ভাষাশিক্ষা ও সাহিত্যের মধ্যে সম্পর্ক : নতুন শিক্ষাক্রমে ইংরেজি শেখাতে সাহিত্য কতোটা ব্যবহারযোগ্য?

সাহিত্য ছাড়া ভাষাশিক্ষা অসম্পূর্ণ। সাহিত্যপাঠ মানুষকে শুধু শিক্ষিতই করে না, আনন্দও দান করে। নতুন শিক্ষাক্রমে ইংরেজি শেখাতে সাহিত্য কতোটা ব্যবহারযোগ্য, সেই আলোচনা এই নিবন্ধের মূল বিষয়।

সাহিত্যের মাধ্যমে ভাষাশিক্ষা বা শেখানো শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করে, অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। সাহিত্যপাঠ একজন পাঠককে স্থায়ী আনন্দ দান করে যদি তিনি পরিশ্রম করে, গভীর একাগ্রতার সাথে সেটি পাঠ করেন।

সাহিত্য সৃষ্টিই হচ্ছে ভাষা থেকে। একটি ভাষার পূর্ণ ও ফলিত রূপ হচ্ছে সাহিত্য। কাজেই যিনি নিজ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য একটি ভাষা শিখছেন বা ভাষাশিক্ষা যার মূল উদ্দেশ্য, তাকে ওই ভাষার সাহিত্য পাঠ করতে হয় ওই ভাষার সংস্কৃতি ও ব্যবহৃত রূপের সাথে সরাসরি পরিচিত হওয়ার জন্য।

ভাষা এমন একটি বিষয় যা ধরে ফেলতে হয়, নিজে ব্যবহার করতে হয়। ভাষাশিক্ষা তাই আলাদা কিছু নয় বা ভাষা শেখানোর বিষয় নয়, নিজেকেই শিখতে হয়, পারিপার্শ্বিকতা থেকে শিখতে হয়। আর তাই সাহিত্য যদি ভাষাশিক্ষা বা শিক্ষাক্রমের অংশ হিসেবে রাখা হয়, তাহলে ভাষা শেখাটা আরও উন্নত হয়, ভাষাশিক্ষা বাস্তবধর্মী হয়, আরও আনন্দময় হয়।

আর তাই আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে ইংরেজি বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই কিছুটা সাহিত্যের পাঠ সংযোজন করা হয়েছে। আমাদের ইংরেজি শিক্ষকরা এটি নিয়ে বেশ ঝামেলায়ই আছেন (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া), কারণ আমাদের শিক্ষার্থীরা বহু বছর ধরেই ইংরেজিতে মারাত্মক ধরনের দুর্বল।

সাহিত্য সৃষ্টিই হচ্ছে ভাষা থেকে। একটি ভাষার পূর্ণ ও ফলিত রূপ হচ্ছে সাহিত্য। কাজেই যিনি নিজ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য একটি ভাষা শিখছেন, তাকে ওই ভাষার সাহিত্য পাঠ করতে হয় ওই ভাষার সংস্কৃতি ও ব্যবহৃত রূপের সাথে সরাসরি পরিচিত হওয়ার জন্য।

তাদের পক্ষে ইংরেজি কবিতা, নাটক বুঝতে পারা এবং সেটি দিয়ে তাদের ইংরেজি ভাষাশিক্ষার চেষ্টা করা বাস্তবিক পক্ষেই বেশ কঠিন এবং কিছুটা অবাস্তবধর্মীও মনে হয়। তাই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও কিছুটা গবেষণা করে সেটি এখানে উপস্থাপন করা হলো।

আমাদের মনে রাখতে হবে, নতুন শিক্ষাক্রম যেভাবেই হোক না কেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ইংরেজি কিন্তু আমাদের পড়াতেই হবে। পড়ানোর উপকরণ যাই দেয়া হোক না কেন, ভাষাশিক্ষায় সেটি শিক্ষার্থীদের জন্য কতোটা উপযোগী, কতোটা আনন্দময় করা যায়, আমাদের সেটি নিয়ে ভাবতে হবে, চেষ্টা করতে হবে এবং পদ্ধতি বের করতে হবে।  

ভাষার মুল দক্ষতা যেমন শোনা, বলা, পড়া ও লেখা এবং ভাষাগত ব্যাপ্তি যেমন শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ ও উচ্চারণ শেখানোর ক্ষেত্রে সাহিত্যের ব্যবহার একটি পদ্ধতি যা অনেকক্ষেত্রে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, আমরা তাতে অংশ নিচ্ছি না কেন? শিক্ষার্থীদের নিজেদের ভালোভাবে বুঝতে এবং তাদের চারপাশের জগতকে জানতে ও বুঝাতে সাহিত্যের ব্যবহার সুবিধা করে দিতে পারে।

সাহিত্য যেহেতু ভাষা থেকেই সৃষ্ট, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য শব্দ, শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের গঠনাবলী সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে, যা তাদেরকে সঠিকভাবে ভাষাশিক্ষা ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে প্রভূত সহায়তা করে থাকে। সাহিত্যের মূল্য লুক্কায়িত রয়েছে সংস্কৃতির নির্যাসের মধ্যে।

তবে, ভাষাশিক্ষার সময় সাহিত্য শেখার বিশেষ করে একটি বিদেশি ভাষা শেখা বা শেখানোর ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো হলো— ভাষাগত সমস্যা। শিক্ষার্থীদের বয়স ও শ্রেণিউপযোগী সাহিত্য বাছাই করতে ভুল হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছুই কিংবা কিছুই বুঝবে না। অধিকাংশ শিক্ষার্থী যদি না বুঝে তাহলে তো সেই ভাষাশিক্ষার মুল্য নেই।

সাহিত্যের যে অংশটুকু বাছাই করা হবে সেটুকু হতে হবে সহজ এবং শ্রেণিউপযোগী। অর্থাৎ সাহিত্যের আকার খুব বড় হলে এবং বিষয় বেশি গুরুগম্ভীর হলে অনেক শিক্ষার্থী বুঝবে না। আবার পুরো অংশটি না দিলে শিক্ষার্থীরা মূলভাব বুঝবে না, পরিপ্রেক্ষিত বুঝবে না, প্লট বুঝবে না, গল্পের সামনে এগিয়ে কষ্টকর হবে।

সাহিত্যের যে অংশটুকু বাছাই করা হবে সেটুকু হতে হবে সহজ এবং শ্রেণিউপযোগী। অর্থাৎ সাহিত্যের আকার খুব বড় হলে এবং বিষয় বেশি গুরুগম্ভীর হলে অনেক শিক্ষার্থী বুঝবে না। আবার পুরো অংশটি না দিলে শিক্ষার্থীরা মূলভাব বুঝবে না, পরিপ্রেক্ষিত বুঝবে না, প্লট বুঝবে না, গল্পের সামনে এগিয়ে কষ্টকর হবে।

আর সাংস্কৃতিক কঠিনত্ব তো আছেই। আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমে ইংরেজি বিষয়ে যে কবিতা ও নাটক নির্বাচন করা হয়েছে এবং যেভাবে করা হয়েছে সেটি কতটা শ্রেণিউপযোগী হয়েছে, আমি সে আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে, যেভাবেই করা হোক না কেন, একজন ইংরেজি শিক্ষক সেগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভাষাশিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে পারেন, তাদের বিশ্লষণধর্মী ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন, সেই আলোচনাই এখানে করা হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে ইংরেজি বইতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে জুলিয়া কার্নির Little Things এবং Little Red নির্বাচন করা হয়েছে। Little Things একটি অনুপ্রেরণামূলক কবিতা। বর্তমানে বেঁচে থাকার গুরুত্ব এবং ছোট ছোট মহৎ ও সৎ কাজের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে কবিতাটিতে।

জুলিয়া কার্নি কবিতায় বলতে চেয়েছেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় পৃথিবীকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে, প্রতিটি বড় কাজের পেছনে ছোট কাজের যে গুরুত্ব কতোখানি, সেটি আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনা এবং আমাদের কৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, মহৎ এবং সহানুভূতিশীল কাজের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি একটি সুন্দর কথা, একটি সহানুভুতির কথা অন্যের ওপর এবং সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

আর এভাবেই আমাদের নিজেদের, চারপাশের মানুষদের এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে বাসযোগ্য স্থানে পরিণত করায় বিশাল ভূমিকা পালন করে। কবি এখানে সরাসরি প্রকৃতির উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির কণাই সাগর ও মহাসাগর গড়ে তোলে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিশাল জমি, বিশাল মরুভূমি তৈরি করে। আমাদের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলো মাস, বছর ও যুগ তৈরি করে। অতএব, জীবনে ক্ষুদ্র এবং ছোটকে কখনোই এবং কোনওভাবে অবহেলা করতে নেই।

জেসিকা ম্যাকডোনাল্ডের Little Red কবিতায় একটি ছোট মেয়ের সরলতা ও নির্দোষতা এবং একটি নেকড়ের বিশ্বাসঘাতকতার কথা তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে সমাজে ছড়িয়ে থাকা এ ধরনের মানুষ দেখতে পাই।

কেউ সহজ-সরল এবং তাদের সেই সরলতার সুযোগে চতুর ও দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে। লিটল রেড নামের ছোট একটি বালিকা মাথায় লাল টুপি পরে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তার অসুস্থ দাদীমাকে দেখতে যাচ্ছিলো। তার হাতে ছিলো রুটি ভর্তি একটি ঝুড়ি। পথিমধ্যে এক নেকড়ের সাথে তার দেখা।

সে বালিকাটিকে জিজ্ঞেস করল যে, সে কোথায় যাচ্ছে। উত্তরে সে তার সহজ-সরল ভঙ্গিতে তার দাদীমার অসুস্থতা এবং তাকে সে দেখতে যাওয়ার কথা বললো। নেকড়েটি কৌশলে তার কাছ থেকে তার দাদীমার ঘরের সন্ধান নিল। সেখানে গিয়ে সে তার দাদীমা ও তাকে হত্যা করে গলাধকরণ করলো। দুষ্টু লোকদের কাজ এমনই। এখানে আমাদের একধরনের সাবধান হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের ইংরেজি বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডি King Lear সম্পর্কেও একটু ধারণা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, নাটক এক ধরনের সাহিত্যিক গঠন যা মঞ্চে দেখানো হয়। অতএব নাটক পড়ার চেয়ে বেশি দেখার বিষয়।

একটি নাটকে চরিত্র থাকে, কথোপকথন থাকে এবং প্লট থাকে। প্লট হচ্ছে ঘটনার ধারাবাহিকতা অর্থাৎ শুরু, ক্লাইমেক্স ও শেষ এবং সেটি অর্থাৎ ঘটনা কোথায় সংঘটিত হচ্ছে। একটি নাটক কয়েকটি অ্যাক্ট এবং দৃশ্যে বিভক্ত। কিং লিয়ার শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত ট্রাজিক নাটকের মধ্যে একটি যেখানে দেখানো হয় যে, কিং লিয়ার তাঁর তিন কন্যার মধ্যে প্রথম দুই কন্যাকে রাজ্য ভাগ করে দেন এবং তৃতীয় কন্যাকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেন।

কারণ প্রথম দুই কন্যা রাজাকে চাটুকারিতায় তুষ্ট করেন, কিন্তু তৃতীয় কন্যা প্রকৃতপক্ষেই তার বাবাকে ভালবাসতেন; তবে তিনি তা মুখে প্রকাশ করেননি। আর তাই রাজা তাকে সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে নির্বাসনে পাঠান।

কিন্তু রাজার প্রথম দুই কন্যাই তাকে প্রত্যাখ্যন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। ফলে রাজা পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরছিলেন। এ খবর পেয়ে তার তৃতীয় কন্যা কর্ডেলিয়া নির্বাসন থেকে এসে রাজাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন কিন্তু তাদের সবাইকে পরিশেষে মৃত্যুবরণ করতে হয়। শিক্ষার্থীরা এখানে বিশ্বখ্যাত নাট্যকার শেক্সপিয়ারের সাথে এবং তার লিখিত নাটকের সাথে একটু পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের ইংরেজি বিষয়ে সপ্তম শ্রেণিতে Rudyard Kipling-এর If কবিতাটিতে ধৈর্য্য এবং অধ্যবসায় যে জীবনে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেই কথাই বলা হয়েছে। কবিতায় পাঠকদের ধৈর্য্য ধারণ করতে বলা হয়েছে, জীবনে বিফলতাকে গ্রহণ করতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য অধ্যবসায় চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে যে, বিফলতা ও নৈরাশ্যকে গ্রহণ করা এবং দৃঢ় সংকল্প করার মধ্যেই আমাদের সাফল্য নিহিত আছে। আমাদের বিশাল বিশাল অর্জন অনেক সময় নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে, আমরা স্বভাবতই তখন হতাশায় নিমজ্জিত হই। কিন্তু হারানোর বেদনাকে ভুলে নতুন করে আমাদের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। সবকিছু হারানোর পরেও আমরা যদি মনোবল ধরে রাখতে পারি এবং আমাদের সংকল্প যদি থাকে দৃঢ়, তাহলে আমরা সামনে এগুতে পারি, বিজয়ী হতে পারি।

নতুন শিক্ষাক্রমের ইংরেজি বিষয়ে সপ্তম শ্রেণিতে এরপর Doughlas Malloach-এর Be the Best of Whatever You Are কবিতাটি পাঠ্য করা হয়েছে। এখানে কবি আমাদের বলেছেন যে, বড় কিছু করতে না পারার হতাশায় আমরা যেন সবকিছুতে হাল ছেড়ে না দিই। সফলভাবে বাঁচতে হলে কাজ করে যেতে হবে।

এই কবিতায় সকলের জন্য, বিশেষ করে তরুণদের জন্য বেশকিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে খুবই প্রয়োজন। কবি বলতে চেয়েছেন এবং তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন যে, আমরা যা কিছুই করি সেটিতেই সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

কোনও কাজই অন্যটির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনও কাজ নিয়েই আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত নয় বরং গর্ব করতে হবে। আমরা যে কাজই করি না কেন, সেই কাজকেই মনেপ্রাণে ভালবেসে সর্বোত্তম উপায়ে করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে।

আমরা সবাই নেতা হবো না, নেতা না হয়েও অনেক মহৎ কিছু করা যায়, বড় কিছু করা যায়। এটি চার স্তবকের কবিতা এবং রাইমগুলো হচ্ছে এ বি, এ, বি। এখানে বলা হয়েছে যে, সব মানুষ সবকিছু হবে না, এক হবে না, এক ধরনের হবে না। তবে যে যে-স্থানে আছে, সেটিতে সর্বোচ্চটি হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। সেটিতেই স্বার্থকতা।

পাহাড়ের চূড়ায় পাইন গাছের মতো শক্ত হতে না পারলে ক্ষতি নেই, উপত্যকায় ছোট ছোট তৃণআকারে জন্মে উচ্চমার্গীয় হলেই হলো। জঙ্গল না হয়ে ঘাস হলেও যেন সবোৎকৃষ্টটি হই। মহাসড়ক হতে না পারলেও ছোট একটি মেঠো পথ হতে পারি, সূর্য হতে না পারলে তারকা হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যা হয়েছে, যতটুকু হয়েছে, সেইটুকুতেই শ্রেষ্ঠ হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে এই কবিতার মাধ্যমে।

এবং Dr. Seuss-এর My Books কবিতায় কবি শিশু ও বইয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা বর্ণনা করেছেন। বই একটি শিশুর খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। যখন একটি শিশু কোনো মজার বই পড়ে, সে তার কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায়। সে এই বইয়ের মধ্যেই তার কল্পনার রাজত্ব দেখতে পায়, যেখানে থাকে তার কল্পনার পরীরা এবং তারা তাকে আশ্চর্যজনক দেশে নিয়ে যায়।

বইয়ের প্রতিটি পাতায় সে রূপকথার যোদ্ধা আর বামনদের খুঁজে পায়। আমরা এই কবিতাটি থেকে উপলব্ধি করতে পারি যে, প্রতিটি শিশুরই মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য বই পড়া জরুরি, কারণ বই পাঠককে রাস্তার মতো নতুন ও দুঃসাহসিক কাজের দিকে নিয়ে যায়।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কমেডি As You Like It-এর সাথেও পরিচিত করানো হয়েছে। এখানে ভালোবাসা, বিয়ে এবং আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে।

এটি একটি রোমান্টিক কমেডি যেখানে প্রথম দর্শনেই ভালোবাসা প্রকাশ পায়। এখানকার ডায়ালগগুলো শিক্ষার্থীদের করালে একদিকে যেমন তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে তেমনি ইংরেজি বলারও উন্নতি হবে।

তবে, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বই দেখে পড়তে পারে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষককে বার বার পড়ে তাদের পড়তে বলতে হবে এবং বিশেষ করে যে দু’চারজন একটু ভালো পড়তে পারে, তাদের দ্বারা আগে পড়াতে হবে।

শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডি ও কমেডি নিয়ে গভীরে গেলেও তারা অনেকেই বুঝবে না। সেক্ষেত্রে সংক্ষেপে কমেডি মানে হচ্ছে হাস্যরসাত্মক নাটক আর যেখানে খুনোখুনির বিষয় আছে, সেটি হচ্ছে ট্রাজেডি বা বিয়োগান্তক নাটক— এভাবে বলা যেতে পারে।

অষ্টম শ্রেণিতে রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডওয়ার্থের I Wandered Lonely As a Cloud, রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর True Royalty, উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কবিতা Shall I Compare Thee to a Summer’s Day? এবং তাঁর নাটক The Merchant of Venice নির্বাচন করা হয়েছে। রবার্ট ফ্রস্ট-এর The Road Not Taken এবং এমিলি ডিকিনসনের Success Is Counted Sweetest কবিতার সাথে পরিচিত করানো হয়েছে।

I Wandered Lonely As a Cloud কবিতাটি চার স্তবকের। অষ্টম শ্রেণিতে দুটি স্তবক নির্বাচন করা হয়েছে। কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, কবি একদিন উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছিলেন যাকে তিনি একখণ্ড মেঘের সাথে তুলনা করেছেন। এটি একটি সিমিলি।

শিক্ষার্থীরা সিমিলির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং সিমিলির ব্যবহার দেখতে পায়। কোনো বিষয়কে আরও ভালোভাবে বুঝানোর জন্য কবি-সাহিত্যিকরা সিমিলি ব্যবহার করে থাকেন। কবি ড্যাফোডিল ফুলের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে পড়েছেন এবং অসংখ্য ফুল হাসছে, নাচছে এবং মাথা দোলাচ্ছে।

এটি আবার এক ধরনের পারসোনিফিকেশন অর্থাৎ মানুষের মতো ড্যাফোডিলস ফুলগুলো মাথা নাড়াচ্ছে। ড্যাফোডিল ফুলের এই সৌন্দর্য কবিকে স্থায়ী শান্তি এনে দিয়েছে। তিনি যখন মনমরা অবস্থায় একা একা বিছানায় শুয়ে থাকেন, তখন ড্যাফোডিলসের সৌন্দর্য, মাথা ঝাঁকানো ও নেচে যাওয়া কবির মনে এক অপূর্ব আনন্দের সঞ্চার করে।

রুডিয়ার্ড কিপিলিং-এর একটি অসাধারণ কবিতা হচ্ছে True Royalty, যেখানে নম্রতা, ভদ্রতা এবং জীবনের সাধারণ সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যগুলোকে উপভোগ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আমরা যতো ব্যস্ত কিংবা যতো গুরুত্বপূর্ণ হই না কেন, জীবনের এসব ক্ষুদ্র ও সামান্য সুখগুলোকে উপভোগ করা শিখতে হবে। সেবার রাণী বিলকিস এবং এশিয়ার রাজা সলোমনের কথা বলা হয়েছে। তাঁরা প্রজাপতির সাথে কথা বলতে পারতেন, তাদের ভাষা বুঝতেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারতেন।

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের Shall I Compare Thee to a Summer’s Day? একটি সনেট অর্থাৎ ১৪ লাইনের কবিতা, যেখানে কবি বলেছেন সৌন্দর্যের ক্ষমতা যা সাধারণ তুলনাকে অতিক্রম করতে পারে। গ্রীষ্মের দিনের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য হারিয়ে যায়, তবে সেই সৌন্দর্যের বর্ণনা, তার লিখিত রূপ কিন্তু হারিয়ে যায় না।

সেই সৌন্দর্য কবিতার মাধ্যমেও উপভোগ করতে পারে। রূপকের মাধ্যমে কবি মানুষের যৌবনের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করেছেন যা গ্রীষ্মের দিনের মতো ক্ষণস্থায়ী। গ্রীষ্মের দিনের মতো যৌবনের সৌন্দর্যও উজ্জ্বল ও ঝকঝকে। তবে তিনি যৌবনের সৌন্দর্য্যকে চিরদিনের জন্য তার সনেটে স্থান দিয়েছেন।

অর্থাৎ বুঝা যাচেছ যে, কবিতায় ভালোবাসা এবং সৌন্দর্য চিরদিনের জন্য বন্দী করে রাখা যায়। এমনকি মানুষ যদি বৃদ্ধ হয় এবং মারাও যায়, কবিতার লাইনে, কবিতার চরণে তাকে স্থান দেয়া যায় এবং তিনি মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকেন।

ইউলিয়াম শেক্সপিয়ারের দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকে অ্যান্টোনিও নামের এক বণিক তার প্রিয় বন্ধু বাসানিওর জন্য শাইলক নামে এক ইহুদি মহাজনের কাছ থেকে অর্থ ঋণ নেন। অ্যান্টোনিও একজন ভালো ব্যবসায়ী। তার জাহাজগুলো সমুদ্রে থাকায় ওই ইহুদির কাছ থেকে এক শর্তে ঋণগ্রহণ করেন।

এই ইহুদি ছিলেন নীতিহীন, সুদখোর ও কুটবুদ্ধিসম্পন্ন। অ্যান্টোনিও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাসানিও অর্থের অভাবে তার পছন্দের মেয়ে পোর্শিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছিলেন না। বন্ধুর মনোবাসনা পূরণ করার জন্যই তিনি শাইলকের কাছ থেকে বন্ধুর জন্য অর্থ ধার নেন।

তবে কঠিন এক শর্ত আরোপ করেন ইহুদি ব্যবসায়ী। বাসানিও যদি সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে না পারে, তবে তার শরীরের এক পাউন্ড মাংস কেটে দিতে হবে। অর্থ ধার নিয়ে অ্যান্টোনিও পোর্শিয়াকে বিয়ে করেন এবং টাকা প্রদানের সময়সীমা পার হওয়ায় শাইলক অ্যান্টোনিওর শরীর থেকে এক পাউন্ড মাংস দাবি করেন।

এই কেস আদালত পর্যন্ত গড়ায় যেখানে বিচারক নিজেও এই কাজটি না করার জন্য শাইলককে অনুরোধ করেন, কিন্তু শাইলক অনমনীয় ভাব দেখান যা পোর্শিয়া জানতে পারেন। পোর্শিয়া উকিলের ছদ্মবেশে বিচারালয়ে আসেন এবং শাইলককে শর্ত দিলেন যে, অ্যান্টোনিওর শরীর থেকে এক পাউন্ড মাংস কেটে নিবেন, কিন্তু তাতে এক ফোঁটা রক্তও যাতে বের না হয়, কারণ দলিলে রক্তের কোনো উল্লেখ ছিলো না।

রক্তপাতহীন মাংস কাটা তো অসম্ভব! এতে ধূর্ত শাইলক বিপদে পড়ে যান এবং বিচারে হেরে যান। ছদ্মবেশ, উপস্থিত বুদ্ধি, বন্ধুকে সাহায্য করার মতো বিষয়গুলো এখানে ফুটে উঠে।

আমাদের দুর্বল শিক্ষার্থীদের নাটকের বিষয়বস্তু, শ্রেণিভেদ ও বৈশিষ্টাবলী বুঝাতে গেলে অনেকেই হয়তো বুঝবে না। তবে, প্রথমে গল্পটি তাদেরকে বলা হলে (প্রথমে বাংলায়, পরে একটু একটু বাংলা ও একটু ইংরেজিতে) তারা কিন্তু মজা পাবে। এই গল্প বলার মধ্য দিয়েই তাদের ভাষাশিক্ষা, ব্যাকরণ ও ভাষাগত বিষয়গুলো শেখানোর চেষ্টা করতে হবে।

যেমন, প্রশ্নবোধক বাক্য, নেগেটিভ বাক্য, অতীতকালের ব্যবহার, শাইলককে তাদের কেমন মানুষ মনে হয়, অ্যান্টোনিও বা বাসানিওকে কেমন মনে হয়, কেন মনে হয় ইত্যাদি ছোট ছোট বিষয়গুলো ছোট ছোট বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করার কৌশল শেখানো যেতে পারে। পর্শিয়ার উপস্থিত বুদ্ধি কেমন লাগে? তিনি কেন ছদ্মবেশ ধারণ করলেন?  ইত্যাদি প্রশ্ন যেমন তাদের ভাষাকে উন্নত করবে অর্থাৎ মতপ্রকাশের শক্তি বাড়াতে অন্যদিকে ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণের ক্ষমতাও বাড়াবে।

The Road Not Taken মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কবি রবার্ট ফ্রস্টের ১৯১৫ সালে প্রকাশিত একটি কবিতা, যেখানে কবি আমাদের মনের একটি আবেগের কথা বলেছেন। যেই আবেগের কারণে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি বিশেষ করে যখন একাধিক পথ বা সুযোগ সামনে থাকে।

আমরা বুঝতে পারি না কোন পথটি আমাদের অনুসরণ করা উচিত আর কোনটি নয়। এভাবে আমাদের জীবনে অনেক সুযোগ আসে, অনেক বিকল্প পথের সন্ধান আমরা পাই কিন্তু কোনটি গ্রহন করব আর কোনটি করব না সেই সিদ্ধান্ত সময়মতো ও ঠিকভাবে নিতে পারি না। পরে আমাদের পস্তাতে হয় কিংবা আনন্দিত হতে হয়, কারণ যদি আমরা বিকল্প পথটি ধরতাম, তাহলে হয়তো এভাবে হতো না কিংবা অন্যভাবে হতো। আমরা আসলে কোনোভাবেই জানিনা কোন পথটি বন্ধুর আর কোনটি সমতল।

১৮৬৪ সালে প্রকাশিত গীতিকবিতা হলো Success is counted sweetest, যেখানে বলা হয়েছে যে, যারা কোনোকিছু পাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত বিষয় বা বস্তুটি তাদের কাছে ধরা না দেয়, তারাই বুঝেন যে জীবনে সাফল্য অর্জন করা কতোটা মধুর আর কতোটা আনন্দের! যিনি বিজয় অর্জন করেছেন তার চেয়ে যিনি পরাজিত হয়েছেন তিনি বুঝেন বিজয়ের সুর কতটা মধুর।

নবম শ্রেণিতে আলফ্রেড লর্ড টেনিসনের এর Crossing the Bar, জন কীটসের On the Grasshopper and Cricket, এমিলি ডিকিনসনের Hope is the Thing With Feathers, এস টি কোলরিজের If I Had But Two Little Wings এবং ইউলিয়াম শেক্সপিয়ারের Macbeth নির্বাচন করা হয়েছে।

টেনিসনের কবিতায় মৃত্যুকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করার কথা এবং তার পরবর্তী জীবনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। কবিতায় কবি তাঁর ইহজগত থেকে পরজগতের যাত্রার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন, যেটি সাহিত্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সমুদ্রযাত্রা এবং বালির বাধের রূপক ব্যবহার করা হয়েছে ইহলোক থেকে পরলোকে গমনের যাত্রাকে বোঝানোর জন্য। তিনি বলেছেন, মুত্যু যেহেতু আসবেই, অতএব মৃত্যুকে ভয় করে কোনো লাভ নেই বরং হাসিমুখে আলিঙ্গন করতে হবে। মৃত্যু এক ধরনের শান্তি, সান্ত্বনা এবং মানুষের ধর্মবিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কবি তাই চেয়েছেন নিরাপদে নিশ্চিতে এ পৃথিবী ত্যাগ করতে এবং অনন্তের পথে পাড়ি জমাতে।

কারণ পরপারে মানুষের দেখা হবে সৃষ্টিকর্তার সাথে। মৃত্যু একটি ট্রানজিশন, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী থেকে চিরস্থায়ী জায়গায় যাওয়ার মাঝে অল্প একটু সময় পার করা, অতএব এতে বিষাদগ্রস্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। Crossing the Bar কবিতায় নিয়মিত প্যাটার্নের রাইম স্কিম যেমন এ বি এ বি ব্যবহৃত হয়েছে। 

জন কীটসের On the Grasshopper and Cricket কবিতায় বলা হয়েছে যে, প্রকৃতির সান্ত্বনাদায়ক ভালোবাসা সকল ঋতুতে, সকল আবহাওয়ায় বিরাজমান।

গ্রীষ্মের তাপদাহে যখন পাখিরা গান গাইতে পারে না, শীতের তীব্রতায় যখন জল জমে বরফ হয়ে যায়, ভূমি যখন হিমশীতল হয়ে যায়, তখনও কিন্তু ফড়িং ও ঝিঁঝিপোকা গান গেয়ে চলে। রূপক অর্থে বোঝানো হচেছ যে, প্রকৃতির সৌন্দর্য সর্বদাই বয়ে চলে এবং সৌন্দর্যের অনুভূতি আমাদের কঠিন সময়ে, দুঃসময়েও সান্ত্বনা ও স্বস্তি দিয়ে থাকে।

ডিকিনসন Hope’ is the thing with feathers কবিতায় বলেছেন যে, আমাদের হৃদয়ে আশার বসবাস। এই আশা আমাদের ক্ষমতায়িত করে এবং জীবনে যা কিছু ঘটে সেগুলোকে সহ্য করার ও গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করে।

কবি এখানে একটি পাখিকে দীর্ঘ রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, পাখিটির বসবাস আমাদের আত্মায় এবং সেটি গান গেয়ে স্মরণ করিয়ে দেয় তার উপস্থিতি।

এই পাখিই আমাদের আশা, যা আমাদের উৎসাহ প্রদান করে আমরা জীবনে যতই শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাই না কেন। আত্মার ভেতর এই পাখি গান গায় এমনকি আমরা যখন প্রচণ্ড ঝড়ঝাপটার মধ্যদিয়ে জীবন কাটাই তখনও। এ কারণেই আমরা আশা হারাই না।

এস টি কোলরিজের If I Had But Two Little Wings কবিতায় আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে। এটি ভালোবাসা ও মিলনের আকাঙ্ক্ষার তীব্র প্রতিফলন প্রকাশ করছে। কবিতায় বক্তা কল্পনা করছেন যে, তাঁর যদি পাখির মতো দুটে ডানা থাকতো, তাহলে তিনি উড়ে তার প্রেমিকার কাছে যেতেন।

এই কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষা কল্পনাই থেকে যায়, এবং তিনিও স্থির হয়ে যান। স্বপ্নে তিনি অনুভব করেন যে, তিনি তাঁর প্রিয়জনের কাছে চলে গেছেন; কিন্তু জেগে দেখলেন যে, না তিনি একাই আছেন। কবিতাটিতে আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে অম্লমধুর উত্তেজনা সৃষ্টি করে। আরও বলা হয়েছে যে স্বপ্ন ক্ষণস্থায়ী এবং জাগ্রত অর্থাৎ পৃথিবীর বাস্তবতায় রয়েছে সীমাবদ্ধতা।  

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের Macbeth একটি ট্রাজেডি বা বিষাদময় ঘটনা। এখানে নাট্যকার ভালো ও মন্দের বৈপরীত্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপদসমূহ, অতিন্দ্রিয় শক্তির প্রভাব, বাস্তব এবং অবাস্তবের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং অনুগত এবং অন্যায় এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

মানুষের ঔদ্ধত্য ও ক্ষমতার লোভ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন মনের মধ্যে এমন এক ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয় যা মানুষের জন্য চরম পরিণতি ও ধ্বংস ডেকে আনে।

স্কটিশ জেনারেল ম্যাকবেথ তিনজন ডাইনির ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছেন যে তিনি রাজা হবেন। এভাবে তার মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বীজ বপন করা হলো। এরপর তিনি ও তার স্ত্রী কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মারাত্মক ধরনের পরিকল্পনা করে যাচ্ছিলেন। অসৎ পথে তাঁর এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা তার জীবনে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে।

তিনি একটি সময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ধুরন্ধর ধরনের কাজ পরিহার করতে তার স্ত্রী তাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বলছিলেন যে, ক্ষমতা তাদের কাছেই ধরা দেয় যারা নৈতিকতাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। পরিশেষে ম্যাকবেথ রাজা ডানকানকে হত্য করেন এবং তার স্ত্রীর পরামর্শমতো রাতে ঘুমানোর ড্রেস পরিধান করেন যাতে তাদেরকে নিষ্পাপ মনে হয়। তাই বলা হয়, প্রতারণা ম্যাকবেথের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।

সাহিত্য ব্যবহার করে ইংরেজি ভাষাশিক্ষার ক্লাসে, শিক্ষার্থীদের না বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা এবং অভ্যাসকে   প্রতিস্থাপন করা যায়। একাংক নাটিকা, উপস্থাপনা, ব্যক্তিগত মতামত জানানোসহ পঠিত বিষয়ের বিভিন্ন দিকের ওপর ভাষাশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করানো যায়।

আর এভাবে শিক্ষার্থীরা আলাদা সময় ব্যবহার না করে এবং কম পরিশ্রমে সাহিত্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। ভাষাশিক্ষার জন্য ভাষাবিশেষজ্ঞরা চারটি দক্ষতা যেমন শোনা, বলা, পড়া ও লেখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সাহিত্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই চারটি দক্ষতা শেখানো যায় নতুন বাক্যগঠন প্রক্রিয়া ও নতুন শব্দভাণ্ডারের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে।

ম্যাকয়ে (১৯৯৪) বলেছেন সাহিত্যিক লেখাগুলো প্রতিনিধিত্বমুলক। রেফারেনসিয়াল বা প্রসঙ্গ উল্লেখ করা সাহিত্য তথ্যমূলক যাতে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ কিংবা আনন্দ খুব একটা না থাকারই কথা।

অপরদিকে প্রতিনিধিত্বমূলক সাহিত্য মানুষের আবেগকে আকর্ষণ করে, অতএব এটি মজার এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারে। একটি ভাষাশিক্ষায় চারটি দক্ষতার সাথে পঞ্চম দক্ষতাটি হচ্ছে ওই ভাষার কালচার বা সংস্কৃতি জানা। শোনা, বলা, পড়া ও লেখা ছাড়াও ওই দক্ষতাটি জানতে হয়। তাতে ভাষাশিক্ষায় বেশি আনন্দ পাওয়া যায় এবং ভাষা শেখা সহজ হয়। 

একজন সৎসাহিত্যিক আজীবন একজন নিষ্ঠাবান ভাষাচর্চাকারী। সাহিত্যিক শুধু ভাষা ব্যবহারকারীই নন, ভাষার স্রষ্টাও। প্রত্যেক যুগস্রষ্টা লেখক একেকটি ভাষারীতির স্রষ্টা।

নিজস্ব ভাষারীতির জন্য তিনি বিস্তর নতুন নতুন শব্দ, রূপক, প্রতীক, উপমা সৃষ্টি করেন। আঞ্চলিক ভাষার শব্দ থেকে চমৎকার শ্রতিসুন্দর, অনিন্দ্য অর্থবোধক শব্দ তিনি তার ভাষারীতিতে যোগ করেন। এভাবে মৌলিক শিল্পী নিজ মাতৃভাষার উন্নয়নে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন।

চারপাশের জীবন ও প্রকৃতি শিল্পীকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। ভাবাবেগ আচ্ছন্ন শিল্পী পরিবেশের সঙ্গে সর্বভাবে একাত্ম হতে চান। পরিস্থিতির ভাষা বুঝে তিনি তার করণীয় ঠিক করেন। 

সাহিত্য শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এই সাহিত্য শিল্পের মাধ্যমেই একটি সাধারন লেখনীকে করে তোলা হয় ভিন্ন কিংবা অসাধারণ। ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য।

ধরন অনুযায়ী সাহিত্যকে কল্পকাহিনী বা বাস্তব কাহিনী কিংবা পদ্য, গদ্য এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। মনের ভাব প্রকাশের উপযোগী ধ্বনি হলো ভাষা। মনের ভাবচিন্তা ইচ্ছা, অনুভূতি, উপলব্ধি ইত্যাদি প্রকাশ করার ধ্বনি, শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করে, তখন তাকে ভাষা বলা হয়।

সাহিত্য বৌদ্ধিক চিন্তাভাবনা এবং মননসহ লেখকদের লিখিত রচনা। অন্যদিকে ভাষা হলো শব্দ, চিহ্ন, এবং ব্যাকরণ-সম্পর্কিত। সাহিত্য নিখুঁতভাবে জীবনের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যেমন তার জীবনে তার অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, স্বপ্ন দেখা ইত্যাদি রয়েছে।

অন্যদিকে ভাষা হলো বিমূর্ত পদ্ধতি যা আলোচনায় সহায়তা করে। সাহিত্য প্রায়শই বিনোদন, উদঘাটন, লেখকের চিন্তাভাবনা, তথ্য এবং কল্পনাগুলির অন্তর্নিহিতকে উৎসাহ দেয়। অন্যদিকে, ভাষা জীবের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ঘটায়।

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই যে, ভাষাশিক্ষা ও সাহিত্যের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ভাষা ছাড়া সাহিত্য হয় না আর সাহিত্য ছাড়া একটি ভাষার কৃষ্টি, কালচার আয়ত্ব করা যায় না।

সাহিত্য ছাড়া একটি ভাষাশিক্ষার চেষ্টা করা একধরনের ছাড়া ছাড়া ভাব। তাই ছোট বয়স থেকেই সাহিত্যের সংস্পর্শে আসার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেমন জীবন ও জগত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে পারবেন, তেমনি একটি বিদেশি ভাষা ফলপ্রসূভাবে আয়ত্ব করতে পারবেন।

আমাদের দেশে এখন উচ্চশিক্ষার বহুক্ষেত্রে শুধু বাণিজ্যিকভাবে কিছু বিষয় পড়ানো হয় যেমন বিবিএ, এমবিএ। এটিকে এক ধরনের অসম্পূর্ণ শিক্ষা বলা যায় কারণ যেখানে সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজবিজ্ঞান কিংবা মূল বিজ্ঞানের বিষয় জড়িত নেই। সেই শিক্ষা উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারেনা।

আমরা তার উদাহরণও দেখতে পাই। আমাদের দেশের যেসব শিক্ষার্থী চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেন, তাদেরকেও জীবনের মূল বিষয়গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখা যায় না। অবশ্য কিছু কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের ইচ্ছায় সাহিত্য পাঠ করেন, ইতিহাস, ধর্ম ও নৈতিকতা নিয়ে পড়াশুনা করেন।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেলায় এটি ঘটেনা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঘটে না। আর তাই দেখা যায়, আমরা প্রতিবছর হাজার হাজার ডাক্তার তৈরি করছি, কিন্তু লাখ লাখ রোগী চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।

শুধু উন্নত যন্ত্রপাতি আর ব্যবস্থার কারণেই নয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তার রোগীদের সাথে কিংবা রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা জানেন না। একজন রোগীর সাথে সহানুভূতিশীল ও বন্ধুসুলভ আচরণ ও কথা বলা তার অর্ধেক রোগ সেরে ফেলে কারণ এখানে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার জড়িত।

তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের শুধু বাণিজ্যিক উপায়ে একটি বিদেশি ভাষাশিক্ষার পরিবর্তে ওই ভাষার কৃষ্টিকালচারের সাথে কীভাবে পরিচিত করানো যায়, ওই ভাষা শেখানোয় আনন্দ দেয়া যায় সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। আর তাই, সাহিত্যের মাধ্যমে ভাষা শেখানোর প্রয়াসকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

জনপ্রিয় নিবন্ধ

প্রাথমিক স্তরে ভাষা শেখা : বিষয় – বাংলা

ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা...

আগে ইংরেজি গ্রামার শিখবো, নাকি ভাষা শিখবো?

কোন ভাষার গ্রামার হলো ঐ ভাষার গঠন প্রকৃতি যার...

শিক্ষাব্যবস্থার হালচাল

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা : পিএইচডির পর কী?

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে...

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা

ক্যাডেটসমূহ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।...

আরও কিছু লেখা

অধিক

    বই পর্যালোচনা: ব্যাকরণ ও বিবিধ

    মূল লেখাটি লিখেছেন: আবদুল্লাহ আল নোমান; প্রকাশ করেছেন: সম্পাদক,...

    শিক্ষার সঙ্কট বনাম শিক্ষার দর্শন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী যোগাযোগ

    শিক্ষা ও শিক্ষার সঙ্কট নিয়ে কয়েকটি উক্তি দিয়ে লেখাটি...

    মানসম্মত শিক্ষা ও বাংলাদেশ

    একুশ শতকে পৃথিবীজুড়েই শিক্ষা, বিশেষত মানসম্মত শিক্ষা, একটি কৌশলগত...

    বিদ্যালয়ে ডোনেশন প্রথা বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারের

    নারী সাংবাদিকের ওপর সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের চড়াও হওয়ার...

    বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় ভর্তি পরীক্ষা : অংশগ্রহণের সুযোগ নাকি অপচয়?

    উচ্চশিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়। সেটির আগে বরং ভর্তি পরীক্ষাকে মানসম্মত করতে হবে। পরীক্ষাপদ্ধতি ঠিক না থাকলে উচ্চশিক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আসতে পারবে না, ঝরে যাবে শুরুতেই।

    ভাগ্যবিলম্বিত এক জাতির শিক্ষানীতির কথা

    নাঈমুল হক লিখেছেন শিক্ষানীতির কথা নিয়ে আমারা জাতি হিসেবে বিলম্বিত...

    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি শুনছেন?

    মুক্তবাজার অর্থনীতির ডামাডোলে শরিক হয়ে দেশে পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো শিক্ষার বাজারীকরণের মহোর‌্যাসবে মেতে উঠেছে। কিন্তু বিশ্বের পুঁজিবাদী মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইতালি ও কানাডার মতো দেশের কোনোটাই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাজারের পণ্যে পরিণত করেনি। এসব দেশের প্রতিটিতেই একক মানসম্পন্ন আধুনিক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করছে রাষ্ট্র।

    একীভূত শিক্ষা এবং বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাস্তবতা

    একীভূত শিক্ষা কাকে বলে? একজন শিক্ষার্থীর বয়স অনুযায়ী তার...

    প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

    নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
    বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।