১৯৯০ সালে দেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরে বর্তমানে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ। বাস্তবতা অবশ্য সরকারি হিসাব সমর্থন না করলেও গত কয়েক বছরের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের নানা গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার নব্বই শতাংশেরও বেশি এবং ভর্তির এই উচ্চ হার বাংলাদেশ বছরের পর বছর ধরে রাখতে পেরেছে। সারা বিশ্বের জন্যই এটি একটি উদাহরণ। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের উদ্যোগের ফলে এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে উচ্চ ভর্তির হার প্রায়শই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়। আরও উল্লেখযোগ্য যে, প্রাথমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ভর্তির হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
ভর্তির এই উচ্চ হার প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের যে বার্তা প্রদান করে, সেটি আরও আশাব্যঞ্জক হতে পারতো যদি ঝরে পড়ার হার কম হতো এবং মাধ্যমিক স্তরেও শিক্ষার্থীরা এরকম উচ্চ হারে ভর্তি হতে পারতো। প্রাথমিক পর্যায়ে যে সমস্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তাদের প্রায় অর্ধেক পঞ্চম শ্রেণী অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষ করতে পারে না। প্রতি বছরই শিক্ষার্থীরা একটু একটু করে ঝরে পড়তে থাকে। এমনকি পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পরও নানা কারণে সমাপনী পরীক্ষা দিতে না পারায় অনেকে ঝরে পড়ে। সব মিলিয়ে দেখা যায়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সম্মিলিত হিসাবে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। অন্যদিকে যারা প্রাথমিক পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করে, তাদের একটি বিপুল অংশ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হতে পারে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ভর্তির হার তুলনা করলে দেখা যাবে, যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হয় তাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় এবং এই ভর্তি হওয়াদেরও একটি ক্ষুদ্র অংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে।
প্রাথমিক স্তরে ভর্তির দিক দিয়ে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও লেখাপড়া সম্পন্ন করা এবং পরীক্ষায় ফলাফলের ভিত্তিতে সার্বিকভাবে কিন্তু ছেলেরাই মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ভর্তি হওয়ার শিক্ষার্থীদের ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার আগে ঝরে পড়ে। সম্প্রতি দেশে পঞ্চম শ্রেণীর পর সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত বছর দুয়েকের সমাপনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, যাদের সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তাদের অনেকেই নানা কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল যদিও ইতিবাচক অর্থাৎ যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের প্রায় ৯৫ শতাংশই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে; কিন্তু যারা উত্তীর্ণ হতে পারছে না, তাদের বিপুল অংশ ঝরে পড়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বাস্তবতার কারণেই অনেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হতে পারছে না। সার্বিকভাবে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেও দেখা যায়, মেধাতালিকায় মেয়েরা ছেলেদের সাথে সমানভাবেই পাল্লা দিচ্ছে। কিন্তু মেধাতালিকায় থাকা সব শিক্ষার্থীই কি পরবর্তী স্তরের শিক্ষা পাচ্ছে?
কোনো দেশের শিক্ষার গুণগত মান নির্ধারণ করার জন্য ইউনেস্কোর যে ইনপুট-প্রসেস-আউটপুট (IPO) ফ্রেমওয়ার্ক আছে,সেটির দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে- নির্দিষ্ট পর্যায়ের শিক্ষাস্তর সফলভাবে সম্পন্ন করা এবং শিক্ষার পরবর্তী স্তরে গমন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক যে কোনো স্তরেই হোক- বাংলাদেশ এই দুটো ক্ষেত্রেই যথাযোগ্য সফলতা অর্জন করতে পারছে না। ফলে প্রাথমিক স্তরে উচ্চ ভর্তি নিয়ে যে সাফল্য বা গর্ব আমরা করছি, সেটি আসলে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করতে পারছে না? যারা শেষ করছে তারা কেন মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হতে পারছে না? মাধ্যমিক স্তরে যারা ভর্তি হয়, তাদের সবাই কেন মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারছে না? প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরই পরস্পর-সম্পর্কিত এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই এসব প্রশ্নের অভিন্ন উত্তর পাওয়া যাবে। এই প্রশ্নগুলোর সাথে আরেকটি প্রশ্ন যুক্ত হতে পারে- প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে কাদের ঝরে পড়ার হার বেশি- ছেলেদের নাকি মেয়েদের?
শিক্ষার্থীদের এই ঝরে পড়া নিয়ে দেশে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও প্রতিনিয়ত এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি; ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা মাধ্যমিক স্তরে কম ভর্তি হয় এবং মাধ্যমিক স্তরেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা তুলনামূলকভাবে বেশি ঝরে পড়ে। অর্থাৎ একমাত্র প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হওয়া ছাড়া বাদবাকি সব ক্ষেত্রেই মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি অবশ্য নতুন বিষয় নয়; কিন্তু সরকার যেখানে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছে, সেখানে এই পিছনে থাকাটা সার্বিক অর্থেই উদ্বেগজনক। যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষা থেকে ছেলে বা মেয়ে কারোরই ঝরে পড়া কাম্য নয়; কিন্তু নারীদের শিক্ষার হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার যেখানে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরেই পরিচালনা করে আসছে- সেখানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কি ওইসব উদ্যেগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?
বিভিন্ন গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়া এবং বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার মূল কারণসমূহ একই বা কাছাকাছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অভিভাবকের আর্থিক অসঙ্গতি। কিন্তু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হওয়ায় সেখানে এই কারণটি যতোটুকু প্রাসঙ্গিক, তার চেয়ে এটি বেশি প্রাসঙ্গিক মাধ্যমিক স্তরের জন্য। প্রাথমিক স্তরে বরং শিক্ষা নিয়ে পিতামাতার অসচেতনতা, বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশের অভাব, শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব কিংবা বিদ্যালয়ে যাতায়াতে অসুবিধা ইত্যাদি কারণই প্রধান। শিক্ষা নিয়ে একাধিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে- প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে সবক্ষেত্রে এ কারণগুলোই উঠে আসে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, শিশুদের কাছে বিদ্যালয়কে যতোটুকু আকর্ষণীয় করার কথা ছিল আমাদের বিদ্যালয়গুলো ততোটা আকর্ষণীয় হয় নি। ফলে শিশুরা যেমন বিদ্যালয়ের প্রতি অনীহা পোষণ করে, তেমনি এর সাথে যুক্ত হয় অন্যান্য নানা অনুষঙ্গ- যার সামষ্টিক প্রতিফলন হচ্ছে বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়া। প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যেহেতু টাকাপয়সা লাগে না, তাই এ স্তরে ভর্তির হার বেশি। অপরদিকে মাধ্যমিক স্তরের পড়ালেখা অবৈতনিক নয়; বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় অভিভাবককে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে টাকা খরচ করতে হয়। ভর্তি ফি ছাড়াও মাসিক বেতন, নির্দিষ্ট পোশাক, সহায়ক বই, খাতা-কলম ইত্যাদি কিনতেও প্রচুর খরচ করতে হয় অভিভাবককে। ফলে আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে অভিভাবক স্বভাবতই সন্তানের মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহী হবে না। প্রাথমিক পর্যায়েও যে খরচ একেবারের কম তা নয়; শিক্ষার্থীর খাতাকলম ইত্যাদি কেনার পেছনেও প্রচুর খরচ হয়। তাছাড়া দিন দিন সব পর্যায়েই যেভাবে প্রাইভেট টিউশনি প্রথা জাঁকিয়ে বসছে, তাতে অভিভাবকদের প্রাইভেট টিউটরদের পিছনে খরচ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সন্তানের ভালো পড়ালেখার জন্য অনেক অভিভাবক কষ্টেসৃষ্টে এসব ব্যবস্থা করে থাকেন, কিন্তু এসব করতে গিয়ে আস্তে আস্তে লেখাপড়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সন্তানকে পড়ালেখা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাও অপ্রতুল নয়। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার যে খরচ, তাতে অনেক অভিভাবকের একাধিক সন্তান থাকলে তারা স্বভাবতই মেয়েদের শিক্ষার বদলে ছেলেদের শিক্ষাকেই গুরুত্ব দেন। ফলে এ দিক দিয়ে মেয়েরা সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।
মোটাদাগে গবেষণা থেকে উঠে আসা এই কারণগুলোই বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়া কিংবা ঝরে পড়ার অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এসব কারণ চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনের ব্যবস্থাও করা হয় অনেকক্ষেত্রে। এতে হয়তো কিছুটা সুফল মিলে কিন্তু সত্যিকার অর্থেই কি খুব বেশি উপকার হচ্ছে? হলে তো আজকে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়তে হয় না!
যে কোনো ক্ষেত্রেই আমরা সমস্যা ও তার সমাধানকে সাধারণত একরৈখিকভাবে পর্যালোচনা করে থাকি। ফলে অনেক সময় মূল কারণকে চিহ্নিত করা সহজ হয়ে উঠে না। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। একটু ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যে সব কারণে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ে কিংবা শিক্ষার পরবর্তী স্তরে যেতে পারে না, সেই কারণগুলো আসলে পরস্পর-সম্পর্কিত এবং একটির ওপর অপরটি নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো অভিভাবক যদি সামাজিক নিরাপত্তার কারণে তার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে বিদ্যালয়ে না পাঠান, তাহলে বিদ্যালয়ে যতো কিছুই করা হোক না কেন, এই ধরনের ঝরে পড়ার হার রোধ করা যাবে না। একইভাবে কোনো এলাকায় যদি শিশুশ্রম সহজলভ্য হয় এবং পিতামাতারা আর্থিক অসঙ্গতির কারণে শিশুকে বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে উপার্জন করতে পাঠায়, তাহলে বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করলেও ঝরে পড়ার গতি কমানো যাবে না। একেক শিশুর ক্ষেত্রে এসব কারণ একেকভাবে প্রযোজ্য। বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব অনেক বেশি বলে যে শিশুটি বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না, ঠিক তার পাশের বাড়ির শিশুটিই হয়তো নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। অর্থাৎ দুটো শিশুর জন্য বিদ্যালয়ের দূরত্ব একই থাকলেও দুজনের বিদ্যালয়ে না যাওয়ার জন্য দুটো ভিন্ন কারণ প্রযোজ্য। যেহেতু এসব কারণ পরস্পর-সম্পর্কিত, সুতরাং কোনো একক উপায়ে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব নয় এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণকে একসঙ্গে সম্পর্কিত করে কনটেক্সট বা প্রেক্ষাপটভিত্তিক সমাধানের উপায় বের করতে হবে। সারা দেশের শিশুদের কথা চিন্তা করলে এই ধরনের কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়; সেক্ষেত্রে শিক্ষার স্থানীয় প্রশাসনকেই এসব কারণ খুঁজে সে অনুযায়ী প্রতিকারের কাজটুকু সম্পন্ন করতে হবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে কেন মেয়েদের ভর্তির হার কম কিংবা ঝরে পড়া হার বেশি- এর পেছনে স্বভাবতই পিতামাতার আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে আসতে পারে। কিন্তু যদি জানা যায়, বাংলাদেশে ১৮ বছরে পৌঁছার আগেই ৬৪ শতাংশ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়, তখন বিষয়টি ভিন্নভাবে ভাবতে বাধ্য করে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার পর অনেক অভিভাবকই তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে- সেই ব্যস্ততার পেছনে মূল কারণ হতে পারে সেই অভিভাবকের আর্থিক দুরবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, বিদ্যালয়ে যাতায়াতে অসুবিধা, মেয়ে বড় হয়ে গেছে মনে করা, পড়ালেখা নিয়ে অভিভাবকের সচেনতনহীনতা ইত্যাদি নানা কারণ; যার একটি বা একাধিক কারণের সংমিশ্রণে অভিভাবককে মেয়ের বিয়ের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোনো একক কারণের ওপর ছেলেমেয়েদের ভর্তি না হওয়া কিংবা ঝরে পড়ার বিষয়টি নির্ভর করে না। সমন্বিত একাধিক ছোট ছোট কারণই এসব ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে।
সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে এসব সমস্যার সমাধানে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়, সেগুলোর অধিকাংশই একক কারণকে কেন্দ্র করে আবদ্ধ। কিন্তু সমাজ জটিল, জটিল মানুষের মনস্বত্ত্ব এবং সর্বোপরি জীবনধারণ ব্যবস্থাও একাধিক কার্যকরণ দ্বারা প্রভাবিত। সুতরাং শিক্ষার এসব সমস্যা নিয়ে এককভাবে কোনো সমস্যাকে দায়ী করে সে অনুসারে সমাধান খুঁজলে চলবে না। একক সমস্যা নিয়ে কাজ করলে হয়তো সাময়িক কোনো সমাধান আসতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা অকার্যকর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হার সম্প্রতি সময়ে এমন উদ্বেগজনক অবস্থানে পৌঁছেছে যে, এটির তড়িৎ সমাধান বের করা দরকার এবং অবশ্যই এর জন্য প্রেক্ষাপটনির্ভর কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক পরিচিতি
গৌতম রায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
The content of this article is rich enough. I think the education ministers can take some new ideas from here.
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য। আমি জানি না, কর্তৃপক্ষের কারো এদিকে নজর পড়বে কিনা (না পড়াটাই স্বাভাবিক), তবে তারা যদি কোনো উদ্যোগ নেয় এ ব্যাপারে, তাহলে অত্যন্ত খুশি হবো। ধন্যবাদ।