পূর্ণ রাণী পাল, বয়স ১২ বছর। ছোটবেলায় গ্রামে বাস করতো। প্রথম শ্রেণীতে থাকাকালীন সহপাঠী এক মেয়ের সাথে ঝগড়া হয় (যেটা সহপাঠীদের সাথে হয়েই থাকে)। ঝগড়ার পর শ্রেণীশিক্ষক এসে বিচার করেন। পূর্ণর যার সাথে ঝগড়া হয় তার বাড়ি ওই শিক্ষকের বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় শিক্ষক বিচারে পক্ষপাতিত্ব করেন এবং পূর্ণ রাণীকে গালাগালি করেন (যা শিক্ষকের কাছ থেকে কাম্য নয়)। বিশেষ করে মা-বাপ তুলে গালি দেওয়ায় পূর্ণ স্কুল থেকে চলে আসে।
পরে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা গেলেও তার বাবা-মা আর তাকে বিদ্যালয়ে আসতে দেয়নি। এরপর পূর্ণের মা মারা যাওয়ায় তারা শহরে চলে আসে। মা না থাকায় পূর্ণকে বাড়ির সব কাজ করতে হয়। বিশেষ করে রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে হয় বলে আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না। এখন আনন্দ স্কুলে এসেছে কারণ এখানে বিদ্যালয়ে কম সময় থাকতে হয়। তাই সে সকালে বাজার করে রান্না করতে পারে, আবার বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করে বিকেলে রান্না করার সময় পায়। তার ইচ্ছে বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার। জানি না কেন তার এই ইচ্ছে।
আনন্দ স্কুলে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম- তারা কেন আগে পড়তে যায়নি, প্রাথমিক বিদ্যালয় কত ভালো, বেঞ্চে বসা যায় আর এখানে বসতে হয় মাটিতে মাদুর বিছিয়ে। তখন সবার হয়ে পূর্ণ রাণী বলল, স্যার, মাটি হলো সবচেয়ে খাঁটি। আর বেঞ্চে বসলেই কি শুধু পড়া হয়, পড়তে চাইলে যেকোন জায়গায়ই পড়া যায়।
সোলায়মান, বয়স ৯। কাজ করতো একটি মনোহারি দোকানে। আর্থিক কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। দোকানে কাজ করলে মাসিক কিছু টাকা পাওয়া যায়। আবার কাজও শেখা যায়, তাই তার বাবা-মা তাকে বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে দোকানে কাজ করতে পাঠায়। কিন্তু তার পড়ার বড় শখ। এলাকায় যখন আনন্দ স্কুল চালু হয় তখন সে তার দোকানের মালিকের সাথে কথা বলে কিছু সময় চেয়ে নেয়। দুপুর একটা থেকে চারটা পর্যন্ত সে আনন্দ স্কুলে পড়তে আসে। এখানে যেমন তার সময়মতো ক্লাস করতে পারবে আবার খাতা কলম, বই ড্রেসও পাবে, সেই সাথে উপবৃত্তি তখন সে মনে মনে খুশিই হয়। আনন্দ স্কুল হয়তো তার পড়ার ইচ্ছাকে সফল করে তুলবে।
প্রিয়া আক্তার, বয়স ৮ বছর। কাজ করে বিদ্যালয়ের পাশেই একটি বাড়িতে। কাজ বলতে ঘরের কিছু কাজ আর একটা বাচ্চাকে লালনপালন করা। বাড়ির গৃহকর্তী বাচ্চাকে তার কাছে দিয়ে চাকুরিতে চলে যায়। দুপুর পর্যন্ত বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে হয়। এরপর বিকেল পর্যন্ত সে অবসর পায়। গ্রামে থাকতে প্রাইমারিতে পড়েছিল, তবে শহরে এসে আর পড়া হয়নি। এখন মানুষের বাসায় কাজ করে দিন চলে যায়।
প্রিয়া আনন্দ স্কুলে পড়তে এসেছে। তবে বিদ্যালয়ের সময় ছাড়া আর পড়ার আর বেশি সময় পায় না। বয়সটা বেশি না তাই যেটুকু অবসর মিলে তা ভাগাভাগি করে নেয় খেলাধুলা ও পড়ার মাঝে। এখনও শিশু থাকায় বেশি সময় দেয় খেলাধুলায়। তাই পড়ায় মন দিতে চায় না। আর এ কারণে পড়ায় আগাতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। যে বয়সে খেলাধুলা করবে, পড়ালেখা করবে সে বয়সে তাকে আরেকজনের বাচ্চা পালন করতে হয়। জানি না এতো দীর্ঘপথ ও পাড়ি দিতে পারবে কিনা। ওর ইচ্ছে বড় হয়ে ডাক্তার হবে।
এসব শিক্ষার্থীদের মতো দেশের আনাচেকানাচে থাকা ঝরে পড়া শিশুদের জন্য সরকার শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ করে দিতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ বা রস্ক নামে পরিচিত। আর এই রস্কচালিত বিদ্যালয়ের নাম দেওয়া হয়েছে আনন্দ স্কুল। ‘আর নয় ঝরে পড়া- আনন্দ স্কুলে লেখাপড়া’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে দেশের ১৪৮টি উপজেলার ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয়েছে আনন্দ স্কুল।
আনন্দ স্কুল
আট থেকে চৌদ্দ বছরের যেসব শিশুর বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেনি অর্থাৎ নানা কারণে ঝরে পড়েছে, তাদের জন্য কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং রস্ক কর্তৃক অনুমোদিত শিখন কেন্দ্রকে আনন্দ স্কুল নামে অভিহিত করা হয়।
আনন্দ স্কুল অর্থাৎ রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রস্ক প্রকল্প ৯০টি জেলায় আনন্দ স্কুল স্থাপন করে প্রায় ৭,৫০,০০০ জন শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে রস্ক প্রকল্পের ২য় পর্যায়। নতুন ১০০টি উপজেলাসহ মোট ১৪৮টি উপজেলায় রস্ক দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়িত হবে। নতুন উপজেলাসমূহে ২০১৩ সালে এবং ২০১৪ সালে মোট ১৩,০০০ আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুরাতন ৪৮টি উপজেলায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রায় ২,৬০,০০ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পর্যন্ত ২য় পর্যায়ের সকল সুযোগসুবিধা পাবে। উল্লেখ্য, নতুন উপজেলায় প্রতিটিতে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ৫০টি এবং ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৮০টি আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে।
এ প্রকল্প থেকে আনন্দ স্কুলকে অনুদান এবং শিক্ষার্থীকে ভাতা প্রদান করা হবে। প্রকল্পে স্থানীয় জনসমাজকে ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রব্যবস্থাপনা কিটি বা সিএমসির মাধ্যমে আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে। সিএমসি সকল কার্যের জন্য সরাসরি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে।
শিক্ষার্থী
শিক্ষার মূল উপাদানগুলোর একটি হলো শিক্ষার্থী। আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী হবে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু যারা কখনও বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি অথবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে পারেনি, অর্থাৎ ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা হবে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী। একটি আনন্দস্কুলে ২৫-এর চেয়ে কম এবং ৩৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকবে না।
শিক্ষক
উপজেলা শিক্ষা কমিটি কর্তৃক তালিকাভুক্ত এবং সিএমসি কর্তৃক চুক্তিবদ্ধ একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিখন-শেখানোর জন্য আনন্দ স্কুলের শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। মেয়েদের জন্য এসএসসি পাশ এবং ছেলেদের জন্য এইচএসসি পাশ, ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী যে কেউ আনন্দস্কুলের শিক্ষক হওয়ার
যোগ্যতা রাখেন।
কারিকুলাম
উপানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়াই আনন্দস্কুলের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের সময়সূচী হবে নমনীয়। স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে এ সময়সূচী নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই অনুসারে আনন্দ স্কুলের পাঠদান প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। একই পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে একই প্রশ্নে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আনন্দ স্কুলের একজন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।
একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীকে যে সময়টুকু বিদ্যালয়ে থাকতে হয়, তার চেয়ে কম সময় আনন্দ স্কুলে শিক্ষার্থীকে কাটাতে হবে। এই সময়কাল হবে তিন ঘণ্টা।
শিক্ষার্থীদের পোশাক ও অন্যান্য সহায়তা
১৪৮টি উপজেলার সকল আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের একই ডিজাইন এবং রংয়ের স্কুল ড্রেস দেওয়া হবে। স্কুল ড্রেস রস্ক কর্তৃক প্রেরিত অর্থ এবং ডিজাইন অনুসারে আনন্দ স্কুলের শিক্ষকের তত্ত্ববধানে তৈরি করা হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট হারে উপবৃত্তি, খাতাকলম ইত্যাদি প্রদান করা হবে। তাই যে সকল শিক্ষার্থী আর্থিক কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে, তারাও শিক্ষার আলোতে আলোকিত হতে পারবে।
আনন্দস্কুলের কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি বা সিএমসি
প্রতিটি আনন্দ স্কুল পরিচালিত হবে একটি কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি বা সিএমসির মাধ্যমে। সিএমসি গঠন করা হবে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মা/বাবা অথবা অভিভাবক (চারজন নারী-৩, পুরুষ-১), আনন্দ স্কুলের শিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদের দুজন সদস্য (ওয়ার্ড সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য), প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত একজন শিক্ষানুরাগী সদস্য এই মোট ৯ জন সদস্য নিয়ে।
সিএমসি কমিটি উপজেলা শিক্ষা কমিটি, উপজেলা শিক্ষা অফিস, সোনালী ব্যাংক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, আনন্দস্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। মুলত সিএমসি কমিটির কাজ হবে আনন্দ স্কুলের সকল পূর্বশর্ত যথাযথভাবে সম্পাদন করা, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি তদারক করা, আলোচ্যসূচী অনুযায়ী নিয়মিত সভা করা, আনন্দ স্কুলের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন তৈরি করা এবং আনন্দ স্কুলের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়া। এছাড়াও আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করাও সিএমসি কমিটির একটি প্রধান দায়িত্ব। মূলত একটি আনন্দ স্কুল পরিচালিত হবে সিএমসি কমিটির মাধ্যমে। সরকার এবং অন্যান্য সংস্থা যথা, পিও, সোনালী ব্যাংক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যথা- উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর, মনিটরিং অফিসার, সিএম আনন্দ স্কুলের সিএমসিকে সহায়তা করবেন মাত্র।
সিএমসি কমিটির পার্টনার অর্গানাইজেশন
জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা যারা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত এবং এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত তারা রস্ক প্রকল্পে পার্টনার অর্গানাইজেশন বা পিও হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রকল্প কর্তৃক তালিকাভুক্ত পিও আনন্দ স্কুলের সিএমসির সাথে চুক্তির মাধ্যমে কাজে নিযুক্ত হবে। একটি উপজেলায় একটি মাত্র পিও কাজ করবে এবং এর কার্যকাল হবে একবছর। পিওদের মূল দায়িত্ব থাকবে সামাজিক সচেতনা তৈরি করা।
পিও তার কাজে সহায়তা করার জন্য একজন কমিউনিটি মবিলাইজার বা সিএম নিযুক্ত করবে। প্রতিটি আনন্দ স্কুলের বিপরীতে পিও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ প্রাপ্য হবে।
কমিউনিটি মবিলাইজার বা সিএম
মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে আনন্দ স্কুলের সকল স্তরের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে কমিউনিটি মবিলাইজার বা সিএম। পিও প্রতিটি উপজেলার জন্য একজন করে সিএম নিয়োগ দিবে। বিদ্যালয় স্থাপনের ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, শিক্ষার্থী নির্বাচন, জনসমাজকে উদ্ধুদ্ধকরণ, বিদ্যালয় চালু হওয়ার পর শিক্ষককে ক্লাস পরিচালনায় সহায়তা করা, টিসিকে প্রশিক্ষণের সময় সহায়তা প্রদান, ব্যাংকিং কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি কাজ সিএম পরিচালনা করবে। অর্থাৎ সিএম আনন্দ স্কুলের সকল স্তরের সবাইকে সহায়তা করবে।
মনিটরিং অফিসার (এমও)
আনন্দস্কুল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, পরিবীক্ষণ এবং সকল প্রকার ভেলিডেশনের কাজ করার জন্য রস্ক কর্তৃক তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা এবং এমআইএস সেলের তত্ত্বাবধানে একজন মনিটরিং অফিসার বা এমও কাজ করবেন। একজন এমও একটি উপজেলায় সর্বোচ্চ দুইমাস সময় তথ্য সংগ্রহ করবেন।
ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর
রস্ক কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং আইইআর-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কর্মকর্তা যারা উপজেলা পর্যায়ে কাজ করবেন। আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, মান উন্নয়ন, পাঠ পরিচালনায় সহায়তা, শ্রেণী শিক্ষা পর্যবেক্ষণ, অব্যাহত পরিবীক্ষণ এবং উপজেলায় রস্ক কার্যক্রম সমন্বয় করবেন।
স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়
স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিএমসি কমিটির একজন সম্মানিত সদস্য যিনি তাঁর ক্যাচমেন্ট এলাকার আনন্দ স্কুলগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। প্রতিমাসে একবার করে আনন্দস্কুলের শিক্ষকদের সাথে মিটিং করে মাসিক কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক দেখাশোনা করবেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে আনন্দ স্কুলের পার্থক্য হবে সময়সূচিতে। সারা বাংলাদেশে প্রায় একই সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হয়। কিন্তু আনন্দ স্কুল পরিচালিত হবে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে। এছাড়া একই বই এবং একই কারিকুলাম ও প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা হবে। একটি আনন্দস্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক থাকবেন যেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার-পাঁচজন শিক্ষক থাকেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো তাদের সাথেই একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা এইউইও-এর অধীনে আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস্টার ট্রেনিং-এ অংশ নিয়ে তাদের কর্মকালীন অভিজ্ঞতাকে শাণিত করবেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস
উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস সকল কাজের তদারকি করবে এবং সিএমসি কমিটি, টিসি, এমও, পিওদের সহায়তা করবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রাথমিকভাবে স্কুলবহির্ভূত শিক্ষার্থীদের আধিক্য বিবেচনা করে আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠার মুখ্য ব্যক্তি হিসেবে কাজ করবেন, ভাতা ও অনুদান বিতরণ পরিবীক্ষণ করবেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি পরিবীক্ষণ করবেন। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং রস্ক কর্তৃক আনন্দস্কুল সম্পর্কিত অন্যান্য কাজও করবেন।
রস্ক ইউনিট
রূপরেখা এবং বিধিপ্রণয়নপূর্বক প্রকল্প পরিচালনার যাবতীয় ম্যানুয়াল তৈরি করবে, প্রকল্প কার্যক্রম পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার কাজ করবে, বাজেট প্রণয়ন এবং প্রতিবেদন তৈরি করবে, আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠা ম্যানুয়ালে নির্দেশিত নিয়মে অনুসারে আনন্দ স্কুল অনুমোদন করবে।
পরিশেষে বলা যায়, সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় মূলধারায় ফিরিয়ে আনা। আর রিচিং আউট অব চিলড্রেন বা রস্ক এই কাজটি করার জন্য বদ্ধ পরিকর।
মুশফিকুর রহমান: ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর, রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্প – ২য় পর্যায়, বারহাট্টা এবং মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা।
লেখক পরিচিতি
মুশফিকুর রহমান
মুশফিকুর রহমান বাংলাদেশের শিক্ষা ওয়েবসাইটের একজন সহ-সম্পাদক।
রস্ক এই মুহুতে কি আর কোন স্কুল অনুমোদন দিচ্ছেনা?
আমার নাম মোঃ আবদুর রব লাভলু আমি, কমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লক্ষিপুর (৭ নং ওয়ার্ড) গ্রামের এক জন বাসিন্দা। যদিও চৌদ্দগ্রাম এলাকার বিভিন্ন গ্রামের রয়েছে বিষাল শিক্ষার বড় বড় ইতিহাস যার প্রমান হিসাবে বলা যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম কাজী জাফর আহম্মেদ সাহেব। তিনিও অনেক করেছেন চৌদ্দগ্রামের আনাছে কোনাছে শিক্ষার আলোকে ছড়িয়ে চিটিয়ে দিতে। কিন্তুু আমার লক্ষির মত লক্ষিপুর এলাকা ব্রিটিশ আমল থেকইে অনেক পিচিয়ে পরেছে শিক্ষার আলো থেকে। কেউই পার হতে পারেনি এস,এস,সি কিংবা এইচ,এস,সির মত পাবলিক পরিক্ষর গন্ডি। তার প্রধান কারন, অর্থ এর পরের কারন এই অর্থের যোগান শিক্ষা খাতে না দিতে পারায় প্রাথমিক বিদ্যালয় না পার হওয়া। কিন্তুু সেই শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য পথ দেখাল রস্ক অনুমোদিত আনন্দ স্কুল। কিন্তুু যখনি পথ দেখাল লক্ষিপুর এলাকায় আনন্দের মত ছড়িয়ে দিতে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার আলোকে ঠিক তখনি সকল আনন্দ হয়ে যায় পন্ডু! তার কারন নাকি আর অনুমোদন দিবেন না নতুন কোন আনন্দ স্কুল। তাহলে কি বলব, আমার এরাকা কি তাহলে শিক্ষর আলো থেতে ঝড়ে পড়বে? চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার দ্বাযীত্বে থাকা ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর মোঃ রায়হান স্যার কে একাধিক বার কল করেও পাওয়া গেলনা। ব্যর্থ হয়ে পার্শ্ববর্তী এক আনন্দ স্কুলের ম্যাম এর মাধ্যমে জানানো হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন চৌদ্দগ্রামে আর কোন স্কুল দেওয়া হচ্ছেনা।
সেই জন্য আমার কিছু প্রশ্ন আপনাদের কাছেঃ
তাহলে কি বলা যায় এই আনন্দ স্কুল কি তাহলে গুটি কয়েক ওয়ার্ড কিংবা ইউনিনের জন্যই শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে? আর বাদ বাকি গুলো তাহলে কি করবে? তারা কি তাহলে আর শিক্ষার আলো পবেনা? তারা কি সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সেই অন্যআরো আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মত কি স্কুলে যেতে পারবে না? যদি পায় তাহলে কি ভাবে তা সম্ভব? কবে নাগাদ পাবে এই চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার লক্ষিপুর গ্রামের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো?
আমি আমার প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর চাই
E-mail: mdlavlupress@gmail.Com
Mob: 01535006392
ধন্যবাদ, মোঃ লাভলু, এতদিন পর জবাব দেবার জন্যে দুঃখিত, আপনার লেখাটি আগে দেখিনি তাই উত্তর দিতে পারিনি।
রস্ক প্রকল্পের প্রকল্প প্রপোজালে বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় মোট ১৩০ টি করে স্কুল স্থাপন করা হবে। এটা করা হয়েছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। আপনার উপজেলায় সেই কোটা যদি সম্পন্ন হয় তাহলে এই সময়ে আর স্কুল স্থাপন করা সম্ভব হবে না। যেহেতু একটা উপজেলায় এত স্কুল হওয়ার কথা এবং প্রায় উপজেলায় হয়েছে তাই আপনার ইউনিয়নে স্কুল না হওয়ার কথা না।
তবে ভবিষ্যতে যদি প্রকল্পের ডিজাইনে কোন পরিবর্তন আসে তবে হয়ত এর বেশি স্কুল স্থাপন করা সম্ভব হবে।
আর আপনি যে বিষয়টি বলেছেন অর্থাৎ আর্থিক বিষয়টি সম্পর্কে বলতে চাই, রস্কের চেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি বেশিই দেওয়া হয়। সম্ববত আপনার এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বৃত্তির প্রথা চালু আছে, আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার খরচ তেমন হয় না, যা বহন করা এই যুগে কোন অভিভাবকের পক্ষে তেমন কষ্ট হওয়ার কথা না। আর চাইলে নিজ উদ্যেোগেও স্কুল স্থাপন করতে পারেন, এলাকা বাসির সহায়তা নিতে পারেন এই ক্ষেত্রে।
ধন্যবাদ,
মুশফিকুর রহমান
টিসি
রস্ক প্রকল্প
মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা
আমি আরও কিছু প্রশ্ন জানতে চাচ্ছি আনন্দ স্কুলের ছাত্রদের জন্য কত টাকা বিত্তি প্রদান করা হচ্ছে, শিক্ষদের জন্য কত টাকা বেতন দেওার কথা,স্কুল ঘর ভাড়া বাবদ কত টাকা, এই টাকা কত মাস পর দেওার কথা।
আবার কবে 2020সালের সার্কুলা হবে ? জানা যাবে কি ?