আলোচ্য বিষয়সমূহ
বিশ্বব্যাপী সংক্রামক করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এবং তার আরও বিস্তার রোধে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও করোনায় উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সারা পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের জীবন বাঁচাতে এ ধরনের উদ্যোগ অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে সামনে চলে এসেছে।
গ্রহণ করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ও অর্থনীতি-বিষয়ক বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা। সে হিসেবে করোনায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা আমরা শুনছি না। শিক্ষা এখনও অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাকে অবহেলা করে আমরা কি সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবো? আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছি। মধ্যম কিংবা উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে আমাদের জাপান, কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো দক্ষ হতে হবে। আর সেই দক্ষতার চাবিকাঠিই হচ্ছে শিক্ষা, যার ওপর জোর দিতেই হবে।
বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় : বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অবস্থা
যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে এখন লকডাউন চলছে। আমরা জানি, আমাদের দেশসহ বহু বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই এখন পরিবার-পরিজনবিহীনভাবে আটকে আছে ঘরে। এদের মধ্যে যাদের পড়ার ফান্ডিং বা বৃত্তি নেই, তারা খণ্ডকালীন কাজ করে পড়ার ও থাকার খরচ চালাতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের লকডাউনে সেই কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে আছেন।
আর অষ্ট্রেলিয়ার সরকার তো ইতোমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী বিশেষ করে খরচ চালানোর সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত চলে যেতে বলেছে। যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পরিকল্পনা করছিলেন, তারা এখন বেকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেটে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর প্রভাব পড়বে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরও।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর করছেন, গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ বা ফেলোশিপ করছেন, তারা হয়তো অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। সহজে বুঝা যাচ্ছে যে, আগামী দুই বছর কিংবা তারও অধিককাল শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ অনেকটাই কম হবে। কারণ, উন্নত বিশ্বও এবার দেখেছে যে, তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। আর তাই বড় বাজেট সেদিকে যাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। ফলে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি করার জন্য যেসব বৃত্তি বা অনুদান দেয়া হতো তাতে অনেকটাই ভাটা পড়বে।
শিক্ষার্থীরা পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর শেষ করার পর চাকরির চিন্তা করতেন ওইসব দেশে। সেটিও এখন আর আগের মতো সহজে হবে না। আমরা জেনেছি যে, যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে দশ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের নিজের দেশের লোক যখন বেকার, তখন দেশের বাইরে থেকে যারা আছেন বা যারা যাবেন, তাদের জন্য কাজ দেয়ার প্রশ্ন বহুদূর। মার্কিন সরকার সাম্প্রতিককালে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রণোদনা বিল পাস করেছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ আছে ১৪ বিলিয়ন ডলার যা আর্থিক ক্ষতির তুলনায় নগণ্য।
করোনায় উচ্চশিক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি
বাংলাদেশে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলে প্রায় আট থেকে দশ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিশ বছর আগেও দৃশ্যপট এরকম ছিলো না। এই দুই মাসের লকডাউনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরেক ধাপ এগিয়ে থাকলো। কারণ, এদের মধ্যে অনেকগুলোই করোনায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে রেসপন্স হিসেবে অনলাইনে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পিছিয়ে থাকলো। কেন এরকম হচ্ছে?
এখনো ইনফ্রাস্ট্রাকচার চিন্তা করলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে। রিসোর্সেও অনেক এগিয়ে। তাহলে পিছিয়ে পড়ার কারণ কী? আমেরিকা থেকে বাংলাদেশী কিছু শিক্ষক বলেছেন, তাদের লেখাপড়ার এক ঘণ্টাও ব্যাঘাত হয়নি, কারণ এদের এখানে অনলাইনের অবকাঠামো তৈরি ছিলো।
লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই সব অনলাইনে। লেখাপড়ার কার্যক্রম বন্ধ নেই। অথচ করোনায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমাদের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “আরো কতোদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি আগে নিরুপণ করতে হবে। তবে সহসা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পোষানো যেতে পারে। কিন্তু ক্লাস না নিয়ে, সময় না দিয়ে পরীক্ষা নেয়া যাবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট একেবারে কমে এসেছিল, এখন সেটা বেড়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে একাডেমিক কাউন্সিল বসে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষানোর ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এখন বলব আগে জীবন বাাঁচাতে হবে। এজন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হবে”। তার মানে হচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার উপযুক্ততা ও সামর্থ্য সেভাবে অর্জন করেনি।
করোনায় উচ্চশিক্ষা ও পাঠদানের জন্য শিক্ষকরা জুম অ্যাপ্লিকেশন, ফেসবুক লাইভ, গুগল ক্লাসরুম ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। এছাড়া বিনামূল্যে লেখাপড়া করা যায় এমন ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা সহজেই বাসা থেকে এগুলো ব্যবহার করতে পারে। এদিকে কয়েক শিক্ষা উদ্যোক্তা ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক কন্টেন্টও তৈরি করছেন।
অনলাইন ক্লাসের সমস্যা
তবে প্রযুক্তিগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন ক্লাস ও ডিজিটাল শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার এই উদ্যোগ সবার ক্ষেত্রে একরকম হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। তাই গণমাধ্যম ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে পাঠদানের প্রক্রিয়াটি বৈষম্যপূর্ণও বটে।
বাংলাদেশের মাত্র ৪০ শতাংশ তরুণ ইন্টারন্টে ব্যবহারের আওতায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এখনই ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ও বিনামূল্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা দরকার। এগুলো না হলে করোনায় উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মোবাইল ডেটার ওপর নির্ভর করতে হবে। এটি নিঃসন্দেহে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হতে পারে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সহায়তার অভাবে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। করোনায় উচ্চশিক্ষা কীরকম হবে তা নিয়ে তাদের প্রস্তুতি নেই। তাদের প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থীসংখ্যা বেশি থাকায় বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসির হিসেবে বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচেছ। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাকি ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
করোনায় উচ্চশিক্ষা : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। আর দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। এর কয়েকটি এখনো শিক্ষাকার্যক্রম অনলাইনে শুরু করতে পারেনি। অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু নিয়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করে ফেসবুকে গ্রুপ খুলেছে, কেউ কেউ রাস্তায় মানবন্ধনও করেছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে যে, করোনায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপে এরকম উসকানিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর পেছনের ষড়যন্ত্র আছে বলে তারা মনে করেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষাথীই এখন গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। সেখানে নিরবচিছন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এমনকি বিদ্যুৎও নেই। তাদের মধ্যে যাদের ওয়াইফাই কানেকশন নেই, ব্রডব্যান্ড লাইন নেই তাদের নির্ভর করতে হবে মোবাইল ডাটার ওপর। মোবাইল ডাটার খরচ দুই ঘণ্টায় কমপক্ষে দুই থেকে তিনশত টাকা লাগবে। এই খরচ বহন করা সবার জন্য সম্ভব কিনা সেটি একটি প্রশ্ন।
এগুলো সবই যুক্তির কথা। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনায় উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো খুবই ভালো করছে যা অনেকের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করছে যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক। কোনোভাবেই বা বাইরের কোনো উসকানিতে আমরা যেন গার্মেন্টস শিল্পের মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিণতি হতে না দেই।
নিউ ইয়র্কের অভিজ্ঞতা
একটি বিষয় জেনে খুব ভালো লেগেছে যে, বিশ্বের বড় বড় সিটি কর্পোরেশনের একটি শিক্ষা বিভাগ থাকে। নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্যাজিও সেপ্টেম্বর ২০২০ নাগাদ আবার বিদ্যালয় শুরুর জন্য পাঁচটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এর পূর্বে তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেন। মেয়র বলেন, চলমান পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রাখার জন্য আগামী সেপ্টেম্বরে সকল বিদ্যালয়সমূহ খোলার জন্য সিটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সিটি কর্পোরেশনের যে একটি শিক্ষা বিভাগ থাকে এবং সিটি কর্পোরেশন যে সিটির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করে এটি থেকে আমাদের শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। মেয়র শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা প্রদান করা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রদান করা এবং আগামী গ্রীষ্মের ছুটির পর যথাসময়ে আবার কার্যক্রম শুরু করা, প্রত্যক শিক্ষার্থী যাতে বাসায় দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় স্টেশনারি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এপ্রিল মাসের মধ্যে সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।
তিনি বাসায় বসে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য সহযোগিতার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার কথা বলেছেন। মেয়র বলেন, ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী এক বিদ্যালয় শেষ করে অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হবে। তারা যাতে এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে তিনি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন এক গ্রেডিং পলিসি ব্যক্ত করেন। সেখানে অষ্টম ও টুয়েলভথে যে শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে ব্যর্থ হবে তারা গ্রীষ্মকালীন সেশনে তা শেষ করতে পারবে। ইলিমেন্টারি ও মিডল স্কুল শিক্ষার্থীদের বেলায় ‘মিট স্ট্যান্ডার্ড’ ও ‘নিড ইমপ্রুভমেন্ট’ এই ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারণ করা হবে।
তবে, হাইস্কুল শিক্ষার্থীরা স্ট্যান্ডার্ড গ্রেডিং পাবে কিন্তু তাদের ক্লাস ‘পাস’ কিংবা ‘ফেল’ ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। এর অর্থ হচ্ছে, এতে তাদের গ্রেড জিপিএর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েই অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে এসব দেশে এবং সেটির ব্যাঘাত হলে সিটি কর্পোরেশন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়। আর উচ্চশিক্ষায়তো অনলাইন সুবিধা ব্যাপকতর, যা আমি নিজেই দেখে এসেছি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন করোনায় উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে এক খসড়া নির্দেশনায় বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান সেমিস্টারের ক্লাস-পরীক্ষা অনলাইনে নিতে পারলেও জুলাইয়ের আগে নতুন সেমিস্টারের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে জুনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান সেমিস্টারের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে নেয়া যাবে।
তবে নতুন কোনো সেমিস্টারের কার্যক্রম আগামী জুলাইয়ের আগে শুরু করতে পারবে না, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার্চ থেকেই অনুরোধ জানিয়ে আসছিলো। এর একটি কারণ তো আমরা বুঝতেই পারছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি শিক্ষার্থী বেতনের ওপর চলে। তারা রাষ্ট্রীয় অনুদান পায় না। দীর্ঘদিনের এই বন্ধে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হিমশিম খেতে হচেছ।
অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা তিনটি উপায়ের যে কোনো একটি অনুসরণ করতে বলেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। প্রথমটি হচ্ছে, অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা দুটোই নেয়া যাবে। তবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ব্যবহারিক পরীক্ষা কোনোভাবেই অনলাইনে নেয়া যাবে না। পরীক্ষাগুলোতে সর্বোচ্চ স্বচছতা অবলম্বনের কথাও বলা হয়।
দ্বিতীয়টি হচেছ, অনলাইনের মাধ্যেমে ক্লাস সম্পন্ন করে পরবর্তী সেমিস্টারের কোনো এক সময় পরীক্ষা নিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে বড় পরিসরে পরীক্ষা নিতে প্রতিবন্ধকতা থাকলে এর আকার সীমিত করা যাবে। আর তৃতীয়টি হচেছ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় করোনা পরিস্থিতির আগে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ ক্লাস সম্পন্ন করেছে, তাদের এখন যে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা না নিলেও চলবে। পরবর্তী সেমিস্টারে বাকি কার্যক্রম সমন্বয় করতে পারবে। এগুলো অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা। উচচশিক্ষার ক্ষেত্র উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের বিষয়গুলোতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
লেখক পরিচিতি
মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।