পরীক্ষা মানেই একজন শিক্ষার্থীর জন্য শারীরিক ও মানসিক চাপ। তবে আমাদের দেশে এই চাপ চূড়ান্ত রূপ নেয় মূলত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার পরপরই। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পরীক্ষাগুলোর একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি থাকে। পাঠ্যসূচির সীমানা থাকে এবং মোটামুটি একটি চেনা-জানা পরিবেশে পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকে। কিন্তু এর পরেই উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য অবতীর্ণ হতে হয় ‘ভর্তি পরীক্ষা’ নামক মহাযুদ্ধে।

তাই এইসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে কেউ যদি একদিনও সময় নষ্ট করে, ধরে নেওয়া হয় সে এই মহাযুদ্ধের প্রস্তুতিতে একদিন পিছিয়ে গেলো। আর এই সুযোগে একগুচ্ছ কোচিং সেন্টারও হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। সুতরাং আগের শারীরিক ও মানসিক চাপের সাথে যুক্ত হয় আর্থিক চাপ।

এটি গেলো নিজেকে প্রস্তুতির পর্ব। তারপর শুরু হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ কিংবা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পর্ব। দেশে ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবার প্রথমবারের মতো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও সর্বমোট ৭৭টি দিন লাগবে এই ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদভিত্তিক কিংবা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার জন্য।

ধরা যাক, একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী যদি দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি অনুষদ কিংবা দশটি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়, তাহলে তাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনন্ত দশদিন ছুটতে হবে। তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের একই প্রান্তে হবে এমনটি ভাবা যায় না। আর হলেও সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চয়ই পাশাপাশি তারিখে পরীক্ষা হবে না। সুতরাং, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়ে যাতায়াত করা একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য মোটেও সহজ কাজ নয়। আর শিক্ষার্থী যদি হয় মেয়ে তাহলে তো অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের সমান যাতায়াত করতে হবে।

এবার আর্থিক ব্যাপার। দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে কমপক্ষে দশটি ভর্তি ফর্ম কিনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে-ভেদে এসব ফর্মের দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত। তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটভিত্তিক ফর্মের দাম ৫০০ টাকার ওপরে। এর সাথে আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত আর থাকা-খাওয়ার খরচ। মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভাব হয় ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বাস কিংবা হোটেল মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।


ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিতভাবে নেয়া গেলে নিঃসন্দেহে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এবং এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত সর্বমহলে সমাদৃত হবে তাতে সন্দেহ নাই। তবে সব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার ভালোমন্দ যাছাই করে নেওয়া উচিত। তাই আমাদের এটিও ভাবতে হবে এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কুফলগুলো।


এতোকিছু মোকাবিলা করে একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কতোটুকু প্রস্তুতি নিয়ে, সুস্থ মাথায় এই ভর্তিযুদ্ধ মোকাবিলা করতে পারবে সেটি সহজেই অনুমেয়। এ-সবকিছু বিবেচনায় একই ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিতভাবে নেয়া গেলে নিঃসন্দেহে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এবং এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত সর্বমহলে সমাদৃত হবে তাতে সন্দেহ নাই। তবে সব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার ভালোমন্দ যাছাই করে নেওয়া উচিত। তাই আমাদের এটিও ভাবতে হবে এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কুফলগুলো।

প্রথমত, ধরা যাক, প্রশ্নফাঁসের কথা। বর্তমানে দেশে পরীক্ষার সাথে প্রশ্নফাঁসের কথাটি এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও খুব ভালোভাবে প্রশ্নফাঁস কথাটির মানে জানে। বড় কোনো পাবলিক পরীক্ষা মানেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর দালাল চক্র মুখিয়ে থাকে প্রশ্নফাঁসের আশায়। ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মেডিকেল কলেজগুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হয় এবং আমরা জানি প্রতিবছর স্বল্পবিস্তরে হলেও কিছু প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। আর ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের কথা বিবেচনা করলে তো বলতে হবে ওটা ছিলো একটি জাতীয় দূর্যোগ। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ওই বছর ছিল প্রশ্নফাঁসের মহোৎসব, ফটোকপির দোকানেও মিলেছিলো প্রশ্ন।

সে দিক দিয়ে আমি বলবো, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা খুবই কম। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অন্যতম কারণ হিসেবে আমি মনে করি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। এখানে প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে শুরু করে প্রতিটি কলেজে প্রশ্ন পৌঁছাতে শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ অনেক স্তরের লোক জড়িত থাকেন। এতোবড় একটি চেইনের প্রতিটি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। আর সমন্বিত হওয়ায় কেউ এটিকে নিজের প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানির চিন্তাও হয়তো করে না। এসব প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকতে পারে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিকট আত্মীয়। ফলে দুয়েকটি প্রশ্ন বেহাত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

খুব কাছ থেকে জড়িত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করার সুবাদে বলতে পারি, এখানে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপা বা ফটোকপি, কেন্দ্রে বিতরণ সবই হয় শিক্ষক দিয়ে, অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। প্রশ্ন মডারেশন হওয়ার পর কম্পোজ, প্রিন্ট, ফটোকপি, এমনকি স্টাপলার শেষে খামবন্দি করেই শিক্ষকরা কক্ষ থেকে বের হন। আর এসব কক্ষে শিক্ষকদের ঢুকতে হলে আগেই মোবাইলসহ অন্যান্য সব ডিভাইস জমা দিতে হয়। তার ওপর পুরো কক্ষটিই থাকে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যার মনিটর থাকে ভিসি মহোদয়ের টেবিলে।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ছাপায়। এসব ক্ষেত্রে ছোট পরিসর হওয়ায় অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তারপরও যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে না এমনটি বলা যাবে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁসের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেই মুলত প্রশ্নফাঁস হয়। আর এসবের বেশিরভাগই হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে।

তাছাড়া প্রতিটি শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে রাতদিন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে। কারণ তারা এই পরীক্ষাটিকে নিজের মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করেন। কোনো শিক্ষকের নিকট আত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলে তারা এই ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন কিংবা তাঁকে অংশ নিতে দেয়া হয় না। সমন্বতি ভর্তি পরীক্ষায় এই বিষয়গুলো কতোটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, সেটি কিন্তু আগেই ভাবার বিষয়। প্রশ্নফাঁসের এই ভয়াবহ যুগে এমন কোনো পদ্ধতি প্রচলন করা ঠিক হবে না যেখানে সামান্য হলেও প্রশ্নফাঁসের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।


একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, উভয়ের বাছাইকরন পদ্ধতি সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্ববিরোধী। পৃথিবীর এমন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল যাদের শিক্ষার্থী ভর্তির মানদণ্ড একই। বিশ্ববিদ্যালয়কেই ঠিক করতে হবে তারা কোন মানদণ্ডে শিক্ষার্থী বাছাই করবে।


দ্বিতীয়ত, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, উভয়ের বাছাইকরন পদ্ধতি সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্ববিরোধী। পৃথিবীর এমন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল যাদের শিক্ষার্থী ভর্তির মানদণ্ড একই। বিশ্ববিদ্যালয়কেই ঠিক করতে হবে তারা কোন মানদণ্ডে শিক্ষার্থী বাছাই করবে।

আমরা জানি, একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান একেক রকম। তার কারণ হিসেবে মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান। স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় সেই সুযোগ অনেকখানিই কমে যাবে।

আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করছি যে, অনেক তরুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-বিজ্ঞান-গবেষনায় অনেক প্রবীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিছিয়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সমন্বিতভাবে আগাতে চাইলে কারো মান কমিয়ে এবং কারো মান বাড়িয়ে একত্র করে নিতে হবে। সেটি বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

তৃতীয়ত, একটি এক ঘণ্টার পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ১২ বছরের শিক্ষা কিংবা মেধা যাচাই করতে আমরা প্রায়ই ব্যর্থ হই। মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরাও নানা কারণে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনের একটি এক-ঘণ্টার পরীক্ষায় নিজেকে তুলে ধরতে পারে না। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে ওই শিক্ষার্থী আর দ্বিতীয়বার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ হারাবে।

ধরা যাক, কেউ প্রকৌশলী হতে চায় এবং তার সেই যোগ্যতাও আছে। কিন্তু কোনো বিশেষ কারণে (যেমন, অসুস্থতা) বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় সে ভালো করতে পারেনি কিংবা অংশগ্রহণই করতে পারেনি। বর্তমান পদ্ধতিতে তার জন্য অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তার স্বপ্নপূরণের পথ খোলা থাকবে। কিন্তু কেউ ডাক্তার হতে চাইলে তাকে নির্দিষ্ট একটি এক-ঘণ্টার পরীক্ষায় ভালো করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নাই।  

উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে বর্তমান স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখতে হলেও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কথা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই ভাবতে হবে। কীভাবে তাদের ভোগান্তি কমানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচাইতে মোক্ষম সমাধান হতে পারতো মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। এই দুটি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাথী বাছাই কিংবা শর্টলিস্ট করা গেলে এ সমস্যার খুব সহজেই সমাধান করা যেতো।

আমার জানামতে, বিদেশি অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রেডে শিক্ষার্থী বাছাই হয় মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে। ভর্তি পরীক্ষা খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়েই চালু আছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমরা এই পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ওপর ভরসা রাখতে পারি না। গণহারে এ প্লাস দেয়ার প্রবণতা আর প্রশ্নফাঁসের কারণে এই পরীক্ষাদুটোর ফলাফলই আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।

তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুটি ফলাফল দিয়ে শিক্ষার্থী বাছাই করলে মেধাবীদের নিশ্চিত বঞ্চিত করা হবে। আর চাইলেও এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের করণীয় কিছুই নেই। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আর মান-সম্মতভাবে উত্তর-পত্র মূল্যায়ন করে এসএসসি আর এইচএসসিসহ সকল পাবলিক পরীক্ষার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এখুনি ভাবতে হবে। যেহেতু এই মুহূর্তে এই কার্যকর উপায় বিশ্ববিদ্যালয় নিতে পারছে না, তাই তাদের অন্যভাবে ভাবতে হবে। যেসব শিক্ষকে স্বতন্ত্র পরীক্ষার পক্ষে কথা বলেন, ধরে নেওয়া হয় তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই এটির পক্ষে। কথাটা হয়তো কারো কারো ক্ষেত্রে একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। কারণ, আমার জানামতে ভর্তি পরীক্ষা শেষে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেশ কিছু টাকা পেয়ে থকেন।

তাই আমার মতে, ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে সরকারি খরচে কিংবা একটি ন্যূনতম ফি তে। কেউ রাখবে ২০০ টাকা আর কেউ রাখবে ২০০০ টাকা এটি হতে পারে না। শুধু সেই পরিমাণ অর্থই নিতে হবে, যা দিয়ে শুধু ভর্তি পরীক্ষাই চালানো যায়, শিক্ষকদের অতিরিক্ত অর্থপ্রাপ্তির জন্য নয়। দরকার হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসি পরীক্ষা শেষে বিশেষ অডিট পরিচালনা করতে পারে এই অর্থের ব্যাপারে।

তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক তারিখ নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন, রংপুর অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা পাশাপাশি তারিখে রেখে, তারপরেই রাজশাহী অঞ্চলের। যেমন ধরা যাক, পবিপ্রবি-এর ভর্তি পরীক্ষা ২০ ও ২১ ডিসেম্বর হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাতে একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর একই অঞ্চলে বার বার যেতে হবে না।


ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে সরকারি খরচে কিংবা একটি ন্যূনতম ফি তে। কেউ রাখবে ২০০ টাকা আর কেউ রাখবে ২০০০ টাকা এটি হতে পারে না। শুধু সেই পরিমাণ অর্থই নিতে হবে, যা দিয়ে শুধু ভর্তি পরীক্ষাই চালানো যায়, শিক্ষকদের অতিরিক্ত অর্থপ্রাপ্তির জন্য নয়।


পাশাপাশি তারিখে পরীক্ষা নেয়ার প্রধান সমস্যা হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও পরীক্ষা নিতে হবে। আর এসব কাজের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে স্কুল-কলেজে কেন্দ্র ব্যবস্থা করা কঠিন। তবে প্রশাসনিক নির্দেশ নিয়ে স্কুল-কলেজের প্রধানদের সাথে কথা বললে এ সমস্যা সমাধান কঠিন কিছু হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া ডিসেম্বর মাসে অধিকাংশ বিদ্যালয় ছুটি থাকে। দরকার হলে সকালের শিফটের ক্লাস শেষ করে বিকেলেও পরীক্ষা নেয়া যায়।

বিগত কয়েক বছর ধরে সব উপাচার্য মহোদয় সভা করে ভর্তি-পরিক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেন, যাতে একই দিনে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা না হয়। এর সাথে সাথে অঞ্চলভিত্তিক পাশাপাশি তারিখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালগুলোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মিলে বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে ভাবলে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা বহাল রেখেও হয়ত আরো অনেক সুন্দরভাবেই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর উপায় বের করা যেতে পারে।

Sending
User Review
5 (1 vote)

লেখক সম্পর্কে

তসলিম মাহমুদ

তসলিম মাহমুদ

তসলিম মাহমুদ: সহকারী অধ্যাপক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; পিএইচডি গবেষক, মনাশ ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া।

মন্তব্য লিখুন