বিচারক আকলিমা শরমিনের নির্বাচন অনুসারে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দারুণ একটি লেখার জন্য পুরস্কারের দাবিদার হলেন মো. আশরাফুজ্জামান। অভিনন্দন। আমরা আশা করবো, প্রান্তিক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে ভবিষ্যতে আপনি আরও নতুন নতুন ভাবনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরবেন।

প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন যে, ২০১২ সালের জুন মাস থেকে ‘শুদ্ধস্বর-বাংলাদেশের শিক্ষা’ সেরা লেখা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কারের নিয়মানুযায়ী, প্রতি তিন মাসে প্রকাশিত লেখাগুলো থেকে নির্ধারিত বিচারক একটি লেখা সেরা লেখা হিসেবে ঘোষণা দিবেন। পাশাপাশি কেন লেখাটি তাঁর কাছে সেরা বলে মনে হয়েছে, তারও একটি ব্যাখ্যা থাকবে বিচারকের পক্ষ থেকে। এই পুরস্কার-প্রক্রিয়ায় ‘বাংলাদেশের শিক্ষা’ ওয়েব সাইটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রকাশনা সংস্থা ‘শুদ্ধস্বর’। সেরা লেখার লেখককে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত ৫০০ টাকা মূল্যমানের বই প্রদান করা হবে। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে ২০১২ সালে প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে সেরা লেখার নির্বাচন হয়ে গেছে।

আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিতে প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে ‘যৌনকর্মীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি স্কুল ও ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া’ বিচারকের কাছে সেরা লেখা পুরস্কার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। লেখাটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ইআইএ-ডিইউ-ওইউ(ইউকে) রিসার্চ কোলাবরেশন প্রোগ্রামে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত ও প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন প্রভাষক মো. আশরাফুজ্জামান। আর জানুয়ারি-মার্চ ২০১৩ প্রান্তিকের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল এডুকেশন কো-অর্ডিনেটর আকলিমা শরমিন। লেখাটি মূল্যায়ন করতে গিয়ে আকলিমা শরমিন বলেছেন:

নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচার করা খুব কঠিন ব্যাপার বলেই আমি মনে করি। আর এই কঠিন কাজটিই করতে হয় একজন বিচারককে। এ-প্রান্তিকের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিষয়টি আবার অনুধাবন করতে পারলাম। তথ্য-উপাত্ত বা লেখনি গুণের বিচারে সব লেখাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদ্বার। কিন্তু দায়িত্বের দায়ভার নিয়ে মাত্র একটিকে সেরা নির্বাচন করতে হয়েছে। আমার বিচারে এ প্রান্তিকের সেরা লেখা পুরস্কার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ‘যৌনকর্মী ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি স্কুল ও ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া’ লেখাটি। এতে আমাদের সমাজের এমন একটি দিকের কথা ফুটে উঠেছে যা আমরা খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলি। এই দৃশ্যমান অথচ লোকচক্ষুর আড়ালের বিষয়টি আমাদের সামনে উপস্থাপন করার সৎসাহসের জন্য লেখককে আন্তরিক সাধুবাদ। অভিনন্দন জানাচ্ছি লেখক মো. আশরাফুজ্জামানকে।

লেখার যে বিষয়টি আমাকে বেশি নাড়া দিয়েছে তা হলো, আমাদের সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া বড় একটি বিষয়ের প্রতি লেখক আলোকপাত। যারা আমাদের সমাজের অংশ, যারা আমাদেরই সৃষ্টি, যুগযুগ ধরে আমরা যাদের ব্যবহার করছি আমাদের নিজেদের অসামাজিক চাহিদা পূরণের উপায় হিসেবে; তাদের সন্তানদের কথা বা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা আমরা কেউ কি ভেবেছি? লেখাটি পড়ার পর নিজের কাছেই এ প্রশ্ন করেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর এসেছে, না। বর্তমানে আমরা অনেকেই সুনির্দিষ্টভাবে শুধু শিক্ষা নিয়ে করি, গবেষণা করি, শিক্ষাক্ষেত্রের নানামুখী উন্নয়নের কথা বলি, কিন্তু এদের কথা তো আমরা অনেকে বলি না। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের আলোকে ২০১৫ সালের মধ্যে আমরা সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে বাধ্য। কিন্তু এই সবার মধ্যে কি আমরা যৌনকর্মীদের শিশুদের কথা চিন্তা করেছি?

লেখাটি পড়ে যে উদ্যোগের কথা আমরা জানলাম তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। লেখককেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিষয়টি সবাইকে জানানোর জন্য। এই উদ্যোগটিকে উদাহরণ হিসেবে সামনে রেখে আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এরকম কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের আহ্ববান জানাতে চাই। আশা করি এমন উদ্যোগ নিয়ে আরও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে। লেখক তার লেখায় সেখানকার শিশুদের স্বপ্নের কথাও তুলে ধরেছেন। ‘তারপর ২০১২ সালে যৌনকর্মীদের ছেলে-মেয়েদের সম্পর্কে বিশেষভাবে জানার সুযোগ পাই। যেখানে একটি স্কুলে সমাজের অন্য বাচ্চাদের সাথে যৌনকর্মীদের সন্তানরা পড়ালেখা করছে। শুধু তাই না তারা স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার এবং জয়া আহসানের মতো অভিনেতা হওয়ার।’  – আমি চাই এই শিশুদের স্বপ্নগুলো যেনো মুছে না যায়, যেন নষ্ট হয়ে না যায়, ব্যর্থ হয়ে না যায়। এরকম সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে তারা যেন বড় হয়ে ওঠে।

এই কার্যক্রমের কিছু বৈষম্যের কথাও লেখক উল্লেখ করেছেন; যেগুলো যৌনকর্মীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে। যেমন- ‘কিছু সহপাঠী ছেলেমেয়ে ঝগড়া হলে তাদেরকে পতিতার বাচ্চা বলে বকা দেয়। সাধারণ বাচ্চাদের সাথে কারো ঝগড়া হলে বিচারে শিক্ষকরা যৌনকর্মীদের বাচ্চাদেরই দোষী সাব্যস্ত করে।’ এ বিষয়গুলো প্রমাণ করে আমাদের মানসিকতার আরও পরির্বতন দরকার। এগুলোই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা সবাই মিলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো- এই আশা ব্যক্ত করছি। আর এভাবেই হয়তো আমরা এসব শিশুদের জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারবো- যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না এবং শিশুরা শুধু শিশু হিসেবে সমাজে পরিচিত হবে। সুন্দর একটা স্বপ্নময় পরিবেশে তারা বড় হয়ে উঠবে।

বিচারক আকলিমা শরমিনের নির্বাচন অনুসারে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দারুণ একটি লেখার জন্য পুরস্কারের দাবিদার হলেন মো. আশরাফুজ্জামান। অভিনন্দন। আমরা আশা করবো, প্রান্তিক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে ভবিষ্যতে আপনি আরও নতুন নতুন ভাবনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরবেন। এসব বিষয়ে নানা সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি আপনার পক্ষ থেকে সমাধানের উপায়গুলোও জানতে চাই আমরা। খুব শিগগিরই আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত ও আমাদের নির্বাচিত ৫০০ টাকা সমমানের অমূল্য উপহার- বই।

আমরা একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাতে চাই বিচারক আকলিমা শরমিনকেও যিনি তাঁর মূল্যবনা সময় বের করে প্রতিটি লেখা পড়েছেন এবং সেরা লেখা নির্বাচন করেছেন। পাশাপাশি তিনি সেরা লেখা পুরস্কার করার জন্য নির্বাচনের যে চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি থেকেও আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, লেখক মো. আশরাফুজ্জামান যে বিষয়টির উত্থাপন করেছেন, সেটি ছুঁয়ে গেছে অন্যদেরও। বিচারকের প্রতি রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতা।

নিচে পাঠকদের সুবিধার জন্য মো. আশরাফুজ্জামানের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

মো. আশরাফুজ্জামান- বাংলাদেশের শিক্ষা
মো. আশরাফুজ্জামান

মো. আশরাফুজ্জামান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর) রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন ইআইএ-ডিইউ- ওইউ (ইউকে) রিসার্চ কোলাবরেশন প্রোগ্রামে। পাশাপাশি তিনি খন্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আইইআরের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে বিএড (সম্মান) ও এমএড ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি আইইআরে ‘Impact of In-service Training (Cluster Meeting) on Primary Teachers Classroom Practice’ শীর্ষক শিরোনামে এমফিল গবেষণা করছেন। পেশাগত জীবন শুরু করেন আইইআরে গবেষক হিসেবে ইআইএ-ডিইউ-ওইউ (ইউকে) রিসার্চ কোলাবরেশন প্রোগ্রামে। ইতোমধ্যে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার (ব্যানবেইস, এনসিটিবি, ইউনেস্কো, জাইকা, ডিএফআইডি, আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, এইসিড-একশনএইড-ইউল্যাব-লিডার) প্রজেক্টে গবেষণার কাজ করেছেন। তার ইচ্ছা শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করার। স্বপ্ন দেখেন প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার।

লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ২০০৭ সাল থেকে। দেশি-বিদেশি জার্নালে (নায়েম, নেপ, বাফেড, নেলটা) তার ছয়টি প্রবন্ধ ও একটি বুক চ্যাপ্টার প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া অনলাইন এবং পত্রিকাতেও নিয়মিত লিখেন। তিনি মূলত শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শ্রেণীকক্ষ কার্যক্রম, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, জেন্ডার বৈষম্য, ক্লিনিক্যাল সুপারভিশন ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন।

ঘোষণা

চলতি প্রান্তিক অর্থাৎ ২০১৩ সালের এপ্রিল-জুন ২০১৩ প্রান্তিকের জন্যও বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন আকলিমা শরমিন। এই দায়িত্বটি পালন করতে সম্মত হওয়ায় আকলিমা শরমিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমাদের এই উদ্যোগ বা পুরস্কার সম্পর্কে আপনাদের কোনো প্রশ্ন, মতামত বা পরামর্শ থাকলে এখানে জানাতে পারেন। আশা করছি, এই উদ্যোগের প্রতিটি পর্যায়ে আপনাদেরকে আমরা পাশে পাবো। ধন্যবাদ।

Sending
User Review
0 (0 votes)

লেখক সম্পর্কে

সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা

এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য লিখুন