আলোচ্য বিষয়সমূহ
গবেষণা শুরু বা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো একটি ভালো গবেষণা বিষয় নির্বাচন। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণা বিষয় নির্বাচন বা বিকাশ করার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। স্বতন্ত্র কিংবা উচ্চশিক্ষায় কখনও কখনও একজন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচিত হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষয় নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একজন গবেষককে সম্পূর্ণ নিজ আগ্রহে ও দক্ষতায় সম্পন্ন করতে হয়। একইসাথে-বিষয় সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্য সংকলনের সময় যথেষ্ট মনোযোগী ও সচেতন হতে হয়।
কার্যত, একটি উপযুক্ত গবেষণা বিষয় নির্বাচন করা সহজ নাও হতে পারে। ফলে একটি আকর্ষণীয়, প্রাসঙ্গিক, ও উপযুক্ত গবেষণা বিষয় নির্বাচন একজন গবেষকের প্রথম চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বপ্রথম করণীয় হলো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিম্নোক্ত কয়েকটি পূর্বধারণা ও প্রাককর্মকাণ্ড একজন গবেষককে বিষয় নির্বাচনে সহায়তা করতে পারে।
– আগ্রহী একটি বিষয় নির্বাচন করুন। সঠিক বিষয় নির্বাচন আপনার গবেষণা প্রক্রিয়াকে প্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
– নির্বাচিত বিষয়টিকে পরিচালনযোগ্য অবস্থায় সংকুচিত করুন।
– আপনার বিষয় খুব বিস্তৃত হলে আপনি খুব বেশি তথ্য পাবেন এবং ফোকাস করতে সক্ষম হবেন না।
– ব্যাকগ্রাউন্ড আপনাকে আপনার বিষয় নির্বাচনের সীমাবদ্ধতা এবং সুযোগ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে।
– আপনার অধ্যাপক বা গবেষণা সহকর্মী বা বন্ধুর সঙ্গে আপনার ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করুন। পরামর্শে আসা বিষয়গুলোর আলোচনা আপনার নির্বাচিত বিষয়কে ফোকাস করতে সহায়তা করবে।
– কেন, কে, কী, কোথায় এবং কখন প্রশ্ন করুন।
– কেন আপনি এই বিষয়টিকে নির্বাচন করেছেন? এটি সম্পর্কে আপনার মতামত কী? আপনার কী জড়িত বিষয় সম্পর্কে কোনো মতামত আছে?
– কে এই বিষয়ে তথ্য সরবরাহকারী বা কে এ-সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে পারে? কে এই বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হবে?
– এই বিষয়ে প্রধান প্রশ্ন কী? বিষয় সম্পর্কে কী বিতর্ক আছে? বিবেচ্য বিষয়ে কী সীমাবদ্ধতা আছে?
– কোথায় আপনার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ (স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক)?
– কখন আপনার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ? এটি কি একটি চলমান বর্তমান সমস্যা বা একটি ঐতিহাসিক সমস্যা? আপনি কি সময়সীমার দ্বারা আপনার বিষয় তুলনা করতে চান?
গবেষণা শুরু বা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো একটি ভালো গবেষণা বিষয় নির্বাচন। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণা বিষয় নির্বাচন বা বিকাশ করার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। স্বতন্ত্র কিংবা উচ্চশিক্ষায় কখনও কখনও একজন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচিত হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষয় নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একজন গবেষককে সম্পূর্ণ নিজ আগ্রহে ও দক্ষতায় সম্পন্ন করতে হয়।
পদক্ষেপ ১: ধারণার জন্য ব্রেইনস্টর্ম করুন
ব্রেইনস্টর্ম গবেষণা বিষয় নির্বাচনের সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এমন একটি বিষয় নির্বাচন করা প্রয়োজন যা পরিচালনাযোগ্য, পর্যাপ্ত উপাদানসম্মৃদ্ধ, এবং যা একজন গবেষককে পূর্ববর্তী কার্যপ্রতিবেদন বা ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে পড়তে ও বুঝতে সক্ষম করবে। বিষয় উপযোগী ও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন এক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ,
– নির্বাচিত বিষয়টির বর্তমান সামাজিক, অর্থনৈতিক, বা রাজনৈতিক বিতর্কের ওপর কি কোনো দৃঢ় মতামত আছে বা থাকলেও তার পরিসীমা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত?
– নির্বাচিত বিষয়টির সাম্প্রতিক কোনো প্রতিবেদন কি আপনার আগ্রহকে প্রকাশ করছে বা আপনি কি উদ্বিগ্ন?
– নির্বাচিত বিষয়টির সাম্প্রতিক প্রকাশিত সম্ভাব্য সমস্যা বা সমাধান সম্পর্কে কি আপনি আরও জানতে বা জানাতে চান?
পদক্ষেপ ২: সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য পড়ুন
প্রাসঙ্গিক ও বিশদ ব্যাকগ্রাউন্ড অধ্যয়ন নির্বাচিত বিষয়ের কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের একটি মহান উৎস হিসেবে বিবেচিত। কার্যত, ব্যাকগ্রাউন্ড অধ্যয়নের সময় শীর্ষস্থানীয় ও সাম্প্রতিক নিবন্ধসমূহকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান বাঞ্ছনীয়। একটি বিস্তৃত সারসংক্ষেপ আপনার নির্বাচিত ধারণাটির বিস্তৃতি, সীমাবদ্ধতা এবং আপনার জিজ্ঞাসিত বা উদ্ধৃত প্রশ্নসমূহের উত্তর ও সম্পৃক্ততা প্রকাশ করতে সক্ষম। নির্বাচিত বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যাকগ্রাউন্ড নিবন্ধ বা তথ্য গুগল স্কলার ওয়েবসাইটের সার্চবক্সে “নির্বাচিত বিষয়ের নাম” (ডবল কোটেশন-এর ভেতর) লিখে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
পদক্ষেপ ৩: নির্বাচিত বিষয়ের উপর ফোকাস করুন
আপনার নির্বাচিত বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে পরিচালনাযোগ্য অবস্থায় রাখা উচিত। নির্বাচিত বিষয়টি খুব বিস্তৃত বা সঙ্কীর্ণ হলে উক্ত বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা খুব কঠিন। একটি বিষয় সুনির্দিষ্ট, সীমাবদ্ধ, তথ্যপূর্ণ ও পরিচালনাযোগ্য করার কিছু সাধারণ উপায় হলো নির্বাচিত বিষয়টিকে বিষয়-সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট উপাদান দ্বারা আবদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করা। যেমন, ভৌগলিক এলাকা, সাংস্কৃতিক অবকাঠামো, টাইমফ্রেম, নির্দিষ্ট ব্যবহারবিধি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, গবেষণা পরিচালনা অপেক্ষাকৃত কঠিনতর হতে পারে যদি নির্বাচিত বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সীমিত, অতিসাম্প্রতিক, বিস্তৃতভাবে আন্তঃবিষয়ক ও অধিকতর জনপ্রিয় হয়। উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচিত বিষয়টি স্থানীয়ভাবে খুব বেশি সীমাবদ্ধ বা অতিসাম্প্রতিক হলে বিষয়-সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য বা রেফারেন্স এর ব্যাপ্তি সংকুচিত হতে পারে। এছাড়াও প্রকাশিত জার্নাল নিবন্ধদ্বারা উপলব্ধ নাও হতে পারে। একইভাবে, অতিমাত্রার আন্তঃবিষয়ক ও জনপ্রিয় বিষয় আপনার ফোকাসকে বিভ্রান্তও করতে পারে।
পদক্ষেপ ৪: গুরুত্বপূর্ণ কি-ওয়ার্ডগুলোর তালিকা তৈরি করুন
যে সকল শব্দ বা শব্দগুচ্ছ আপনার নির্বাচিত বিষয়কে সঠিক ও সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে সক্ষম, তাদের কি-ওয়ার্ড সন্ধান করুন এবং তালিকা তৈরি করুন। ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য অধ্যয়নের সময় তালিকাভুক্ত কি-ওয়ার্ডগুলোর বিস্তৃতি, ব্যবহার ও উপযোগিতা আপনার নির্বাচিত বিষয়টির মূল ধারণাগুলোকে সমন্বিত করতে সহায়তা করবে।
পদক্ষেপ ৫: নমনীয় হোন
গবেষণা চলাকালীন গবেষণা বিষয়ের পরিবর্ধন, পরিমার্জন, পরিবর্তন ও পরিশোধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে, আপনি যা পেয়েছেন তা সম্পর্কে আপনি কখনোই নিশ্চিত নাও হতে পারেন। কিংবা আপনি যা পেয়েছেন, তা অতিসঙ্কীর্ণ বা অতিবিস্তৃত। ফলে আপনার ফোকাসকে সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করার প্রয়োজন হতে পারে।
অপরপক্ষে, আপনি হয়তো আপনার নির্বাচিত বিষয়টি পরিবর্তন করতে চাইবেন না। সেক্ষেত্রে, আপনি আপনার নির্বাচিত বিষয়টির অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য বা পরিচালনাযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ কিংবা সংযোজন করতে পারেন। একইসাথে, আপনাকে আপনার বিষয়ের পরিধি ও এর গভীরতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। উপর্যুক্ত ধাপগুলো আপনার বিষয় সংশোধনের সঠিক সময় ও স্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- উচ্চশিক্ষার ভাষা এবং শিক্ষায় এর প্রভাব
- শ্রেণিকক্ষ গবেষণা : কী, কেন এবং কীভাবে
- বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা
- গবেষণা কী এবং কেন?
- একাডেমিক স্বাধীনতা
ড. এ এস এম ইফতেখার উদ্দিন: সহযোগী অধ্যাপক, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।