বাড়ি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ও বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে এবং কোনো ধরনের বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ছবিসূত্র: pixabay.com
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে এবং কোনো ধরনের বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ছবিসূত্র: pixabay.com

সারাফ আফরা সালসাবিল লিখেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ও বিকল্প মূল্যায়ন নিয়ে

২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। যার মধ্যে রয়েছে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও। যদিও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়ের সাথে তাল রেখে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসের চিত্রটি তেমন নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে এবং কোনো ধরনের বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

ঢাকা শহরের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু থেকেই লকডাউনের ফলে যেন সেশনজট না সৃষ্টি হয়, সেজন্য উদ্যোগ নিয়েছে, চেষ্টা করেছে বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণের। যেমন, শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস আছে কি না নিশ্চিত করা, ইন্টারনেট খরচ প্রদান, সেমিস্টার ফি মওকুফ করা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর অনলাইন সেমিস্টার পরিচালনা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রশংসনীয়।

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তুলনামূলক দেরিতে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। তার পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। যেমন,

১. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী শহরকেন্দ্রিক নন। লকডাউনে হল বন্ধের ফলে তাদের বেশিরভাগকেই গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এখনো মোবাইল ইন্টারনেট স্পিড খুবই ধীর। অনেক সময় মোবাইল সংযোগই পাওয়া যায় না।

২. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর আর্থসামাজিক অবস্থা তুলনামূলক দুর্বল হওয়ার কারণে অনেকে ডিজিটাল ডিভাইস বা ইন্টারনেট খরচ চালানোর মতো সামর্থ রাখেন না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হার তুলনামূলক কম। তাই দেখা যাচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ডিভাইস বা আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হচ্ছে। 

৩. প্রাইভেটের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস নিতে পারলেও, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনলাইনে বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা করে সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসগুলোতেই শতভাগ উপস্থিতি সম্ভব হচ্ছে না। কেন নেই তার কারণ আগেই বলা হয়েছে।

মনে করিয়ে দেওয়া ভালো যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিভাইস ও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পরও ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী জুম বা গুগল মিটে যুক্ত হতে পারেন না। তো, যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্লাসই করতে পারছেন না, তারা পরীক্ষা দেবেন কীভাবে? আর যদি চূড়ান্ত পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত না করা যায় তবে ওই পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।

এদিকে হল বন্ধ করে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা যেমন শিক্ষার্থীদের মহামারী থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, তেমনি অনেকে টিউশনি হারিয়ে সেশনজটে পড়ে হতাশায়ও ভুগছেন। তবে সমস্যাটি শুধু তাদের না যারা চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে একটি সার্টিফিকেট পাচ্ছেন। প্রতিটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্যই এটি হতাশাজনক যে, তারা দীর্ঘ এক বছর ধরে একই বর্ষ বা সেমিস্টারে আটকে আছেন। শিক্ষাবর্ষ সম্পন্ন করা বা কোর্স সম্পন্নের ওপর শুধু তাদের চাকরির পরীক্ষা, ক্যারিয়ার, উচ্চশিক্ষা বা পরিবারের দায়িত্বই জড়িত নয়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাও হতাশ হচ্ছেন। এই দীর্ঘসূত্রতার জন্য তাদের শিক্ষার প্রতি প্রেষণাটা আর থাকছে কি? এই অপেক্ষার মূল্য কোথায়?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী যখন তৃতীয় বর্ষে দুবছর ধরে আটকে থাকেন, একই বর্ষের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যেমন করেই হোক বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে চতুর্থ বর্ষে উঠে যাচ্ছেন। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পিছিয়ে পড়ার ভয়, বাদ পড়ার ভয় ইত্যাদি মিলে এক হতাশা ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।

ভুলে গেলে হবে না, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসেন। উপযুক্ত অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকলে বা শুধু পরীক্ষা হয়নি বলে অনেকেই বিভিন্ন চাকরিতে আবেদনই করতে পারছেন না। তবে এই করোনাকালীন ‘নিউ নরমাল’ শিক্ষার্থীদের ভেতরের উদ্যোক্তাকে বের করে এনেছে। অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। অবশ্য সবাই এই ‘নিউ নরমাল’-এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্য কি এটাই? যাদের ক্যারিয়ার ও জীবনের বিশেষ কোনো লক্ষ্য আছে তারা কি এটি মেনে নিতে পেরেছে? যারা সরকারি চাকরি করতে চান? যারা বিদেশে পড়তে যেতে চান? যারা গবেষক হতে চান? বা যারা ক্যাম্পাসটাকে খুব ভালোবাসেন? দুরন্তপনায় ডিপার্টমেন্ট মাতিয়ে ক্লাস করতে চান, শিখতে চান? শুধু পিছিয়ে পড়া, চাকরির বয়স চলে যাওয়া, সেশনজটই কি হতাশার কারণ? এই যে জীবনের অমূল্য সময় নষ্ট হচ্ছে— এর ক্ষতিপূরণ আদৌ কি সম্ভব!

এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে। আমদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সদ্যই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা নিচ্ছে বা সম্পন্ন করে ফেলেছে। তাই মে-এর মধ্যেই যে হল খুলে পরীক্ষা শুরু হবে এমনটি ভাবা অতি উচ্চাশা। শুধু ৪৩তম বিসিএসের জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের নিজেদের সার্বিক মঙ্গলের জন্যও বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন হওয়া উচিত এবং সেটি যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে। একজন শিক্ষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, অনলাইন ক্লাসের মতো বিভিন্ন ওপেন বই পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট,  প্রতিবেদন লেখা আর অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মতো মূল্যায়ন উপকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন সহজলভ্য প্রযুক্তির সার্বিক ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনেই মূল্যায়ন সম্ভব। অনলাইনে ব্যবসা করা গেলে, খাবার অর্ডার করা গেলে পড়াশোনা করা যাবে না কেন? পরীক্ষা নেয়া যাবে না কেন? আমাদের শিক্ষাবিজ্ঞান এ-বিষয়ে প্রত্যক্ষ পরীক্ষার বিকল্প কীভাবে আনতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চূড়ান্ত পরীক্ষাবিষয়ক একটি সেশনে অনলাইনে বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে ভেটো এসেছে। মূলত দুটো কারণকে কেন্দ্র করে:

১. সবাই ভালো ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন না। অনেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন বলে তাদের ইন্টারনেটের গতি খুবই ধীর।

২. বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা থাকা শিক্ষার্থীরা অনলাইনে লিখিত পরীক্ষার (লিখে ছবি তুলে পোস্ট করার) সাথে পরিচিত নন। বিশেষ করে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যেহেতু শ্রুতিলেখক পাচ্ছেন না, তাই তাদের জন্য ক্যামেরার সামনে অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে ছবি তুলে, সেই ছবি আপলোড করা বেশ কষ্টসাধ্য।

চূড়ান্ত অনলাইন পরীক্ষাগুলোকে কীভাবে একীভূত বা সমন্বিত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। সমন্বিত শিক্ষার মতোই সমন্বিত অনলাইন মূল্যায়নে সকল শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আমি আশাবাদী যে, আন্তরিকতার সাথে ভাবলে আমাদের নীতিনির্ধারক ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সেরা পথটিই খুঁজে পাবেন। কারণ এর আগে অনলাইন ক্লাস চালানোর খরচ এবং শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যাপারে আমরা সমাধান খুঁজে পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোগে সবাই ন্যূনতম একটি অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এ-বিষয়ে আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা ও সাধারণ জ্ঞান থেকে কিছু বিকল্প প্রস্তাব রেখে যাচ্ছি কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য।

১. ভিডিও চালু রেখে লিখিত পরীক্ষা দেওয়া অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য, কারণ ইন্টারনেটের গতি অনেক ধীর। তাছাড়া লেখার ছবি তুলে আপলোড করতেও অনেক সময় লাগে। এক্ষেত্রে ‘ওপেন বই’ পরীক্ষা একটি সমাধান হতে পারে। শিক্ষক যদি গুগল ক্লাসরুম বা তাদের ফেসবুক গ্রুপে আগেই প্রশ্নটি দিয়ে দেন এবং অন্তত কিছু দিন সময় দেন, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সকলেই প্রশ্নগুলো এক্সেস করতে পারবেন এবং নিজেদের সুবিধামতো সময়ে জমা দিতে পারবেন। ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগের জন্য তাদের অসুবিধা হবে না।

২. পরীক্ষাগুলোকে আরও নমনীয় করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্য কিছু প্রাথমিক প্রযুক্তিগত কর্মশালা করানো যেতে পারে। যেমন, গুগল ক্লাসরুমের ব্যবহার, ফেসবুক লাইভ, ছবি থেকে পিডিএফ, জুম, রুম এ-ধরনের ভার্চুয়াল ক্লাসগুলোতে শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করানোর ট্রেনিং, ভিডিও রেকর্ড ও আপলোডের বিষয়গুলো এসব কর্মশালাতে হাতেকলমে শেখানো যেতে পারে।

৩. গাঠনিক মূল্যায়ন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেজেন্টেশন খুবই জনপ্রিয়। জুমে এই প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে অনেকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্ক্রিনরেকর্ডার সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষার্থী আগেই তার প্রেজেন্টেশন রেকর্ড করতে পারেন অফলাইনে, এবং নেটওয়ার্ক থাকাসাপেক্ষে শিক্ষককে পাঠাতে পারেন।

৪. বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেগুলো ভয়েস রেকর্ড করতে পারে এবং কথাকে লেখায় ও লেখাকে কথায় রূপান্তর করতে পারে। এগুলোর ব্যবহার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উভয়েরই শেখা আবশ্যক।  

৫. শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সময় ও উত্তরপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ছাড় দিতে হবে। যেমন, শুধু ই-মেইল বা গুগল ক্লাসরুমেই উত্তর জমা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য ঠিক নমনীয় হয় না। শিক্ষার্থীরা যেন মেসেঞ্জার, ফেসবুক গ্রুপ, হোয়াটসএপেও উত্তর জমা দিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. অনলাইন পরীক্ষায় হাতে লিখে বা টাইপ করা দুটো অবস্থায়ই একটা আশঙ্কা থাকে যে শিক্ষার্থী অন্য কোনো সূত্র থেকে লেখা হুবহু নকল করছেন কি না বা কারও সহায়তা নিয়েছেন কি না। সেক্ষেত্রে, প্রশ্নকর্তাকে এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে যেন সৃজনশীল ও বাস্তব সমস্যাভিত্তিক হয়। শিক্ষার্থীরা যেহেতু গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না, তাই কীভাবে এই অনলাইন সূত্রগুলোকে তারা সঠিকভাবে উদ্ধৃত করে, রেফারেন্স দিয়ে ওপেন বই পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টে ব্যবহার করতে পারেন, সে বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

৭. ওপেন বই, স্ক্রিন রেকর্ডেড, অন ক্যামেরা এবং অনলাইন ইন্টারভিউ যে মাধ্যমেই পরীক্ষা নেওয়া হোক না কেনো, পরীক্ষার প্রশ্নগুলো গতানুগতিক জ্ঞানমূলক বা ব্যাখ্যামূলক হলে মূল্যায়নের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ হবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষককে তাঁর পঠন-পাঠনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমস্যা-সমাধান-ভিত্তিক মূল্যায়ন উপকরণ বা প্রশ্ন তৈরি করতে হবে; যাতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োগমূলক দক্ষতার পাশাপাশি অন্যান্য উচ্চতর দক্ষতা যেমন, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ ও উদ্ভাবনী দক্ষতাও ব্যবহার করতে পারে।

৮. লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে খুব সহজে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব। LMS Tutor  বা Master Study ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কমিটি একটি স্টুডেন্ট প্রোফাইল থেকে তার সকল কোর্সের অনলাইন ‘এমসিকিউ’ পরীক্ষা নিতে পারে। পাশাপাশি, গাঠনিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকেরা একটি গুগল ফরমের মাধ্যমেও ইন্টারেক্টিভ কুইজ নিতে পারেন। এতে খুব কম ইন্টারনেট ডেটা খরচ করেও শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবেন।

একুশ শতকে প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবন আমাদের কত সুযোগই তো করে দিয়েছে! আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ও শিখনে উদ্ভাবন আনতে পারে। আর এই উদ্ভাবন শুধুই প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগতও হতে হবে যাতে সকল শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদা নিশ্চিত হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট দূরকরণে যত দ্রুত সম্ভব বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা গ্রহণ আবশ্যক। আর তার জন্য ভাবতে হবে বিকল্পধারায়, বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ে, হতে হবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক। 

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version