করোনা মহামারীর কারণে প্রায় পনের মাস যাবত দেশের সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারীভাবে উদ্যোগের ফলে সংসদ টিভি ও রেডিওর মাধ্যমে কিছু ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে; যদিও তার কার্যকারিতা কীরকম ও কত শতাংশ শিক্ষাথীদের কাছে পৌঁছানো গেছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ও সংশয় আছে। তারপরেও বলা যায়, অন্তত কিছু একটা করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৬শ কলেজে প্রায় ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। তাদের জন্য এবং দেশের চালু ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সেই অর্থে কিছু করা হয়নি। এতো বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের বিশাল শিখন ক্ষতি ও মেধার অপচয় কীভাবে ম্যানজে করা যাবে তা নিয়ে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনাও নেই। এদিক দিয়ে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ স্মার্ট। ভালোমানের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের প্রায় শুরু থেকেই অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করে আসছে। শিক্ষাবর্ষ যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য তারা অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করেছিলো, কিন্তু ইউজিসি তাদের পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।
ইউজিসি হয়তো ভেবেছিলো যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে বা তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় আগে বেরিয়ে যাবে। ফলে উচ্চশিক্ষায় একটি বৈষম্য সৃষ্টি হবে। কিন্তু বৈষম্য তো ইতিমধ্যে হয়েই আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অংকের শিক্ষকই মেধাবী; কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই পড়াশুনার সাথে জড়িত থাকতে পারেন না, কারণ ছাত্রনেতাদের ম্যানেজ করা, শিক্ষক রাজনীতি করা, টেন্ডার ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাদের অনেকেই এখনও কম্পিউটার ইন্টারনেট চালাতে পারেন না। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হয়, শিক্ষার্থীদের পড়াতে হয় তারা যেভাবে বুঝে, কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এগুলো সবই অনুপস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে পরীক্ষা হতে দেয়া উচিত ছিলো। কারণ এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রচুর বেতন দিয়ে পড়তে হয়। অভিভাবকদের অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। তারা একটু আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ভাগ্যান্বষণে বেরিয়ে পড়তে পারতো। কিন্তু তাদের অনলাইনে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হলো, যা ঠিক হয়নি। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব এবং বলা যায় সিদ্ধান্তই হয়ে গেছে। অথচ এখানকার শিক্ষকদের অনেকেরই নেই আধুনিক ডিভাইস সম্পর্কে ধারণা আর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই তা থাকার কথা নয়। তারপরেও যে চিন্তাটা এসেছে এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
শিক্ষাজীবনের ক্ষতিরোধে সরকার অপরিহার্য বিষয়গুলোর অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করেছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এর একটি উচচশিক্ষা-সংক্রান্ত এবং অপরটি এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে। ৬ মে ইউজিসির সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ে যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিস্টার ও ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্তক্রমে এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাত দফার গাইডলাইনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিষয়টি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিপত্র আকারে জারির লক্ষ্যে পাঠানো হবে।
জানা যায়, দীর্ঘ ছুটির কারণে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দুটি সেমিস্টার পরীক্ষা হয়নি। হিসাব অনুযায়ী, আরেকটি সেমিস্টার পরীক্ষা দু’এক মাসের মধ্যে হওয়ার নিয়ম আছে। অন্যদিকে করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি ঠিক কতদিনে উন্নতি লাভ করবে, কিংবা করোনার প্রভাব থেকে মানবজীবন কতোদিনে মুক্ত হবে তা নিশ্চিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের স্থগিত পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গঠিত কমিটির গাইডলাইন অনুসরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিতে না চাইলে সে স্বাধীনতা তাদের আছে। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি উত্তরণের পর সরাসরি পদ্ধতিতে তারা পরীক্ষা নিতে পারবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনকে সম্মান দেখানো। এ নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বোপরি শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়াবিমুখ হযে গেছে। তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য একটি প্যাকেজ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রস্তুতিমূলক ক্লাস নিয়ে সেমিস্টার ফাইনাল বা অন্য পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
পরীক্ষা-সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় কমিটিতে ১৫ সদস্য কাজ করেন। এ কমিটি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ও ব্রিস্টলসহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মঞ্জুরি কমিশন বা উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত সংস্থাগুলোর করেনাকালে পরীক্ষা পদক্ষেপ আমলে নিয়ে সুপারিশ তৈরি করে। কমিটির মূল প্রতিবেদন ৫ পৃষ্ঠার। ৩২ পৃষ্ঠাই সংযুক্তি। ৭ দফা প্রস্তাব হচ্ছে, যেকোনো বিষয়ের তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক পাঠদান (ইনপারসন/অনলাইনে) সম্পন্ন হওয়ার পর কালক্ষেপণ না করে তার চূড়ান্ত মূল্যায়ন (ইনপারসন/অনলাইন) সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তা অবশ্য সুবিধাজনক সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইনপারসন বা সরাসরি ক্লাসে সম্পন্ন করতে হবে।
যেকোনো মূল্যায়নে পাস/ফেল পদ্ধতি এক সেমিস্টার বা দুই সেমিস্টারে করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে এ মূল্যায়ন কখনো শিক্ষার্থীর সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করে না এবং এটা করা সমীচীন নয়। ফলে, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সব বিষয়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সত্যিকারের মেধা ও মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান পদ্ধতি ও স্কেলে গ্রেড দিতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জন্য উপযোগী অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সুস্পষ্ট পদ্ধতি গ্রহণ করবে ও বাস্তবতার নিরিখে ছয়টি বিষয় অনুসরন করবে। এগুলো হচ্ছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারন্টে সংযোগ ও স্পিড, ডিজিটাল ডিভাইস ডিজিটাল টুল, প্রশ্ন সেটিংস, অসাধু পন্থা অবলম্বন মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিকভাবে ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা।
প্রস্তাব অনুযায়ী, চারটি পদ্ধতি অনুসরণ করে যেকোনো তত্ত্বীয় বিষয় ও হাতে-কলমে কাজ করার প্রয়োজন নেই এমন ব্যবহারিক বিষয়ে চূড়ান্ত নম্বর/গ্রেডিং অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে প্রদান করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে, সৃজনশীল কাজ, সৃজনশীল কুইজ/বিভিন্ন সেটের বহু নির্বাচনী প্রশ্নমালা (এমসিকিউ), সময়াবদ্ধ শ্রেণি পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা। প্রস্তাবে বলা হয়, ব্যবহারিক ক্লাসের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টের ভিডিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ইমেইলে এক্সপেরিমেন্টের পুরনো তথ্য প্রেরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে পাঠাবেন। ল্যাবভিত্তিক নয় এমন থিসিস/প্রজেক্ট অনলাইনে সুপারভাইজ করা যেতে পারে। ল্যাবভিত্তিক থিসিস/প্রজেক্টের সুপারভিশন/স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইনপারসন বা অনলাইনে হতে পারে। থিসিস/প্রজেক্টের হার্ডকপি গৃহীত হওয়ার পর অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয় অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট প্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয় স্পিড নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা প্রসঙ্গে আমি একটি সত্য ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী তাদের গ্রাজুয়েশন পরীক্ষা প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। মাত্র দুটো পরীক্ষা বাকি থাকতেই গতবছর করেনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থী দুজনই প্রকৃত মেধাবী, যদিও শিক্ষকদের বিবেচনায় তাদের বিভাগে সেভাবে স্থান দেয়া হয়নি যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু শিক্ষক এ কাজ করে থাকেন। দুজনই মাস্টার্স করার জন্য ফ্রান্সের একটি প্রথম গ্রেডের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়েছেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করেই তাদের সেখানে যেতে হবে। দুটো পরীক্ষা বাকি থাকায় হয়েছে সমস্যা। শিক্ষার্থী দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান, একাডেমিক কাউন্সিল ও ভিসি পর্যন্ত অনেক ছুটাছুটি করেছেন। তাদের দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ব্যবহার করে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়া যাতে তারা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন ধরতে পারেন। কিংবা দেশেই অনলাইন পরীক্ষার আয়োজন অথবা ফ্রান্সে যাওয়ার পর তারা অনলাইন পরীক্ষা দিবে এ ব্যাপারে ভিসির একটি অনুমতিপত্র দেয়া। কোনো শর্তেই, কোনো যুক্তিতেই কেউ রাজি হননি। উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোপের কোনো উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথমবারই কোনো শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন। তারপরও কারোর কোনো আগ্রহ কিংবা উৎসাহ ছিলো না।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়র ভিসিদের তো এসব বিষয় নিয়ে আগ্রহ থাকে না। তারা পারেন অবৈধভাবে, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৪১ জনকে চাকরি দিতে, কারণ তারা সরকারী দলের, সরকারকে এভাবে খুশি করতে পারলেই সব পার পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী দুজন আমাকে পুরো ব্যাপার জানিয়েছেন। পরে তারা শিক্ষা সচিবের সাথে দেখা করেছেন। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করেছেন। শেষে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাকে বুঝিয়েছেন যে, তারা ফ্রান্সে গিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা দিবেন এবং তারা যদি এবারের সেশন (২০২০) ধরতে না পারেন তাহলে বৃত্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্যাপারটি বুঝেছেন এবং শিক্ষার্থী দুজনকে অভিবাদন জানিয়ে বলেছেন, তোমরা দেশের সম্পদ, তোমাদের জন্য দেশের এই কাজটুকু তো করতেই হবে। মন্ত্রী নিজে যখন ভিসিকে বললেন, ওরা ফ্রান্সে গিয়ে অনলাইনে বাকি পরীক্ষা দুটো দিবে, ভিসি তখন রাজি হলেন। শিক্ষার্থী দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঠিকমতো সেশন ধরেছেন। তাদের মাস্টার্স প্রায় শেষ, এখন ইন্টার্নশিপ করছেন। যে কোম্পানিতে তারা ইন্টার্নশিপ করছেন, সেই কোম্পানীর নিজস্ব সেন্টার রয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। চমৎকার! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী এসব কথা কখনও চিন্তাও করে? ধন্যবাদ শিক্ষা সচিবকে যিনি শিক্ষার্থী দুজনকে সচিবালয়ে ঢুকতে দিয়েছেন, তাদের কথা শুনেছেন। অজস্র ধন্যবাদ শিক্ষামন্ত্রীকে যিনি পুরো বিষয়টি বুঝে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে অনলাইনে একত্র হচ্ছেন এবং অবিলম্বে সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করেছেন। সেই গ্রুপ থেকে তারা অনলাইনে পরীক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যখ্যান করেছেন। আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো বাস্তবতা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই। আমাদের দেশের নেটওয়ার্কব্যবস্থা খুবই দুর্বল, যা দিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করা অসম্ভব। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। আবার শিক্ষকরাও অনলাইনের সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ নন। তারা আরও বলছেন, মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতেই অনলইন পরীক্ষার নতুন এই পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে উপযুক্ত ডিভাইসের অভাব আছে এবং ইন্টারনেট খরচ বহন করার সক্ষমতাও সবার নেই। যেখানে অনলাইন ক্লাসগুলোয় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনুপস্থিত থাকে, সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে মনে করেন শিক্ষাথীরা। তাদের দাবির কথা সরকারের কাছে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার জন্য ভার্চুয়াল প্রতিাবাদ চালু রাখার কথা বলেছেন। যদি মে মাসের মধ্যে হল-ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক করা না হয়, তাহলে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফের গিয়ে সরাসরি মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি এই উদ্যোগের সহায়ক এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য দৃষ্টান্ত ও উৎসাহব্যঞ্জক। তবে, পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবে যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই দিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে এভাবে ডিগ্রি নেয়া গ্রাজুয়েটগণ ভবিষ্যতে বিপাকে পড়তে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত থেকে জানা যায় যে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও ১ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেবে। ৫ মে ডিন কমিটিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা পরদিন একাডেমিক কাউন্সিল অনুমোদন করেছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সব বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে। অনলাইন পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা এবং পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা সুনির্দিষ্ট করতে অনুষদগুলোর ডিন ও ইনস্টিটিউটগুলোর পরিচালকদের একটি কৌশলপত্র তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন ভিসি। তাদেরকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কৌশলপত্র জমা দিতে বলেছেন। অনলাইন পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েই হোক আর নিজেদের প্রচেষ্টায় হোক, আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর জন্য তাদের আধুনিক ডিভাইসের ব্যবহার জানা খুবই জরুরি।
লেখক পরিচিতি
মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।