আমরা যখন ভাষা শিখি কিংবা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে শেখাই, পারিপার্শ্বিক বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো উপেক্ষা করতে পারি না। বরং ঐ ঘটনাগুলো বার বার আমাদের নাড়া দেয়, আমাদের নিত্যদিনের পাঠদানকে প্রভাবিত করে। দৈনন্দিন কার্যাবলী করার সময়ে এবং ক্লাসে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আলোচনা করি, না করে পারি না কারণ সচেতন মানুষ হিসেবে এটি প্রাকৃতিক তাগিদ এবং চাহিদা। এই আলোচনাগুলোকে আমরা ইংরেজি শেখানোর কাজে লাগাতে পারি।
যেমন এই সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা (আগস্ট ২০১১)। এ ঘটনাগুলো আমরা রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানি, উত্তেজিত হই, রিঅ্যাক্ট করি, মতামত প্রকাশ করি, আলোচনা, সমালোচনা করি, পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলি, ডিবেট করি এগুলো নিয়ে। এই বিষয়গুলোই আমরা ভাষা শিখানোর ক্লাসে এবং গ্রামার শেখানোর ক্লাসে কাজে লাগাতে পারি। এতে কয়েকটি প্রত্যক্ষ উপকার হবে।
(১) একজন শিক্ষক সুন্দরভাবে ক্লাস ম্যানেজ করতে পারবেন;
(২) শিক্ষার্থীরা আগ্রহভরে ঐ ক্লাস করবে এবং অত্যান্ত মনোযোগী থাকবে শ্রেণীকক্ষে কারণ এটি তাদের বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত;
(৩) একজন শিক্ষক শিক্ষার্থী কারুর জন্যই ক্লাস বোরিং হবে না, বরং আনন্দময় হবে আর ক্লাসকে আনন্দময় করে তোলা একজন স্বার্থক শিক্ষকের কাজ;
(৪) শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ের জন্য সাধারণ জ্ঞানের চর্চা হবে;
(৫) শিক্ষা হবে বাস্তবভিত্তিক এবং অধিকতর ফলপ্রসূ;
(৬) অহেতুক সময় নষ্ট হবে না ক্লাসে এবং একথা কেউ মনেও করতে পারবে না যে ক্লাসে অপ্রাসঙ্গিক গল্প করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সবগুলোই আমাদের নিত্যদিনের আলোচনার বিষয়। সবগুলোই রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের হেডলাইন। আধুনিক যুগের মানুষ হয়ে কোনটিই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। কোনো না কোনোভাবে আমরা এগুলোর সাথে জড়িয়ে আছি। যেমন…
(ক) ভারতে দুর্নীতি দমনের জন্য পার্লামেন্টে আইন পাশের জন্য গান্ধীবাদী সমজাকর্মী আন্না হাজারে একটানা ১২ দিন অনশন করেছেন নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে। দেশব্যাপী হাজার হাজার সমর্থক, ছাত্র-শিক্ষক, বৃদ্ধিজীবি, কৃষক, মজুর, শিল্পী সবাই তাকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তার সাথী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার বাধ্য হয়েছে বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করতে।
(খ) লিবিয়ায় ৪২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্দে বিদ্রোহীরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সশস্ত্র সংগ্রাম করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। গাদ্দাফি কোথায় পালিয়েছেন তার সঠিক কোনো ঠিকানা কেউ আবিস্কার করতে পারছে না। বিদ্রোহীরা ২৬ আগস্ট ত্রিপোলি দখল করে নিয়েছে। ৩০ আগস্ট টেলিভিশনের জানা গেল তার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে আলজেরিয়ায়। তারপরে জানা গেল গাদ্দাফি তার অনুগত বাহিনী নিয়ে তার নিজ শহরে আশ্রয় নিয়েছে।
(গ) নেপালে ৩৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২৮ আগস্ট শপথ নিয়েছেন মাওবাদী নেতা বাবুরাম ভট্টরাই। ১০ বছর সশস্ত্র সংগ্রাম করে মাওবাদীরা ২০০৬ সালে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে চলে আসে, কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি দেশটিতে। পুষ্পকমল দাহল প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী হন কিন্তু মাওবাদীদের দেওয়া কিছু শর্ত পূরণ করা হয়নি বলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
(ঘ) জাপানে পাঁচ বছরের মধ্যে ৬ষ্ঠবারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ইয়োশিহিকো নোদা। পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান মাত্র ১৫ মাস ক্ষমতায় ছিলেন। গত মার্চ মাসে প্রবল ভূমিকম্পে ও সুনামীতে আক্রান্ত হয় দেশটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় দেশের প্রধান কয়েকটি পারমাণবিক চুল্লি। এই পরিস্থিতি ফলপ্রসূভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন নাওতো কান। তার নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান এবং বিরোধীদল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে চাপ আসে, পরে তিনি ২৭ আগস্ট পদত্যাগ করেন।
এভাবে প্রতি সপ্তাহে এবং প্রতিমাসে বিশ্বের কোথাও না কোথাও কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে থাকে। একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার চোখ কান খোলা রাখতে হবে, জানতে হবে কোথায় কী ঘটছে, সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর সাথে আপনার নিবিড় পরিচিত থাকতে হবে। গ্লোবালাইজেশনের যুগে একজন শিক্ষককে কুপমণ্ডুক হলে চলবে না। মনে রাখবেন অনেক শিক্ষার্থীই তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সাম্প্রতিক কালের ঘটনাবলীর খোঁজখবর রাখছেন।
তাদের মধ্যে এগুলো জানার, আলোচনা করার উৎসুক সৃষ্টি হয়েছে, তারা চান তাদের শিক্ষকও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুক। কিন্তু অনেক শিক্ষক আছেন এসব বিষয় নিজে তো আলোচনার ধারে কাছেও যান না। কোন শিক্ষার্থী এসব বিষয় ক্লাসে তুললে তাকে ভৎর্সনা করেন এমনকি অনেক সময় শাস্তিও প্রদান করে থাকেন। ফলে ঐ ক্লাস আনন্দময় এবং বাস্তবধর্মী না হয়ে নিরানন্দ হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা আগ্রহ প্রকাশ করে না ঐসব ক্লাসে উপস্থিত হতে। একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার বড় উপহার হচ্ছে আপনি যখন সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে ক্লাসের পাঠদানের সাথে মেলাতে পারবেন। আপনি যখন শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক ঘটনার ওপর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবেন তখন আপনার প্রতি তাদের আস্থা, বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধা বহুগুণ বেড়ে যাবে যা শিক্ষাদানের পরিবেশকে আরও উন্নত, কার্যকরী ও ফলপ্রসূ করবে। একজন শিক্ষক হিসেবে আপনি তা আশা করেন না?
কিভাবে আপনি এটি করবেন?
আপনি শিক্ষা উপকরণ হিসেবে কমপক্ষে দুটি ইংরেজি পেপার নিজে পড়বেন, একটি বাংলা পত্রিকা পড়বেন। আপনার ফোকাস থাকবে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর ওপর। আপনি কয়েকবার ঘটনাগুলো পড়ুন, অজানা শব্দগুলো প্রসঙ্গ থেকে বুঝার চেষ্টা করুন। বুঝতে অসুবিধা হলে অক্সফোর্ড ডিকশনারী ব্যবহার করুন। বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে বুঝে নিন যাতে আপনি কমেন্ট করতে পারেন আপনার পঠিত বিষয়গুলোর ওপর। ক্লাসভেদে এবং আপনার পড়ানোর নির্দিষ্ট বিষয় আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিন। ক্লাসে ঢুকে ওয়ার্মিং আপ প্রাকটিস হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে দুটো একটি সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করুন। দেখুন কতজন শিক্ষার্থী ব্যাপারটি জানে। দু-চারজন জানলে তাদেরকে প্রশ্ন করুন। পত্র-পত্রিকার সাথে আপনার মতামত যুক্ত করুন। এখান থেকেই আপনি তাদের ট্রান্সফরমেশন করান, প্রশ্নবোধক বাক্য গঠন শেখান, সারমর্ম লিখতে দেন, বাক্য পূর্ণকরন লিখতে দেন। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাদের স্পিকিং উন্নত করান, আর্টিকেল করান, ভয়েস চেইঞ্জ শেখান, প্রিপজিশন শেখান। এভাবে গ্রামার ও ল্যাংগুয়েজ প্রাকটিসের সাথে সাথে সাধারন জ্ঞানের চর্চা হবে এবং ক্লাসের কার্যবলীতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
লেখক পরিচিতি
মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।
খুব সুন্দর একটা লেখা . আরো ভালো হয় যদি প্রথম ক্লাস এর প্রথম ১০ মিনিট নির্ধারিত থাকবে সাধারণ জ্ঞান চর্চার জন্য.প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একটি নতেবুক থাকবে যেখানে প্রতিদিনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ (৫ থেকে ১০ টি ) শিক্ষার্থীরা লিখে আনবে এবং তা সবার সামনে পরে সুনাবে .