কমিউনিকেটিভ ইংরেজি নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

কমিউনিকেটিভ ইংরেজি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে কেন? কারণ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে আমাদের দেশে ইংরেজি পড়ানো হয় এবং এসব ক্লাসের ইংরেজির সকল বইই কমিউনিকেটিভ ইংরেজির ওপর লিখিত। অতএব দেখা যাচ্ছে, কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং কয়েক হাজার শিক্ষক এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বা যুক্ত। কাজেই এটি একটি জাতীয় বিষয় যা আমরা ইচ্ছে করলেও উপেক্ষা করতে পারি না। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক ছাড়াও অফিসিয়াল ও প্রাত্যহিক জীবনে আমরা ইংরেজি ব্যবহার করে থাকি। অতএব বলতে গেলে কেউই বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারে না।

কমিউনিকেটিভ ল্যাংগুয়েজ টিচিং বা সিএলটি কথাটি স্পষ্ট করে বুঝা প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে এটি গভীরভাবে কিছু কার্যাবলীর সাথে জড়িত। যেমন, সমস্যা সমাধান, দলগত বা জুটিতে কাজ ইত্যাদি। সিএলটি সম্পর্কে মানুষের ভেতর কনফিউশন বা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে নানা কারণে। এর বড় কারণ হচ্ছে, পনের বছর বা তার কিছু আগে থেকে এটি যখন বিস্তার লাভ করতে শুরু করে, সেই অবস্থা থেকে ধারণাটি অনেকটাই সরে এসেছে। এখন অনেকে অনেক ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে সিএলটি নিয়ে।

অনেক শিক্ষকের কাছে সিএলটি মানে শুধু ইংরেজিতে কথা বলা। কেন তাদের এই ধারণা? বইয়ের প্রায় প্রতিটি লেসনেই প্রচুর স্পিকিং স্কিল প্র্যাকটিস রয়েছে। আমরা যেহেতু কথা বলে কমিউনিকেট করি, তাই তাদের কাছে সিএলটি সম্পর্কে সে ধারণাই জন্মেছে। এর কারণ হচ্ছে, প্রথমদিকে সিএলটি মানে এক ধরনের ভাষাগত আন্দোলন যাতে ভাষাবিদরা কথা বলার ওপর বেশি জোর দিয়ে বোঝাতেন। ভাষা ব্যবহারকারীদের কাছে শ্রেণিকক্ষের বাইরে ভাষার ব্যবহার মানেই হচ্ছে কথা বলা বা মৌখিক ভাষার ব্যবহার। আবার সিএলটির ওপর প্রতিষ্ঠিত পুস্তকগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভাষা ব্যবহার করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে যেখানে তারা নিয়োজিত থাকবে কথা বলা নিয়ে এবং শিক্ষকদের কথা বলার সময় শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক কম হবে। তাই শিক্ষকদের কাছেও মনে হয়েছে যে, সিএলটি মানে শুধু কথা বলে কমিউনিকেট করা। ভাষার যে অন্য আরও তিনটি স্কিল রয়েছে সেগুলো নিয়ে খুব একটা কথা বলেন না অনেক শিক্ষক।

আবার অনেক শিক্ষকের কাছে কমিউনিকেটিভ ইংরেজি মানে গ্রামার না শেখা বা গ্রামার না শিখে ইংরেজি শেখানোর পদ্ধতি। কেন তাদের এই ধারণা? সিএলটিতে গ্রামারের নিয়ম-কানুন শেখানো হয় না। গ্রামারের ওপর প্রশ্ন তৈরি করা হয় না। গ্রামারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই। অথচ সিএলটি গ্রামার নিয়ে শুধু আলোচনাই করে না, গ্রামার কীভাবে কাজ করে তাও দেখিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘ফিল ইন দ্যা গ্যাপস উইথ এ্যান্ড উইথআউট ক্লুস’। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং সম্ভবত ধ্বংসাত্মক ধারণা হচ্ছে সিএলটি মানে গ্রামার না শেখা। এর একটি কারণ হচ্ছে, ফলিত ভাষাবিদরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, এক্সপ্লসিট গ্রামার পড়ানো বাদ দেয়া উচিত। কারণ একজন ভাষা ব্যবহারকারী গ্রামারের নিয়ম ধরে ধরে বাস্তব জীবনে ভাষা ব্যবহার করতে পারে না। এটি একটি জটিল অবস্থা। ভাষার গ্রামার অবচেতনভাবে শিখতে হবে। কাজেই বুঝতে হবে যে, গ্রামার বাদ দেয়া অবশ্যই সিএলটির কোনো উল্লেখযোগ্য অংশ নয়। এটিও সবাইকে বুঝতে হবে বা সহজে অনুমেয় যে, গ্রামার বা ভাষার গঠনের ওপর যখনই বেশি জোর দেয়া হয় তার অর্থই হচ্ছে স্বাভাবিক বা প্রকৃতিগতভাবে ভাষা ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। একটি ক্লাসের কিছু অংশ গ্রামারের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। তবে গ্রামারের নিয়ম মুখস্থ করার জন্য নয়। শিক্ষকের গ্রামারের নিয়ম বলার চেয়ে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে শিক্ষার্থী কর্তৃক গ্রামার আবিস্কার করাই হচ্ছে সিএলটির কথা। ভাষা ব্যবহারের নতুন নতুন দিকের সাথে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হবে এবং ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করবে।

ল্যাংগুয়েজ অ্যাওয়ারনেস কথাটি বর্তমান যুগে বেশ প্রচলিত। এর অনেক ধরনের ব্যাখ্যা আছে। শিক্ষার্থীরা টেনস পড়া শুরু করে সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও টেনস পড়ে, উচ্চ-মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষার্থীরা টেনস পড়ে; কিন্তু টেনস আর শেষ হয় না। শিক্ষার্থীরা টেনস-এর ধারণাকে বাস্তবে ব্যবহার করতে পারছে না, ভুল লিখেই চলছে। গ্রামারের নিয়ম মুখস্থ করার মারাত্মক ও দীর্ঘদিনের প্রবণতা চলে আসছে। ভাষা ব্যবহার করার জন্য অর্থাৎ স্পিকিং, লিসেনিং কিংবা রাইটিং স্কিল উন্নত করার জন্য তারা আবার কোচিঙেও ভর্তি হয়। তার অর্থ কী? এতদিন যে টেনস বা গ্রামারের অন্যান্য নিয়ম শিখে এসেছিল, তা বাস্তবে ব্যবহার করা হচ্ছে না বা করতে পারছে না। ল্যাংগুয়েজ অ্যাওয়ারনেস হচ্ছে দেখা এবং আবিস্কার করার মাধ্যমে গ্রামার শেখানো। আমরা গ্রামারের নিয়ম যেভাবে মুখস্থ করা বা করানো নিয়ে ব্যস্ত থাকি, সেটি করা বিজ্ঞানসম্মত নয়।  টিচিং এবং লার্নিং-এর ক্ষেত্রে ইনডাকটিভ মেথড ব্যবহার করা ভালো। আলাদা এবং বিচ্ছিন্নভাবে গ্রামার না শিখিয়ে কনটেক্সট থেকে এবং অথেনটিক উপায়ে গ্রামার শেখাতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে গ্রামার এবং ইংরেজি কাজে লাগাতে পারবে। গ্রামার না শিখে কমিউনিকেটিভ ইংরেজি শেখা বা শেখানো কথাটি ঠিক নয়।

সিএলটি মানে জুটিতে বা দলে কাজ করা। শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে যা কিছুই করান না কেন, এই বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা শুধু জুটিতে বা দলে কাজ করার মাধ্যমেই কমিউনিকেশন দক্ষতা অর্জন করে।  সিএলটিতে শিক্ষককে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। অনেকে মনে করেন, সিএলটিতে শিক্ষককে দ্রুত কথা বলতে হয়, অনেক কথা বলতে হয়। আসলেই কি তাই? এগুলো অনেকটাই অমূলক ধারণা। একথা ঠিক যে, শিক্ষকদের ইংরেজি বলা থেকেই শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বলা শিখবে। শিক্ষার্থীরা যদি কথা বলা শিখতেই চায়, তাহলে তাদের বলার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের প্রচুর ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। যেমন, আমরা যদি শিক্ষার্থীদের ছবি আঁকা শেখাতে চাই তা হলে অবশ্যই তাদের ছবি আঁকতে দিতে হবে। শিক্ষক বোর্ডে সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকলেই শিক্ষার্থীরা ছবি আঁকতে পারবে না। তবে শিক্ষক ভালো আঁকলে শিক্ষার্থীরা ভালো আঁকার জন্য মোটিভেটেড হবে এবং উৎসাহবোধ করবে। একইভাবে শিক্ষার্থীদের নাচ শেখাতে হলে তাদের নাচতে দিতে হবে। সিএলটি একটি অ্যাপ্রোচ, মেথড নয় যে নির্দিষ্ট কিছু কিছু নিয়মকানুনের বাইরে কিছু করানো যাবে না। এখানে শিক্ষকের যথেষ্ট স্বাধীনতা রয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখানোর জন্য, ইংরেজি বাস্তবে ব্যবহার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করাতে পারেন, বিভিন্নভাবে করাতে পারেন। এটিই হচ্ছে অ্যাপ্রোচ। আর মেথড হলো, ঠিক যেভাবে করানোর কথা ঠিক সেভাবেই করাতে হয়।

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

জনপ্রিয় নিবন্ধ

প্রাথমিক স্তরে ভাষা শেখা : বিষয় – বাংলা

ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা...

আগে ইংরেজি গ্রামার শিখবো, নাকি ভাষা শিখবো?

কোন ভাষার গ্রামার হলো ঐ ভাষার গঠন প্রকৃতি যার...

শিক্ষাব্যবস্থার হালচাল

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা : পিএইচডির পর কী?

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে...

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা

ক্যাডেটসমূহ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।...

আরও কিছু লেখা

অধিক

    শিক্ষাব্যবস্থা: আগামী সরকারের প্রতি একজন অভিভাবকের আবেদন

    শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে-জাতির শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত, সেই জাতি...

    বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা: পর্ব ২

    ভারতের ইউজিসি ২০১৮ সাল থেকে ঠিক করেছে যে ওয়ার্ল্ড...

    স্বায়ত্তশাসন নামক মৃতদেহের নখ এবং ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত অভিন্ন নীতিমালা

    পরেশ চন্দ্র বর্মণ লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও ইউজিসির প্রস্তাবিত...

    বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা: পর্ব ৬

    বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অন্যান্য পাবলিক সংস্থা যেমন বিমান...

    ক্যাডেট কলেজে বর্ধিত টিউশন ফি মেধাবীদের পড়াশুনায় যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়

    ক্যাডেট কলেজ একটি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে বর্ধিত টিউশন...

    পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ও বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা

    সারাফ আফরা সালসাবিল লিখেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ও বিকল্প...

    একাডেমিক স্বাধীনতা

    একাডেমিক স্বাধীনতা কী? একাডেমিক স্বাধীনতা কী এর সংজ্ঞা সঠিকভাবে দেওয়া কিছুটা...

    ফাদার পিশোতো : একজন মহান মানুষকে নিয়ে স্মৃতিচারণ

    জাহিদুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করেছেন ফাদার পিশোতোকে নিয়ে ‘৯৪ সালের কোনো...

    প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

    নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
    বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।