হুবাইব মোহাম্মদ ফাহিম লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কে হবে সে প্রসঙ্গে
বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান কে হবেন— এই প্রশ্নের উত্তরের আগে বিশ্ববিদ্যালয় কী, কী এর দায়িত্ব ও সফলভাবে এর লক্ষ্যগুলো অর্জন করার পূর্বশর্তগুলো জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কারাগারের মতো সংশোধনমূলক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যাংক-বীমার মতো মুনাফাভোগী বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মতো বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন এমন প্রতিষ্ঠানও নয়। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার জায়গা, এর মূল লক্ষ্য হল জ্ঞান সৃষ্টি, বিতরণ ও সংরক্ষণ। এখানে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনাকারী ব্যক্তিবর্গ জ্ঞানচর্চা করে নতুন নতুন জ্ঞান উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাতিগঠনের মত কঠিন ও পবিত্র দায়িত্ব পালন করেন।
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় নিজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ জ্ঞানচর্চার বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত স্টেকহোল্ডারগণ রাষ্ট্র ও তার জনগণের স্বার্থে পূর্ণস্বাধীনতা ভোগ করবেন। প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দায়িত্ব-কর্তব্য এবং সাফল্যের পূর্বশর্তগুলোর খোঁজ পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটরসর্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচের মহাবাণীটিতে,
“আমরা যারা জ্ঞানচর্চা ও অন্বেষণে এখানে সমবেত তাদের পবিত্র দায়িত্ব এ-মৌলনীতি চিরভাস্বর রাখা যে বিশ্ববিদ্যালয় এমন স্থান যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নরনারীরা মিলিত হয় জ্ঞানান্বেষণ ও জ্ঞানাগ্রসরনের জন্যে। জ্ঞানচর্চায় আমরা স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন যারা বিধিবিধান, অনুশাসন ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় খর্ব করতে উদ্যত হবে, আমরা তদের প্রতিহত ক’রে জ্ঞানচর্চার স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসন যে-কোনো পরিস্থিতিতে রক্ষা করবো। আমরা যার নামে আত্মোৎসর্গিত, তার নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসন।” (আজাদ: ১৯৯৯:২৮৭)
বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি জাতির জন্য অগ্রপথিকস্বরূপ, জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে উপাচার্যের পদটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে উপাচার্যের চেয়ার যে ব্যক্তি অলঙ্কৃত করবেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে অত্যন্ত আপন করে নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্যকে সমুন্নত রেখে দায়িত্ব পালন করবেন এবং একে জ্ঞানমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে বিগতদিনে অর্জিত জ্ঞান-দক্ষতা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
তাই উপাচার্য হিসেবে প্রশাসক নয়, বরং এমন অধ্যাপক প্রয়োজন যিনি নিজে জ্ঞানচর্চা করেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করেন। তবে বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসক নিয়োগের প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়েও আমাদের ভাবাচ্ছে। কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশৃঙ্খলা এতোই অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পৌঁছে যায় যে, মনে হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যাপকের চেয়ে প্রশাসক নিয়োগ করলে বিদ্যমান অরাজক অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। কিন্তু এতে বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল দায়িত্ব (জ্ঞান সৃষ্টি, বিতরণ ও সংরক্ষণ) থেকে সরে যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হবে পেশাদার শিক্ষণ বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয়ে।
বিদ্যমান নৈরাজ্য ও অবক্ষয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করে পরিবেশ শিক্ষা-উপযোগী করে তুলতে প্রশাসক নিয়োগের অবশ্যই গুরুত্ব আছে। যদি প্রশাসক বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর হন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় অনেকাংশেই অরাজকতা থেকে মুক্তি পাবে এবং শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। প্রশাসক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের শিক্ষার চর্চা করা হয় সে বিষয়ে যদি প্রশাসক অভিজ্ঞ না হন বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকে তবে শিক্ষার এই সুষ্ঠু পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজে আসবে না।
একজন ব্যক্তি যতোই প্রশাসনিকভাবে দক্ষ হোক না কেন, তিনি যে জ্ঞানের ওপর দক্ষ নন সে জ্ঞান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে তাঁর নেতৃত্ব কোনো সুফল বয়ে আনবে না। তাছাড়া এই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে প্রশাসককে নানা বিষয়ে কঠোর হতে হয়, অনেকক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতার পায়েও শিকল পরাতে হয়। যদি বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যক্তিস্বাধীনতার সাথে এরকম আপোষের ঘটনা ঘটে, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করবে। প্রশাসক নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্য পূর্ণ স্বাধীনতাকে ছদ্মস্বাধীনতায় রূপান্তর করবে, রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা দিলেও প্রশাসকের কঠোর শাসন সে স্বাধীনতাকে খর্ব করবে।
শৃঙ্খলিত পরিবেশ সৃষ্টিকর্মের সহায়ক নয় এবং সৃষ্টির সাথে সম্পর্কহীন জ্ঞানচর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নয়। সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন অবাধ স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসন যার মর্ম একজন প্রশাসক উপাচার্যের চেয়ে অধ্যাপক উপাচার্য বেশি বুঝবেন। বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান বা উপাচার্য শুধু প্রশাসনিক অভিভাবক নন, তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল স্টেইকহোলডারদের একাডেমিক অভিভাবকও বটে। উপাচার্য তাঁর একাডেমিক দক্ষতার মাধ্যমে তাঁর সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুপ্রেরণা যোগাবেন, একাডেমিক এক্সলেন্সির পথ দেখাবেন। পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষা ও গবেষণা উপযোগী রাখতে সচেষ্ট হবেন যাতে বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল দায়িত্ব (জ্ঞান সৃষ্টি, বিতরণ ও সংরক্ষণ) পালন করে রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
প্রশাসক নিয়োগের ফলে সৃষ্টিশীলতার বিলুপ্তির সাথে আরেকটি সমস্যা তৈরি হবে মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্রে। কবিগুরু শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তিকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দান করার কথা বলেছেন। দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভের এই প্রক্রিয়ার পূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ব্যক্তি স্বাধীন চিন্তার সুযোগ পায়। মুক্তবুদ্ধির চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করে ব্যক্তিকে চিন্তার স্বাধীনতা প্রদান করা, নতুন চিন্তাকে উৎসাহিত করা ও অন্যের চিন্তার প্রতি সহনশীল আচরণ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি মূল দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে প্রশাসক নিয়োগ ব্যক্তির মুক্তচিন্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতও উন্নয়নশীল দেশে যেখানে এই প্রধানের দায়িত্ব অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রদান করা হয়। এই বিশেষ আনুকূল্যে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকের সাথে নিয়োগে প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একটি ‘গিভ এন্ড টেক’ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে পদ প্রদানের বদলে নিয়োগকারী কোনো সুবিধা চাইলে প্রশাসক সে সুবিধা কীভাবে প্রদান করছে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্থান-পতনের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে জড়িত। সুবিধা প্রদানের সময় যদি প্রশাসক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের চেয়ে নিয়োগকারীর স্বার্থ বড় করে দেখেন, তবে তা ব্যাপক বিপর্যয় নামিয়ে আনতে সক্ষম, ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠান তার স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ঠ্য হারাতে বাধ্য।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে মেট্রোরেলের রুট স্থাপনের ঘটনা থেকে শুরু করে ছাত্রসংঠনগুলোর দৌরাত্ম্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, ‘গিভ এন্ড টেক’ এর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টেক’ এর তুলনায় ‘গিভ’ একটু বেশিই হয়, ‘গিভ এন্ড টেক’ এই অসমতার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতির অর্থ হলো রাষ্ট্রের ক্ষতি, যাদের ট্যাক্সের টাকা এসব বিশ্ববিদ্যালয় চলে সেসব খেটেখাওয়া মানুষের ক্ষতি।
বাজেটস্বল্পতাজনিত সমস্যার পর যে দুটি সমস্যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেসব হচ্ছে অস্থিতিশীল (অনুপযুক্ত) শিক্ষা পরিবেশ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই মৌলিক জ্ঞানচর্চায় অনীহা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতাকে কমিয়ে শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনে শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে একজন দক্ষ প্রশাসক যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে ক্রমহ্রাসমান জ্ঞানচর্চার সংস্কৃতি থেকে বাংলার এই অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্তি প্রদান করতে অনুপ্রেরণা হিসেবে একজন বিদগ্ধ অধ্যাপকেরও প্রয়োজন।
বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জ্ঞানচর্চার নামে তোতাপাখির মতো বহুবছর আগে অন্যের চর্বিত যে জ্ঞানগুলো চর্বন করছে, তা থেকে মুক্তি দিতে পারেন একজন অধ্যাপক যিনি নিজে মৌলিক জ্ঞানচর্চা করেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাধীন চিন্তাশক্তির স্ফুরণ ঘটাতে পারেন। তিনি যিনি নিজে স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা রাখেন এবং এই স্বাধীন চিন্তার ক্ষমতা একজন প্রশাসকের চেয়ে অধ্যাপকের অবশ্যই বেশি। বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার বলেন যে, তিনি ভেড়ার নেতৃত্বে সিংহের দলের চেয়ে সিংহের নেতৃত্বে ভেড়ার দলকে বেশি ভয় পান।
কোনো প্রতিষ্ঠান বা দলের নেতার স্বতন্ত্র্য গুণাবলি ও বিশেষ দক্ষতার উপরই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান বা দলের সাফল্য। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সাথে নেতার দক্ষতা সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে ওই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অবশ্যম্ভাবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, বিতরণ ও সংরক্ষণ। এছাড়া স্বাধীন চিন্তাশক্তির স্ফূরণ ঘটানো, মুক্তবুদ্ধির চর্চাও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। প্রকৃত অধ্যাপক উল্লিখিত সবগুলোর চর্চা করেন, প্রশাসক তা করেন না যা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান হবার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে প্রমাণ করে। তাই একজন প্রশাসকের চেয়ে একজন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবার বেশি যোগ্যতা রাখে।
প্রশাসক নিয়োগের সম্ভাব্য সমস্যার আরেকটি হচ্ছে শিক্ষকরা অতিমাত্রায় প্রশাসনিক দায়িত্বের দিকে ঝুঁকে পড়বে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের রাজনীতির ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। এই সম্প্রসারণের ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শিক্ষকদের নিজেদের। শিক্ষকের মনোযোগ এখন শ্রেণিকক্ষের চেয়ে রাজনীতির মাঠে বেশি ঝুঁকে থাকে, শিক্ষকদের এই অতিমাত্রায় রাজনৈতিক হবার অন্যতম হলো রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ বাগিয়ে নেয়া যায়। শিক্ষকদের বিপদজনক এই আগ্রহের সময়ে যদি অধ্যাপক ব্যতিত একজন প্রশাসক সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে যান তবে এই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সুযোগের পালে যে জোর হাওয়া লাগবে তাতে কোনোমতে ভেসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানের তরীটি একেবারেই ডুবে যেতে বাধ্য। প্রশাসক যদি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে যান তবে তা ‘উপাচার্য হতে হলে অধ্যাপনা করতে হয় না’ এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যার ফল কত মারাত্মক হবে তা সচেতন পাঠক মাত্রই অনুধাবন করতে পারবে।
একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে অধ্যাপক নিয়োগের সাথে আপোষ করা সম্ভব নয়, অন্যদিকে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিবেশ প্রশাসক নিয়োগের যৌক্তিকতা পদেপদে প্রমাণ করছে। অধ্যাপনা করেন কিন্তু প্রশাসনে পারদর্শী নন এমন কাউকে উপাচার্য নিয়োগ করলে বিদ্যমান বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি যেমন সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তেমনি দক্ষ প্রশাসক কিন্তু দীর্ঘদিন অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা নেই এমন কাউকে নিয়োগ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের প্রতি তার যে মূল দায়িত্ব সেটি পালনে ব্যর্থ হবে।
পেশাদার বিদ্যাশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসক নিয়োগ ভালো ফল দিতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। যেহেতু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে একজনই উপাচার্য হতে পারবেন সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে এমন একজনকে নিয়োগ করাই শ্রেয়, যিনি একাধারে অধ্যাপনা ও প্রশাসনে পারদর্শী, যিনি মসির শক্তিতে বিশ্বাসী কিন্তু প্রয়োজন সাপেক্ষে অসি চালনাতেও সিদ্ধহস্ত। অধ্যাপনাকে পাশ কাটিয়ে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা বিবেচনায় কাউকে উপাচার্য নিয়োগ করলে এটি আমাদের অজান্তেই বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাষ্ট্র ও এর অধিবাসীদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করবে, যখন এই ক্ষতির লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে আর আমরা বুঝতে শুরু করবো তখন কবি তারাপদ রায়ের সুর নকল করে আমাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে হবে,
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।