আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থাকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়: প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা। এই তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন। কোনো রাষ্ট্রে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিত করার যে আবশ্যকতা, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তা একইভাবে প্রযোজ্য নয়। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তার বিধান করা বা ব্যবস্থা রয়েছে অনেক রাষ্ট্রেই, তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তার বদলে সকলের জন্য অংশগ্রহণের সমান সুযোগ ও পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়। এই অংশগ্রহণ আগের দুই স্তরের মতো বাধ্যতামূলক বা আবশ্যিক না, ঐচ্ছিক। কেউ চাইলে উচ্চশিক্ষা নেওয়া থেকে বিরতও থাকতে পারে।

উচ্চশিক্ষার মূল বিষয়টি হলো কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যক্তিকে সহযোগিতা করা। আর উচ্চশিক্ষা বললে আমাদের চিন্তায় যে শব্দটি প্রথমে আসে, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ বলা হয় উচ্চতর জ্ঞান সংরক্ষণ, বিতরণ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করা।

এই জ্ঞান বিতরণ, তার উদ্দেশ্য কী হবে, এসব নিয়ে নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে। বিতরণকৃত জ্ঞান যেমন নতুন জ্ঞান বিকাশের রাস্তা তৈরি করে, একইসাথে ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। সেই দক্ষতা ব্যক্তিকে বাজারে বা আরও সহজ করে বললে কর্মক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিকাশের সুযোগ করে দেয়। দুটোই সত্য।

তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি শুধু জ্ঞান বিতরণ করে দক্ষ জনশক্তি উৎপাদনের জন্য, সেখানে যদি নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কোনো প্রণোদনা বা চেষ্টা না থাকে, তবে সেটিকে আর বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায় না সম্ভবত, সেটি তখন প্রশিক্ষণ সংস্থা (training institute) হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিচালিত সান্ধ্য কোর্সের (যেগুলোর বেশিরভাগই মূলত প্রফেশনাল মাস্টার্স লেভেলের) তীব্র সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি কর্তৃক দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই নির্দেশনা কতোটা অনুসরণ করবে সেটি আলোচনা সাপেক্ষ, তবে এই নির্দেশনাটির পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্য কোর্স থাকা বা না থাকা নিয়ে প্রচুর আলোচনা উঠে এসেছে। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে দুটো বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার।


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিচালিত সান্ধ্য কোর্সের (যেগুলোর বেশিরভাগই মূলত প্রফেশনাল মাস্টার্স লেভেলের) তীব্র সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি কর্তৃক দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।


প্রথমত, সান্ধ্য কোর্স কেনো বলছি আমরা? কারণ, সূচনালগ্ন থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কোর্সগুলোর কার্যক্রম শুরু হয় দিনের শেষে অর্থাৎ সন্ধ্যায়। এখান থেকেই সান্ধ্য কোর্স বা সন্ধ্যাকালীন কোর্স। এই কোর্সগুলো প্রধানত মাস্টার্স লেভেলের এবং যারা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সংযুক্ত আছেন, তাদের কর্মদক্ষতা অর্থাৎ প্রফেশনাল স্কিল বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোর্সগুলো সাহায্য করবে— এমন উদ্দেশ্য থেকেই এসব কোর্সের শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়।

মোটাদাগে এই কোর্সগুলোকে প্রোফেশনাল মাস্টার্স বলা যায়। তবে, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ-ধরনের প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সগুলো যে এখন কেবল সন্ধ্যাতেই হয় এমনও নয়। কিছু কিছু কোর্স ছুটির দিনগুলোতে দিনের বেলাতেও হচ্ছে। তবে মোটাদাগে তুলনামূলকভাবে শুরুর সময়ের প্রচলিত নামটিই সবার মুখে রয়ে গিয়েছে। অধিক ব্যয়সাপেক্ষ এসব প্রফেশনাল মাস্টার্স ঘরানার কোর্সগুলোর সাধারণ পরিচিতির জন্য।

দ্বিতীয়ত, এই সান্ধ্য কোর্সগুলোর শিক্ষার্থী হন মূলত তারাই যারা কোনো নির্দিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিষয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। আবার নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেওয়ার পরে কর্মক্ষেত্রে ঢুকে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে কয়েক বছরের শিক্ষাবিরতি থাকার পর পুনরায় যারা ওই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে আগ্রহী, তারাও অনেক সময়ে সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থী হন।

যারা সান্ধ্য কোর্স থাকার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন, তাদের বড় অংশেরই প্রধান যুক্তি হলো এর মাধ্যমে ভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (অন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ) যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা কোনো স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে তাদের ওই বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হলে তাদের জন্য এ সুযোগটি থাকবে না।

এছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সান্ধ্য কোর্স যেহেতু ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই স্বনামধন্য শিক্ষকগণ পরিচালনা করেন, ফলে কোর্সের মানও তুলনামূলকভাবে ভালো। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকলে (সান্ধ্য কোর্সের আওতায় হলেও) একজন চাকুরিপ্রত্যাশী চাকুরির বাজারে শিক্ষার্থী প্রাথমিক প্রতিদ্বন্ধিতায় কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকেন বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। মোটাদাগে, এসব যুক্তির বাইরে খুব কম যুক্তিই আমার চোখে পড়েছে।

যুক্তিগুলোকে হুট করে নাকচ করে দেওয়া সম্ভব নয়, যেহেতু আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে কমবেশি এর বাস্তব ভিত্তি আছে। কিন্তু যুক্তিগুলো উঠে আসার পেছনের কারণ যদি আমরা একটু খেয়াল করি, তাহলে দেখতে পাবো যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা এসব যুক্তি তৈরির পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে।

একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাচেলর ও মাস্টার্স লেভেলের নিয়মিত কোর্সগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো বিষয়ে ব্যাচেলর কোর্সে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তাদেরকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়।

চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর কোর্স সমাপ্ত করার পরে (ফল যা-ই হোক না কেন) ওই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত বিষয়ের মাস্টার্স লেভেলের কোর্সের জন্য নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপযুক্ত হিসেবে নির্ধারণ করে ভর্তি করে নেওয়া হয়।

ব্যাচেলর ও মাস্টার্স দুইটি আলাদা লেভেলের কোর্স হলেও, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (সম্ভবত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর কিছুটা ব্যতিক্রম হয়) ব্যাচেলর লেভেলে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হতে পারেন না, তাদের এই নিয়মিত মাস্টার্স কোর্সগুলোতে ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না, তাদের ব্যাচেলর কোর্সের ফলাফল যতোই ভালো হোক না কেনো!

এটি একটি সাংঘাতিক বৈষম্য। এই বৈষম্যের মনস্তত্ত্ব এতোটাই গভীর যে, আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী একে বৈষম্য মনে না করে বরং তাদের অধিকার হিসেবে মনে করেন (এমনকি অনেক শিক্ষকও একই ভাবনায় আক্রান্ত)।

অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত মাস্টার্সের মতো উচ্চশিক্ষার এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কেবল ব্যাচেলর লেভেলে ভর্তি পরীক্ষায় একবার পিছিয়ে পড়ায় পরবর্তীতে উচ্চতর স্তরে অংশগ্রহণের জন্য আর কোনো সুযোগই পাচ্ছেন না। এতে যে উচ্চশিক্ষার সকল ক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগের সমতা বিধানের যে প্রত্যয়টি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, সেটিকে উপেক্ষা ও অবহেলা করা হচ্ছে, এই বোধটি আমাদের অনেকেরই বিবেককে সেভাবে নাড়া দেয় না বা দিতে সক্ষম হয় না। এটা আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাথে নানাভাবে যুক্ত ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের এক মারাত্মক বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা ও সঙ্কট বলেই মনে হয়।


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত মাস্টার্সের মতো উচ্চশিক্ষার এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কেবল ব্যাচেলর লেভেলে ভর্তি পরীক্ষায় একবার পিছিয়ে পড়ায় পরবর্তীতে উচ্চতর স্তরে অংশগ্রহণের জন্য আর কোনো সুযোগই পাচ্ছে না। এতে যে উচ্চশিক্ষার সকল ক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগের সমতা বিধানের যে প্রত্যয়টি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, সেটি উপেক্ষিত হচ্ছে।


আরেকটি সমস্যা হলো, ২০০৬ সালের উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক-এর পরামর্শে ইউজিসি যে ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিলো, সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জোর দিয়ে বলা হয়েছিলো।

বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে চিহ্নিত করে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনসমূহসহ আরও নানা মহল থেকে এই কৌশলপত্রের তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সরকার ও ইউজিসি এই নীতিমালাকে প্রকাশ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আবশ্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি। তবে, উক্ত নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী অংশ হিসেবে এই সান্ধ্য কোর্সগুলোকে বেছে নেয়। এ-কারণে নিয়মিত মাস্টার্স কোর্সগুলোর চাইতে সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সগুলোর বেতন ফি অনেক গুণ বাড়িয়ে ধার্য করা হয়।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিষয়ের সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে যে অর্থ খরচ করতে হয়, তা একই ধরনের কোর্সের জন্য অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের চাইতেও বেশি হতে দেখা যায়। ফলে এখানেও বৈষম্য সৃষ্টির ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এই বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গীর ফলে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যাদের মেধা আছে, কিন্তু এই অতিরিক্ত ব্যয়ের সামর্থ্য নেই, তারা এই সকল কোর্সে ভর্তি হতে পারেন না।

কামরুস সালাম সংসদ: শিক্ষা কর্মী ও সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Sending
User Review
0 (0 votes)

লেখক সম্পর্কে

কামরুস সালাম সংসদ

কামরুস সালাম সংসদ

কামরুস সালাম সংসদ একজন শিক্ষা কর্মী ও সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশাগত জীবনে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প কাজের সাথে যুক্ত।

মন্তব্য লিখুন