শিক্ষকরা নতুন বই পড়ানোর জন্য এনসিটিবি থেকে পায়নি কোন টিচার গাইড। নেই তাদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে প্রজেক্ট থেকে ডাক পড়ে।

বর্তমান সরকার ২০১০ সাল থেকে জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে এবং নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য জেএসসি পাশের সার্টিফিকেট অত্যাবশ্যক। এ কারণে শিক্ষাজীবনের এই দ্বিতীয় পাবলিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ পরীক্ষায় ইংরেজি এবং গণিতের ফলাফল পুরো পরীক্ষা পাশের হারের ওপর প্রভাব ফেলে মারাত্মকভাবে। এ দুটো বিষয়ের ওপরই নতুন কারিকুলামে বই তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু সমস্যা থেকে  গেছে ইংরেজিতে কী ধরনের প্রশ্ন হবে তা নিয়ে আর গণিতে বিশেষ করে জ্যামিতি অংশে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে পারবে কিনা। বিষয়টি বিলম্বে হলেও শিক্ষাবোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তারা এই দুই বিষয়ের সিলেবাস পরিবর্তন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছে। নয়টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন ‘বর্তমান সিলেবাসে জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে ফলাফলে ধ্বস নামবে। বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজি সিলেবাস পরিবর্তন করা না হলে ফলাফলে বিরাট পার্থক্য দেখা যাবে পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায়’।

২৮,০০০ স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে প্রায় বিশ লাখ শিক্ষার্থী এবার জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। পরীক্ষা শুরু হবে ৪ নভেম্বর। বোর্ড কর্তৃপক্ষের ১৬ আগস্ট থেকে প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শুরু করার কথা অথচ ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এখনও জানে না বোর্ড প্রশ্নপ্রত্র কেমন হবে। এই দুই বিষয়ের শিক্ষকরা বারবার বিভিন্ন ফোরামে দাবি করে আসছেন সিলেবাস পরিবর্তন করার। এই পাবলিক পরীক্ষায় এসএসসির মতো গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পাশের ওপর মূলত পাশের হার নির্ভরশীল। রচনামূলক প্রশ্ন যেমন জ্যামিতিতে নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছেন ৪০ মিনিটে ৪০টি বহুনির্বচনী প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও সম্ভব নয়। প্রশ্নপত্র ক্রিয়েটিভের নামে যা করা হয়েছে তার সাথে শিক্ষকদেরই এখনও ভালো পরিচিতি নেই, শিক্ষার্থীদের তো দূরের কথা।

পূর্ববর্তী ইংরেজি টেক্সট বইয়ে পাঁচটি ইউনিট এবং ৭৫টি লেসনসহ ১৫০ পৃষ্ঠা সমৃদ্ধ ছিল। নতুন টেক্সট বইয়ে ৯টি ইউনিট, ৫৬টি লেসন এবং ১২০ পৃষ্ঠা আছে। কারণ হিসেবে এনসিটিবি উল্লেখ করেছিল যে, বইয়ের বোঝা কমিয়েছে তারা। অথচ বোঝা কমানো হয়নি বরং বাড়ানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের প্রশ্নের ধরন সিলেবাসে বা বইয়ের সাথে সন্নিবেশ করা হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীরা হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা সঠিক কোনো গাইডলাইন পায়নি কীভাবে, কী ধরনের প্রশ্ন হবে। এ বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হলে পত্রিকামারফত জানলাম মে, ১৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় য়ে, ইংরেজি প্রশ্নপত্রের কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইংরেজিতে তিনটি আনসিন প্যাসেজের পরিবর্তে দুটি প্যাসেজ থাকবে। তিনটি প্যাসেজই বাইরে থেকে থাকার কথা ছিল কিন্তু এখন দুটির মধ্যে একটি থাকবে বই থেকে, আরেকটি বাইরে থেকে। এ সিদ্ধান্ত প্রশংসীয় কিন্তু সিন প্যাসেজ অর্থাৎ বইয়ের প্যাসেজ থেকে কী কী ধরনের প্রশ্ন থাকবে আর আনসিন প্যাসেজ থেকে কোন কোন আইটেম থাকবে তা কিন্তু এখনও বলা হয়নি; অথচ পরীক্ষার বাকি মাত্র দুই মাস। এমতাবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অতি দ্রুত ইংরেজি প্রথম এবং ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের সঠিক মডেল বা ধারা পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট, রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমে এনসিটিবি কিংবা বোর্ড কর্তৃপক্ষ যাতে প্রকাশ করেন সে জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনে দুর্যোগ নেমে আসার সম্ভাবনা। সরকার তার পূর্ববর্তী বছরগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য নিশ্চয়ই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করি। পরে যাতে এমনটি করতে না হয় যে, পরীক্ষা দিতে পারেনি অথচ পাশ করাতে হবে- এটি করতে গেলে আর এক ধরনের বুমেরাং হবে সবার জন্য।

শিক্ষকরা নতুন বই পড়ানোর জন্য এনসিটিবি থেকে পায়নি কোন টিচার গাইড। নেই তাদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে প্রজেক্ট থেকে ডাক পড়ে। প্রশিক্ষণের পরে শিক্ষকরা কতোটা ক্লাসরুমে ব্যবহার করছেন তা মনিটরিং-এর জন্য উন্নত বা কার্যকর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। প্রথম থেকেই স্যাম্পল প্রশ্ন এবং গাইড বই সরবরাহ করা হলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কারুর অবস্থাই এত খারাপ হতো না। আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস বিষয়ে স্কুলে কোনো শিক্ষক নেই অথচ ৫০ নম্বরের ব্যাধতামূলক বিষয় হিসেবে পরীক্ষা হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে খাতা পরীক্ষণের কোনো শিক্ষক নেই। অন্যান্য শিক্ষক দ্বারা এগুলো মূল্যায়ন করালে তা সঠিক হবে না। বেসরকারী শিক্ষক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম রনি বলেছেন, “শিক্ষক ছাড়া আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস বিষয় চালু করা এক ধরনের ফাউল প্লে এবং ২০ বিশ লাখ শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলা”। এ ক্ষেত্রে সরকার যেটি করতে পারে, তা হচ্ছে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটের শিক্ষক আছেন, তাদের দ্বারা জেলায় জেলায় অন্যান্য শ্ক্ষিকদের জন্য ওয়ার্কশপ আয়োজন করা যাতে তারা খাতা দেখা এবং বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পড়ানোর জন্য একটি গাইডলাইন দিতে পারেন। আর দেশের সব পত্রিকাতে এসব গাইডলাইন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। চারু ও কারুকলা বিষয়ে পরীক্ষার সময় আধঘণ্টা বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়েছে। তবে গণিতের ক্ষেত্রে সময় ঠিকই রাখা হয়েছে। এখন পরীক্ষার ফলই বলে দেবে সিদ্ধান্তটি কেমন হয়েছে।

Sending
User Review
0 (0 votes)

লেখক সম্পর্কে

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি সাবেক ক্যাডেট কলেজ, রাজউক কলেজ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তিনি ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্তব্য লিখুন