ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম: সম্ভাবনার নতুন দ্বার

আসাদ-উজ-জামান লিখেছেন ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে

বিশ্বায়নের এ যুগে ইংরেজি শিক্ষার শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা (ESL) হিসেবে প্রচলনের দাবিও দীর্ঘদিনের। গ্রামীণ মানুষের জন্য ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে (ইউআইএসসি) চালু করা হয়েছে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম, উম্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। ফলে এখন থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাথী, শিক্ষিত বেকার যুবক, শিক্ষক ও অভিভাবকরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইংরেজি পার্শ্ববর্তী ইউআইএসসি থেকেই শিখতে পারবেন।

ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম বাংলাদেশের তৃণমুলে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে গত ২৭ অক্টোবর, ২০১০ তারিখে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ব্রিটিশ কাউন্সিল দেশের ৪,৫০১টি ইউনিয়ন ও তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে। প্রাথমিকভাবে তারা ৭ বিভাগের ১০টি ইউআইএসসিতে পাইলট কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক কন্টেন্ট বিশেষজ্ঞদল গত মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের কয়েকটি ইউআইএসসি পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা স্থানীয় জনসাধারনের কন্টেন্ট চাহিদা নিরূপণ ও ইউআইএসসি উদ্যোক্তাদের দক্ষতা চাহিদা নিরূপণের জন্য একটি জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপ ফলাফল অনুযায়ী তারা বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতির উপযোগী করে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য ‘স্থানীয়করন কন্টেন্ট (localized content)’ প্রস্তুত করেন। এ কন্টেন্টসমূহের অনলাইন ও অফলাইন ভার্সন (সিডি, ডিভিডি) তৈরি করা হয়, এবং কন্টেন্টসমূহ ব্যবহারের জন্য ইউআইএসসি উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ‘ব্যবহার নির্দেশিকা (User Guide)’ তৈরি করা হয়। গত ২৫ মে, ২০১১ তারিখে ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক ১০টি ইউআইএসসির ২০ জন উদ্যোক্তার (প্রতি কেন্দ্রের ১ জন ছেলে ও ১ জন মেয়ে) জন্য কন্টেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ-কর্মশালা আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় ইংরেজি কন্টেন্টসমূহের পরিচিতি, ব্যবহার পদ্ধতি, ব্যবসা পরিকল্পনা ও উদ্ধুদ্ধকরণ কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হয় যাতে করে উদ্যোক্তারা এ কন্টেন্টসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ নিজ কেন্দ্রকে সামাজিক ও ব্যবসায়িকভাবে টেকসইকরণ ও গ্রামীন মানুষের ইংরেজি চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষিত বেকার যুবক, শিক্ষার্থী ও শিশুদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রস্তুতকৃত কন্টেনসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

টিচিং ইংলিশ

শিক্ষকদের জন্য তৈরিকৃত ওয়েবসাইট হলো www.teachingenglish.org.uk. বিভিন্ন দেশের প্রায় বারো হাজারেরও বেশি শিক্ষক এ সাইটটির সদস্য। এ সাইটটির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের শিক্ষকরা পারস্পরিক আলোচনা, মিথস্ক্রিয়া ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবেন। তারা শ্রেণীকক্ষে ব্যবহারের জন্য পাঠ পরিকল্পনা ও উপকরণ ডাউনলোড করতে পারবেন। শিক্ষকরা তাদের পেশাগত উন্নয়ন, সম্মেলন, ডিগ্রি বিষয়ক টিপস, প্রবন্ধ ও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ উপকরন গ্রহণ করতে পারবেন। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষকদের প্রস্তুত করা কন্টেন্টসমূহ অনুশীলন ও ডাউনলোডও করতে পারবেন এখান থেকে।

লার্ন ইংলিশ

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষিত বেকার যুবক ও পেশাজীবীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে www.britishcouncil.org/learnenglish ওয়েবসাইটটি। যে কেউ এ সাইটটির সদস্য হতে পারবেন, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারবেন, বিনামূল্যে উপকরণ ডাউনলোড করতে পারবেন এবং সাইটটির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন। ইংরেজি শিক্ষার মজাদার অনুশীলনের জন্য এখানে রয়েছে প্রচুর অডিও ও ভিডিও ক্লিপ, ইংরেজি ব্যাকরণ ও শব্দ শেখার সহজ উপায়, মোবাইল ফোনে ইংরেজি ভাষায় কৌতুক ও খেলা, ক্যারিয়ার সংশ্লিষ্ট ইংরেজি, আইএলটিএস মক টেস্ট ও ইংরেজী পরীক্ষার অন্যান্য উপকরণ এবং বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক, যেমন-ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে ইংরেজি শেখা। শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ সব বিখ্যাত লেখকদের রচনা পড়া ও শোনার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। এটা শব্দ শেখার এবং শ্রবণ অনুশীলনের এক কাব্যিক উপায়। বিজ্ঞান থেকে শুরু করে সামাজিক বিষয়সহ বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো ইন্টারঅ্যাকটিভ পরিবেশে পড়ার ও শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।

লার্ন ইংলিশ কিডস

শিশুদের জন্য উপযোগী একটি মজার ওয়েবসাইট হচ্ছে www.britishcouncil.org/learnenglishkids. এখানে রয়েছে গেমস, গান, গল্প, ভিডিও ও অন্যান্য কার্যক্রম। এই উপকরণগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন শিশুরা নিজে বা বন্ধু এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে এটা ব্যবহার করতে পারে। ক্লান্তিকর পড়া ও লেখা দূর করতে এখানে রয়েছে মজার মজার অনুশীলন, যে অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুরা মজা করে করে নতুন নতুন শব্দ শিখতে পারে। এখানে আরো একটি অধ্যায় রয়েছে যেটা তরুন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার উপযোগী প্রচুর উপকরণও রয়েছে এখানে।

ইউআইএসসি থেকে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার মাধ্যমে ‘জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা’ পৌঁছানোর আরো একটি বিরাট মাইলফলক অর্জিত হলো। এ উদ্যোগ গ্রামীণ জনপদের মানুষের ইংরেজী দক্ষতা বৃদ্ধি, ক্ষমতায়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

আসাদ-উজ-জামান: জুনিয়র কনসালট্যান্ট, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম, (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি বাংলাদেশ), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ইমেইল: azaman.asad@gmail.com

জনপ্রিয় নিবন্ধ

প্রাথমিক স্তরে ভাষা শেখা : বিষয় – বাংলা

ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা...

আগে ইংরেজি গ্রামার শিখবো, নাকি ভাষা শিখবো?

কোন ভাষার গ্রামার হলো ঐ ভাষার গঠন প্রকৃতি যার...

শিক্ষাব্যবস্থার হালচাল

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা : পিএইচডির পর কী?

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে...

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা

ক্যাডেটসমূহ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।...

আরও কিছু লেখা

অধিক

    বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বিদেশে কেমন আছে?

    উন্নত বিশ্বের উন্নত জীবন, পরিপাটি রাস্তাঘাট, নিরাপদ ও নিশ্চিত...

    ষষ্ঠ শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: একটি পর্যালোচনা

    নতুন শিক্ষানীতির আলোকে ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকার ষষ্ঠ শ্রেণীতে...

    পরিবার থেকে শেখা: বাবা

    দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে মানুষ শুনে, দেখে, অনুকরণ করে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জীবনব্যাপী শিক্ষালাভ করে পরিবার থেকে। বর্তমান সমাজে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আধিপত্য সত্ত্বেও পারিবারিক শিক্ষাই শিশুর আচার-ব্যবহার, মন-মানসিকতা, সামাজিকীকরণ ও চরিত্র গঠনে প্রধান ভুমিকা পালন করে।

    প্রফেসর মোহাম্মদ নাসের : নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই

    ড. রহমতউল্লাহ ইমন লিখেছেন মোহাম্মদ নাসের সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর...

    ‘শুদ্ধস্বর-বাংলাদেশের শিক্ষা’ ত্রৈমাসিক সেরা লেখা পুরস্কার: এপ্রিল-জুন ২০১৩ প্রান্তিকের সেরা লেখা- ‘একটি কুলীন শিক্ষাব্যবস্থা’

    বিচারক আকলিমা শরমিনের নির্বাচন অনুসারে এপ্রিল-জুন ২০১৩ প্রান্তিকে সেরা লেখার জন্য পুরস্কারের দাবিদার হলেন নাসরীন সুলতানা মিতু। লেখকে অভিনন্দন!

    সান্ধ্যকালীন কোর্স: নৈতিকতা বনাম বাস্তবতা

    মিলি সাহা লিখেছেন সান্ধ্যকালীন কোর্সের নৈতিকতা ও বাস্তবতা প্রসঙ্গে ঢাকা...

    শিক্ষক: মানুষ গড়ার কারিগর

    'সবাই ভালো ছাত্র হয় না, তবে সবাই ভালো মানুষ...

    ছাত্রজীবন সুখের জীবন, যদি না থাকে এক্সামিনেশন

    শিক্ষার্থীরা সাধারণত যে পরীক্ষাগুলোর কথা শুনলে ভয় পায় তা হলো, দুইটি সাময়িক পরীক্ষা এবং একটি বার্ষিক অথবা সমাপনী পরীক্ষা। এই ভয় শুধু যে স্কুল-কলেজে ছিল তাই না, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও দেখতে পাই ইনকোর্সের ভয়ে আমরা ভীত থাকতাম। একটি শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে কিনা, এর উদ্দেশ্য কতটা সফল হলো, তা জানার যখন আরও অনেক ধরন (বাড়ির কাজ, শ্রেণির কাজ, মৌখিক প্রশ্ন-উত্তর, ব্যবহারিক কাজ) আছে; তবে এই পরীক্ষা নামক জুজুর ভয় কেন আমাদের পোহাতে হবে?

    প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

    নতুন লেখার খবর পান ইমেইলে
    বাংলাদেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে নতুন লেখা প্রকাশিত হলে সেই খবর পৌঁছে যাবে আপনার ইমেইলে।