বাড়িশিক্ষা ও রাজনীতিশিক্ষাব্যবস্থা: আগামী সরকারের প্রতি একজন অভিভাবকের আবেদন

শিক্ষাব্যবস্থা: আগামী সরকারের প্রতি একজন অভিভাবকের আবেদন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে-জাতির শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত, সেই জাতি তত মেরুদণ্ড সোজা রেখে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আমরা আমাদের মেরুদণ্ড অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যাশামতো উন্নতি সাধন করতে পারিনি। ফলে এই অব্যবস্থাপনাময় দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষাব্যবস্থায় মেরুদণ্ড সোজা করে চলা তো দূর, জাতি হিসেবে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর অবস্থাটুকুও অবশিষ্ট নেই। একজন অভিভাবক হিসেবে আবদেন জানাই বিষয়গুলো নিয়ে ভাববার জন্য।

দুইশ বছর আগে ব্রিটিশরা যে অনুগত জাতি তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে গিয়েছিল, আজ এত বছর পরও আমরা সেটিকেই আঁকড়ে ধরে চলছি। এই শিক্ষাব্যবস্থাকেই আমরা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে চালিয়ে নিচ্ছি। ফলে জাতি হিসেবে আমরা স্বতন্ত্র কিংবা আদর্শ সভ্যতা-সংস্কৃতির অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি।

এ-মুহূর্তে যদি শিক্ষাব্যবস্থাকে জরুরি খাত হিসেবে দেখে তার সার্বিক সংশোধন ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নে আন্তরিক না হওয়া যায়, তাহলে জাতির মুখ থুবড়ে পড়তে বিলম্ব নেই। দুইশ বছর আগে ব্রিটিশরা যে অনুগত জাতি তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে গিয়েছিল, আজ এত বছর পরও আমরা সেটিকেই আঁকড়ে ধরে চলছি। এই শিক্ষাব্যবস্থাকেই আমরা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে চালিয়ে নিচ্ছি। ফলে জাতি হিসেবে আমরা স্বতন্ত্র কিংবা আদর্শ সভ্যতা-সংস্কৃতির অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি।

পৃথিবীর বেশিরভাগ উন্নত দেশ যখন যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের শিক্ষাপদ্ধতিরও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, পরীক্ষা পদ্ধতি বদলে গেছে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, গবেষণা আর নীরিক্ষার মাধ্যমে নতুন স্মার্ট জেনারেশনকে নতুনভাবে শিক্ষাদানের নানাবিধ পদ্ধতির প্রয়োগ বাড়াচ্ছে; আমরা সেক্ষেত্রে স্কুল-কলেজে দু-একটা কম্পিউটার আর প্রজেক্টর পাঠিয়েই ভাবছি বেশ আধুনিক ডিজিটালাইজড পড়াশোনার পদ্ধতি চালু করা গেল। অথচ শহরের গুটিকয় ভালো বিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার চালানোর মতো শিক্ষক নেই যিনি শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এই সত্যটি বালুতে উটপাখির মুখ ডুবিয়ে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার হাস্যকর প্রচেষ্টার মতই এড়িয়ে যাচ্ছি।

শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমানের আধুনিক যুগের ডিজিটালাইজড শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নীত করতে হলে তাই দুয়েকটি বিষয় নয়, বরং প্রত্যেকটি সমস্যাকে গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এবং উন্নত দেশগুলোর শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণে একটি সম্পূর্ণ নতুন শিক্ষাব্যবস্থা ও পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করা এখন সময়ের দাবি।

গত নির্বাচনের সময় আমরা বতর্মান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাখাত নিয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেখেছিলাম যার সিংহভাগ এখনো পূরণ হয়নি। আগামী সরকারের কাছে তাই দাবি যেন সেগুলো আন্তরিকভাবে পূরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়।

আগামী সরকারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিকল্পে কী কী পদক্ষেপ নেয়ার কথা সংসদে তুলবেন, তার রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে না যাই; বরং একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কল্পনায় আগামী সরকারের কাছে কী কী আশা করতে চাই, আবেদন করতে চাই সেই বিষয়ে বরং কিছুটা আলোকপাত করি।

শিক্ষাক্ষেত্রের অব্যাবস্থাপনা আর দুর্নীতি কঠোরভাবে দূর করতে হলে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সর্বক্ষেত্রে। শিক্ষাব্যবস্থার সকল সমস্যাকে আন্তরিকভাবে দূর করার মনোভাব থাকতে হবে। গত নির্বাচনের সময় আমরা বতর্মান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাখাত নিয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেখেছিলাম যার সিংহভাগ এখনো পূরণ হয়নি। আগামী সরকারের কাছে তাই দাবি যেন সেগুলো আন্তরিকভাবে পূরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। তা না-হলে প্রশ্নফাঁসের মতো অরাজকতাগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে সময় লাগবে না।

এই দুর্মূল্যের বাজারে যদি একজন শিক্ষককে অনবরত টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়, তো বিদ্যালয়ে মনোযোগ ব্যাহত হওয়াই যুক্তিযুক্ত। যেখানে উন্নত বিশ্বে শিক্ষকের মর্যাদা যেমন সর্বোচ্চ, তেমনি তার পারিশ্রমিকও তাদের পদের সমান। ফলাফল, আমাদের দেশের মতো অন্য চাকরিতে অযোগ্য প্রার্থীর বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটাতে শেষ ভরসাস্থল হিসেবে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার মতো নয়; বরং সুশিক্ষিত যোগ্য ব্যক্তির আগ্রহেই তাঁর শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্তি এবং নিঃস্বার্থ সেবা দান প্রয়োজন।

একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সুশিক্ষিত নাগরিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আগামী সরকার শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সকল সমস্যার মূলোৎপাটনে আন্তরিক হবেন সে আশা করি, সেই আবেদন রইলো।

আবেদন জানাই, শিক্ষাখাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে সবচেয়ে জরুরি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা এবং তাঁদের উপযুক্ত সম্মানী ও প্রয়োজনীয় বোনাস-ভাতার সুযোগ-সুবিধা প্রদান। এই দুর্মূল্যের বাজারে যদি একজন শিক্ষককে অনবরত টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়, তো বিদ্যালয়ে মনোযোগ ব্যাহত হওয়াই যুক্তিযুক্ত। যেখানে উন্নত বিশ্বে শিক্ষকের মর্যাদা যেমন সর্বোচ্চ, তেমনি তার পারিশ্রমিকও তাদের পদের সমান। ফলাফল, আমাদের দেশের মতো অন্য চাকরিতে অযোগ্য প্রার্থীর বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটাতে শেষ ভরসাস্থল হিসেবে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার মতো নয়; বরং সুশিক্ষিত যোগ্য ব্যক্তির আগ্রহেই তাঁর শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্তি এবং নিঃস্বার্থ সেবা দান প্রয়োজন।

আমাদের দেশে কোনো উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তি যদি শিক্ষকতায় চলেও আসেন, তার যথাসাধ্য চেষ্টা থাকে যেভাবেই হোক অন্য কোনো ভালো অর্থাৎ বেশি বেতনের চাকরিতে নিয়োগের অধ্যবসায় এবং উন্নতজীবন যাপন। এক্ষেত্রে ব্যর্থ শিক্ষক বিকল্প হিসেবে নেন কোচিং ব্যবসাকে। ন্যূনতমভাবে বেঁচে থাকতে হলে তিনি আর কী করতে পারেন? এই কোচিং ব্যবসাকে চালু রাখতে হলে অবশ্যম্ভাবী যে বিদ্যালয়ে মনোযোগ কম দেয়া কিংবা বিদ্যালয়ের পড়া বিদ্যালয়ে শেষ না করা।

শিক্ষকের বেতন-বৈষম্য সমস্যাকে সমাধান না করে হুট করে কোচিং-গাইড-নোটবই বন্ধ করে দিলে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতি নয়, বরং ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দেয়া হবে। সুতরাং গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ এবং তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ জরুরি।

কোনো শিক্ষার্থী বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলে শিক্ষকরা এমনও বলে থাকেন— “সব কি স্কুলেই শিখাব নাকি?” অথচ তাই তো নিয়ম। শিক্ষার্থী তখন বাধ্য হয় সেই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে। সময় আর অর্থের কি বিশাল অপচয়! দেশের সর্বসেরা বিদ্যাপীঠ, যেখানে শতকরা নিরানব্বইভাগ শিক্ষার্থী সারা দেশ থেকে বেছে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়, সেখানে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী যখন বিদ্যালয় শেষেই কোচিঙে দৌড়ায়, তাও আবার বাংলা, ইংরেজি, ইসলামিয়াত, সমাজ ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোতেও সারাবছর কোচিং করে, তখন শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের গলদ না থেকে পারেই না।

দেশের সেরা বিদ্যাপীঠের অবস্থা যদি এই, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার কী করুণ অবস্থা ভাবুন। একজন শিক্ষককে খেয়েপরে সম্মানের সাথে বাঁচতে যে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হচ্ছে, সেই দুর্নীতির সাইকেলই পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রাস করে নিয়েছে। তাই শিক্ষকের বেতন-বৈষম্য সমস্যাকে সমাধান না করে হুট করে কোচিং-গাইড-নোটবই বন্ধ করে দিলে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতি নয়, বরং ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দেয়া হবে। সুতরাং গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ এবং তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ জরুরি।

শুধু যে শিক্ষকের উন্নতির কথা ভাবলে চলবে তাও নয়, সেই সাথে বিদ্যালয়েরও উন্নতি প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষাকে প্রফিটেবল বাণিজ্য হিসেবে বিবেচনায় পাড়ায় পাড়ায় বিদ্যালয় তৈরির হিড়িক বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা কোনো ব্যবসা নয়, এটি জাতি গঠনের হাতিয়ার। সুতরাং, শিক্ষার উদ্দেশ্য যেনতেনভাবে সার্টিফিকেট অর্জন না হয়ে প্রকৃত জ্ঞানার্জন হওয়াটাই বাঞ্ছণীয়।

বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক করা হোক। শুধু পড়াশোনা নয়, বরং শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক বিকাশও জরুরি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চারু ও কারুকলা, খেলাধুলা, সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়গুলো আবারো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই বিষয়গুলো যেন শিক্ষার্থীদের শুধু আনন্দদানেই সীমাবদ্ধ থাকে। ব্যাবসায়িক চিন্তায় কেউ যেন বিষয়গুলোকে আবশ্যিক করে শিশুদের এত এত বইয়ের বোঝার ওপর শাকের আঁটি করে না তোলে। শিশু যেন আনন্দের সাথে জ্ঞানলাভ করতে পারে সেটিই হোক আগামী যুগের শিক্ষার উদ্দেশ্য।

সবচেয়ে ভালো হয়, এই বিষয়গুলোতে মুখস্তের চেয়ে বরং মুক্তাঙ্গণে ব্যবহারিক অংশ বেশি থাকলে। এতে শিশুরা উৎসাহ পাবে, আবার বইয়ের বোঝাও কমবে। জ্ঞানদান যদি আনন্দের সাথেই হোক চাই, তো শিশুদের বিদ্যালয়ের বাইরে অর্থাৎ বাড়িতে পড়ার সময়টা সীমিত করা উচিত। সেক্ষেত্রে ছোট শিশুদের বাড়ির কাজের বোঝাটা দূর করাই ভালো। বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে বিদ্যার চর্চা করা হলে বাড়িতে চর্চার প্রয়োজন পড়ে কি?

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চারু ও কারুকলা, খেলাধুলা, সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়গুলো আবারো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই বিষয়গুলো যেন শিক্ষার্থীদের শুধু আনন্দদানেই সীমাবদ্ধ থাকে।

সেই সাথে ইংরেজি মাধ্যমের অনুসরণে বাংলা মাধ্যমগুলোতেও দুদিনের ছুটি নির্ধারণের জন্য ভাবতে অনুরোধ করব। একদিন ছুটি দিয়ে বাংলা মাধ্যমের শিশুরা অন্য মাধ্যমের তুলনায় কী বেশি পড়ছে আর কত বেশি শিখছে তা বুঝতে পারি না। একটা সময় ছিল যখন নকলের বাড়াবাড়িতে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সে-সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটলেও ডিজিটাল যুগে প্রশ্নফাঁসের সমস্যায় আবারো জর্জরিত ছিলাম আমরা গত কয়েক বছর। এখনো সে-সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়েছে কিনা বোঝা যায়নি। এসব সমস্যার সমাধানে এখন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে।

অনেকেই উন্নত বিশ্বের অনুকরণে ওপেন বুক এক্সাম এর কথা বলছেন। অনেক দেশ তো পরীক্ষা পদ্ধতিই উঠিয়ে দিচ্ছে যেন শিশুরা জ্ঞানকে চর্চার বিষয় হিসেবে দেখে, প্রতিযোগিতার নয়। আমাদের দেশের অনেক ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো পরীক্ষা নেয়া হয় না। ফলে শিশুরা পরীক্ষাভীতিমুক্তভাবেই পড়াশোনা করে। এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করে একটি আধুনিক পরীক্ষাপদ্ধতির প্রচলন খুবই জরুরি।

সে-সাথে বিভিন্ন মাধ্যমের এই যে ত্রিমুখী পড়াশোনা একটিমাত্র দেশে, সেটি নিয়ে ভাবাও জরুরি মনে হয়। বৈষম্য দূর হোক শিক্ষার সকল ক্ষেত্রেই। এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়াক না সকল শিশু! নতুন বছরে বিনামূল্যের বই শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটি পদক্ষেপ এই সরকারের। এজন্য সরকারের অবশ্যই ধন্যবাদপ্রাপ্ত। কিন্তু সেইসাথে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা অবৈতনিক করার দাবিটিও এখন কার্যকর করা প্রয়োজন।

সহজলভ্য শিক্ষাব্যাবস্থা নাগরিক অধিকার। নতুন বছরে বইয়ের মান হোক আরো উন্নত। বিশেষ করে ইংরেজি ভার্সন নামে অদ্ভুত যে মাধ্যমটির শুরু হয়েছে, সেই মাধ্যমের বই-স্বল্পতা, বইয়ে তথ্যের ভুল, উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব— এসব বিষয়ের দিকে নজর না দিলে এই মাধ্যম থেকে ভালো কিছুর আশা করা বাতুলতা। একটা বই যেন একবছর একটি শিক্ষার্থী পড়তে পারে, সেরকম মজবুতভাবে তৈরির অনুরোধের প্রসঙ্গটি না তুললেই নয়। সর্বোপরি শিক্ষা হোক সহজ প্রত্যেক শিশু এবং তাদের অভিভাবকের জন্য।

একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে শিক্ষাখাতে আমাদের বরাদ্দ হওয়া উচিত মোট জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৮ শতাংশ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ ব্যয় করি যা বিশ্বের সার্ভেকৃত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

আবেদন শেষ করি শিক্ষাখাতের বরাদ্দ নিয়ে। একটি জাতির সার্বিক উন্নয়নে তাদের জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া অবশ্য কর্তব্য। রিও ডে জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিক্ষা ফোরাম ২০০৬ বিশ্বের সকল দেশকে তাদের জিডিপি-র ন্যূনতম ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যায়ের আহ্বান জানিয়েছে।

একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে শিক্ষাখাতে আমাদের বরাদ্দ হওয়া উচিত মোট জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৮ শতাংশ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ ব্যয় করি যা বিশ্বের সার্ভেকৃত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে এবং জনশক্তিকে মানবসম্পদে রুপান্তরিত করতে হলে শিক্ষার বাণিজ্যকরণ বন্ধ করে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। আর এই গুণগত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে তখনই, যখন শিক্ষাখাতে বরাদ্দ হবে সর্বোচ্চ।

সুতরাং, আগামীতে নির্বাচিত সরকারের কাছে আবেদন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে জরুরি বিবেচনা করে আশু সমাধানের লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি, তার প্রত্যেকটি যেন আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা হয় এবং সকল ক্ষেত্রে যেন শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আগামির বিশ্ব মানচিত্রে শিক্ষায় উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নামটি যেন থাকে স্বর্ণাক্ষরে উজ্জ্বল ।

লেখক পরিচিতি

অশোকা মাহবুবা

অশোকা মাহবুবা একজন উদ্যোক্তা। তিনি বুটিকস ও ক্যাটারিং নিয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় মুক্ত লেখক হিসেবে শিক্ষার পাশাপাশি নানা বিষয়ে লেখেন।

আরও পড়ুন

ওমর শেহাবের ‘নতুন শিক্ষাক্রমে দুটি বড় ভুল’ : একটি ‘ব্যক্তিগত’ প্রতিক্রিয়া

ওমর শেহাব জানিয়েছেন, তিনি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোয় ‘নতুন শিক্ষাক্রমে...

মতামত

বিজ্ঞান চেতনা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন বিজ্ঞান শিখছে শিশুরা?

নাহিদ নলেজ বিজ্ঞান চেতনা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কী- এ সম্পর্কে বিস্তর কথাবার্তা আমাদের সবার জানা। সেই প্রাথমিক শিক্ষাটুকুই যদি গলদপূর্ণ হয়, তাহলে আর কী কথা...

দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?

মোঃ তৌফিক ইমাম চৌধুরী লিখেছেন বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা আছে তা নিয়ে কি আপনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট? প্রাথমিক কিংবা নিম্নমাধ্যমিক শ্রেণীতে একজনকে অনেকগুলো বিষয়ে পড়তে...
নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।

এই বিভাগের আরও লেখা

নতুন শিক্ষাক্রম : জাপানের সাথে তুলনা কতোটুকু প্রাসঙ্গিক?

বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার নতুন শিক্ষাক্রমের আবশ্যিক বিষয় জীবন ও জীবিকার ষষ্ঠ ও সপ্তম...

কেন ক্লাস করতে চায় না শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা কেন ক্লাস করতে চায় না এই প্রশ্নটি নতুন নয়। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি...

শিক্ষকের মান ও গুণগত শিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, "কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ...

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে কিছু কথা

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো প্রতিটি শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করা। কারো বিশ্ববিদ্যালয়ে, কারো...

জেন্ডার বৈষম্য, শিক্ষা ও সমাজ

জেন্ডার হলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে কোনো একটি সমাজের নারী-পুরুষের প্রত্যাশিত আচরণ।...

মাদার বখশ: রাজশাহীর শিক্ষায় এক অগ্রপথিক

শিক্ষানগরী হিসেবে সারা দেশে সুপরিচিত রাজশাহীর শিক্ষাখাতের সবচেয়ে বড় বিকাশ হয় মূলত গত শতাব্দীর...

আমাদের উচ্চশিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতা

সিরাজুল হোসেন লিখেছেন আমাদের উচ্চশিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কনজেনিটাল সিফিলিস ১৯৪৯ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগ...

টিআইবি প্রতিবেদন, শিক্ষায় দুর্নীতি ও আমাদের উদ্বিগ্নতা

২৯ সেপ্টেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ বা টিআইবি ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের...