আয়েশা বিনতে ওসমান লিখেছেন শিশুদের প্রতিভার বিকাশ নিয়ে
প্রতিটি শিশুর মাঝেই আছে সুপ্ত প্রতিভা। সবার প্রতিভার ধরন এক নয়। বৈশিষ্ট অনুযায়ী এদের প্রতিভার ধরনেও আছে ভিন্নতা। তবে এটাই দুঃখজনক যে, শিশুদের প্রতিভার বিকাশ ঠিকভাবে হচ্ছে না। আর এটি না হওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ হলো:
সচেতনতার অভাব;
প্রতিভার বিষয়টি চিহ্নিত করতে না পারা;
গুরুত্ব না দেওয়া;
এলাকায় পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকা;
আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি।
আমরা প্রত্যেকেই চাই, আমাদের শিশুরা বড় হয়ে অনেক নাম করুক, সবাই তাকে একনামে চিনুক। তবে আমরাই আবার চিন্তাভাবনায় সীমাবদ্ধতা রেখে দেই। আর সেটি যেভাবে করি তা হলো, প্রত্যেকেই ভেবে বসে থাকি, বড় হয়ে ও হবে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার কিংবা জজ বা ব্যারিস্টার এ-জাতীয় কিছু একটা। এগুলো নিঃসন্দেহে ভালো পেশা। তবে এটিও মনে রাখা জরুরি, শিশুদের প্রতিভার দিকটি অপচয় করা মোটেও সমীচিন নয়। আবার কিছু শিশু তো পড়ালেখার চেয়ে এগুলোই বেশী পছন্দ করে। পড়ালেখা তো থাকবেই, তবে শিশুদের এ দিকগুলোও উপেক্ষা করা একদমই ঠিক নয়। বরং উচিত শিশুদের প্রতিভা বিকাশের সর্বাত্মক সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
একটু ভেবে দেখুন তো—
আপনার শিশুটি কি ভালো আঁকে? সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কে বলতে পারে হয়তো একদিন নাম করবে জয়নুল আবেদীন বা মোস্তফা মনোয়ারের মত।
পড়াশোনা নাই, সারাদিন শুধু ক্রিকেট! খেলুক না। বাংলাদেশে তো সাকিব আল হাসান, সালমাদের দরকার আছে।
উফ! ছেলেটা এতো গেছো, যা গাছ বাইতে পারে! তাহলে তো সুখবর, এখন থেকেই ট্রেনিংয়ে লাগিয়ে দিন। হয়তো বড় হয়ে সে একজন মূসা ইব্রাহিম হবে।
ওর হাতটা না অনেক সই! আসুন না, দেখি চেষ্টা করে একজন সিদ্দিকুর রহমান বানাতে পারি কি না।
ঝুঁকি আছে, জ্বর হবে ভেবে যদি বাচ্চাদের পানিতেই না নামতে দেই, তাহলে চ্যানেল বিজয়ী আরেকজন ব্রজেন দাস পাব কী করে??
আপনার ছোট্ট মেয়েটি কি সারাদিন গুণগুণ করে গান গাইছে? দেখুন না চেষ্টা করে হতেও তো পারে একজন রুনা লায়লা, যে কি না পুরো উপমহাদেশে দাপটে বিচরণ করবে।
এখানে হয়তো কিছু বরেণ্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছি, তবে বিশ্বাস করি প্রতিটি শিশুই তাদের স্বীয় নামে পরিচিত হবে এবং তাদের স্বীয় বৈশিষ্ট্যে পৌঁছাবে মহান উচ্চতায়।
জানি, আমাদের হয়তো পর্যাপ্ত সব সুযোগ সুবিধা নেই, সংকট আছে খেলার মাঠের, সংকট জলাশয়ের, সংকট মুক্ত বায়ুর, সংকট উদ্যোগের, সংকট পৃষ্ঠপোষকতার। তবু তো আমরা স্বপ্ন দেখতে জানি।
আমাদের অনেক কিছুই দরকার শিশুদের প্রতিভা বিকশিত করার জন্য। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার আমাদের সচেতনতার এবং দায়িত্ব নেওয়ার।
এবারে আর্থিক অবস্থা নিয়ে একটু বলবো। দেখা যায়, আমাদের দেশে যতো বরেণ্য ব্যক্তি আছেন তাদের বেশিরভাগের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের প্রতিভাকে পুঁজি করে এগিয়েছেন, তাই বলবো, প্রতিভা বিকাশে আর্থিক অবস্থা কখনো বাঁধা নয়।
তাহলে, আপনার অবস্থান থেকেই যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব নিন শিশুকে প্রতিভা বিকশিত করতে। আপনার শিশুকে সুযোগ করে দিন। সে একদিন উজ্জ্বল করবে আপনারই নাম।
নাহ! ভুল বললাম। খুব ছোট পরিসরে বলে ফেলেছি, আসলে উজ্জ্বল করবে দেশের নাম। কল্যাণ বয়ে আনবে মানবতার।
আয়েশা বিনতে ওসমান: শিক্ষক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।
[…] দেখতে চেয়ে ওদের স্বাভাবিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত যেন না করি। পরীক্ষায় […]