রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন কি না এই বিতর্কের শুরু কবে থেকে তা বলা মুশকিল। তবে প্রচারণাটি অনেক পুরোনো। ধারণা করা যায়, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়েই এই তত্ত্বের উদ্ভব। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্র রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছিলো। ধারণা করা যায়, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথকে বেতারে নিষিদ্ধ করা ছিলো হয়তো একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তাদের দোসরদেরকে রবীন্দ্রনাথের বিপক্ষে নানারকম মিথ্যে প্রচারণায় মেতে উঠতে দেখি।

সন্দেহ নেই, যিনি যতো বড় মানুষ, তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহও ততো বেশি। ততো বেশি আলোচনা, সমালোচনা, বা পক্ষ-বিপক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মতো ব্যক্তিত্ব নিয়ে তাই কোনো সমালোচনা থাকবে না, তা তো হতেই পারে না। কিন্তু সেই সমালোচনা অবশ্যই হওয়া দরকার বস্তুনিষ্ঠ, ইতিহাসের আলোকে সত্যিটা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। যারা এসব ছড়ান, তারা কেউ কেউ হয়তো সঠিক তথ্য জানেন না বলে কান-কথায় বিশ্বাস করছেন। কেউ হয়তো আবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Rabindranath and Dhaka University‘ শিরোনামে Asahabur Rahman May 14, 2018 তারিখে Dhaka Tribune-এ একটি প্রবন্ধ লিখেন। তাঁর লেখা থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত “আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা” নামে একটি বইয়ে মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন, বীরপ্রতীক, পিএসসি (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) একটি তথ্য জানান যে—

“১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়। এখানে বলা প্রয়োজন যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো ব্যক্তিত্বও সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, রবীন্দ্রনাথ তখন ছিলেন হিন্দু সমাজ তথা হিন্দু মানমানসিকতা ও হিন্দু চেতনা ও হিন্দু ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ একজন হিন্দু স্বভাবকবি।“

একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত ড. আকবর আলী খানের লেখা ‘ভাবনা ও দুর্ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে’ বইতে, যা তিনি তাঁর বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করেন। এ-প্রসঙ্গে তিনি একই পৃষ্ঠায় লিখছেন—  

“এ তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এ জেড এম আবদুল আলী সমকাল পত্রিকায় এ বক্তব্যের সত্যতা চ্যালেঞ্জ করেন কিন্তু কোনো জবার পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালে অক্টোবর মাসে বই পত্রিকায় অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ ’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র প্রসঙ্গ’ নামে একটি নিবন্ধে এই বক্তব্যের অসত্যতা প্রমাণ করেন।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা নিয়ে আরেকটি তথ্য পাওয়া যায় দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ১ জুলাই ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি লেখা থেকে। লেখক আলী নিয়ামত লিখেছেন—

“ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, ড. রাসবিহারী ঘোষ, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ।”

তাহলে বোঝা যাচ্ছে, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সভাপতিত্ব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। ইতিহাস বলছে, কোলকাতায় ওই দিনে ওই সভাটি হয়েছিলো এবং ওই উদ্দেশ্যেই হয়েছিলো। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা তো দূরের কথা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন কলকাতাতেই ছিলেন না।

কেন করছি এই দাবি? তাহলে আবার সেই ইতিহাসেরই আশ্রয় নেওয়া যাক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পূর্বপরিকল্পনামাফিক ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা। প্রভাতকুমার মুখ্যোপাধ্যায় তাঁর ’রবীন্দ্রজীবনী’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন রবীন্দ্রনাথের বিলেত যাত্রার কথা। সেবার কবির সহযাত্রী ছিলেন ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র। রচয়িতা লিখেছেন—

“১৯শে মার্চ ভোরে কল্কেতা থেকে জাহাজ ছাড়বে। আমি জাহাজে উঠলুম; কবির বাক্স-পেটরাও কিছু কিছু আমাদের ক্যাবিনে উঠল; সময় উত্তীর্ণ হয়ে যায়! কিন্তু কবি কই? বহুলোক তাঁকে বিদায়ের নমস্কার জানাতে ফুল ও মালা নিয়ে উপস্থিত; তাঁদের মুখ বিষণ্ন হলো। খবর এলো যে, কবি অসুস্থ; আসতে পারবেন না। ঐ [ চৈত্রমাসের] গরমে উপর্যুপরি নিমন্ত্রণ-অভ্যর্থনাদির আদর-অত্যাচারে রওনা হবার দিন ভোরে প্রস্তুত হতে গিয়ে, মাথা ঘুরে তিনি প্রায় পড়ে যান। ডাক্তাররা বললেন, তাঁর এ-যাত্রা কোনোমতেই সমীচীন হ’তে পারে না। রইলেন তিনি, আর গোটা ক্যাবিনে একা রাজত্ব ক’রে, তাঁর বাক্স-পেটরা নিয়ে চল্লুম আমি একলা।”

একই ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পিতৃস্মৃতি’ গ্রন্থ থেকে। তাঁর গ্রন্থের ১২৯ পৃষ্ঠায় লিখছেন—

“জাহাজ ছাড়বার আগের দিন রাত্রে স্যার আশুতোষ চৌধুরীর বাড়িতে বাবার নিমন্ত্রণ। কেবল খাওয়া দাওয়া নয়, সেই সঙ্গে বাল্মিকীপ্রতিভা  অভিনয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। দিনেন্দ্রনাথ বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেন। অসুস্থ শরীরে বাবাকে অনেক রাত অবধি জাগতে হল। আমরা ঘরে ফিরলাম রাত করে। বাকি রাতটুকু বাবা না ঘুমিয়ে চিঠির পর চিঠি লিখে কাটিয়ে দিলেন। ভোরবেলা উঠে বাবার শরীরের অবস্থা দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম, ক্লান্তিতে অবসাদে যেন ধুঁকছেন। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকতে হল। …জাহাজ আমাদের জিনিসপত্র সমেত যথাসময়ে পাড়ি দিল, কিন্তু আমাদের সে যাত্রা আর যাওয়া হল না।”

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা থেকেই জানা যায়, বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার কারণেই উন্নত চিকিৎসার জন্যে তিনি ইংল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শিলাইদহে কিছুদিন থেকে খানিকটা সুস্থবোধ করাতে কলকাতায় চলে আসেন এবং আবার ইংল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে ২৭ মে যাত্রা করেন। সফরসঙ্গী হিসেবে এই পুরো সময়টাতেই তিনি ছিলেন তাঁর পিতার সাথে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ ৩.৫.২০১৩ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীর শ্রদ্ধাঞ্জলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন—

“আকস্মিকভাবে যাত্রা পণ্ড হয়ে যাওয়ায় খুব বেদনা পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ২১ মার্চ ১৯১২ (৮ চৈত্র ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) তারিখে ডাঃ দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্রকে লেখেন—‘আমার কপাল মন্দ—কপালের ভিতরে যে পদার্থ আছে, তারও গলদ আছে—নইলে ঠিক জাহাজে ওঠবার মুহুর্তেই মাথা ঘুরে পড়লুম কেন? অনেক দিনের সঞ্চিত পাপের দণ্ড সেইদিনই প্রত্যুষে আমার একেবারে মাথার উপরে এসে পড়ল। রোগের প্রথম ধাক্কাটা তো একরকম কেটে গেছে। এখন ডাক্তারের উৎপাতে প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। লেখাপড়া নড়াচড়া প্রভৃতি সজীব প্রাণীমাত্রেরই অধিকার আছে, আমার পক্ষে তা একেবারে নিষিদ্ধ।“

এই কথাটিরও মূল উৎস প্রভাতকুমার মুখ্যোপাধ্যায়ের ’রবীন্দ্রজীবনী’ গ্রন্থ।

অধ্যাপক ঘোষ আরও লিখেছেন—

“২৪ মার্চ ১৯১২ (১১ চৈত্র ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) বিশ্রামের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে রওনা হন। ঠাকুরবাড়ির ক্যাশবহিতে লেখা আছে, শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীযুক্ত রথীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীমতি বধুমাতাঠাকুরাণী সিলাইদহ গমনের ব্যায় ৩৭৯ নং ভাউচার ১১ চৈত্র ১৫।।৩।. পরদিন সোমবার ১২ চৈত্র ২৫ মার্চ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ মৌচাক পত্রিকার সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকারের ভগ্নী কাদম্বিনী দত্তকে (১২৮৫—১৩৫০ বঙ্গাব্দ) শিলাইদহ থেকে এক চিঠিতে লিখেছেন: ‘… এখনো মাথার পরিশ্রম নিষেধ। শিলাইদহে নির্জ্জনে পালাইয়া আসিয়াছি।’ ( চিঠিপত্র, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৫৩)।“

১৯১২ সালের ২৮ মার্চ রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠি লিখেছেন জগদানন্দ রায়কে। জগদানন্দ রায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক, রবীন্দ্রনাথের পুত্রকন্যাদের গৃহশিক্ষক ও শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক। সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। চৈত্র ১৫, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রবীন্দ্রনাথ চিঠিটি লিখেছেন শিলাইদহ থেকে। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন—

“কয়দিন এখানে এসে সুস্থ বোধ করছিলুম। মনে করেছিলুম সেদিন যে ধাক্কাটা খেয়েছিলুম সেটা কিছুই নয়। সুস্থ হয়ে উঠলেই অসুখটাকে মিথ্যা বলে মনে হয়। আবার আজ দেখি সকাল বেলায় মাথাটা রীতিমত টলমল করচে। কাল বুধবার ছিল বলে, কাল সন্ধ্যাবেলায় মেয়েদের নিয়ে একটু আলোচনা করছিলুম—এইটুকুতেই আমার মাথা যখন কাবু হয়ে পড়ল তখন বুঝতে পারছি নিতান্ত উড়িয়ে দিলে চলবে না।’ (বি, ভা. প, মাঘ-চৈত্র ১৩৭৬। ২৫৩, পত্র৫)।“

প্রশান্তকুমার পাল রবিজীবনী গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে জানাচ্ছেন—

“এদিনই তিনি একটি কবিতা লেখেন। কবিতার নাম— ‘স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি’। এই কবিতাটি গীতিমাল্য কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ৪ সংখ্যক কবিতা। এর পর বাকী ১৫ দিনে শিলাইদহে থেকে রবীন্দ্রনাথ আরও ১৭টি কবিতা বা গান লেখেন। এর মধ্যে একটি গান—আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। ১৪ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রচনার স্থান শিলাইদহ। ২৬শে চৈত্র ১৩১৮(এপ্রিল ৮, ১৯১২) বঙ্গাব্দেও তিনি শিলাইদহে। সেখান থেকে লিখেছেন—এবার আমায় ভাসিয়ে দিতে হবে আমার। এপ্রিল ১২, ১৯১২ তারিখে লিখছেন—‘এবার তোরা আমার যাবার বেলাতে’। ঐ ১২ এপ্রিল, ১৯১২ শিলাইদহ থেকে তিনি কোলকাতায় রওনা হন।“

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রতিটি লেখার স্থান এবং তারিখ লিখে রাখতেন। সঞ্চয়িতার গীতিমাল্য অংশে স্থান পাওয়া গীতিকবিতা ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’- এর পাশেই লেখা আছে— ‘শিলাইদহ ১৪ই চৈত্র ১৩১৮’, যেটি গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে হয় ২৭ মার্চ ১৯১২ সাল। তাহলে ২৭ মার্চ শিলাইদহে থেকে কী করে তিনি ২৮ মার্চ কোলকাতার গড়ের মাঠে উপস্থিত হলেন এবং সভাপতিত্ব করলেন?

তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সেই ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করার জন্য কোলকাতার গড়ের মাঠের সভায় উপস্থিত ছিলেন না, তার কি যথেষ্ট প্রমাণ দেওয়া গেল? সভাপতিত্ব করা তো দূরের কথা। আর যারা মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করে রবীন্দ্রনাথকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধী বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তাদের কাছে কিন্তু একটিও ঐতিহাসিক রেফারেন্স নেই।

এসব তো গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগের ঘটনা পরম্পরা। ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জড়িয়ে তার পরের কিছু ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক।

১৯২৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার নবাবের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিপুল আগ্রহের সাথে সংবর্ধনা প্রদান করলো। প্রশ্ন হলো, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করলেন, কোন বিবেচনায় এতো তাড়াতাড়ি এই বিরোধীপক্ষকে ক্ষমা করে দিয়ে রীতিমতো সংবর্ধনা প্রদান করা হলো? শুধু কি তাই? রবীন্দ্রনাথ কোন পক্ষের আতিথেয়তা গ্রহণ করবেন তাই নিয়ে নবাব পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টানাটানি।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সে যাত্রায় রাজকীয় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সবথেকে বড় সংবর্ধনা তিনি পান সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে এবং এই হলের ছাত্র সংসদে তাঁকে আজীবন সদস্য করা হয়।

আবুল ফজল তাঁর ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ’ বইয়ের ৩৪১-৩৪২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন—

“আমি আমার জীবনে ওরকম দ্বিতীয় সংবর্ধনা দেখিনি- দেখিনি অতখানি আন্তরিকতা। সংবর্ধনার ব্যবস্থা হয়েছিল তখনকার মুসলিম হলের বিরাট ডাইনিং হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রথম সিঁড়ি থেকে হল পর্যন্ত পথের দু’ধারে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল নানা রকম ফুল আর হল ঘরের সবটা জুড়ে নানা ফুল পাতা ও লতায় সাজিয়ে এখানে ওখানে রচিত হয়েছিল কুঞ্জবন আর তাতে এমনভাবে বিভিন্ন পাখি রাখা হয়েছিল যাতে খাঁচাগুলি মোটেও নজরে না পড়ে।”

প্রভাতকুমার মুখ্যোপাধ্যায় তাঁর ’রবীন্দ্রজীবনী’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডের ২৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন—

“বিরাট শোভাযাত্রা রাজসম্মানে কবিকে লইয়া বুড়িগঙ্গা নদীতীরে উপস্থিত হইল- কবি থাকিবেন নদীবক্ষে নবাব বাহাদুরের ‘তুরাগ’ নামে নৌকাগৃহে। প্রসঙ্গত বলি, রবীন্দ্রনাথকে যে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমন্ত্রণ জানাইয়াছিল তাহা নহে, ঢাকার জনসাধারণও তাঁহাকে চায়। তাই স্থির হয় রবীন্দ্রনাথ যে কয়দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিবেন সেই কয়দিন রমেশচন্দ্র মজুমদারের গৃহে অতিথিরূপে থাকিবেন, অবশিষ্ট কয়দিন ‘তুরাগ’ হাউজ-বোটে কাটাইবেন- তদনুসারে এইখানে উঠিলেন।“

এই প্রসঙ্গেও ড. আকবর আলী খান তাঁর বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন—

“১৯১৪- ২০ সময়কালে রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে থাকতেন তাহলে কোনো দিনই মুসলিম ছাত্ররা স্বতঃস্ফুর্তভাবে এ ধরনের উষ্ণ সংবর্ধনার আয়োজন করতেন না। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমত্রণ গ্রহণ করতেন না।“

এরপর ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি দেয়, যদিও অসুস্থতার কারণে তখন তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে এই সম্মান গ্রহণ করতে পারেননি।

ইদানিং অনেকেই সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ গ্রন্থের উল্লেখ করে বলতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। আরো পুরোনো একটি অপবাদ রবীন্দ্রনাথের নামে আছে এবং তা হলো, তিনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাচ্ছিল্য করে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলেছিলেন। তাহলে দেখা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা নিয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ কী লিখেছেন তাঁর বইয়ে। বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় হিন্দু বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধিদের কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখছেন—

“তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন যে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমানের ছেলেরাই বেশি সুযোগ পাবে। ওটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, হবে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়।”

সৈয়দ আবুল মকসুদ কোনো রেফারেন্স দিতে না পারলেও রবীন্দ্রনাথের নাম জড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাকারীদের সাথে। তাঁর বইয়ে আরেকটু পরে গিয়ে ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখছেন—

“নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিশ্বপরিচিতি পেয়ে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার অদূরে বোলপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের জাল বুনছিলেন।”

একটু সামনে গিয়ে আবার লিখছেন—

”রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন ১৯২১ সালে, যে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী ভারতের অন্যান্য মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়- অন্য রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওখানকার স্নাতক আর কলকাতা বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতার কারণ সহজেই বোঝা যায়।”

রবীন্দ্রনাথের একই বছর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করার কী সম্পর্ক, তা পরিষ্কার নয়। তাছাড়া তাঁর শান্তিনিকেতনকে বিশ্বভারতী নামে বিশ্ববিদ্যলয়ে রূপান্তরের বছর ১৯২১ সাল হলেও এই বিদ্যায়তন তো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই ১৯০১ সালেই। আর বিশ্বভারতী তো মূল ধারার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি বিশ্ববিদ্যালয় যার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা চলে না। লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা যারা করেছেন, যেসব হিন্দু বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধির নাম উল্লেখ করেছেন বা যারা লর্ড হার্ডিঞ্জকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন, সেখানেও কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নাম নেই।

কোনো প্রমাণ না থাকলেও রবীন্দ্রবিরোধীরা প্রমাণ করতে চান, পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা শিক্ষিত হয়ে যাবে, এই ভয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদের জন্যে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দিতে চাননি। এমন গালগল্পও প্রচলিত আছে যে, রবীন্দ্রনাথ নাকি বলেছিলেন, ওই চাষাভূষোদের দেশে কেউ ভালো করে কথাই বলতে পারে না, তারা আবার কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে?

অথচ এই মানুষটি অনেক আগে থেকেই মুসলিম কৃষকদের যাতে ভালো হয়, সে চিন্তা করেছিলেন। আজকাল ক্ষুদ্রঋণের ধারণার উদ্ভাবক হিসেবে একজনের নাম বলা হয়, অথচ এই কাজটিও সম্ভবত রবীন্দ্রনাথই প্রথম শুরু করেন। ১৯০৫ সালে মহাজনদের হাত থেকে কৃষকদের মুক্ত করার জন্য পতিসরে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। পরে তাঁর নোবেল পুরস্কারের কিছু টাকাও এই ব্যাংকে বিনিয়োগ করেন। পতিসরের প্রজারা অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম। ১৯৩৭ সালে পতিসর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সব সম্পদ প্রজাদের মধ্যে দান করে দিয়ে গিয়েছিলেন। শাহজাদপুরেও মুসলিম প্রজাদের গরু পালনের জন্য নিজের জায়গা দিয়ে দিয়েছিলেন।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা বেশ কিছু মানুষ সত্যিই করেছিলেন এবং সে দলে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গই ছিলেন। কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক কুলদা রায় এবং মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক এম এম আর জালাল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেন bdnews24.com-এ ৯ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে। লেখকের তথ্যমতে, এই বিরোধিতা করেছিলেন মূলত তিন ধরনের লোকজন–

এক. পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ- যারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে।

দুই. পূর্ব বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ- যারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে।

তিন. পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ- যারা মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

হয়তো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করতে পারেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন সত্যি সত্যিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন সে সময়ে। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এই প্রতিনিধিদলেও কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের নাম জুড়ে দেন, যদিও তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। সৈয়দ আবুল মকসুদও তাঁর বইয়ে এই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উল্লেখ করেননি।

কুলদা রায়ের আরেকটি অবাক করা তথ্য হলো, সে-সময়ে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারাও নাকি পূর্ব বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হোক, সেটি চাননি। তাঁরা ভাবেন, ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সেখানে একটি মুসলিম কলেজ হতে পারে। কলেজ হলেও সেটি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকতে হবে।

ইতিহাসের আরেকটি তথ্য বলছে, রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন ঠিকই, তবে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নয়। সেটি ছিল কাশিতে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। কিছু হিন্দু নেতা একদিকে কাশীতে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চান, অন্যদিকে তারা মুসলমানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় হোক সেটা চান না। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করে বললেন—

“হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হোক, আপত্তি নেই, একইভাবে মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ও হতে হবে। তাকে বাধা দেওয়া চলবে না।”

তিনি আরও বললেন—

“পাঠ্যপুস্তকে মুসলমানদের মনীষীদেরও কথা থাকতে হবে। মুসলমানদের ধর্মের বাণীও থাকতে হবে। কেবল হিন্দুর বা খ্রিস্টানের বাণী থাকলেই চলবে না। সেটা শুধু মুসলমানদের জানলেই হবে না, হিন্দুকেও জানতে হবে। কারণ নিজের শাস্ত্র পড়ে পণ্ডিত হওয়ার দিন চলে গেছে। এখন জানতে হবে সকল শাস্ত্র, সকলের শাস্ত্র।”

এবার একেবারে অন্য আরেকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৪৭-এর দেশভাগের আগে পর্যন্ত এখানে ৮০% ছাত্র-শিক্ষকই ছিলেন হিন্দু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী একজন হিন্দু (লীলা নাগ যিনি ১৯২১ সালে এমএ কোর্সে যোগদান করে ১৯২৩ সালে স্নাতক হন) এবং প্রথম মহিলা শিক্ষকও একজন হিন্দু নারী (করুণাকণা গুপ্ত যিনি ১৯৩৫ সালে নিয়োগ পান)। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিই মুসলমান শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো? নাকি হিন্দু-মুসলিম-নির্বিশেষে পূর্ববঙ্গের সব ধর্মের মানুষের কথা মাথায় রেখেই তা করা হয়েছিলো?

সৈয়দ আবুল মকসুদও তাঁর বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠায় লিখছেন—

“প্রতিষ্ঠার পর দেখা গেল এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপকৃত হচ্ছে বাঙালি হিন্দুরাই বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রায় সবই হিন্দু, ছাত্রদেরও অধিকাংশই হিন্দু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীও হিন্দুই বেশি।”

তাহলে কি এটিই প্রমাণিত হয় না যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা যারাই করেছিলেন, হিন্দু-মুসলিম ইস্যুটি আসলে মুখ্য ছিল না? মুখ্য ছিল মূলত নিজেদের আঞ্চলিক প্রভুত্ব বজায় রাখা এবং সেই দলে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই ছিলেন। কারো কারো ব্যক্তি স্বার্থও সেখানে প্রধান্য পেতে পারে।

আশা করা প্রায় অসম্ভব যে, এই লেখার মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা নিয়ে দীর্ঘদিনের এই বিতর্কের অবসান হবে। উদ্দেশ্য ছিলো ইতিহাসের সত্যিটা তুলে ধরার, যাতে করে পাঠক এ বিষয়ে আরও জানতে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন। এখন মনগড়া কান-কথা শুনবেন, নাকি গবেষণা ও ইতিহাসের বাস্তবতায় দৃষ্টি দিবেন; সে সিদ্ধান্ত একান্তই পাঠকের নিজস্ব।

Sending
User Review
2 (1 vote)

লেখক সম্পর্কে

সুদেব কুমার বিশ্বাস

সুদেব কুমার বিশ্বাস

সুদেব কুমার বিশ্বাস পেশায় একজন শিক্ষাজীবী এবং কাজ ক‌রেন এক‌টি আন্তর্জা‌তিক উন্নয়ন সংস্থায়।

মন্তব্য লিখুন