বাড়ি প্রাকশৈশব উন্নয়ন ও প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা

কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ হতে যাচ্ছে?

কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? ছবিসূত্র: ইউনিসেফ
কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? ছবিসূত্র: ইউনিসেফ

আমাদের সমাজে কিন্ডারগার্টেন নামক শিশু-বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব একটি বাস্তবতা। এগুলোর লেখাপড়া ও পরিবেশ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে; কিন্তু শিক্ষাজগতের বাস্তবতা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। শিশুদের এই বিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্ব কি মুছে যেতে বসেছে? কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ হতে যাচ্ছে?

বিভিন্ন জায়গায় কিন্ডারগার্টেন বিক্রির বিজ্ঞাপন ইদানিং আমরা দেখতে পাই। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্যপরিষদের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেছেন, ‘‘করোনার ক্রান্তিলগ্নে আমরা প্রায় ষাট হাজার প্রতিষ্ঠান সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা কোনো টিউশন ফি আদায় করতে পারিনি। তাই শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।’’ কিন্ডারগার্টেন-জাতীয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত হয় (৯৯ শতাংশ) কিংবা একটু স্বচ্ছল অথচ বেকার কোনো ছেলে বা মেয়ে নিজের বাসার একটি রুমে হয়তো এ-জাতীয় প্রতিষ্ঠান চালু করেন। 

করোনাকালীন কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়িভাড়া ঠিকই দিতে হচ্ছে, যদিও শিক্ষার্থী বেতন আদায় হচ্ছে না। অন্যান্য বিলও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক হারে পরিশোধ করতে হয় যা এখনও অব্যাহত আছে। কিন্ডারগার্টেনের অনেক শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতন পান। তারা নির্ভর করেন মূলত প্রাইভেট টিউশনির ওপর; যা করোনকালে বন্ধ রয়েছে। তারা না পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন, না পাচ্ছেন প্রাইভেট পড়ানো বাসা থেকে কোনো বেতন। কাজেই জীবন চালানো, সংসার চালানো তাদের জন্য  দুরূহ হয়ে পড়েছে। গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ শুরু হয়েছে এবং কয়েক দফায় বাড়িয়ে তা নভেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। কী অবস্থায় এগুলোর মালিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ দিন কাটাচ্ছেন, আমরা কেউ তার খবর রাখি না। দু’চারজন শিক্ষক শুধু বলেছেন, ’স্যার, দুরবস্থার কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, সম্ভব হলে কিছুটা সাহায্য করেন।’

শিক্ষকনেতারা বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফির ৪০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ৪০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, বাকি ২০ শতাংশ গ্যাস বিল, বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ ও পানির বিলসহ অন্যান্য খরচ নির্বাহ না হওযায় অনেক প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় না হওযায় মার্চ মাস থেকে এ-পর্যন্ত স্কুলগুলো সকল প্রকার বিলসহ বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা ও গরীব কর্মচারীরা অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা দিশেহারা। শিক্ষাক্ষেত্রের বিশাল এই সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে এবং অসহায় শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা ও গরীব কর্মচারীদের জন্য জীবন বাঁচানো এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট যেকোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রার্থনা করেন। একটি সংগঠন আপদকালীন সময়ে ৫০ কোটি, অন্য একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছেন। নেতারা বলছেন, “কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ যদি না থাকতো, তাহলে সরকারকে আর ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রতিমাসে শিক্ষক বেতনবাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। সেদিক থেকে বলা চলে আমরা সরকারের বিরাট রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে দিয়েছি। পরোক্ষভাবে আমরা দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও কাজ করছি।” শিক্ষক নেতাদের এই কথাগুলো কিন্তু ফেলে দেয়ার মতো নয়, যুক্তিসঙ্গত কথা।

দু’একটি প্রতিষ্ঠান হয়তো নিজেদের গচ্ছিত ফান্ড থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কিছুদিন পরিশোধ করেছেন। এখন সেটিও আর সম্ভব হচ্ছে না। অভিভাবকদের কাছে বেতন চাইলে সেটি অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে। আর বেশিরভাগ অভিভাবকও এই মুহূর্তে বেতন দিতে রাজি নন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না। আর এই শিক্ষক ও কর্মচারীগণ যে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, সেটি আরেক ধরনের অমানিবকতা।  

তাই, কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ থাকা সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্তে এখনই আসা উচিত। হতে পারে, অভিভাবকদের ৭০ শতাংশ বেতন দিতে হবে, বাকিটা মওকুফ করা হবে। এই ৩০ শতাংশ বেতন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বহন করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের অর্থিক অবস্থা ভালো, তারা শিক্ষকের এখনই দিয়ে দিবে; বাকীরা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে দিবে। তবে, কোনোভাবেই শিক্ষক-কর্মচারীদের ঠকানো যাবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটি কে নিবে? স্কুল কমিটি, শিক্ষা বিভাগের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, অভিভাবক প্রতিনিধি সমন্বয়ে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে যেখানে মন্ত্রণালয় সায় দিবে।

উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে, রাজধানীতে কোথায় কীভাবে কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ রয়েছে তার হিসাব  উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে নেই। রাষ্ট্রীয় তরফেও এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ বলেন, ৪০ হাজার আর এর সাথে জড়িত শিক্ষক কর্মকর্তা দুই লাখ। আবার অন্য এক সংগঠনের শিক্ষক নেতারা বলছেন, এই সংখ্যা ৬০ হাজার, আর এর সাথে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, উপকারভোগী মিলে ২০ লাখ। এসব প্রতিষ্ঠানে কতোজন শিক্ষক আছেন, তারা কী ধরনের বেতন পান এ ধরনের তথ্য উপজেলা কিংবা জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছে থাকা উচিত। কিন্ডারগার্টেনগুলোতে কী পড়ানো হয়, কীভাবে পড়ানো হয়, কারা পড়ান ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা ও সঠিক পরিসংখ্যান থাকা উচিত কারণ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাব্যবস্থাও সমাজের বাস্তবতা। এগুলোর সমস্যা অনেক কিন্তু এগুলো তো এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে একটি রাষ্ট্রকে তা পরিচালনা করতে হয়। এটি কোনোভাবেই যার-তার হাতে ছেড়ে দিলে হয় না। কিন্ডারগার্টেনগুলো আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার দুরবস্থার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় অর্ধেক  প্রতিষ্ঠান (৬৫৬২০টি) রাষ্ট্রীয় তরফ থেকে পরিচালনা করা হয় যেটি একটি ভালো দিক । কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কীভাবে চলছে, কী শিখছে সেখানকার ক্ষুদে শিক্ষার্থী তথা ভবিষ্যত নাগরিকেরা সেগুলো সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু বলার প্রয়োজন নেই। দু’চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া এগুলোর শিক্ষার মান যে কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তা আমাদের অজানা নয়। ফলে একটু স্বচ্ছল অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। কষ্ট করে হলেও তাদের বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠিয়ে থাকেন। মূলত এ কারণেই দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে  উঠেছে কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়।

একটি দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের যার-তার হাতে ছেড়ে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। কিন্ডারগার্টেনে যারা পড়ান, তাদের প্রাতিষ্ঠনিক প্রশিক্ষণ নেই। অথচ শিশুদেরকে যত্ন করার জন্য, তাদেরকে পড়ানোর জন্য শিশুশিক্ষা ও শিশুবিজ্ঞানের ওপর যথেষ্ট ধারণা থাকতে হয়, জানতে হয়, প্র্যাকটিস করতে হয় যা আমাদের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে নেই। ব্যতিক্রম দু’চারটি রয়েছে। রাষ্ট্র এ দায়িত্ব কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে তা অন্যভাবে ম্যানেজ করা যায়, কিন্তু শিশুদের শিক্ষা কারোর বাড়ির বারান্দায়, ভাড়া করা একটি রুমে বা দুটো রুমে বা ব্যক্তিগত ইচ্ছের ওপর চলতে দেয়া যায় না। একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে যারা শিশুশিক্ষার সার্বিক নির্দেশনা প্রদান করবে এবং সেভাবেই গোটা দেশে একইভাবে শিশুদের আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হবে। সেখানকার শিক্ষকদের যথাযথ পেশাগত উন্নয়ন সংঘটিত হবে।

কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ হলে এর শিক্ষক, পরিচালক কিংবা মালিকদের আমরা দোষারোপ করতে পারি না। প্রাথমিক শিক্ষার দুর্বলতার কারণেই এগুলো গড়ে উঠেছে। এখন তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্বও অভিভাবক, সমাজ ও রাষ্ট্রের। এখন পর্যন্ত শির্ক্ষাথীদের টিউশন ফি মওকুফ কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেয়ার বিষয়ে কোনো সহায়তা করা হবে কিনা সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি, কিন্তু আসা উচিত।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির আগে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে। ২০২১ সাল থেকে চালু হতে যাচেছ দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। ফলে সরকারি প্রাথমিকেও এখন থেকে চার বছরে ভর্তি হতে হবে। এই শ্রেণির নাম হবে ’শিশু শ্রেণি’। আগামী বছর হয়তো দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট পাঁচ হাজার বিদ্যালয়ে চালু করা হবে এই শিশু শ্রেণি। এরপর ২০২২ সালের মধ্যে সব স্কুলে তা কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে যাচেছ সরকার।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব  বলেছেন, “আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা আছে। সে-কারণে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাক প্রাথমিকে দু’টি ক্লাস চালু হলে প্রথমটিতে মূলত খেলাধুলাই থাকবে। খেলার ছলে শিশু যা শিখতে পারে সেটিই যথেষ্ট হবে। ফলে পরের শ্রেণিতে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে স্কুলে আসবে।“ তবে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত একটি শ্রেণি যুক্ত হলে এগারো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে নিরীক্ষা জরিপে  চিহ্নিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে একটি করে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ চার বছরের শিশুদের উপযোগী হতে হবে। সব বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কোমলমতি শিশুদের দেখভাল করার জন্য নিয়োগ করতে হবে একজন করে যত্নকারী বা কেয়ারগিভার। আমরা এগুলো নিয়ে বাস্তবসম্মত কোনো চিন্তা করেছি কিনা সেটি দেখতে হবে। শুধু ঘোষণা দিলেই হবে না। কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ না হলে এগুলো কি কিছুটা সাপোর্ট দিতে পারে।

২০১০ সাল থেকে সীমিত আকারে এবং ২০১৩ সাল থেকে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। ২০১৩ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯.৫ শতাংশ যা ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৯ শতাংশ। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পর প্রথম শ্রেণিতে নিট ভর্তির হার, শিক্ষাচক্র সমাপনীর হার, উপস্থিতির হার, সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে বলে সরকার দাবি করছে। 

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, জাপান, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি। ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উন্নত বিশ্বের দেশসহ ১০ শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি এবং ৪৯ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদি চালু রয়েছে। আমাদের দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি। এগুলো হচ্ছে, প্লে-গ্রুপ, কেজি ওয়ান, কেজি টু ইত্যাদি নামে। কিন্ডারগার্টেনগুলো বেসরকারি হওয়ায় সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না। মন্ত্রণালয়ের এটিও একটি কৌশল যাতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকে ঢুকতে পারে। তাই তারা সব সরকারি প্রাথমিকের সাথে প্রাক-প্রাথমিক যোগ করেছে।

তবে, এসব শিশুশ্রেণিগুলোতে সত্যিকার অর্থে কী ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে পরবর্তী শ্রেণিতে যাওয়ার জন্য, তার কোনো প্রমাণ বা ডকুমেন্ট আমরা দেখতে পাই না। যতোটা জানা যায়, এসব শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সেই খাতা-কলম ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সামষ্টিক মূল্যায়নই ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা যদি রাষ্ট্র সঠিকভাবে, মানসম্মত উপায়ে মানেজ করতে পারে তাহলে রাষ্ট্র থেকেই এগুলো পরিচালিত করা উচিত।

বাস্তবতা বলছে, সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকদের চাকরিটি সরকারি কিন্তু মানসম্মত শিক্ষাদান থেকে এগুলো বহু দূরে অবস্থান করছে। তাই বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা আমরা শুধু বলার জন্য পুরোটাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করবো? নাকি সত্যিকার অর্থে মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষাদানের জন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করবো?

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version