বোধ

কেন এই নাম দিলাম ব্যাখ্যা করতে পারবো না। মূল্যবোধ বা নৈতিকতা-বোধ এসব তাত্ত্বিক কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। খুব সাধারণ কিছু অনুভূতির কথাই বোধ হিসেবে বোঝাতে চাচ্ছি গত ক’দিনের কিছু খবরের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যা আমার সাধারণ বোধ দিয়ে আমি মানতে পারছি না। মূল লেখার আগে নিচের তিনটি খবর পড়ি-

বোধ
বোধ ১
বোধ
বোধ ২

তিনটি খবরই আমাদের পড়া হয়ে গেছে খবরের কাগজের কল্যাণে। আমি জানি কারা কীভাবে খবরগুলো নিচ্ছেন। তবে ভালোভাবে বা ইতিবাচকভাবে কেউ নিচ্ছে না তা বলে দিতে পারি চোখ বন্ধ করে। আমি যখনই এই ধরনের খবরগুলো পড়ি বুকটা ধ্বক করে ওঠে, বাইরে থাকলে সাথে সাথে বাসায় ফোন দেই। আমার ঠিক এই বয়সী দুটি ছোট ভাই আছে। খবরের কাগজে যার কথাই পড়ি না কেন, মনে পরে যায় ওদের কথা। একটা ভয়াবহ আতঙ্ক মুহূর্তেই গিলে ফেলে আমাকে। হয়তো আমার মতো যাদের এই বয়সী ভাই-বোন বা ছেলে-মেয়ে আছে সবার মধ্যেই এই বোধ কাজ করে।

গত কয়েকদিনে এ ধরনের খবের হার অনেক বেড়েছে। আমি সঠিক পরিসংখ্যান হয়তো দিতে পারবো না, কিন্তু যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন তারা আমার সাথে একমত হবেন। ঘটনাগুলো একরকম আতঙ্ক নিয়ে পড়া হয়। পড়ার পর বিশ্লেষণ করে দেখলাম- মূল মোটিভ বা উদ্দেশ্য যাই বলি না কেন, তাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

এক: মুক্তিপণ আদায়। সোজা কথায় টাকা কেড়ে নেওয়া অভিভাবকদের কাছ থেকে।
দুই: নিজের পশুবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।

এটি গেলো ঘটনার একটা দিক। অন্য দিকটি হলো যারা ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারা কারা। তারা তো আমাদের সমাজেরই মানুষ। আমাদের মাঝেই বেঁচে আছে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে কলেজে পড়া বা কলেজ পাশ করা ঐ বয়সী ছেলেরাই। শুধু ছেলেরাই। তাদের সাথে হয়তো উদ্যোক্তা হিসেবে অন্য বয়সী কেউ থাকে। কিন্তু ধরা পড়ছে এই কিশোর বা কিশোর-উত্তীর্ণরা।

কেন এমন হচ্ছে? এই বয়সটা তো আনন্দে ভাসার বয়স, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার বয়স, খেলাধুলার বয়স, স্বপ্ন দেখার বয়স। তাদের কেন টাকার প্রয়োজন এতটাই বেশি হবে যে- টাকার জন্য তাদের শিশুহত্যার মতো জঘণ্য কাজে লিপ্ত হতে হবে? অথবা এই বয়সে কেন তাদের পাশবিকবৃত্তির দাসত্ব করতে হবে? সাদা চোখে আমার কাছে যে কারণগুলো মূল মনে হচ্ছে তা কিছু পয়েন্ট তুলে ধরলাম-

১. আমাদের মিডিয়া, আমাদের নাটক-সিনেমা-সিরিয়াল-গল্প-উপন্যাস যার কথাই বলি না কেন, পাশবিকবৃত্তির কোনো না কোনো ঘটনা সেখানে চলে আসে। হতে পারে এর ভালো দিকও আছে, এটা যে খারাপ তা বোঝানোর জন্যই হয়তো নাটক-সিনেমাতে তা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কারা কীভাবে নিচ্ছে? খারাপ জিনিসটা দেখে যদি কোনো কিশোরের মনে হয় আমিও এই কাজটি করে দেখি কী হয়, তাহলে কি তাকে আমরা দোষ দিতে পারি? এই বয়সেই তো মানুষ অজানাকে জানার চেষ্টা করে।

২. স্ট্যাটাস বজায় রাখা- আজকাল দামি মোবাইল থাকা, আইপড বা আইফোন থাকা, ল্যাপটপ থাকা সবই হলো স্ট্যাটাসের বহিঃপ্রকাশ (সাম্প্রতিক খবর চীনে এক কিশোরের আইফোন কেনার জন্য কিডনি বিক্রি, এরকম আরও অনেক খবরই পাওয়া যাবে)। তাই এই জিনিসগুলো পাবার আকাঙ্ক্ষা কিশোরদের মনে জাগতেই পারে। আর সেজন্য অর্ত্থের জন্য তারা মরিয়া হয়ে অনেক অনর্থ ঘটাতে পারে। এটাকে কি আমার তার দোষ বলবো?

৩. আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি। এই বিষয়টি একটু জটিল আমার আছে। যে কোনো সমাজের ভিত গড়ে ওঠে তার শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। তাই কোনো সমাজে যখন কোনো বিশেষ সমস্যা তৈরি হয় তখন স্বভাবতই আঙ্গুল চলে যায় শিক্ষার ব্যবস্থার দিকে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের শেখাতে পারছে না নিজেকে সংযত করতে, শেখাতে পারছে না লোভ থেকে দূরে থাকতে। গলদটা শিক্ষাব্যবস্থার কোথায়?

৪. পরিবার- পরিবারটা সবার পরে রাখলেও তার অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ পরিবার থেকেই সব কিছুর শুরু। পরিবার যদি সঠিকভাবে এই ইস্যুগুলো শেখাতে না পারে তাহলে আমরা কি এই কিশোরগুলো দোষ দিতে পারি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি নিজেও জানি না। তবে এটি বলতে পারি, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটা অনেকগুলো ঘটনার বা কারণের ফল এবং সেই ফলের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সবাইকে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে, না হলে হয়তো পরিস্থিতি আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, যা কারো কাম্য নয়।

লেখক পরিচিতি

আকলিমা শরমিন
আকলিমা শরমিন

আকলিমা শরমিন বাংলাদেশের শিক্ষা ওয়েবসাইটে সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জনপ্রিয় নিবন্ধ

প্রাথমিক স্তরে ভাষা শেখা : বিষয় – বাংলা

ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা...

আগে ইংরেজি গ্রামার শিখবো, নাকি ভাষা শিখবো?

কোন ভাষার গ্রামার হলো ঐ ভাষার গঠন প্রকৃতি যার...

শিক্ষাব্যবস্থার হালচাল

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা : পিএইচডির পর কী?

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে...

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা

ক্যাডেটসমূহ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।...

আরও কিছু লেখা

অধিক

    জেলা পরীক্ষাকেন্দ্র : হতে পারে পরীক্ষাজটের সমাধান

    আমার ছোট বোনকে ফোনে যখনই জিজ্ঞাসা করি কলেজে গিয়েছিল...

    সুনাগরিক সৃষ্টিতে প্রয়োজন অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধ

    একজন কোমলমতি শিশু, যার প্রথম বিদ্যালয়ে যাওয়ার গল্পটি শুরু...

    জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯: কিছু আলোচনা

    শাহরিয়ার শফিক লিখেছেন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ প্রসঙ্গে গত ৭...

    যোগ্য শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনে পড়ালেখার সুযোগ পাবে আবারও

    আমাদের দেশ থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী ব্রিটেনে পড়াশুনা করতে যায় তারা মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান পরিবারের সন্তান। ব্রিটেনে যাওয়ার তাদের সাধারণত দুটি উদ্দেশ্য থাকে। একটি হচ্ছে স্থায়ীভাবে ব্রিটেন থেকে যাওয়া বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে বা আমেরিকায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করা ।

    কেমন হওয়া চাই করোনা অতিমারীকালীন শিক্ষাবাজেট

    করোনার অতিমারীতে যে সকল খাতের চরম ক্ষতি হয়েছে সেগুলো...

    পিএইচডি ডিগ্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা

    পিএইচডি ডিগ্রি ইদানিং বেশ আলোচিত। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক...

    ব্যয়সাশ্রয়ী স্মার্ট ক্লাশে রাস্পবেরি পাই

    Raspberry Pi-এর ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায় এর দাম আমাদের হাতের নাগালেই। বাংলাদেশে এটির দাম প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো। এর সাথে যদি আমরা একটি টেলিভিশনের দাম সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার টাকা যোগ করি, তাহলে একটি স্মার্ট ক্লাসরুমের জন্য আমাদের খরচ পড়বে মাত্র পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা (তবে এ কাজটি পুরনো টেলিভিশন কিনেও করা যায়।

    প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

    নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
    বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।