‘শুদ্ধস্বর-বাংলাদেশের শিক্ষা’ ত্রৈমাসিক সেরা লেখা পুরস্কার: অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৪ প্রান্তিকের সেরা লেখা- ‘লিডারশিপ ও শিক্ষা: প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’

প্রিয় পাঠক, আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ২০১৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব লেখা ‘বাংলাদেশের শিক্ষা’ ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ‘লিডারশিপ ও শিক্ষা: প্রসঙ্গ বাংলাদশ’ লেখাটি বিচারকের কাছে ত্রৈমাসিক সেরা লেখা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। লেখাটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রিয়াদ আখতার। আর উল্লিখিত  প্রান্তিকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন রিচিং আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর মুশফিকুর রহমান। লেখাটি মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন:

অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকে যে কয়টি লেখা পেয়েছি তার মাঝে যে লেখাটি আমার কাছে ত্রৈমাসিক সেরা মনে হয়েছে তা হলো ‘লিডারশিপ ও শিক্ষা: প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’। অভিনন্দন লেখাটির লেখক রিয়াদ আখতারকে বর্তমান সময়ের সাথে মিল রেখে এত চমৎকার একটি লেখা লেখার জন্য।

লিডারশিপ ও শিক্ষা: প্রসঙ্গ বাংলাদেশ লেখাটি সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে। লেখক তাঁর লেখায় লিডারশিপ ও শিক্ষার সাথে সম্পর্ক নিয়ে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন “নেতৃত্ব ও শিক্ষার লক্ষ্য প্রায় একই- শিক্ষা যেমন আমাদের যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে, আমাদের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং সমাজের উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে, নেতৃত্বও ঠিক তেমন শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের পথে আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে”।

এছাড়া তিনি তাঁর লেখায় নেতৃত্বের চর্চার কথা নিয়ে এসেছেন। তিনি লিখেছেন যে, কেউ কখনও নেতৃত্ব বইপুস্তকের বিদ্যা অর্জন করে গড়ে তুলতে পারে না। নেতৃত্ব একটি চর্চার বিষয়। আর তাই বাইরের দেশগুলোতে স্কুল পর্যায় থেকে কিছু কাজের মাধ্যমে নেতৃত্বদান শেখানো হয়। এতে তাদের মাঝে নেতৃত্ব, সমাজকল্যাণ এবং সৃষ্টিশীল গুণ প্রস্ফুটিত হয় এবং তারা প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের দেশে এরকম কোনো চর্চা নেই।

তিনি তাঁর লেখায় বাংলাদেশে লিডারশিপ চর্চা ও ভলান্টারি ওয়ার্ক নিয়ে UN-এর একটি জরিপের কথা বলেছেন, যেখানে আমাদের দেশের লিডারশিপ ও ভলান্টারি ওয়ার্কের যে চর্চা শুরু হয়েছে, তা অভিজ্ঞতা হিসেবে CV-তে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে কিনা?- তার ওপর একটি জরিপ করা হয়। জরিপের ফলাফল হিসেবে যা পেয়েছেন তা খুবই হতাশাজনক। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে নেতৃত্বের চর্চা ও ভলান্টারি ওয়ার্কে তরুন প্রজন্মের চেয়ে অধিক হারে এগিয়ে আছেন বয়োজ্যেষ্ঠরা।

রিয়াদ আখতার তাঁর লেখায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টেকসই নেতৃত্ব নিয়ে বলেছেন। যেহেতু সমাজে সমস্যার শেষ নেই, তাই সমাজের উন্নয়নের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব বজায় রাখতে হবে। আর তাই দরকার টেকসই নেতৃত্ব। আর এজন্য শুধু কয়েকদিনের নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দিয়েই ছেড়ে দিলে হবে না, নেতৃত্ব চর্চার ক্ষেত্র এবং সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আর এটি সম্ভব শিক্ষার মাধ্যমে। এটি গড়ে তুলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তিনি সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করার কথাও বলেছেন। এছাড়া শিক্ষার কোন স্তরে নেতৃত্ব বিষয়ে কিভাবে পাঠদান করা হবে সে বিষয় নিয়েও বলেছেন । আর এ জন্য কে কে এগিয়ে আসবে, বিশেষ করে কর্তৃপক্ষের কী দায়িত্ব সে সম্পর্কেও তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছেন। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে লেখাটি আমার কাছে এ প্রান্তিকের সেরা মনে হয়েছে।

বিচারক মুশফিকুর রহমানের নির্বাচন অনুসারে অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৩ প্রান্তিকে ত্রৈমাসিক সেরা লেখার জন্য পুরস্কারের দাবিদার হলেন রিয়াদ আখতার। লেখককে অভিনন্দন! আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে তাঁর শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের প্রতিটি স্তর থেকে কীভাবে নেতৃত্ব তুলে আনা যায়, সেই বিষয়গুলো আলাদা আলাদা উল্লেখ করবেন। শিগগিরই লেখকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত ও আমাদের নির্বাচিত ৫০০ টাকা সমমানের অমূল্য উপহার- বই।

আমরা একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাতে চাই বিচারক মুশফিকুর রহমানকেও যিনি তাঁর মূল্যবান সময় বের করে প্রতিটি লেখা পড়েছেন এবং ত্রৈমাসিক সেরা লেখা নির্বাচন করেছেন। তাঁর প্রতি রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতা। নিচে পাঠকদের সুবিধার জন্য লেখকের পরিচয় তুলে ধরা হলো।

রিয়াদ আখতার
রিয়াদ আখতার

রিয়াদ আখতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরতম। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার নানা  দিক ও শিক্ষাকে সমাজের অপরাপর প্রপঞ্চগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে লেখালেখি করে থাকেন।

ঘোষণা

চলতি প্রান্তিক অর্থাৎ ২০১৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ ২০১৪ প্রান্তিকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন লায়লা ফারহানা আপনান বানু। এই দায়িত্বটি পালন করতে সম্মত হওয়ায় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমাদের এই উদ্যোগ বা পুরস্কার সম্পর্কে আপনাদের কোনো প্রশ্ন, মতামত বা পরামর্শ থাকলে এখানে জানাতে পারেন। আশা করছি, এই উদ্যোগের প্রতিটি পর্যায়ে আপনাদেরকে আমরা সাথে পাবো। ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় নিবন্ধ

প্রাথমিক স্তরে ভাষা শেখা : বিষয় – বাংলা

ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা...

আগে ইংরেজি গ্রামার শিখবো, নাকি ভাষা শিখবো?

কোন ভাষার গ্রামার হলো ঐ ভাষার গঠন প্রকৃতি যার...

শিক্ষাব্যবস্থার হালচাল

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা : পিএইচডির পর কী?

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে...

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা

ক্যাডেটসমূহ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।...

আরও কিছু লেখা

অধিক

    প্রফেশনাল লার্নিং কমিউনিটি কী এবং কেন

    একজন শিক্ষক ক্লাসে বললেন, “আমি চাচ্ছি তোমরা সবাই স্বাধীনভাবে...

    মাদার বখশ: রাজশাহীর শিক্ষায় এক অগ্রপথিক

    শিক্ষানগরী হিসেবে সারা দেশে সুপরিচিত রাজশাহীর শিক্ষাখাতের সবচেয়ে বড়...

    প্রফেসর মোহাম্মদ নাসের : নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই

    ড. রহমতউল্লাহ ইমন লিখেছেন মোহাম্মদ নাসের সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর...

    বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় ভর্তি পরীক্ষা : অংশগ্রহণের সুযোগ নাকি অপচয়?

    উচ্চশিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়। সেটির আগে বরং ভর্তি পরীক্ষাকে মানসম্মত করতে হবে। পরীক্ষাপদ্ধতি ঠিক না থাকলে উচ্চশিক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আসতে পারবে না, ঝরে যাবে শুরুতেই।

    শিক্ষাক্রম: প্রাথমিক স্তরের অর্জন উপযোগী যোগ্যতা বনাম বাস্তবে অর্জিত যোগ্যতা

    প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত থাকার কারণে শ্রেণিকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের...

    শিক্ষায় বিনিয়োগ: এক এবং একমাত্র ভাবনা

    মিরন কুমার ভৌমিক, আকলিমা শরমিন, আসমা জাহান মুক্তা, তৌফিক...

    বিবেকানন্দের শিক্ষাদর্শন

    বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ! সাধারণের কাছে এটিই তাঁর পরিচয়।...

    পরিবার থেকে শেখা: বাবা

    দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে মানুষ শুনে, দেখে, অনুকরণ করে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জীবনব্যাপী শিক্ষালাভ করে পরিবার থেকে। বর্তমান সমাজে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আধিপত্য সত্ত্বেও পারিবারিক শিক্ষাই শিশুর আচার-ব্যবহার, মন-মানসিকতা, সামাজিকীকরণ ও চরিত্র গঠনে প্রধান ভুমিকা পালন করে।

    প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

    নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
    বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।