মোঃ ফজলে রাব্বি লিখেছেন বিসিএস-এর মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে
এই প্রবন্ধে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে নিয়োগ কেন শুধু শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) থেকেই দেওয়া উচিত সেই বিষয়টি আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেস বা বিসিএস-এর চাকুরি মানুষের খুবই আকাঙ্ক্ষিত ও আরাধ্য চাকুরি। এর কারণ নিশ্চিত ভবিষ্যৎ, চাকুরিকালীন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, প্রণোদনা ইত্যাদি। উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য দক্ষ গবেষক তৈরি করা হলেও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের পরম আরাধ্য ও তপস্য বিষয় হয়ে সামনে আসে বিসিএস। যে শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর বিসিএস ক্যাডার হন, তাকে জীবনে সফল বলে আমাদের দেশে ও সমাজে গণ্য করা হয়।
বিসিএস-এর মতো তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকতে অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এরকম একজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রথম বর্ষ শেষ করেই বিসিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করের। তার মতে, সমাজ ও কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য বিসিএসই উপযোগী। নতুন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাদেরও জীবনের লক্ষ্য বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করা।
বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিসের চাকুরি এখন বেশ লোভনীয়। প্রতিযোগিতাও বেড়ে গেছে মারাত্মক। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছেন। সাধারণ শিক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, সমাজ, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে পাশ করা ছাড়াও এখন বিবিএ, আইবিএ, বুয়েট, মেডিকেল থেকে বেরিয়েও অনেকে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশে বাস্তবতা হলো উচ্চশিক্ষিত বেকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কর্মসংস্থানের যে চিত্র, তাতে উচ্চশিক্ষিতদের মাত্র চার শতাংশের সরকারি চাকুরির সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ বড় অংশেরই কর্মসংস্থান হতে হবে বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানা খাতে। বেশিরভাগেরই যে সরকারি চাকরি হবে না এটি নিশ্চিত।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন নির্বাহী পরিচালকের মতে, তিনটি জিনিস যেমন, প্রারম্ভিক বেতন, নানারকম সুবিধাদি ও ক্ষমতা— এগুলোর জন্যই মানুষ বিসিএসের প্রতি আগ্রহী হয়। তরুণ প্রজন্ম চায় দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে। আর সেটি করা যায় সরকারি চাকরিতে ঢুকেই। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে কোটা বিলোপের ঘোষণা এসেছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন এটি কার্যকর হলে ভবিষ্যতে বিসিএসের জন্য আগ্রহ আরো বাড়বে।
আমাদের দেশে বিসিএসে দু’ধরনের ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে। একটি জেনারেল বা সাধারণ ক্যাডার যেখানে যে কেউ স্নাতক (সম্মান) পাস করে আবেদন করে চাকুরির জন্য বিবেচিত হতে পারেন। আরেকটি আছে প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডার। সেখানে শুধু বিষয়গতভাবেই আবেদন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কৃষিতে যারা অধ্যয়ন করেন, তারা কৃষি ক্যাডারে; ডাক্তারি পাস করে স্বাস্থ্য ক্যাডারে, ফিশারিজে পড়ে মৎস্য ক্যাডারে, পরিসংখ্যানে পড়ে পরিসংখ্যান ক্যাডার এবং বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ে পড়ে শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিবেচিত হতে পারেন। সাধারণ ক্যাডারে সবাই আবেদন করতে পারেন। কিন্তু টেকনিক্যাল ক্যাডারে শুধু সাবজেক্ট এক্সপার্ট বা বিষয় বিশেষজ্ঞরাই আবেদন করতে পারেন।
৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর)-এর প্রফেশনাল ক্যাডার সাধারণ শিক্ষা বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে নিয়োগ করার জন্য প্রভাষক (শিক্ষা) পদে ১৯টি পদ বরাদ্দ করা হয়। এটি ছিলো এ যাবতকালে বিসিএস পরীক্ষার এই পদে বরাদ্দকৃত সর্বোচ্চ সংখ্যক পদ। এর আগের বিসিএসগুলোতে দেখা যায়, হয়তো এই পদে অর্থাৎ প্রভাষক (শিক্ষা) ক্যাডারে কোনও পদই ছিলো না বা নেহায়েত একটি-দুটি পদ ছিলো। কোনো একটি বিসিএসে এই পদে কোনো যোগ্য প্রার্থী না থাকায় উক্ত পদে কাওকে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অথচ এই পদে যারা আবেদনকারী ছিলেন, তারা লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষাতে সফল হয়েছেন। তাদের তো কোনোভাবেই অযোগ্য বলা যায় না।
পরে তারা পিএসসিতে পুনরায় আবেদন করার পর ৬ জনকে সেবার উক্ত পদগুলোর জন্য বিবেচিত বলে সুপারিশ করা হয়। পিএসসি তাদের টেকনিক্যাল ভুলের জন্য লিখিতভাবে তথ্ বিভ্রাটের বিষয়টি প্রকাশ করে সংশোধিত ফলাফলে। কিন্তু সেই ছয়জনের সবাই যোগদান করেনি, এর মাঝে কয়েকজন প্রশাসন ক্যাডারে সুযোগ পাওয়ায় এবং অন্য দু’একজন অন্যত্র যোগ দেয়ায়। এই টেকনিক্যাল ভুলের একটি অন্যতম কারণ এক বছরের বিএড এবং চার বছরের বিএড (অনার্স)-এর মধ্যে কিছুটা সংশয় থাকা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের। প্রোগ্রামিং ইনপুটে বিএড দেয়া থাকায় কাউকেই আসলে ফলাফলে পাসকৃত দেখানো হয়নি প্রথমে। এটি পরে প্রার্থীরা পিএসসিতে যাওয়ায় তারা তাদের প্রোগ্রামিং ইনপুটের ভুল দেখতে পায় এবং ফলাফল সংশোধন করে।
এই প্রশ্নের উত্তরে আসার আগে আরো একটি দৃশ্যপট তুলে ধরি। ৩০তম বিসিএসে প্রভাষক (শিক্ষা) হিসেবে অনেকেই যোগদান করেন। সে ব্যাচের একজনের সাথে কথা বলে কিছু বিষয় জানতে পারি। তিনি বিসিএসে যোগদানের পর যেখানে পোস্টিং দেয়া হয়, সেখানে অর্থাৎ সেই টিচার্স ট্রেনিং কলেজ বা টিটিসিতে গিয়ে দেখতে পারেন, কোনো পোস্ট নেই সেখানে। তার যোগদান অনুমোদন করা হচ্ছে না। তিনি পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা যোগদান করার বিষয়ে উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন সময়ে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন বিষয়ে টট (ট্রেনিং অফ দ্যা ট্রেইনার্স)-এ তাকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। অন্য সংখ্যাগরিষ্ঠরা সেসব প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এসব বিষয় কেন হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু অনেকেই জানেন না।
উপরের দৃশ্যপটের কারণ বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে প্রভাষক (শিক্ষা) পদে একজন বা দু’জন (কোনো কোনো জায়গায় একটু বেশি। যেমন, ঢাকা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ বা টিটিসি) থাকেন। বাকি অধিকাংশ পদে থাকেন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণেরা যেহেতু সংখ্যায় বেশি থাকেন, সেহেতু বিভিন্ন সুবিধাদি তারাই পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু টিটিসিগুলোতে একজন/দু’জন কিংবা হয়তো তারচেয়ে একটু বেশি শিক্ষার শিক্ষার্থী থাকলে সুবিধা বা অসুবিধা কোথায়?
প্রথমত, বাংলাদেশে ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানের সময় প্রতিষ্ঠানের ভিশন ও মিশন ঠিক করা হয়। আইইআরের মূল মিশন ছিলো দক্ষ শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। সেই দর্শন আজও বজায় আছে। কিন্তু নীতিমালার কিছু মারপ্যাঁচে আইইআর থেকে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই দক্ষ শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে সরকারি পর্যায়ে বা বিসিএসের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন। এর কারণ বিসিএসে প্রভাষক (শিক্ষা)-এর পদ না থাকা, কিংবা খুব কম সংখ্যক পদ থাকা। অথচ যে প্রতিষ্ঠান শিক্ষক প্রশিক্ষক তৈরির মূলমন্ত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে, পলিসিতে তাদেরকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ ছিল বিসিএসে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে নিয়োগ প্রদানের জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী বিষয় খোলা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করতে পারছেন।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন আইইআর এবং বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে ব্যাচেলর অফ এডুকেশন (অনার্স) ডিগ্রি দেয়া হয়, যা বাংলাদেশের আর কোথাও দেয়া হয় না। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে আইইআর আছে এবং দেশে যতোগুলো শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ আছে, সবগুলোতেই ব্যাচেলর অফ এডুকেশন (অনার্স) ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে বর্তমানে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রফেশনাল ক্যাডার হলো শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রভাষক (শিক্ষা)। এত শিক্ষার্থীকে চার বছরের অনার্সে শিক্ষা নিয়ে পড়ানোর পর যদি তার প্রফেশনাল জায়গায় অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে তারও অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীর যে প্রফেশনাল ক্যাডার, সরকারি সাধারণ কলেজ সেখানে সুযোগ পাওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে বাংলার স্নাতক শিক্ষার্থী যোগদান করতে পারেন। আবার সরকারি সাধারণ কলেজেও বাংলার সাধারণ শিক্ষার্থী যোগদান করতে পারেন, কিন্তু সরকারি সাধারণ কলেজে শিক্ষার শিক্ষার্থী যোগ দিতে পারেন না। বিষয়টি কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে না? তাহলে কি শিক্ষার শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়াতে পারেন না? পারেন, কিন্তু তাদের জন্য সেই সুযোগটি রাখা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলা বিষয়ে কয়েকটি কোর্স করে কন্টেন্ট নলেজে দক্ষতা তুলনামূলক কম থাকায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা সরকারি সাধারণ কলেজে আবেদন করতে পারেন না। তাহলে একই যুক্তিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে শিক্ষার ওপর কোনো স্নাতক না করেই বা কন্টেন্ট নলেজের গভীরতা না নিয়েই কীভাবে বাংলার স্নাতক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে পড়াচ্ছেন? বাংলা এখানে উদাহরণ হিসেবে বলা হলো, এটি অন্য বিষয়গুলোর জন্যও প্রযোজ্য।
তৃতীয়ত, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে সাধারণত কী পড়ানো হয় তার চেয়ে বরং কীভাবে পড়ানো হয় তার উপরই গুরুত্ব আরোপ করা হয়। দীর্ঘ চার বছর স্নাতক করে তা শেখার পর এবং আরো এক বছরের স্নাতকোত্তর কিংবা আরো উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার পরও কেন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে নিয়োগ সব পদে পাবেন না? শিক্ষা নিয়ে গবেষণাও আইইআরের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষ থেকেই শুরু করে দেন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুধু কিছু কোর্স করলেই সেখানে সিদ্ধহস্ত হওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন গবেষণা, যেটি শুধু শিক্ষার স্নাতকরাই করেন, অন্যান্য বিষয়ের কেউ করেন না। কাজেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে দক্ষ জনবল পাওয়ার অন্যতম একটি বড় রাস্তা হতে পারে সকল শূন্য পদে শিক্ষায় পূর্ণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা।
চতুর্থত, কিছু প্রশিক্ষণ কোর্স এবং কিছু প্রফেশনাল ডিপ্লোমা নিয়ে শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া যায় না। বরং এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের সাধনা। চার বছরের সম্মান, এক বছরের স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি করেও একজন নিজেকে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ দাবি করতে পারেন না। অথচ একটি এক বছরের বিএড ডিগ্রি এবং নায়েমের তিন মাসের ফাউন্ডেশন কোর্স, কিছু বিদেশি এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে যখন শিক্ষার বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স পড়ানো হয়, তখন কন্টেন্ট নলেজের ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয়েই সঠিক ধারণা পায় না।
পঞ্চমত, একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে গিয়ে দেখেছি, একজন প্রশিক্ষক পেডাগজির একটি মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল ধারণা দিচ্ছেন। পরবর্তীতে দেখতে পাওয়া গেল যে, তিনি শিক্ষা-সংক্রান্ত কোনো ডিগ্রিই নেননি। তিনি টট কোর্স করেছেন অনেকগুলো। কিছু টট কোর্স বা শিক্ষা-বিষয়ক কোর্স বা প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষক বা পেডাগজিস্ট হওয়া যায় না। যারা এভাবে প্রশিক্ষক হন, তারা মৌলিক ধারণাগুলো যথাযথভাবে দিতে ব্যর্থ হন। এটি অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে ওই বিষয়ে ভুল ধারণা তৈরি করে। এ থেকে পরবর্তিতে তাকে আরো অনেক ভুল ধারণা বিস্তারিতভাবে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি দেশ ও জাতির জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।
তাই আসলে সব কিছু মিলিয়ে বলতে চাই, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে সকল শূন্য পদে শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরদেরই প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। অর্থাৎ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে সকল পদে শিক্ষায় সম্মান ও স্নাতকোত্তর করা শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিলে দেশ দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি হবে। আমি বলছি না, সরকারি সাধারণ কলেজগুলোতে শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা কেউ যাক। কিন্তু, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে নিয়োগ প্রদানে শিক্ষার শিক্ষার্থীদেরই প্রাধান্য দেয়া হোক, সরকারি সাধারণ কলেজে বিষয় বিশেষজ্ঞরা পাঠদান করুন। তাহলে শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো প্রশিক্ষিত হাতেই পড়বে। আমার মনে হয়, এতে শিক্ষার মান আরো বাড়বে। নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।