্তা পদের জন্য। এরপর পরীক্ষা দিয়ে টিকে গেলেই আপনি হবেন রাষ্ট্রের ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা।(যদিও এই নিয়োগের সাথে স্বচ্ছ-অস্বচ্ছ অনেক প্রক্রিয়া জড়িত। কিন্তু আমি সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না) এখন দেখে নিই সেই নিয়োগ পরীক্ষাটি কেমন? এটি মোটামুটি জগাখিচুড়ি মার্কা একটা পরীক্ষা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত,সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ/দৈনন্দিন বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়াদির মিশ্রণে একটা ককটেল বলা যায়। একই ককটেল সবার জন্য- তা আপনি শিক্ষা অফিসার বা পুলিশ অফিসার যা-ই হতে চান না কেন। এই পরীক্ষায় আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কোন কাজেই আসবে না ধরে নিতে পারেন। তাহলে? কোন চিন্তা নাই। চলে যান নীলক্ষেত বা অন্য কোন বইয়ের বাজারে। আপনার জন্য হ্যান্ডমেইড গাইড রেডি আছে। সেখান থেকে ১/২টা গাইড কিনে শুরু করে দিন মুখস্ত করা। মোটামুটি ৫/৬ মাস মুখস্ত করলেই আপনি পরীক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে যেহেতু এখন প্রতিযোগিতার বাজারটা একটু বড়, তাই ফাঁকফোঁকরের দিকেও নজর দিতে হয়। কিছু টেকনিক খাটাতে হয়। তবে চিন্তা নাই। এজন্য আছে অসংখ্য কোচিং সেন্টার। কোন একটায় ভর্তি হয়ে যান। তারা আপনাকে শর্টকাট অনেক টেকনিক শিখিয়ে দিবে। সেই টেকনিকগুলোর নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যান। কারণ এসব ক্ষেত্রে আপনার মেধা যাচাই করা হয় না, যা হয় তা হল কিভাবে বাদ দেয়া যায় তার কসরৎ। সুতরাং এজন্য নিয়মিত অনুশীলন প্রয়োজন। সংক্ষেপে এই হল বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের নিয়োগ ব্যবস্থার চিত্র। শুধু সরকারি প্রশাসন নয়, বিভিন্ন বেসরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা দৃশ্যমান। যেমন বেসরকারি চাকরি বাজারে প্রয়োজন হোক বা না হোক ব্যবসায় প্রশাসনকে চাকরির শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়।

এখন আসা যাক কিভাবে এটা জনপ্রশাসনের অদক্ষতা ও শিক্ষার নিম্নমানের সাথে সম্পর্কিত সেই আলোচনায়। প্রথমে আসি জনপ্রশাসনের অদক্ষতার বিষয়টিতে। ধরুন আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড হল আরবিতে স্নাতক। অথচ আপনি হলেন শিক্ষা কর্মকর্তা। আপনার উপর দেশের শিক্ষার নীতি-নির্ধারণ, তার বাস্তবায়নসহ বহুমূখী দায়িত্ব ন্যাস্ত। তাহলে কী হবে? আপনার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার অভাবে আপনি জানেন না শিক্ষার নীতি-পদ্ধতিসমূহ, শিক্ষাক্রম কিভাবে উন্নয়ন করতে হয়, কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়, মূল্যায়নের ধরণ ও প্রক্রিয়াসমূহ কী প্রভৃতি শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পর্কে। তাহলে আপনি কিভাবে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করবেন? আপনার এই অজ্ঞতা বা অদক্ষতা কিছুটা নিরসনের জন্য নিয়োগের পরে আপনাকে ইনসার্ভিস ট্রেনিং দেয়া হবে। কিন্তু সেটা কি আপনাকে যথার্থভাবে দক্ষ করে তুলবে? এখানে এসে একটা প্রাসঙ্গিক জোকস মনে পড়ে গেল। (যদিও এর সত্যাসত্য যাচাই করা যায়নি) একবার শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে শিক্ষা সচিবের মিটিং হচ্ছে। মিটিংযের বিষয় শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণে দেলরস কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষার চার স্তম্ভকে বিবেচনায় রাখা। এই ৪টি স্তম্ভের ১টি হল Learning to live together (মিলেমিশে বাস করতে শেখা)। কিন্তু সচিব মশাই ভাবে বসলেন উলটো। তিনি তাড়াতাড়ি মাইক্রোফোন টেনে নিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। সুতরাং এখানে লিভ টুগেদার বিষয়টা বাদ দিতে হবে।’ যাই হোক এবার ২/১টা বাস্তব উদাহরণ দেই। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের সবারই মনে আছে। বিষয়টা দেশে বেশ আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলো। এখনো বিষয়টি শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে এক ধরনের বিস্ময়। তারা এখন অবধি এর মর্মার্থ বুঝে উঠতে পারেন নি। আমি বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে, সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলিত ফরমেট দেখে এবং শিক্ষকদের কর্তৃক তৈরি প্রশ্ন দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছি। অথচ ‘শিক্ষা বিজ্ঞান’-এর শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা স্নাতক প্রোগ্রামের প্রথম দিকেই এর আদ্যপান্ত সম্পর্কে মোটামুটি ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জন করি। কিন্তু তাদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের অভাবে তা সম্ভব হয় নি। যা ছোটখাটো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো তা পুর্ব জ্ঞানের অভাবে আত্মস্থ করতে পারেন নি। সুতরাং কাজের সাথে পড়াশোনার মিল না থাকাই এই অদক্ষতার জন্য দায়ী। আমি ‘শিক্ষা বিজ্ঞান’এর শিক্ষার্থী বলেই শিক্ষা বিষয়ক উদাহরণ দিলাম। আপনি অন্য যেকোন ক্ষেত্রেই কাজ করুন না কেন সব ক্ষেত্রেই এটা সমভাবে প্রযোজ্য। আমি যদি পুলিশের উদাহরণ দেই তাহলেও বলব তাদেরও একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড দরকার। অপরাধের মোটিভ, অপরাধ তত্ত্ব, অপরাধীর সাইকোলজি না জেনে অপরাধ নিয়ে কাজ করা যায় না। আর ছোটখাট প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব দক্ষতা অর্জনও সম্ভব নয়। আমদের পুলিশ প্রশাসনের নানা সমালোচনা করা হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের অদক্ষতা নিয়ে। কিন্তু অদক্ষতার কারণগুলো কখনো খতিয়ে দেখা হয় না। এই ধরনের অদক্ষতা শুধু ঐ ডিপার্টমেন্টের জন্যই ক্ষতিকর নয়, সার্বিকভাবে তা জাতির জন্যও ক্ষতিকর।

শুধু অদক্ষতাই নয়। আমাদের ককটেল টাইপ নিয়োগ ব্যবস্থা রাষ্ট্রের আর্থিক অপচয়ও ঘটাচ্ছে। যেহেতু কর্মকতাদের কাজের সাথে তাদের অতীত শিক্ষার কোন মিল নেই। তাই তাদের জন্য নিয়োগের পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়। সেটা নিজস্ব অফিস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ঘুরে ঘুরে যেমন হয়, তেমনি বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বাইরেও পাঠানো হয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা ধরণের মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে। সে প্রসঙ্গে আর নাইবা গেলাম। তবে এটা দরিদ্র রাষ্ট্রের যে বিপুল অর্থের অপচয় ঘটায় তার হিসেব কে দিবে?

এবার আসা যাক শিক্ষা ব্যবস্থার নিম্নমান প্রসঙ্গে। আগেই বলেছি আমাদের প্রচলিত নিয়োগ ব্যবস্থায় একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড তেমন বিবেচ্য নয় এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অ্যাকাডেমিক জ্ঞান কোন কাজে আসে না। এই বুমেরাং ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদেরকে ক্রমশই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমি সবসময় পরিসংখ্যানগত আলোচনা থেকে দূরে থেকে আমার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণকে বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে প্রাধান্য দেই। সুতরাং এখানেও কোন পরিসংখ্যানগত আলোচনায় না গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণের কথাই বলছি। আমার পর্যবেক্ষণের আলোকে দেখেছি শিক্ষার্থীরা, যারা বিসিএস ক্যাডারসহ অন্যান্য জনপ্রশাসনিক পেশায় নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক, ক্লাসের পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী নয়। পরীক্ষা আসলে ২/১দিন আগে এর-ওর কাছ থেকে নোট যোগাড় করে পরীক্ষা দিতে বসে এবং কোন মতে পাশ করে যায়। আমার এক সহপাঠীর কথা বলছি, যার লক্ষ্যই বিসিএস ক্যাডার হওয়া, সে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর থেকে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, জব সলুশন এইসব নিয়ে মেতে আছে কিন্তু ক্লাসের পড়ায় কখনোই তাকে মনোযোগী দেখিনি। অনার্সে সে কোনমতে টেনেটুনে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হল কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নিয়োগ পরীক্ষায় আমাদের মধ্যে একমাত্র সে-ই টিকেছে। আমাদের সবচেয়ে পড়ুয়া ও মেধাবী ছেলেটি এখানে পাত্তাই পায়নি। প্রিলিমিনারি টেস্টের ফলাফলে দেখা যায় আমাদের ব্যাচসহ আগের ব্যাচগুলোর বড় ভাইদের মধ্য থেকে মাত্র কয়েকজন এতে টিকেছে। অধিকাংশ যারা টিকেছে তারা ‘শিক্ষা বিজ্ঞান’এর শিক্ষার্থী নয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনা করে সময়ের অপচয় ঘটাতে চায় না। আপনি যদি কোন একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে যান তাহলে দেখবেন লাইব্রেরি পড়ুয়াদের সমাগমে পূর্ণ হয়ে আছে। আপনি ভাবতে পারেন বাহ্ শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে এসেছে। কিন্তু না সবই ভুল। একটু ক্ষেয়াল করলে দেখবেন তারা কী পড়ছে। দেখবেন অধিকাংশের সামনেই নিয়োগ পরীক্ষার গাইড। তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে। এটা হচ্ছে এদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের চিত্র। অন্যগুলোর চিত্র কী হতে পারে আপনারাই ভেবে নিন।

আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের দোষ দিই। কিন্তু খতিয়ে দেখিনা তাদের এই প্রবণতার দায় কার? যদি এভাবে নিয়োগ ব্যবস্থা চলতে থাকে তাহলে এইসব বহুমূখী বিষয় রাখার কোন প্রয়োজন আছে কি? এটা কি শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়ের অপচয় ঘটাচ্ছে না? যদি এভাবেই নিয়োগ ব্যবস্থা চলতে থাকে তাহলে সরকারের এখুনি উচিত বহুমুখী বিষয় বাদ দিয়ে একমূখী শিক্ষার দিকে চলে যাওয়া। যেখানে কেবল মাধ্যমিক স্তরের গণিত, বাংলা-ইংরেজি ব্যাকরণ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, সাধারণ বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞান শেখানো হবে (কারণ বিসিএস পরীক্ষাসহ অধিকাংশ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন হয় এই লেভেল থেকেই।) শত-সহস্রবারের চর্বিত-চর্বণে শিক্ষার্থীরা বিষয়গুলোতে হয়ে উঠবে তুখোড়। কোন নিয়োগ পরীক্ষাই তারা আর আটকাবে না। তাদের ফলাফলের বাহার দেখে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল দেখে আমরা যেভাবে তালি দেই সেভাবে ক্রমাগত তালি দিব। তারপর নিয়োগের পর শুরু হবে তাদের নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ পর্ব। এতে আমাদের জনপ্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও লাভবান হবে। কিন্তু যদি তা নয় হয় তাহলে নিয়োগ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে, সাথে পরিবর্তন আনতে হবে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থারও।

নিয়োগের ক্ষেত্রে যেকোন ডিপার্টমেন্টের যোগ্যতা হতে হবে ঐ বিভাগ সংশ্লিষ্ট একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা। যদি কোন বিভাগ সংশ্লিষ্ট একাডেমিক পড়াশোনার ব্যবস্থা না থাকে (যেমন-পুলিশ), তাহলে সে বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার যেসব বিষয়গুলো আদতে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নয় (যেমন-আরবি, ইসলাম শিক্ষা, সংষ্কৃতি প্রভৃতি) তার আসন সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। কিছু সীমিত আসন রাখা যায়, যেন কেউ ঐ বিষয়গুলোতে উচ্চতর গবেষণা চালাতে চাইলে সে সুযোগ থাকে। নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি রেজাল্ট এবং দক্ষতাকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন একাডেমিক জীবনে গবেষণা কাজের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রাখা। তাহলে শিক্ষার্থীরা যেমন একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী হবে তেমনি কর্মক্ষেত্রেও হবে দক্ষ ও চৌকস।

কেউ কেউ আমার এ মতকে শিক্ষাকে বাজারমূখী করার অপপ্রয়াস বলতে পারেন। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি আজকের দিনে শিক্ষাকে বাজারমূখী করার বিকল্প নেই। যারা শিক্ষাকে কেবল মনুষ্যত্ব বা জ্ঞান বিকাশের চর্চ্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান এবং শিক্ষার বাজারমূখীতার বিরোধিতা করেন তাদেরকে বলছি, অতীতে শিক্ষা ছিলো অভিজাতদের দখলে, সেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। অভিজাতদের খাওয়া-পরার ভাবনা ছিলো না। তারা জ্ঞানের কচকচানি করতে পারতেন। কিন্তু আজকের দিনে শিক্ষা আর এলিটদের হাতে কুক্ষিগত নয়, শিক্ষা আজ সাধারণের অধিকারে। যাদের তিনবেলা খাওয়া-পরা নিয়ে ভাবতে হয়, প্রতিনিয়ত হাজারো সমস্যা মোকাবেলাতে করতে হয়। তাই শুধু জ্ঞান সর্বস্ব শিক্ষা (বাজারে যা কাজে লাগে না) নয়, শিক্ষাকে জনগনের ক্ষমতা অর্জনের হাঁতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই ক্ষমতা আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রেই।

উন্নয়নশীল দেশসমূহের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস জনপ্রশাসন। শুধু তাই নয়, এই ক্ষেত্রটি জনকল্যাণের জন্যও দায়বদ্ধ। সেই ক্ষেত্রটির নিয়োগ ব্যবস্থাটি যদি এমন হয় যে তা পড়াশোনা বা মেধার চর্চাকে অনুৎসাহিত করে, তাহলে তা জাতির জন্য যে কি পরিমাণ দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে সেটা বোধ হয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার নাই। সচেতন ব্যক্তি মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। তাই আগামী দিনে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইলে শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান অসঙ্গতি দূর করে একটি সুপরিকল্পিত শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থা প্রবর্তনে এখুনি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষার্থী, মাস্টার অব এডুকেশন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১০০০।

আরও পড়ুন

মতামত

বিজ্ঞান চেতনা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন বিজ্ঞান শিখছে শিশুরা?

নাহিদ নলেজ বিজ্ঞান চেতনা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কী- এ সম্পর্কে বিস্তর কথাবার্তা আমাদের সবার জানা। সেই প্রাথমিক শিক্ষাটুকুই যদি গলদপূর্ণ হয়, তাহলে আর কী কথা...

দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?

মোঃ তৌফিক ইমাম চৌধুরী লিখেছেন বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা আছে তা নিয়ে কি আপনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট? প্রাথমিক কিংবা নিম্নমাধ্যমিক শ্রেণীতে একজনকে অনেকগুলো বিষয়ে পড়তে...
নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।

এই বিভাগের আরও লেখা

কেন ক্লাস করতে চায় না শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা কেন ক্লাস করতে চায় না এই প্রশ্নটি নতুন নয়। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি...

শিক্ষকের মান ও গুণগত শিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, "কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ...

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে কিছু কথা

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো প্রতিটি শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করা। কারো বিশ্ববিদ্যালয়ে, কারো...

জেন্ডার বৈষম্য, শিক্ষা ও সমাজ

জেন্ডার হলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে কোনো একটি সমাজের নারী-পুরুষের প্রত্যাশিত আচরণ।...

আমাদের উচ্চশিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতা

সিরাজুল হোসেন লিখেছেন আমাদের উচ্চশিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কনজেনিটাল সিফিলিস ১৯৪৯ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগ...

টিআইবি প্রতিবেদন, শিক্ষায় দুর্নীতি ও আমাদের উদ্বিগ্নতা

২৯ সেপ্টেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ বা টিআইবি ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের...

শিক্ষাকমিশন, শিক্ষাকমিটি ও শিক্ষানীতি: ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশ পর্ব

ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে উপনিবেশ স্থাপনের পর তাদের মতো করে শিক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এ...

দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্বাস্তু শিশুদের শিক্ষা নিয়ে বই

বিশ্বের ১৩৪টি দেশের ৭০.৮ মিলিয়ন মানুষ জোরপূর্বক তাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। ৪১.৩...