বাড়ি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা মূল্যায়ন পরীক্ষা প্রসঙ্গে

মূল্যায়ন পরীক্ষা প্রসঙ্গে

মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি; ছবিসূত্র: যমুনা টিভি
মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি; ছবিসূত্র: যমুনা টিভি

বর্তমান সরকার শিক্ষার উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নকল বন্ধ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীতে মূল্যায়ণ পরীক্ষা চালু। মূল্যায়ন পরীক্ষা চালু করা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এই মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে কথা, আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হযেছে আর শুরু হওয়ার পিছনে কিছু যুক্তিও আছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সহজেই দেখা যায় কিংবা বলা যায় যে- শতকরা সত্তর ভাগ ছাত্রছাত্রী ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার মতো যোগ্যতা রাখে না। এসব ছাত্রছাত্রীরাই বছরের সিড়ি বেয়ে বেয়ে এসএসসি পর্যন্ত উঠে যায় এবং এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। ফলে একদিকে যেমন মেধার অপচয় হচ্ছে, অপরদিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের পরিবার এবং দেশ । মান নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এ অবস্হা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এদিক দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবি রাখে ।

কিন্তু এ মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে যখন ছাত্রছাত্রীদের কাছে পঞ্চম শ্রেণীর বই থাকে না। এরসাথে আরেকটি প্রশ্ন দেখা দেয়, সেটি হচ্ছে যেসব ছেলেমেযেরা এ পরীক্ষায় খারাপ করবে তাদের কী হবে? তারা কি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে যাবে? না ষষ্ঠ শ্রেণীতেই থেকে যাবে? যদি ষষ্ঠ শ্রেণীতেই থেকে যায়, তাহলে তাদের কাছে এ পরীক্ষার কোনো মূল্য থাকবে না। আর এ পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তাদের যদি স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়, তা হবে তাদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং সামাজিকভাবে লজ্জাজনক। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছেলেমেয়েদের শরীর এবং মনের উপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করবে। আর এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে যদি কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা না হয়, তাহলে অচিরেই এই পরীক্ষার গুরুত্ব কমে যাবে।

এ পরীক্ষার গুরুত্ব এবং উদ্দ্যেশ্য সঠিক রাখতে হলে এ পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে ডিসেম্বর মাসে। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বোর্ড পরীক্ষার মতো একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। তাদেরকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে না। তবে এই পরীক্ষার পূর্বে স্কুল প্রস্ততিমুলক কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে। সে পরীক্ষা অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে নিতে পারে। তাহলে ছাত্রছাত্রীরাও ভালো করবে এবং এই পরীক্ষা তখন গুরুত্বও পাবে।

যদি শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যই এই ধরনের পরীক্ষার আয়োজন করা হয়ে থাকে তাহলে এই মূল্যায়ন পরীক্ষা পঞ্চম শ্রেণীতেই নিতে হবে। এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে ছাত্রছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবে।

এ পরীক্ষার ফলে ছাত্রছাত্রীদের আলাদা টেনশনে ভুগতে হয়। তাদেরকে একদিকে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়, অন্যদিকে এই ধরনের মিনি পাবলিক পরীক্ষায়ও অংশগ্রহন করতে হয়। অথচ এই দুটো পরীক্ষার নম্বর বণ্টন এবং প্রশ্নপত্র আলাদা। এই কারণে স্বভাবতই ছেলেমেয়েদের আলাদা প্রেসারে থাকতে হয়। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সম্পাদকীয় নোট: এই লেখাটি যদিও বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক নয়; কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এক সময় ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের যে পরীক্ষা নেওয়া হতো, সেই প্রসঙ্গ, ঘটনাবলী ও মতামত ওয়েবে সংরক্ষিত থাকার প্রয়োজন রয়েছে যাতে ভবিষ্যত গবেষকরা অতীতের বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন এবং কোনো তথ্যই যেন তাদের কাছে অপ্রকাশিত না থাকে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পুরনো এই লেখাটি প্রকাশ করা হলো। ধন্যবাদ।

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version