মিথ্যা তিন প্রকার- মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা ও পরিসংখ্যান ।
আপনি যদি উপরের কথাটি বিশ্বাস করেন, পরিসংখ্যান শেখা আপনার জন্য ফরজ। কারণ দেশের বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা পরিসংখ্যান গ্র্যাজুয়েট একেবারে কম নয়, তাদের শিক্ষকরা তো রয়েছেনই। তাছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে পরিসংখ্যান বিষয়ে না পড়লেও পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। সবচেয়ে বড় কথা, দেশে একটি আস্ত পরিসংখ্যান ব্যুরো রয়েছে। সুতরাং বিশ্বাসের সপক্ষে যুক্তি দিতে না পারলে আপনার কপালে যে খারাবি আছে, সেটা বুঝার মতো বয়স হয়েছে বলেই উপরের কথাটি আপনি বিশ্বাস করেন। সবচেয়ে বড় ভয়, দেশের সব ধরনের পরিসংখ্যান থেকে পরিসংখ্যান ব্যুরো যদি আপনাকে বাদ দিয়ে দেয়, তখন আপনার অবস্থা কী হবে? আপনি আছেন, অথচ আপনার কোনো হিসাব নেই! খুব বিশ্রি ব্যাপার হবে সেটি।
ধরলাম, আপনি উপরের কথাটি বিশ্বাস করেন না। তাহলে আর কি! আপনি যে একজন ছদ্মবেশি পরিসংখ্যানের লোক, সেটা বুঝতে আমার আর বাকি নেই! আপনি যথেষ্ট পরিসংখ্যান জানেন। আর জানেন বলেই কথাটি বিশ্বাস করছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি ইচ্ছে করলে ব্রাউজারটি বন্ধ করে ঘুমাতে যেতে পারেন। কারণ এই টিউটোরিয়ালে পরিসংখ্যান বিষয়টাকে আচ্ছামতো দলাইমালাই করা হবে। সেটি আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।
*
কবি বলেছেন (কিন্তু কোন কবি বলেছেন, তা আমার জানা নেই), তুমি যদি কোনো বিষয়ে জ্ঞানলাভ করতে চাও, তাহলে সেই বিষয়ের ওপর বই লিখে ফেল।
বিষয়টি আমার জ্ঞান মোটামুটি শূন্যর বেশি, কিন্তু কবির কথা ফেলি কী করে! এ যুগে বই লেখাটাও বেশ খরচার ব্যাপার। অতএব বিনামূল্যে ওয়েব সাইটেই ভরসা পাতলাম। সুতরাং যারা মনে করছেন, এই টিউটোরিয়াল পড়ে যারা পরিসংখ্যান ও এসপিএসএস শিখে ফেলবেন, তাদের আবারো চোখ পরীক্ষা করতে বলি- আপনি সম্ভবত ঘুমিয়ে আছেন, মানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পরিসংখ্যান ও এসপিএসএস শেখার স্বপ্ন দেখছেন।
**
পরিসংখ্যান শিখে কী হয়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি…
আচ্ছা, উত্তরটা দেয়ার আগে আরেকটা প্রশ্ন করে নিই। পরিসংখ্যা শিখিয়ে কী হয়? উত্তর: কিচ্ছু হয় না। এই দুনিয়ায় কেউ কাউকে পরিসংখ্যান শেখাতে পারে না। ছোটবেলায় স্কুলে, বাড়িতে সংখ্যা শেখা যায়, কিন্তু সংখ্যার শেষে কেন একটা অতিরিক্ত ‘ন’ লেগে যায়, এবং তারপরপরই সামনে একটা ‘পরি’ বসে বিশাল একটা নাম হয়ে যায়, সেটা কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। তাই কি? আসলেই কি কেউ কাউকে শেখাতে পারে না? নাকি কেউ কাউকে শেখায় না?
যা হোক, সেটা অন্য ব্যাপার। আগে উত্তরটা দিয়ে নিই। তার আগে আরেকটা প্রশ্ন: আচ্ছা, বলুন তো, একজন ব্যাটসম্যান (নাম দিলাম কুদ্দুস) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোটমাট তিনটা ম্যাচ খেললেন। প্রথম ম্যাচে রান করলেন ৮০, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৩ আর তৃতীয় ম্যাচে ১০৭। দুই ম্যাচে তিনি আউট হয়েছেন, একটিতে অপরাজিত থেকেছেন। তিন ম্যাচ মিলিয়ে তাঁর রান ২৫০, গড় ১২৫। রেকর্ডবুকে দেখা যাচ্ছে, শচিন টেন্ডুলকারের গড় ৫৩+, ব্র্যাডম্যানের ৯৯+ আর কুদ্দুসের গড় ১২৫। এখন বলুন তো, পরিসংখ্যান অনুসারে কে সবচেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান?
উত্তর দিতে পেরেছেন? জানতাম পারবেন না। আর এইজন্যই শিখতে হবে। আগে যেটা বলছিলাম, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যারা পরিসংখ্যান জানে, তারা এসব বিষয় নিয়ে যথেষ্ট কুতর্ক করতে পারে। সুতরাং সবচেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান কে এর উত্তর আপনি যা-ই দিন না কেন, একজন পরিসংখ্যানবিদ আপনার সাথে এটা নিয়ে যথেষ্ট কুতর্ক করতে পারবেন। কুতর্কে জিততে চান? তাহলে নিয়মিত এই টিউটোরিয়াল পড়ুন।
***
নাহ, বায়াসড হওয়া ঠিক হবে না। আপনি শিখবেন কি শিখবেন না, সেটি আপনি স্বাধীনভাবেই ঠিক করুন। আমি কেবল এর পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলো তুলে ধরি।
****
যুক্তির আগে পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া কয়েকটি ফ্যাক্টস দেখে নিন।
১. কফি ভেন্ডিং মেশিনের কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে অন্তত ১০ জন মানুষ মারা যায়।
২. একজন মানুষ তার জীবনের ৩টি অমূল্য বছর শুধু টয়লেটেই (বাথরুমে না কিন্তু!) কাটিয়ে দেয়।
৩. শতকরা ২৯ জন নারী সারাজীবনে জীবনসঙ্গী খোঁজার চেয়ে বেশি সময় কাটায় জুতা কিনতে গিয়ে।
৪. পৃথিবীতে কতোজন মানুষ পরিসংখ্যান বিষয়ে জানেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে! সাথেই থাকুন, স্যরি পাশেই থাকুন, ভালোবাসার টানে। পরিসংখ্যানকে ভালোবাসুন।
*****
এবার আসুন দেখি পরিসংখ্যান শেখার পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলো।
পরিসংখ্যান শিখলে যা হবে:
১. যথেষ্ট কুতর্ক করতে পারবেন।
২. মারাত্মক ভাব ধরতে পারবেন।
৩. কোনো পণ্ডিতি আড্ডায় অতিরিক্ত খাতির পেতে পারেন। (আপনি ছেলে হলে) চোখের চশমাটা হালকা ঠেলে দিয়ে আড়চোখে দেখতে পারেন কিংবা কানখাড়া করে শুনতে পারেন ওইদিকের মেয়েরা আলোচনা করছে, ইশ্, ভাইয়াটা যা সুপার্ব না! (আপনি মেয়ে হলে) ঠিক করা চুল আরেকটু ঠিক করতে করতেই দেখবেন পাশেই একজন হ্যান্ডসাম এসে বলছেন, এক্সকিউজম মি, রিগ্রেশন আর লিনিয়ার মিলে যদি মাল্টিভ্যারিয়েট হয়, তাহলে কোরিলেশনের সাথে ডেটা ম্যানিপুলেশনের যে সম্পর্কটা সেখানে মাল্টিনমিয়ালের ভূমিকা কী? আপনাদের আলোচনার ঘণ্টাখানেক পরেই শুনবেন সুমধুর প্রস্তাব: “আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই?”
৪. দুঃখিত, পরিসংখ্যান শেখার আর কোনো যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিসংখ্যান শিখলে যা হবে না:
১. করল্লা মিষ্টি লাগবে না।
২. চিপা হওয়া প্যান্ট হঠাৎ-ই লুজ হবে না।
৩. কপালে যে কয়টা লেখা আছে, তার চেয়ে বেশি বিয়ে হবে না।
৪. বিয়ের যুক্তি দেবার পর আর কোনো যুক্তি দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার। যদি এখনো পরিসংখ্যান শেখার ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই সাইটটি বুকমার্ক করে নিন। কিংবা ডান পাশের কলাম থেকে ইমেইল সাবস্ক্রাইবার হয়ে নিন। নতুন পর্ব প্রকাশের পরপরই খবর পেয়ে যাবেন।
******
ডিসক্লেইমার:
১. যতোদূর সম্ভব সহজভাবে টিউটোরিয়াল উপস্থাপন করা হবে। যাবতীয় সূত্র বা ইকুয়েশন বাদ দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।
২. পর্বগুলো হবে ছোট ছোট। উদাহরণসহকারে উপস্থাপন করা হবে।
৩. টিউটোরিয়ালটি মূলত পরিসংখ্যানের। এসপিএসএস শেখাটা ফাও। পরিসংখ্যানকে ব্যবহার করতে গিয়ে যতোটুকু এসপিএসএস শেখা দরকার, তার চেয়ে বেশি এসপিএসএস শেখানো হবে না। তবে আশা করা যায়, এইটুকু এসপিএসস শিখে আপনি দেশের পরিসংখ্যান গুরুদের ভাত মারতে সমর্থ হবেন।
৪. অনেক বইপত্র ও ওয়েব সাইটের সাহায্য নিয়ে এই লেখাগুলো তৈরি করা হচ্ছে। তাই প্রতি পর্বে তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে একবারে শেষে একটি পর্ব দেওয়া হবে যেখানে সমস্ত তথ্যসূত্র থাকবে।
৫. বিশেষ প্রয়োজনে প্রতিটি পর্ব মাঝে মাঝেই আপডেট করা হবে। তাই পুরনো পর্বগুলো মাঝে মাঝে চেখে দেখতে ভুলবেন না।
শুরু হোন তাহলে পরবর্তী পর্বের জন্য।
লেখক পরিচিতি
গৌতম রায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।