বাড়ি উপানুষ্ঠানিক

চাই পেশাজীবিদের জন্য অব্যাহত শিক্ষা

পেশাজীবিদের শিক্ষা

আমার বাবা একজন ডাক্তার, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার। তিনি ডাক্তারি বিদ্যা লাভ করেছেন আজ থেকে পনের বছর আগে। এরপর মাঝে মাঝে দুই একদিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, কিন্তু দুই এক মাসের জন্য কোথায় কোন কোর্স করতে হয়নি। বলা যেতে পারে পনের বছর আগের জ্ঞান দিয়েই তার চলে যাচ্ছে।

কিন্তু রোগের কথা আলাদা। সে তো আর জানে না, ইউনিয়নের ডাক্তারদের জন্য অব্যাহত শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই নিত্য নতুন নানান রোগ মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করছে, জীবাণুরা যদি জানতো তবে হয়তো নিজেদের একটু কন্ট্রোল করতো।

এই অব্যাহত শিক্ষার অভাবে আমার বাবা অনেকের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান। তাই অনেক রোগীকে সদরে পাঠাতে হয়। কিন্তু সদরের যা ভোগান্তি তার কথা নাই বা বললাম। দিনদিন আবিষ্কার হচ্ছে নানান প্রযুক্তি, কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না আমার বাবার মতো ডাক্তারদের শিক্ষার ক্ষেত্র, তাই তাদেরকে পূর্বে অর্জিত শিক্ষা দিয়েই চিকিৎসা করতে হচ্ছে। আর এর ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রামের নিরীহ জনগনের। তবে সরকার এ জন্য কিছু কিছু ইউনিয়নের হাসপাতালে একজন করে এমবিবিএস ডাক্তারকে নিয়োগ দিয়েছে। তারা নিয়মিত আসেন কিনা সে প্রশ্ন আজ থাক।

বলছিলাম অব্যাহত শিক্ষা নিয়ে। এটি শিক্ষার একটি ধারা, যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থা, কারিকুলাম, শিক্ষার উদ্দেশ্যে কিছুটা নমনীয়। চাইলে এটি পরিবর্তন করা যায়। শিক্ষার্থীদের চাহিদা মতো এটির ব্যবস্থা করা যায়।

আমাদের দেশে অব্যাহত শিক্ষা বলতে শুধু মাত্র এনজিওদের দ্বারা পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কথাই বোঝায়। কিন্তু অব্যাহত শিক্ষা শুধু মাত্র এনজিও দের প্রাথমিক শিক্ষাই না। এটির দ্বারা অন্যান্য অনেক কিছুই বোঝানো যেতে পারে। অব্যাহত শিক্ষার একটি বড় উদাহরণ হলো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচী। এর মাধ্যমে একজন নব্য পাঠক থেকে শুরু করে যে কোন বয়সী পাঠক শিক্ষা লাভ করতে পারেন।

এ ছাড়া আমাদের দেশে পেশাজীবিদের জন্য অব্যাহত বা তাদের বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যা আছে তা হলো কর্মকালীন সময়ে নানান ধরনের প্রশিক্ষণ। কিন্তু এই সব প্রশিক্ষণ অনেক সময় হয়ে দাড়ায় প্রমোশনের চাবিকাঠি, টাকা পাওয়ার মাধ্যম। যেমন দেখা যায় বিভিন্ন এনজিও বিশেষ করে ব্র্যাক পরিচালিত বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণে অনেক সময় প্রধান শিক্ষকের আগমন। এ বিষয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা এখানে বলতে চাই। কয়েকদিন আগে আমি একটি এনজিও পরিচালিত কম্পিউটার বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বাংলা বিষয়ের একজন শিক্ষক এসেছেন। তাকে এ বিষয়ে বলায় তিনি বলেন যে কম্পিউটার শিক্ষক বর্তমানে ব্যস্ত থাকায় এবং তার বিদ্যালয়ে বর্তমানে তেমন কোন ক্লাশ নাই, তাই তাকেই পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি কম্পিউটারের শিক্ষককে যা শিখেছেন তা শেখাবেন। আজব দুনিয়া!!!

তাই আমাদের চর্চা করতে হবে অব্যাহত শিক্ষার। শিক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। কথায় বলে ধারালো দাঁ যদি ফেলে রাখা হয় তবে নাকি তাতে মরিচা পড়ে, আমাদের মাথাও একজাতীয় ধারালো দাঁ এর মতো। তাকে ফেলে রাখলে মরিচা পড়বে। তাই যাতে মরিচা না পড়ে তার জন্য রাখতে হবে অব্যাহত শিক্ষার ব্যবস্থা। বিশেষ করে পেশাজীবিদের জন্য তাদের বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার ব্যবস্থা।

1 মন্তব্য

  1. আজব দুনিয়া না!!! আমরাই আজব মানুষ! তা না হলে কী আমরা আজও আমাদের ৩য় শ্রেণীর শিশুদের পড়িয়ে থাকি – একটি কবিতার ৩ লাইন নিচে দেয়া হল –
    মা, যদি হও রাজি,
    বড় হলে আমি হব
    খেয়াঘাটের মাঝি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version