বাড়ি দক্ষতা ও উন্নয়ন

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি : পরিচিতি ও বর্ণনা

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি

‘মুজিব বর্ষের আহ্বান প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতমান’— এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সুদৃশ্য বর্ণিল মলাটে প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি প্রণীত হয়েছে। প্রথম পাতাতে উদ্ভাবকের সচিত্র পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

তারপর একাদিক্রমে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার দশদিক, প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি কী ও কেন, ব্যবহার নির্দেশিকা, এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান ও পেশাগত উন্নয়ন সভা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওয়েব ঠিকানা সংযোজন করা হয়েছে যা প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় ও ডিজিটাল কন্টেন্ট পেতে শিক্ষকগণকে সাহায্য করবে।

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরির প্রথমাংশে শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ নোট সংরক্ষণের জন্য ছক সংযোজন করা হয়েছে। দ্বিতীয়াংশে পেশাগত উন্নয়ন সভার কার্যবিবরণী সংরক্ষণের জন্য ছক সংযোজন করা হয়েছে। সবশেষে কয়েকটি সাদা পাতা জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিবিধ বিষয়ের দরকারি নোট রাখার জন্য। সব মিলিয়ে প্রধান শিক্ষকগণ যেন সহজে এটিকে কাজে লাগাতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি একটি বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের রেকর্ডবুক হিসেবে কাজ করবে যা বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের ধারাবাহিক চিত্র তুলে ধরবে ও গতি সঞ্চার করবে।

প্রধান শিক্ষক এই ডায়েরিতে তাঁর প্রতিটি কর্মদিবসের বিবরণ (বিশেষত এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম-সংক্রান্ত) লিপিবদ্ধ করবেন। এই রেকর্ড ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক সাপ্তাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন সভায় শিক্ষকগণের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন ও নির্দেশনা প্রদান করবেন।

এই রেকর্ড ব্যবহার করে ক্লাস্টার অফিসার (সহকারী থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) ও অন্যান্য পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণ বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন এবং শিক্ষকগণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন। প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি একটি বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের রেকর্ডবুক হিসেবে কাজ করবে যা বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের ধারাবাহিক চিত্র তুলে ধরবে ও গতি সঞ্চার করবে।

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি ব্যবহার নির্দেশিকা

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি মূলত প্রধান শিক্ষকের এ্যাকাডেমিক সুপারভিশন ও অন্যান্য এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের রেকর্ডবুক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। প্রধান শিক্ষক তাঁর প্রতিটি কর্মদিবসের বিবরণ (বিশেষত এ্যাকাডেমিক-কার্যক্রম সংক্রান্ত) এই ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করবেন। ডায়েরির প্রথমাংশে প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকগণের শ্রেণিকার্যক্রম পর্যবেক্ষণ রেকর্ডসহ অন্যান্য এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম-সংক্রান্ত রেকর্ড রাখবেন।

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি

এই রেকর্ড ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক সাপ্তাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন সভায় শিক্ষকগণের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন ও নির্দেশনা প্রদান করবেন। দ্বিতীয়াংশে সাপ্তাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন সভার কার্যবিবরণী ও অন্যান্য পরিদর্শনকারী কর্মকর্তার পরামর্শসমূহ লিখে রাখবেন।

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরির ব্যবহারিক দিকসমূহ

  • এ্যাকাডেমিক লিডার হিসেবে প্রধান শিক্ষকের কাজকে সহজ ও কার্যকর করবে।
  • বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কাজে গতি সঞ্চার করবে।
  • বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকগণের পেশাগত উন্নয়নের সুযোগকে প্রসারিত করবে ও ধারাবাহিক রেকর্ড সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
  • পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণকে এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের রেকর্ড সরবরাহের মাধ্যমে এ ডায়েরি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে পরিদর্শকের পরামর্শ প্রদানের ক্ষেত্রকে নির্দিষ্ট করতে সহায়তা করবে।
  • সহকারী থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ এ ডায়েরিতে সংরক্ষিত রেকর্ড ব্যবহার করে চাহিদাভিত্তিক সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের চাহিদা নিরূপণ করতে পারবেন সহজেই।
  • শ্রেণি পাঠদানে শিক্ষকগণের সবলতা ও দূর্বলতার ধারাবাহিক রেকর্ড সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে দৃশ্যমান করবে।
  • প্রধান শিক্ষকগণকে এ্যাকাডেমিক সুপারভিশন ও লিডারশিপ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ্যাকাডেমিক সুপারভিশন বিষয়ক নানাবিধ কৌশল ও উপকরণ সরবরাহ করা হলেও সেগুলো প্রয়োগে নানা জটিলতা হেতু বিদ্যালয় পর্যায়ে সেসবের প্রয়োগ তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। অথচ এ্যাকাডেমিক সুপারভিশন বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের প্রাণ। এ ডায়েরি এ্যাকাডেমিক সুপারভিশনকে সরলীকরণ করে উপস্থাপন করার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকগণকে সহজে কাজটি করার পথ করে দেবে।

প্রধান শিক্ষক কর্তৃক এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান

এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শ্রেণি শিখন-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষকগণের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে তাঁদেরকে ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। এ-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিখন-শেখানোর গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক প্রধান হিসেবে সহকারী শিক্ষকগণের শ্রেণিকার্যক্রমের এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান প্রধান শিক্ষকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিদ্যামন ব্যবস্থায় প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারী শিক্ষকগণের পাঠ পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ফলাবর্তন দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও নানা কারণে বিদ্যালয় পর্যায়ে এর চর্চা দেখা যায় না| এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক কতৃর্ক এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান কাজকে আরও সহজ করার তাগিদ থেকে প্রধান শিক্ষকের ডায়েরির প্রবর্তন করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক সচেতন, সক্রিয় ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিবেদিত হলে সেই বিদ্যালয়ের মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়।

প্রধান শিক্ষক সচেতন, সক্রিয় ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিবেদিত হলে সেই বিদ্যালয়ের মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়। শিক্ষার্থীদের ফলপ্রসূ শিখন সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষকের শিখন-শেখানো দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানোই এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধানের উদ্দেশ্য।

এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান শুধু শিখন-শেখানো কার্যাবলীর গুণগত মানই উন্নয়ন করে না। এর মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তা, ইন্সট্রাক্টর, ক্লাস্টার কর্মকর্তা (এইউইও), প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কাজের সমন্বয় ঘটে। এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধানকে কার্যকর করার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করা যায়|

এ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়:

  • শ্রেণি রুটিনে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষককে সঠিক বিষয় বণ্টন:
  • প্রতিদিন কমপক্ষে দুই জন শিক্ষকের পাঠ পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ;
  • শিখনফল অর্জিত হয়েছে কিনা যাচাই করা ও এ-সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া;
  • পেশাগত উন্নয়ন সভায় চলতি সপ্তাহের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যালোচনা ও আগামী সপ্তাহের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ;
  • ধারাবাহিক ফলোআপ নিশ্চিত করা।

পেশাগত উন্নয়ন সভা

শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। শিক্ষক তাঁর দক্ষতা উন্নয়ন করলে শিখন-শেখানোর মানের উন্নয়ন হবে এবং তাতে শিশুরা লাভবান হবে। শিক্ষক যোগ্যতা এমন কতোগুলো দক্ষতার সমষ্টি যা শিখন-শেখানো কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষক অব্যাহতভাবে উন্নয়নের চেষ্টা করবেন।

শিক্ষক যোগ্যতার তিনটি ক্ষেত্র যথা- পেশাগত জ্ঞান, পেশাগত অনুশীলন, পেশাগত মূল্যবোধ ও সম্পর্ক স্থাপন। প্রতিটি ক্ষেত্রকে একাধিক শিখনের ক্ষেত্র ও পারদর্শিতার সূচকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মিলিত হয়ে যখন তাঁদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়ক বিষয়গুলো আলোচনা করেন, সেটিই পেশাগত উন্নয়ন সভা।

পেশাগত উন্নয়ন সভা পরিচালনার জন্য প্রধান শিক্ষক নিজ বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবেন। যেমন: নিউ বেইজ সাব-ক্লাস্টার ট্রেনিং, শিক্ষক যোগ্যতা, ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ন, শিখন-শেখানো কার্যক্রম, শিশুদের সৃজনশীল লেখা, শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণ, লাইব্রেরি তৈরি ও শিশুতোষ বই সংগ্রহ, পাঠাগার ব্যবহার, বিষয়ভিত্তিক উত্তরণ কর্ণার তৈরি ইত্যাদি।

প্রধান শিক্ষকের ডায়েরি প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

লেখক পরিচিতি

জগজ্জীবন বিশ্বাস খুলনা সদর থানা রিসোর্স সেন্টারে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত। জাপান থেকে পিজিডি ইন টিচার ট্রেনিং ও ইউকে থেকে এমএ ইন এডুকেশন সম্পন্ন করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version