ফান্ডিং পাওয়া নিয়ে আগের পর্বে লিখেছিলাম। ফেলোশিপ বা টিচিং অ্যাসিস্টান্টশিপ ছাড়া ফান্ডের অন্য উৎস হলো প্রফেসরদের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশিপ পাওয়া। প্রফেসরেরা সরকারি-বেসরকারি নানা উৎস হতে গবেষণার জন্য অনুদান পেয়ে থাকেন, সেই প্রকল্পে কাজ করার জন্য ছাত্র দরকার তাদেরও। কাজেই অনেক সময় প্রফেসরদের ইমেইল করে হাত করা গেলে ফান্ড পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দেশে থেকে সেটা কীভাবে করবেন? এখানেই আসছে সুলিখিত ইমেইলের ভূমিকা।
কোনো প্রফেসরের ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে প্রকাশনার তালিকা, সব ঘেঁটে দেখুন। প্রফেসরের গবেষণা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। তারপর ভেবে দেখুন, আপনার পছন্দের কোন বিষয়ের সাথে সেটা মিলছে। এসব পড়াশোনা করে তারপর ঠিক করুন কী বিষয়ে আলোচনা করতে লিখবেন।
প্রথমেই আসা যাক, ইমেইলের শিরোনাম ও ধাঁচ নিয়ে। অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু ছাত্ররা একটা বড় ভুল করে লিখে করেই সরাসরি বলে, আপনার কাছ থেকে ফান্ড চাই, অথবা আপনার গ্রুপে ঢুকতে চাই। এরকম কয়েকশো ইমেইল প্রতিবছর একেকজন প্রফেসর পান। কাজেই টাকা দিন বললেই কাজ হবে, সেই আশা করাটা বাতুলতা মাত্র।
সেজন্য সরাসরি শুরুতেই ফান্ডের কথা না বলে বরং রিসার্চ নিয়ে বলা ভালো। প্রফেসরের গবেষণার এলাকা বা তাঁর কোনো গবেষণাপত্র নিয়ে প্রশ্ন করে শুরু করতে পারেন। কয়েকবার আলোচনার চালাচালি করে তারপর তার গ্রুপে ছাত্র নেয়া হবে কি না, সেটা তখন বলতে পারেন। আপনার মূল লক্ষ্য হবে যাকে পাঠাচ্ছেন, তার আস্থা অর্জন করা আর আপনাকে ছাত্র হিসাবে নিলে ভালো হবে, এই ধারণা দেয়া।
অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার করার জন্য একটা আলাদা ইমেইল খুলুন। অনেকেই “কুল” হওয়ার জন্য বিদঘুটে সব ইমেইল খুলে, যেমন কুলগাই২১২@জিমেইল, কিংবা সুইটগার্ল৫৪৪ ইত্যাদি। এধরনের ইমেইল থেকে মেইল পাঠালে সেই ছাত্র/ছাত্রীকে যে কারো পাত্তা দেয়ার সম্ভাবনা কম।
ইমেইলে আরেকটা বড় ভুল ছাত্ররা করে, তা হলো পাঠাবার সময়ে ভাষা ও বানানের দিকে খেয়াল না করা। কেবল বাংলাদেশ না, বিদেশের নানা জায়গার ছাত্ররাও এই কাজ করে। আমি কোনো ছাত্রের ফান্ড না দিলেও কিছু ইমেইল পেয়েছি চীনা ছাত্রদের থেকে। এমন এক ছাত্র ইমেইল করলো, আমার সাথে কাজ করতে চায়, কিন্তু মেইলের ভিতরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা, মানে কপিপেস্ট করে একই মেইল শখানেক জায়গায় পাঠিয়েছে। এভাবে ইমেইল করলে তা ধরে ফেলাটা খুব সহজ।
সবশেষে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা ব্যাপার বলি, অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার করার জন্য একটা আলাদা ইমেইল খুলুন। অনেকেই “কুল” হওয়ার জন্য বিদঘুটে সব ইমেইল খুলে, যেমন কুলগাই২১২@জিমেইল, কিংবা সুইটগার্ল৫৪৪ ইত্যাদি। এধরনের ইমেইল থেকে মেইল পাঠালে সেই ছাত্র/ছাত্রীকে যে কারো পাত্তা দেয়ার সম্ভাবনা কম।
কাজেই খুলুন নিজের নামে, সবচেয়ে ভালো হয় নিজের নামের প্রথমাংশ ডট শেষাংশ, এভাবে খুলতে পারলে। যেমন, আপনার নাম আবদুল করিম হলে আবদুল.করিম@জিমেইল, তা না পেলেও আবদুল.করিম৫@জিমেইল এভাবে খুলতে পারেন। মেইল পাঠাবার আগে বানান খেয়াল করে নিন, ব্যকরণ ঠিক আছে নাকি দেখুন।
লেখক পরিচিতি
ড. রাগিব হাসান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্যা ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম-এ অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করছেন।
আরেকটু যোগ করি,
প্রফেসরদের ইমেইল করার সময়ে বিদ্যা জাহির করার জন্য জটিল অপ্রচলিত ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করবেন না। জিআরই পড়ার সময়ে এরকম অনেক খটোমটো শব্দ শেখা হয়, সেগুলা কিন্তু ভুলেও ইমেইলে ব্যবহার করতে যাবেন না। তাতে স্মার্ট দেখানোর বদলে বেখাপ্পা লাগবে।
স্যার, একটা প্রশ্ন ছিল। আমেরিকাতে কি IELTS এর কোন মূল্যই নাই ?